বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তায় উদ্ভাবনী কৃষি ও কৃষি জীবপ্রযুক্তি

Ashraful Alam (Tito)

অংশগ্রহণকারী

রাখ হরি সরকার

অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মো. শাহজাহান কবীর

মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ধান গবেষণা

ইনস্টিটিউট (ব্রি)

মো. বেনজীর আলম

মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

গ্রেগরী জ্যাফি

সহযোগী পরিচালক, পলিসি অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স, অ্যালায়েন্স ফর সায়েন্স

নাজমা শাহীন

অধ্যাপক, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মো. আবদুল কাদের

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)

মো. ফরহাদ জামিল

কান্ট্রি ডিরেক্টর, সিনজেনটা ফাউন্ডেশন ফর সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার, বাংলাদেশ

মো. আবদুল কাদের

ন্যাশনাল লিড অ্যাগ্রোনমিস্ট, এফএও

আবু নোমান ফারুক আহমেদ

অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, প্ল্যান্ট টেকনোলজি বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

তাসনিমা মেহ্জাবীন

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বারটান

এ এস এম নাহিয়ান

প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট, এসিআই, মলিকুলার জেনেটিকস

সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম

সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

সঞ্চালনা

মো. আরিফ হোসেন

নির্বাহী পরিচালক, ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ

আব্দুল কাইয়ুম

আমাদের দেশ ছোট। মানুষ বেশি। এমন কিছু উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিতে হবে, যেন পুষ্টিমান ঠিক রেখে বেশি খাদ্য উৎপাদন করা যায়। জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, লবণাক্ততাসহ বিভিন্ন কারণে খাদ্য উৎপাদন কমে যায়। এ বিষয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন। আজকের আলোচনা কৃষিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

রাখ হরি সরকার

রাখ হরি সরকার

আমাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে হলে জীবপ্রযুক্তির (বায়োটেকনোলজি) অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে বায়োসেফটি নিশ্চিত করা জরুরি। জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। কৃষিতে দেশের ৬৩ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। তখন দেশে খাদ্যঘাটতি ছিল। প্রচুর খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। কিন্তু এখন তেমন আমদানি করতে হয় না।

আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, পক্ষান্তরে চাষযোগ্য জমি প্রতিবছর ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছে তারপরও দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সরবরাহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আবার পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ খাদ্য মানুষ কতটা পাচ্ছে, সে সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। দ্রুত এবং আশঙ্কাজনক হারে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে—এমন উদ্ভাবনী ফসলের জাত করতে হবে।

জীবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন ফসল উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী একটি অভিমত রয়েছে, বিশেষ করে জীববৈচিত্র্য আর মানব স্বাস্থ্যের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখেই জীবপ্রযুক্তি প্রয়োগ করতে হবে। সেই সূত্রে আধুনিক জীবপ্রযুক্তিকে সফলভাবে পরিচালনার জন্য বায়োসেফটি বা জীবনিরাপত্তা নিয়মকানুনগুলো অনুসরণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশ জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য চুক্তি সমর্থনকারী দেশ, সুতরাং বাংলাদেশ এই জীবনিরাপত্তার বিধান মানতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৩ সালে জীবপ্রযুক্তি প্রয়োগের দ্বারা উদ্ভাবিত কীটপতঙ্গ প্রতিরোধী বিটি বেগুনের চাষ শুরু করেছে। রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের জন্য বায়োসেফটি বা জীবনিরাপত্তা নিয়মকানুন অনুসরণ করে গবেষণা করছে।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মূল উদ্দেশ্য মানুষের জন্য জীবপ্রযুক্তি দ্বারা উদ্ভাবিত ভিটামিন–এ সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইস চাষ করা। প্রযুক্তিকে সফলভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে সব বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হওয়া বাঞ্ছনীয়।

উল্লেখ্য, জীবপ্রযুক্তির আরও কিছু নতুন গবেষণা পৃথিবীতে কার্যকর হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জিনোম এডিটিং প্রযুক্তি দ্বারা ফসলের মানোন্নয়ন। দ্রুততম সময়ে কীভাবে আমাদের দেশে জিনোম এডিটিং–এর মাধ্যমে উদ্ভাবিত ফসল চাষ করা যায়, সে ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। জীবপ্রযুক্তি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।

