বায়োমেট্রিক জ্ঞান

.
.

কনসার্টে পারফর্ম করার জন্য মঞ্চে উঠেছে আর্বোভাইরাস। ড্রামার নাফিজ তাঁর স্বভাবসুলভ ‘চিলিং মুডে’ বসে যেই না ড্রামসে স্টিক ছোঁয়ালেন, অমনি ড্রামস থেকে এক মহিলার কণ্ঠস্বর বের হয়ে এল, ‘আপনার ড্রামসটি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন তো? না করে থাকলে আজই...।’ সেটা শুনেই নাফিজ বিস্মিত হয়ে চোখ বড় বড় করে ড্রামসের দিকে তাকালেন। তারপর যতবারই স্টিক দিয়ে ড্রামসে বাড়ি দেন, একই ঘটনা ঘটে!
সেটা দেখে বেজগিটারিস্ট আদনান মুচকি হেসে বেজগিটারটা বাজাতে শুরু করলেন। যেই না তারে আঙুল ছোঁয়ালেন, সেই মহিলার কণ্ঠ, ‘আপনার বেজগিটারটি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন তো? না করে থাকলে আজই...।’ এবার আদনানের মুখের অবস্থাও নাফিজের মতো। সব দেখেশুনে গিটারিস্ট রঞ্জন তাঁর গিটারটির দিকে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে রইলেন। তারপর আস্তে আস্তে যেই না তারে আঙুল ছোঁয়ালেন, সঙ্গে সঙ্গেই ওই মহিলার কণ্ঠ, ‘আপনি কি আপনার গিটারটি...।’ রঞ্জন আর থাকতে পারলেন না। সঙ্গে সঙ্গেই আছাড় দিয়ে তাঁর শখের গিটারটি ভেঙে ফেললেন!
ভাগ্যিস অন্য গিটারিস্ট সুহার্ত সেদিন আসেননি! ভোকাল সুফি তখন চিন্তায় পড়ে গেছেন। তিনি তো কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজান না। তাঁকেও কি এই ফ্যাসাদে পড়তে হবে? ভাবতে ভাবতে মাইক্রোফোনে ফুঁ দিলেন একটা। এবার মাইক্রোফোন থেকে ভেসে এল, ‘আপনার গলাটি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে...।’ কালবিলম্ব না করে মঞ্চ থেকে বের হয়ে গেলেন সুফি!
কনসার্টের আয়োজক তখন মাইক্রোফোনে এসে ঘোষণা দিলেন, ‘বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন না করার কারণে আজকের কনসার্টটি বাতিল বলে ঘোষণা করা হলো! আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত!’
শুনেই হতাশ হয়ে পড়ল তালহা। এত দিন পর কনসার্টে এসে একি কাণ্ড! কী আর করা! তালহা ভাবল, এই দুঃখে শাহেদের বাসায় যাবে। গিয়ে শাহেদের গান শুনে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবে। শাহেদের বাসায় গিয়ে সে দেখে, শাহেদ টেবিলে কপাল দিয়ে বাড়ি দিচ্ছে! তালহা ভাবল, নিশ্চয়ই নতুন রিলেশনটা ব্রেকআপ হয়েছে! যেই সে সান্ত্বনা দিতে গেল অমনি শাহেদের ঝাড়ি, ‘আরে, রাখ তোর রিলেশন! বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করিনি দেখে কম্পিউটার সেই যে বন্ধ হইসে, আর চালু হয় না!’
হায় হায় করে ওঠে তালহা! এসব কী হচ্ছে! মন খারাপ করে বাসায় আসে সে। এসেই বিছানায় পড়ে থাকা প্রথম আলোটা হাতে নেয় সে। প্রথম পাতায়ই বড় করে লেখা, ‘বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন না করায় সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র রস+আলোর এই সংখ্যা প্রকাশিত হলো না!’ সেটা পড়েই জ্ঞান হারাল তালহা! জ্ঞান হারানোর আগে শুনতে পেল সেই নারীর কণ্ঠস্বর, ‘আপনার জ্ঞান বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন...।’