মানবজীবনের সফলতা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া

মানবজীবন পরীক্ষাক্ষেত্র। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘মহামহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যার করায়ত্ত; তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, যাতে পরীক্ষা করবেন তোমাদের, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা-৬৭ মুলক, আয়াত: ১-২)

জীবনের পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায় ও ধরন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানি, প্রাণহানি ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। আপনি শুভ সংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, “আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।” এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর এরাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)

আল–কোরআনে বিবৃত হয়েছে, ‘আলিফ লাম মিম! এই সেই মহাগ্রন্থ, যাতে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই, এটি মুত্তাকিনদের জন্য পথপ্রদর্শক। যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদের যে রিজিক-দৌলত দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। আর যারা বিশ্বাস করে আপনার প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি, আর যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনার পূর্বে এবং তারা পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াতের ওপরে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১-৫)

কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই সফল হয়েছে সে বিশ্বাসীরা, যারা তাদের নামাজে বিনয়ী-বিনম্র, যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে, যারা জাকাত প্রদানে সক্রিয়, যারা নিজেদের গোপনাঙ্গকে সংযত রাখে, যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা তাদের নামাজে যত্নশীল হয়, তারাই হবে জান্নাতুল ফেরদৌসের অধিকারী। যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ১-১১)

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন মজিদে তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন অজ্ঞ লোকে মূর্খতাসুলভ সম্বোধন করে, তখনো তারা সালাম ও শান্তির বাণী বলে। তারা রাত্রি যাপন করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এবং তারা বলে—“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের মধ্য থেকে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত করুন; জাহান্নামের শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ! নিশ্চয় তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসেবে নিকৃষ্ট” আর যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা এই দুইয়ের মাঝে মধ্যপন্থায় থাকে। তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এসব করে, তারা শাস্তি ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে তারা হীনাবস্থায় স্থিত হবে। তবে তারা নয়, যারা তওবা করে ইমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের পাপ পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যারা তওবা করে ও সৎকর্ম করে, তারা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়। আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয় মর্যাদার সহিত তা উপেক্ষা করে চলে।

আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না এবং যারা প্রার্থনা করে, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি দান করুন, যারা আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর হবে এবং আমাদের মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন।” তাদের প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষসমূহ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদের সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সম্ভাষণসহকারে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও আবাসন হিসেবে তা কতই উৎকৃষ্ট!’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৬৩-৭৬)

সফলতা ও মুক্তির জন্য শুধু নেক আমল বা সৎকর্মই যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন গুনাহমুক্ত পবিত্র জীবন।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]