মো. আরিফ হোসেন

মো. আরিফ হোসেন

দেশে আমরা টেকসই খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তার কথা বলছি। এ জন্য উদ্ভাবনী কৃষি, কৃষি জীবপ্রযুক্তি, জিন প্রকৌশল, জিন এডিটিং ও আরও যেসব উন্নত প্রযুক্তি আছে, সেসব বিষয় আলোচনায় আসবে। ধান উৎপাদনে আমরা সাফল্য অর্জন করেছি। আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। জিনপ্রকৌশল খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। জিনপ্রযুক্তি খাদ্যের উৎপাদন বাড়ায়। খাদ্যের পুষ্টিমান বাড়ায়। দেশের কৃষক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। ভারত একসময় তুলা আমদানি করত। এখন জিনপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রপ্তানি করছে।

আমাদের খাদ্যপণ্য উৎপাদনের সময় পুষ্টিমান ঠিক রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন পরিবেশের ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, এটা স্বাভাবিক কোনো প্রক্রিয়া নয়। জীবপ্রযুক্তি কতটুকু সাহায্য করবে, সেটা আলোচনার বিষয়। খাদ্যনিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য দুটোই জরুরি। পণ্য রপ্তানিও গুরুত্বপূর্ণ। বায়োটেকনোলজি বা সাধারণ যে প্রক্রিয়ায় উৎপাদন হোক না কেন, আমাদের পণ্য রপ্তানিতে সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বায়োটেকনোলজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আর সরকারি–বেসরকারি গবেষণার ফল যেন দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

আবু নোমান ফারুক আহমেদ

আবু নোমান ফারুক আহমেদ

শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে। ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৯৫০ কোটির বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, এখন যে খাদ্য উৎপাদন করা হয়, এর থেকে ৭০ শতাংশ বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। ২০৩০ সালে পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে খাবারের সংকটে থাকবে। স্বাধীনতার পর আমরা যে সবুজ বিপ্লব শুরু করেছিলাম, এর সুফল আমরা পেয়েছি। উচ্চফলনশীল জাতের উৎপাদন শুরু করেছি। কেমিক্যাল ফার্টিলাইজার, পেস্টিসাইড, ইরিগেশনসহ বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য আমরা দানাদার শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। আমাদের সবজি, মাছ ও ফল উৎপাদনে সফলতা রয়েছে। এর সঙ্গে চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

ডাল, তেল, চিনিও আমাদের জন্য জরুরি পণ্য। আমরা যদি ডাল, তেল, চিনি এসব পণ্যের উৎপাদন ৪০ শতাংশ বাড়াতে চাই, তাহলে চিন্তা করতে হয় ধানসহ কোনো ফসলের উৎপাদনে সমস্যা হবে কি না। আমাদের সার্বিক কৃষিতে অনেক সমস্যা রয়েছে।

ভবিষ্যতের কৃষিতে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। খাদ্যের নিরাপত্তা, টেকসই ও দায়িত্বশীল কৃষি। কিন্তু আমাদের সম্পদ সীমিত। এই সীমিত সম্পদ দিয়েই অনেক বেশি উৎপাদন করতে চাই। জমি ফেলে রাখছি না। আমাদের এখন খোরপোশ কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে উত্তরণ করতে হবে।

২০০৭ সালে গ্লোবাল গ্যাপ চালু হলো। গ্লোবাল গ্যাপ হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান নিশ্চিত করে ভালো ফসল উৎপাদন বা গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস (গ্যাপ)। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ নিজস্ব গ্লোবাল গ্যাপ চালু করেছে। কিন্তু আজ ২০২২ সালেও বাংলাদেশ গ্যাপের ফাইল বিভিন্ন টেবিলে ঘুরছে।

