চোরের মায়ের বড় গলা

হনুলুলুর খুব সাজানো-গোছানো এক শহর, নামটা খুব সম্ভবত...থাক বাদ দিন। হবে কিছু একটা। সেখানে বাস করত এক চোর। বাংলাদেশি বংশোাদ্ভূত হনুলুলিয়ান এক চোর। বেশ খ্যাতিমান চোর ছিল। ধারণা করা হয়, চোর মুলুকে যেকোনো তালা কিংবা পাসওয়ার্ড ভাঙায় এখন পর্যন্ত তার বিকল্প নেই। তার জীবনদর্শন ছিল, চুরি হচ্ছে একধরনের শিল্প, ইটস অ্যান আর্ট। এটা উপলব্ধি করার বিষয়। অন্তরে ধারণ করার বিষয়। তাই রাতের আঁধারে নো চুরি-চামারি। যা হবে সব দিনের আলোর মতো পরিষ্কার থাকতে হবে। বুঝতেই পারছেন, সেই চোর চুরি করত পরিষ্কার দিনের আলোয়।

অন্যদিকে দেশে, মানে বাংলাদেশে বাস করতেন সেই প্রভাবশালী চোরের মা। স্বভাবতই তিনি জানতেন না তাঁর ছেলে হনুলুলুতে কী কাজ করে। তবে এটুকু বুঝতেন যে ছেলে ভালো একটা জব করে এবং তাকে প্রতি মাসেই বেশ মোটাসোটা কোনো নেকলেস পাঠায়। গুড, খুবই ভালো কথা। তবে নেকলেস পাঠায় কেন? অন্য কিছু নয় কেন? হোয়াই?

ঘটনা হচ্ছে, ছোটবেলা থেকেই চোরের মায়ের গলা কিঞ্চিত বড়। খুব যে বেশি বড়, তা নয়। জাস্ট সাড়ে ৭ ইঞ্চি লম্বা। আর এ কারণে গলার যেকোনো অলংকারে তাঁকে খুব মানাত। তাঁর জীবনের অন্যতম একটি শখ ছিল, গলাভর্তি গয়না পরা। সেই শখ পূরণ করতেই ছেলে তাঁকে প্রতি মাসে টাকাপয়সা ছাড়াও একটা করে নেকলেস পাঠাত। তবে ছোট্ট একটা ঝামেলা হচ্ছিল। গয়নায় মন ভরছিল ঠিকই, কিন্তু গলা তো ভরছিল না। দিন যায়, মাস যায়, মাসের পর বছর যায়, কিন্তু গলা তো আর ভরে না।

এমন সময় কোথায় যেন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে তাঁর ছেলে। জব্দ করা হয় তার সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট। চোরের মাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব পড়ে হনুলুলুতে নিযুক্ত তৎকালীন বাংলাদেশি হাইকমিশনারের কাঁধে। সোজা চোরের গ্রামে চলে যান তিনি। খুঁজতে গিয়ে জানতে পারেন, এই এলাকায় চোরের মাকে কেউ চেনে না। তবে ওই যে, ‘প্রবাসীর বড় গলাওয়ালা মা’ বলতেই সবাই চিনে ফেলল। কথিত আছে, তখন থেকেই নাকি বাংলাদেশে এক নতুন প্রবাদের জন্ম হয়—চোরের মায়ের বড় গলা।