তিন গোয়েন্দার অপ্রকাশিত ৩টি বইয়ের কাহিনিসংক্ষেপ

সোনারহস্য

আলমারির ভেতরে রাখা মেরি চাচির সোনার গয়নাগুলো আপনাআপনি পাল্টে হয়ে যাচ্ছে তামা অথবা মিশ্র সোনার গয়না। ওজনেও কম কম লাগছে। কিন্তু দিশেহারা মেরি চাচিকে ভরসা দিয়ে রাশেদ পাশা বলছেন, এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক আছে।

তবু চিন্তায় পড়ে গেছে কিশোর পাশা। তার সঙ্গে চিন্তায় পড়ে গেছেন রবিনের মা মিসেস মিলফোর্ড এবং মুসার মা মিসেস আমান। তাঁরা দুজনই শুল্ক গোয়েন্দার ভয়ে মেরি চাচির আলমারিতে গয়না লুকিয়ে রেখেছিলেন। এখন সোনার পরিমাণ ওলট-পালট হওয়ায় দুজনই পাগলপ্রায়।

নতুন করে সোনা মাপামাপির জন্য রাশেদ পাশা ডাকলেন টেরিয়ার ডয়েল ওরফে শুঁটকিকে। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে শুঁটকি টেরি হাজির হয়ে গেল এক স্বর্ণকারকে সঙ্গে নিয়ে। খ্যাঁক খ্যাঁক করে গা-জ্বালানো হাসি দিয়ে তিন গোয়েন্দাকে সে বলল, ‘কুল গাইস, আমার স্বর্ণকার বাংলা ৪ আর ইংরেজি ৮-এর মধ্যে পার্থক্য জানে।’

সোনা মাপার পর জানা গেল সব ঠিকই আছে, কোনো গড়বড় হয়নি। কিন্তু একটা খুঁতখুঁতানি থেকেই গেল কিশোরের মনে।

ওদিকে রাশেদ পাশার আচরণ দিন দিন সন্দেহজনক হয়ে উঠছে। ইদানীং তাঁকে প্রায়ই কোনো এক হ্যাকারের সঙ্গে ফেসবুকে ছবি আপলোড করতে দেখা যায়। আবার ‘বিদেশে যেভাবে টাকা পাচার করবেন’—এ ধরনের অনলাইন আর্টিকেলগুলোও নিয়মিত তাঁর টাইমলাইনে শেয়ার করেন তিনি।

তবে কি ভেতরে–ভেতরে জমে উঠছে গভীর কোনো ভুতুড়ে রহস্য?

তদন্তে নামল তিন গোয়েন্দা।

কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে এল তামাটে সোনা!

তাহলে আসল সোনা গেল কোথায়?

কয়লা উধাও

বারবিকিউ পার্টি করবে বলে এক ট্রাক কয়লা কিনে এনেছিল রবিন মিলফোর্ড। কিন্তু সকালে উঠে দেখে, ট্রাক দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কয়লা উধাও!

‘নিশ্চয়ই বাতাসে উড়ে গেছে কয়লা, অথবা কারও বাসায় আজকে পেস্ট ছিল না, তাই সে তোমার কয়লা দিয়ে দাঁত মেজেছে।’ রবিনের কাঁধে হাত রেখে বোঝানোর চেষ্টা করলেন মিস্টার মিলফোর্ড।

কিন্তু বাবার কথা মানতে পারল না রবিন। রহস্য উদ্ধারে কিশোর আর মুসাকে ডাকল সে। বিরক্ত হলেও রবিনের ডাকে সাড়া দিয়ে তদন্তে নামল দুই গোয়েন্দা। হাজির হলো ছোটখালিয়া কয়লাখনিতে। সেখানে ঘটছে একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা।