এ ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থতা রয়েছে। তাঁরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেননি। দায়িত্বশীল কৃষি মানে আমাদের বায়োটেকনোলজির দিকে যেতে হবে। আমাদের ভুট্টার উৎপাদন অনেক বেশি, এরপরও চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা বলি, ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশের কথা বলি, এসব আকাঙ্ক্ষা তখনই পূরণ হবে, যখন আমরা কৃষিতে টেকসই হব। আজ বিভিন্ন সূচকে আমাদের উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের ভিত্তি হলো কৃষি। বায়োটেকনোলজি আমাদের কৃষি সম্প্রসারণে সহযোগিতা করেছে। ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তি আরও বেশি কাজে লাগাতে হবে।

মো. বেনজীর আলম

মো. বেনজীর আলম

দানাদার শস্যে আমরা এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি যে এই স্বয়ংসম্পূর্ণতা কতক্ষণ ধরে রাখতে পারব। প্রতিবছর ২২ থেকে ২৫ লাখ মানুষ বাড়ছে। তাদের জন্য অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন করতে হচ্ছে। সেদিকে আমাদের বেশি লক্ষ রাখতে হচ্ছে। টেকসই খাদ্যনিরাপত্তার জন্য আমাদের উচ্চফলনশীল জাত উৎপাদন করতে হবে। চাষযোগ্য জমি কমে আসছে। আমাদের ভার্টিক্যাল উৎপাদন বাড়াতে হবে। ধানে লাভ কম। প্রধান ফসল ধান হিসেবে এগোলে কৃষিতে সফলতা আনতে পারব না। কৃষিকে লাভজনক করতে হলে কী করতে হবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণভাবে ভাবতে হবে। কৃষিকে আরও আধুনিক করতে হবে।

কৃষিতে প্রযুক্তি ও যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু একে আরও বাড়াতে হবে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু ধান রোপণও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানে আরও যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কৃষিতে লাভ কম বলে কৃষক এখনো সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করেন। গবেষকেরা বলছেন, প্রতি হেক্টরে ৮ টন ফসল উৎপাদিত হবে। সেখানে প্রকৃতপক্ষে কৃষকেরা তিন থেকে চার টনের বেশি উৎপাদন করতে পারছেন না। এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে না পারলে দানাদার শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে পারব না। এখন আমরা প্রায় দুই কোটি টন সবজি উৎপাদন করছি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, জনপ্রতি প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম সবজি খেতে হবে। এত উৎপাদন সত্ত্বেও আমরা চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। সবজির উৎপাদন আরও বাড়িয়ে রপ্তানি করতে পারব। ফলে আমরা অনেক এগিয়েছি। এমনকি বিদেশি অনেক ফলও আমাদের দেশে এখন চাষ হচ্ছে। ফল উচ্চ মূল্যের ফসল। মানুষ এটা খুব গুরুত্ব ও যত্ন নিয়ে করে। সবজি ও ফল রপ্তানির জন্য যে মান নির্ধারণ করা দরকার, সেটা করতে পারছি না বলে রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছি। তবে এ বিষয়ে আমাদের কার্যকর উদ্যোগ আছে। ভিয়েতনাম ৪০ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি করে। সেখানে এবার আমরা দেড় বিলিয়ন ডলার কৃষিপণ্য রপ্তানির আশা করছি। আমাদের কৃষিপণ্য উৎপাদনে বায়োটেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

মো. ফরহাদ জামিল

মো. ফরহাদ জামিল

প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় কৃষির সমসাময়িক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। পরিবেশ–পরিস্থিতির সঙ্গে যেন খাপ খায়, এমন গবেষণার দিকে যেতে হবে। গবেষণার ফল দ্রুত কৃষক ও ভ্যালু চেইনের সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ভোক্তাদের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। উৎপাদনেও বৈচিত্র্য আনতে হবে। গবেষণা থেকে ব্যক্তি খাত, কৃষক, ভোক্তাসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার লাভবান হবে। শুধু সরকারই গবেষণা করবে, এমন না। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ এ গবেষণা করতে পারে। অনেক ব্যক্তিমালিক এখন কৃষি ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের কৃষি খাতে আরও বেশি কীভাবে যুক্ত করা যায়, সেটা ভাবতে হবে।

