মেডিকেল রস

ভুল বোঝাবুঝিএক ভদ্রলোক, বয়স পঁয়তাল্লিশের ঘরে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছেলেদের হোস্টেলের সামনে এসে অনেকক্ষণ ধরে ঘোরাঘুরি করছেন দেখে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘আংকেল, আপনি কাকে খুঁজছেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি একটু বোনের খোঁজে এসেছিলাম।’ ছেলেটি বলল, ‘আপনি তো ভুল জায়গায় এসেছেন। আপনি এক কাজ করুন, রাস্তা পার হয়ে ওপারে ক্যাম্পাসের ভেতরে মেয়েদের হোস্টেলে খোঁজ নিন, ওখানে আপনার বোন থাকতে পারে।’ তিনি বললেন, ‘না, ওই বোন না। আমি এসেছি বোন মানে হাড্ডির সেট কিনতে। আমার ছেলে এই বছর মেডিকেলে চান্স পেল তো!’অ্যাপ্রন ও মেডিকেলের প্রথম শিক্ষাঅনেক কাল আগে রাস্তাঘাটে কালেভদ্রে কারও গায়ে অ্যাপ্রন দেখলে লোকে সম্মান করে কথা বলত। ডাক্তার বা মেডিকেল স্টুডেন্ট বলে কথা! এখন অবশ্য অ্যাপ্রনের সেই ভাব নেই। অনেক স্কুল-কলেজে অ্যাপ্রন আজকাল সাধারণ এক ইউনিফর্মের নাম। চকচকে এয়ারকন্ডিশন সেলুনের নরসুন্দররাও আজকাল চুল কাটার আগে অ্যাপ্রন পরে নেন। আমার মেডিকেল-জীবনের প্রথম দিনের একটা ঘটনা বলি। প্রথম ক্লাসে যাওয়ার সময় কাঁধে অ্যাপ্রন ঝুলিয়ে কলেজের দিকে যাচ্ছিলাম। পড়লাম জনৈক অধ্যাপকের সামনে। ‘এই ছেলে, মাস্তানের মতো কাঁধে অ্যাপ্রন ঝুলিয়ে হাঁটছ কেন?’ মাস্তানরা কাঁধে অ্যাপ্রন ঝুলিয়ে হাঁটে—এটাই ছিল আমার মেডিকেল-জীবনের প্রথম তাত্ত্বিক শিক্ষা। আমি সালাম দিয়ে দ্রুত কাঁধ থেকে অ্যাপ্রন নামিয়ে গায়ে দিতে দিতে কলেজে ঢুকছিলাম আর আড়চোখে দেখলাম স্যার তাঁর গা থেকে অ্যাপ্রনটা খুলে কাঁধে ঝুলিয়ে গাড়িতে গেলেন। সম্ভবত তিনি চেম্বারে যাচ্ছিলেন।চেনা-অচেনাএই গল্পটা আমার বন্ধু তানভীরের কাছ থেকে শোনা। তার এক বোন তানমী, মেডিকেলে পড়ে। সার্জারি ক্লাস করতে সে অপারেশন থিয়েটারে গেল। হঠাৎ সার্জারি করতে ব্যস্ত থাকা একজন জুনিয়র সার্জন তাকে বললেন, ‘এই তানমী, আমাকে চিনতে পারছ?’ তানমী বলল, ‘না স্যার।’ তিনি বললেন, ‘আরে আমাকে তুমি চিনতে পারছ না! আমি তোমাদের মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ে জীববিজ্ঞানের অনেক ক্লাস নিয়েছি।’ তানমী তখনো চিনতে পারছে না দেখে তিনি খুবই মর্মাহত হয়ে বললেন, ‘মনে করে দেখো, একদিন তোমাকে খুব ঝাড়ি দিয়েছিলাম, এখন চিনতে পারছ?’ তানমী বলল, ‘স্যার, চিনব কীভাবে? আপনার মুখে তো মাস্ক পরা।’কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টঅ্যানাটমি ডিসেকশন ক্লাসে লাশ কেটে কেটে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কে শেখানো হয়। এই লাশগুলো সাধারণত বেওয়ারিশ হিসেবে পাওয়া। এ রকম একটা ক্লাসে একটা লাশ কেটে কেটে স্যার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ স্যার কিডনির জায়গাটায় হাত দিয়ে দেখলেন কিডনিগুলো নেই। সম্ভবত অন্য কোনো গ্রুপে কিডনি নিয়ে পড়ানোর জন্য ওটা কেটে নেওয়া হয়েছিল। স্যার তখন বললেন, রফিককে ডাকো। রফিক ছিলেন লাশ সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মচারী। রফিক আসতেই স্যার বললেন, ‘রফিক, একটা কিডনি দাও তো।’ ক্লাসের পেছনের দিকে বসা জাভেদ তখন সশব্দে বলে উঠল, ‘কেন স্যার, ওই কিডনিটা এনে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে একে বাঁচিয়ে তুলবেন নাকি?’