
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের প্রাথমিক ও মধ্য ভাগের কাজ ভালোভাবে শেষ হলেও শেষ পর্যায়ে এসে সবকিছু যেন থমকে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং আবাসনব্যবস্থায়।
মোট ১১টি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু একটি প্রশাসনিক ও একটি একাডেমিক ভবন ছাড়া বাকি নয়টি ভবনেরই কাজ অসম্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা হলে উঠতে পারছেন না। অথচ আর সামান্য কাজ হলেই শিক্ষার্থীদের এই দুর্ভোগ লাঘব হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের গাফিলতির কারণে নির্মাণকাজের কোনো অগ্রগতি নেই। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভাষ্য হচ্ছে, ঠিকাদার দিয়ে কাজ করালে একটু সমস্যা থাকেই।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে দুটি পাঁচতলা ভবনে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পাশে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে পাঁচতলা অপর একাডেমিক ভবন। ছাত্রদের জন্য দুটি ও ছাত্রীদের জন্য একটি—এই তিনটি হলের কাজ শেষ। কিন্তু হলগুলোতে ওঠা যাচ্ছে না। ফাঁকা মাঠে ভবনগুলো করায় নিচের দিকে মাটি ফেলতে হবে। নয়তো কোনোভাবেই এগুলোতে ওঠার সুযোগ নেই।

এ ছাড়া গ্রন্থাগার ভবন, উপাচার্য ভবন, ক্যাফেটেরিয়া ও ডরমিটরির কাজও অসম্পূর্ণ রয়েছে। এগুলোর কাজ অনেকটা এগিয়ে গেলেও কবে শেষ হবে তা জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর নেই। এতে অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল বিভাগ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক ভবন ও তিনটি আবাসিক হল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু এখনো সেগুলো অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অন্য অসম্পূর্ণ ভবনগুলো হলো গ্রন্থাগার ভবন, ডরমিটরি ভবন দুটি, ক্যাফেটেরিয়া ও উপাচার্য ভবন। এগুলোও দেড় বছর আগে হস্তান্তর করার কথা ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ছয় অনুষদের অধীন ১৮টি বিভাগে সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ-সংকটের কারণে তিনটি বিভাগের কার্যক্রম চলছে শহরের জিলা স্কুলের বর্ধিত ভবনে।
নগরের রূপাতলী এলাকায় ফেরদৌসী ভিলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষার্থী ভাড়া থাকেন। এখানকার নিবাসী লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে উঠতে না পারায় তাঁদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এখন আবার বলা হচ্ছে জুনে। বাস্তবে কবে উঠতে পারব জানি না।’
জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে দেখছি কাজ হচ্ছে না। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের গাফিলতির কারণে কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। আছে শ্রেণিকক্ষ সমস্যা। সীমানাপ্রাচীর নেই। সব মিলিয়ে সমস্যার মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে। এখান থেকে দ্রুত উত্তরণ হওয়া দরকার।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বারবার তাগাদা দিয়েও কাজের গতি বাড়ানো যাচ্ছে না। ছাত্রাবাসের নিচের মাটির কাজ করা হলে শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারতেন। সেই কাজটুকু পর্যন্ত করা হচ্ছে না।
যোগাযোগ করলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাজে অগ্রগতি নেই, কথাটি সঠিক নয়। ঠিকাদার নিয়ে কাজ করালে একটু সমস্যা তো হয়ই। তবে প্রথম ধাপের তিন একাডেমিক ভবনের দুটির কাজ শেষ হয়েছে। একটি ভবনের কাজ ২০ ভাগ বাকি থাকলেও জুনের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে। দ্বিতীয় ধাপের দরপত্রের আওতায় ছাত্রাবাসের কাজও শেষ। এখন মাটি ভরাটের কাজ শুরু হবে। এগুলোও জুনের মধ্যে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।