কৃষক যাঁদের কাছ থেকে সার–কীটনাশক নেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন, যেন তাঁরা কৃষককে সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন। বরেন্দ্র এলাকায় পানির অভাব আছে। সেখানকার অর্থকরী ফসল হলো আম। ওখানে আলট্রাহাইডেনসিটি ম্যাঙ্গো প্ল্যানটেশন হচ্ছে। আগে এখানে ১ হেক্টর জমিতে ৬০টি আমগাছ লাগানো যেত। এখন সেখানে প্রায় ৭০০ গাছ লাগানো যায়। এ প্রযুক্তি সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে। কৃষক চান উৎপাদন বাড়াতে আর খরচ কমাতে। কীটনাশকের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সেটা করা যায়। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষক তাঁর শ্রমব্যয় কমাতে পারেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষক তাঁর বিনিয়োগ হারান। এ জন্য আবহাওয়াভিত্তিক ফসল উৎপাদন করতে হবে।

মো. আবদুল কাদের
Ashraful Alam (Tito)

মো. আবদুল কাদের

আমাদের খাদ্যের একটা বড় অংশ চাল। চাল শুধু খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য উৎপাদন হয় না। এর সঙ্গে পুষ্টির একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের খাদ্যতালিকায় ছয়টা উপাদান আছে। ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ শর্করা আমরা চাল থেকে পেয়ে থাকি। পুষ্টি পাই ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ। ৮ থেকে ১০ শতাংশ পাই চর্বি। চালে যথেষ্ট মিনারেলও আছে। এ জন্য চাল শুধু ভাত খাওয়ার জন্য উৎপাদন করি না। এ থেকে আরও অনেক উপাদান পাই। আমরা জিংক, আয়রন ও ভিটামিন-এ, চালের উন্নয়ন করেছি।

খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা আসতে অনেক সময় লাগবে। কারণ, এখনো আমরা এর স্বাভাবিক চাহিদা পূরণ করতে পারিনি। বায়োটেকনোলজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বাধা আছে, সেটা দূর করতে না পারলে খাদ্যনিরাপত্তা আসবে না। ‘ব্রি’ চাল নিয়ে অনেক কাজ করেছে। ডায়াবেটিস মুক্ত চাল থেকে শুরু করে, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, লো–জিআই, কালো চালসহ ব্রির অনেক উদ্যোগ আছে, যেটা পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তাকে নিশ্চিত করবে। ‘ব্রি’ ২০৫০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা করেছে।

নাজমা শাহীন

নাজমা শাহীন

একসময় আমাদের দেশ সাত কোটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করতে পারত না, যদিও তখন চাষযোগ্য জমি এখনকার তুলনায় অনেক বেশি ছিল। সেই বাংলাদেশ এখন প্রায় ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদন করছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা আমাদের দেশে কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। কিন্তু দেশে দিন দিন জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, করোনা–পূর্বকালীন জনগোষ্ঠীর হতদরিদ্র ছাড়া প্রায় সবাই পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করত। আমাদের গবেষণায় আরও এসেছে ৩০-৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী প্রয়োজনের তুলনায় ৭টি অণুপুষ্টি অপর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা আছে। তাই শুধু খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করলে হবে না। অবশ্যই পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে এবং সেটা সম্ভব হবে স্বাস্থ্যসম্মত অর্থাৎ হেলদি ডায়েট গ্রহণের মাধ্যমে। সেটা নিশ্চিত করতে হলে খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে পুষ্টির বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

আমাদের যে খাবারের তালিকা, সেখানে কোনো খাবারে পুষ্টি বেশি আবার কোনোটায় কম। তাই পর্যাপ্ত খাবার খেলেও পুষ্টির অভাব থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের বায়োটেকনোলজি ও নতুন উদ্ভাবন অবশ্যই জরুরি।