কেন ডিটারজেন্ট দিয়ে কয়লা ধুলেও ময়লা যাচ্ছে না? কারা কয়লাখনির কর্মকর্তাদের বিদেশ গমনে বাধা দিচ্ছে? হঠাৎ করে আজকাল কেন মানুষেরা টুথপেস্টের বদলে কয়লা ব্যবহার করছে? আর কেনই-বা কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে আছে দীর্ঘদিন? সব প্রশ্নের উত্তর পেতে তিন গোয়েন্দা অপেক্ষা করতে লাগল দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনের।

এখন দুদক কি পারবে তিন গোয়েন্দার প্রত্যাশামতো প্রতিবেদন তৈরি করতে? নাকি কষ্ট করে তিন গোয়েন্দাকেই কয়লা দিয়ে দাঁত মেজে তদন্তে নামতে হবে আবার?

মিরপুরের গুপ্তধনরহস্য

ভর্তি কমিটির ‘অস্বাভাবিক’ খাওয়াদাওয়া নিয়ে তদন্ত করার কারণে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তিন গোয়েন্দাকে। তাদের হাতে এখন অখণ্ড অবসর। এই সুযোগে জিনা তিন গোয়েন্দাকে আমন্ত্রণ জানাল তাদের সদ্য কেনা মিরপুরের বাড়িতে।

আমন্ত্রণ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই প্লেনে চেপে বসল তিন গোয়েন্দা। বিমানবন্দরে নেমে দেখল, তাদের জন্য রোলস-রয়েস নিয়ে হাজির হয়ে আছে শোফার হ্যানসন। কিন্তু মেট্রোরেলের জন্য খোঁড়াখুঁড়িতে ক্ষতবিক্ষত রাস্তা, যানজট আর প্রবল বৃষ্টির কারণে নৌকা ভাড়া করে জিনাদের মিরপুরের বাড়িতে আসতে বাধ্য হলো তিন গোয়েন্দা।

বাড়িতে আসতে না-আসতেই শুরু হলো একের পর এক চমকপ্রদ ঘটনা। লোকে বলাবলি করতে লাগল, এই বাড়িতে নাকি গুপ্তধন লুকানো আছে। ব্রিটিশ আমলে এলিয়েনরা এসে তাদের স্পেসশিপের রিমোট এই বাড়ির নিচে লুকিয়ে রেখে গিয়েছিল। সেই রিমোটই এত দিনে গুপ্তধনে পরিণত হয়েছে। এসব গুজব শুনে তদন্তে নামবে নামবে করছে তিন গোয়েন্দা। আর খবর পেয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসল বিখ্যাত পুলিশ অফিসার ফগর‌্যাম্পারকট অ্যান্ড কোং।

‘ঝামেলা সব, সরো দেখি’—এই বলে তিন গোয়েন্দাকে স্মার্টফোনে গেম খেলতে বলে দলবল নিয়ে গুপ্তধন উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়ল ফগর‌্যাম্পারকট। টানা ছয় ঘণ্টা ২০ জন শ্রমিক ব্যর্থ খোঁড়াখুঁড়ি করল, কিছুই পাওয়া গেল না।

‘গ্রাউন্ড রাডার নিয়ে আবার খোঁড়াখুঁড়ি করা হবে।’ এই বলে বিদায় নিল ‘ঝামেলা’ ওরফে ফগর‌্যাম্পারকট।

এখন কী করবে তিন গোয়েন্দা? স্মার্টফোনে গেম খেলতে থাকবে, নাকি ফগর‌্যাম্পারকটের সঙ্গে ঘাড়ত্যাড়ামি করে গুপ্তধন উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়বে? নাকি অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো দিনরাত ফলো করবে? নাকি সূত্র খোঁজার জন্য আমির খান অভিনীত পিকে সিনেমাটা আবার দেখতে শুরু করবে?

‘মিরপুর থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া করতে হবে, সে জন্য চাই প্রচুর টাকা। তাই যেভাবেই হোক গুপ্তধন উদ্ধার করতেই হবে।’ এই বলে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ঝাঁপিয়ে পড়ল কিশোর, মুসা ও রবিন।

তিন গোয়েন্দা কি পারবে মিরপুর থেকে হেলিকপ্টারে করে এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে?