ক্ষমাপ্রাপ্তির শ্রেষ্ঠ আমল ইস্তিগফার

মানুষ দোষে-গুণে সৃষ্ট। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষ সৃষ্টি করে তার মধ্যে পাপ-পুণ্যের সম্ভাবনা দিয়ে রেখেছেন। কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘অতঃপর আল্লাহ তাতে (মানবসত্তায়) অপরাধপ্রবণতা ও তাকওয়া বা সতর্কতার জ্ঞান দান করলেন।’ (সুরা-৯১ শামছ, আয়াত: ৮)। ‘আর আমি তাকে (ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়) দুটি পথ দেখিয়ে দিয়েছি (যাতে সে সঠিক পথ চিনে চলতে পারে)।’ (সুরা-৯০ বালাদ, আয়াত: ১০)। কিন্তু প্রথম মানুষই প্রথম ভুল করেছিলেন। ‘নাস’ মানেই ভুল, ইনসান হলো সে, যে ভুলে যায়। নবীজি (সা.) বলেন, ‘সকল মানুষই অপরাধী, তাদের মাঝে উত্তম হলো তওবাকারী।’ (বুখারি)।

আল্লাহ তাআলা গাফুরুর রাহিম, পরম ক্ষমাশীল। যিনি ভুলত্রুটি, পাপতাপ, যাবতীয় অপরাধ ক্ষমা ও মার্জনা করেন এবং দয়া করুণা বর্ষণ করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দাকে নানানভাবে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানি, প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে; তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের প্রতি মসিবত আপতিত হলে বলে, “নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।” তাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)। বান্দা যখন তাঁর দ্বারস্থ হয়, তখন তিনি ক্ষমা ও দয়ার কুদরতি হাত দুটো প্রসারিত করেন। বান্দা ইস্তিগফার করলে আল্লাহ আজাব দেন না। কোরআনের বর্ণনা, ‘আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাদের
শাস্তি দেবেন না এবং তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করলে তখনো আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৩৩)।

রহমত, ক্ষমা ও মুক্তির মাস পবিত্র মাহে রমজান। এর মধ্য দশকে অগণিত মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘দুর্ভাগা তারা, যারা রমজান পেয়েও মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভ করতে পারল না।’ (বুখারি শরিফ)। মহান আল্লাহ তাআলার একটি গুণ হচ্ছে ক্ষমা করা। পবিত্র কোরআনে ক্ষমার ব্যাপারে তিনটি শব্দ বারবার ব্যবহৃত হয়েছে—গাফির, গাফফার ও গফুর। ‘গাফির’ অর্থ ক্ষমাকারী, ‘গাফফার’ অর্থ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, ‘গফুর’ অর্থ পরম ক্ষমাশীল।

প্রিয় নবী (সা.) দৈনিক ৭০ বারের অধিক বা ১০০ বার ইস্তিগফার অর্থাৎ ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। অথচ তিনিসহ সব নবী–রাসুল ছিলেন মাসুম বা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ।

নবীয়ে আকরাম (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে ইস্তিগফার করাকে নিজের ওপর লাজিম তথা আবশ্যক করে নেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে তিনটি পুরস্কার দেবেন: তার জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করবেন, তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, তাকে অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)।

ইস্তিগফার বা ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য কোরআন মাজিদে ও হাদিস শরিফে বহু দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দোয়াটিকে ছাইয়্যেদুল ইস্তিগফার অর্থাৎ প্রধান তথা সেরা বা শ্রেষ্ঠ ক্ষমার আবেদন বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ সকাল–সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সঙ্গে সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার পাঠ করে, সে যদি ওই দিন রাত্রে বা দিবসে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতি হবে।’ ছাইয়্যেদুল ইস্তিগফার হলো ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা; খলাকতানি ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতা তায়াতু, আউজু বিকা মিন শার্রি মা ছনাতু, আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবুউ লাকা বিজাম্বি; ফাগফির লি, ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ-জুনুবা ইল্লা আন্তা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই; আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনারই বান্দা বা গোলাম, আর আমি আছি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আমার সাধ্যমতো; আমি আপনার কাছে পানাহ ও আশ্রয় চাই আমার অনাসৃষ্টির অকল্যাণ এবং অপকার ও ক্ষতি হতে। আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি আপনার সকল নেয়ামতরাজি এবং আরও স্বীকার করছি আপনার সমীপে আমার সকল অপরাধ; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন, যেহেতু আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই।’ (বুখারি: ৬৩২৩ ও মুসলিম)।

রমজান মাসের একটি নফল ইবাদত একটি ফরজের সমান সওয়াব। একটি ফরজ ৭০টি ফরজের সমান; প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব ৭০ গুণ বেশি। এ মাসে গুনাহ করাও কঠিন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। তাই সামর্থ্যমতো বেশি বেশি নেক আমল করার পাশাপাশি সকল প্রকার বদ আমল বা গুনাহ বর্জন করতে হবে। তবেই আমরা মহান আল্লাহর মহা ক্ষমা লাভ করব। সাহ্‌রির সময় আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ডেকে ডেকে বলতে থাকেন, ‘কে আছ ক্ষমা চাওয়ার? ক্ষমা চাও, আমি মাফ করে দেব।’ (মুসলিম)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]