তবে বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে যে জাতগুলো উদ্ভাবন করা হচ্ছে বা হবে, তার মধ্যে কোনো ক্ষতিকর উপাদানের সংযোজন বা প্রভাব রয়েছে কি না, সেটি অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বিভিন্ন জাত যেমন দেশি-বিদেশি জাতের ক্রসিংয়ের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল জাত বা রোগপ্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করা হয়। এ ক্ষেত্রে বায়োসেফটির প্রয়োজন আছে, কিন্তু তার জন্য কোন রেগুলেশন নেই। ক্রসিংয়ের মাধ্যমে কিছু ডালের জাতের মধ্যে নতুন সম্ভাব্য এলার্জিনের উপস্থিতি আছে। আমরা বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করব মানুষের কল্যাণে। কিন্তু সেটা যেন নতুন স্বাস্থ্যসমস্যা বা ঝুঁকি তৈরি না করে, সেটা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। জিএমও এবং ক্রসিং দুটোর জন্যই তদারকি ব্যবস্থা রাখতে হবে। বায়োটেকনোলজি পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে কি না, সেটাও দেখতে হবে। এসব গবেষণার জন্য অত্যাধুনিক গবেষণাগারসহ যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

মো. আবদুল কাদের

মো. আবদুল কাদের

অন্যরা যখন কৃষি খাতের উন্নয়নের কথা বলে, তখন একজন কৃষিবিদ হিসেবে গর্ববোধ করি। ধান, ভুট্টা, সবজি, ফলমূল উৎপাদনে আমরা অনেক এগিয়েছি। বিশেষ করে ধান উৎপাদনের কথা অনেক বেশি আলোচনায় আসে। চাষযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালের জমির সঙ্গে যদি তুলনা করি, তাহলে দেখব আমাদের ধানের জমি কমে গেছে। কিন্তু উৎপাদন চার গুণ বেড়েছে। এখন ১৮ কোটি মানুষের প্রয়োজনীয় ধান উৎপাদিত হয়। এ ক্ষেত্রে জিনপ্রযুক্তির ভূমিকা আছে। আমাদের আরও অ্যাডভান্স বায়োটেকনোলজির দিকে যেতে হবে। ক্রসিংও বায়োটেকনোলজির মধ্যে পড়ে। সব বিষয় নিয়েই আমাদের কথা বলতে হবে। কয়েকটি শস্যের ক্ষেত্রে উৎপাদনে উন্নতি করেছি। এ ক্ষেত্রে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের এক তথ্যে দেখা যায়, দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ এখনো সঠিক পরিমাণ পুষ্টি পাচ্ছে না। খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে পুষ্টিনিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। এ দুটি ক্ষেত্রেই বায়োটেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ভবিষ্যতে জনসংখ্যা আরও বাড়বে। ফসলি জমির পরিমাণ কমতে থাকবে। আমাদের উৎপাদন এখন যে অবস্থায় আছে, একে আরও ওপরে নিয়ে যেতে হবে।

এ ক্ষেত্রে জিন প্রকৌশলের বিকল্প নেই। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারে এমন ফসলের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এখানেও আমাদের সেই জিন প্রকৌশলের ওপর নির্ভর করতে হবে। পর্যাপ্ত উৎপাদনের সঙ্গে পর্যাপ্ত পুষ্টির দিকেও নজর দিতে হবে। ইতিমধ্যে এ ক্ষেত্রে কিছু সফলতা এসেছে। ভবিষ্যতে আরও আসবে বলে আশা করি। আমাদের কিছু উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন খাবার আছে, যেগুলো মানুষ কম খায়। যেমন ওটস, বার্লি, চিনা, কাউন ইত্যাদি। এসব বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

এ এস এম নাহিয়ান

এ এস এম নাহিয়ান

আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কৃষককে সহযোগিতা করা। কৃষকের যদি সম্পদ সৃষ্টি হয়, তাহলে সব ক্ষেত্রে আরও ভালো করবেন। জিন প্রকৌশলের একটা বিশাল ভূমিকা আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুষ্টিনিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কত বেশি শস্য উৎপাদিত হবে, সেটি নিয়ে ভাবা হয়। কিন্তু এর পুষ্টিমান ঠিক থাকছে কি না, সেটা আমরা ভাবছি না। জলবায়ু ও পরিবেশের বিরূপ পরিস্থিতি–সহনীয় ফসল উৎপাদন করতে পারছি। কিন্তু আমাদের বাণিজ্যিক পণ্যের কথা সেভাবে ভাবছি না। দেশে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়। ৭৫ হাজার মেট্রিক টন আলু আমাদের প্রয়োজন। ২৫ হাজার

মেট্রিক টন ঠিকভাবে রপ্তানি করতে পারছি না। এটা জাপানের মোট উৎপাদনের চেয়ে বেশি। প্রতিবছর জাপান প্রচুর আলু আমদানি করে। কিন্তু পুষ্টিমানসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া পূরণ

করতে না পারার জন্য আমরা জাপানে আলু রপ্তানি করতে

পারি না। মানসম্মত বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদন করতে

পারলে কৃষকের উন্নতি হবে। তার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে।

গ্রেগরী জ্যাফি

গ্রেগরী জ্যাফি

আমি মনে করি, বায়োটেকনোলজির ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা, গাইডলাইন ও তদারক থাকা দরকার। এ ক্ষেত্রে একটা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে। বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এখনো বায়োটেকনোলজি ব্যবহার হচ্ছে না। এ প্রযুক্তির বিষয়ে যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, যারা প্রয়োগ করবেন সবার মধ্যে একটা স্বচ্ছতা থাকতে হবে। তাহলে এ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে সফলতা আসবে।

তাসনিমা মেহ্জাবীন

তাসনিমা মেহ্জাবীন

আমাদের এখন নিউট্রিশনভিত্তিক কৃষির দিকে যেতে হবে। আর খাদ্যনিরাপত্তার বিষয় হলো খাদ্য পাওয়ার সুযোগ, পর্যাপ্ততা, খাদ্যগ্রহণের ধরন। খাদ্যগ্রহণের ধরনের জন্য পুষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। আমার মনে হয় জিন প্রকৌশল আমাদের এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। আরেকটা হলো জনস্বাস্থ্য। আমি বেগুনে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ে কাজ করেছি। প্রায় ৪২ রকম কীটনাশক বেগুনে ব্যবহার করা হয়। বেগুনে কোন কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে, সেটা বলা থাকে। কিন্তু কৃষকেরা এটা মানেন না। এসব বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

মো. শাহজাহান কবীর

মো. শাহজাহান কবীর

জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থা (এফএও) গ্লোবাল ফুড আউটলুক ২০২০ প্রকাশ করেছে। তারা সেখানে বলেছে যে ২০২২ সালে বাংলাদেশের চালের উৎপাদন হবে ৩৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন। আমরা আশা করছি, ৩৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন। আমাদের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জন্য বছরে খাদ্যের চাহিদা ২৫ দশমিক ৩১ মিলিয়ন টন। মাছ, পশুসহ অন্যান্য খাতে খাদ্যের প্রয়োজন হয় ১০ দশমিক ১২ মিলিয়ন টন। তাহলে আমাদের ৩ মিলিয়ন টনের বেশি খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। আমাদের এক হিসাব বলে, প্রতিদিন একজনের ৪০৫ গ্রাম চাল প্রয়োজন। এক দিনে আমাদের খাবারের চাহিদা হলো প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন চাল। মাসে প্রয়োজন হয় প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন চাল।

আমাদের যে ৩০ লাখ টন খাবার উদ্বৃত্ত থাকে, সেটা হয়তো ৪০ দিনের খাবার। এটা মিলমালিক, কৃষকসহ অনেকের ঘরে থাকে। বাজারে পর্যান্ত চালের সরবরাহ আছে। কিন্তু দাম বেশি। আমরাও মনে করি না যে এত দাম হওয়ার কোনো কারণ আছে। এখন কৃষকের ঘরে কোনো চাল নেই। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে মিলমালিকদের ওপর। এ জন্য সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ডিসেম্বরে আমাদের আমন উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টন। আমরা ২ কোটি টনের বেশি বোরো ধান উৎপাদন করেছি। আউশ ধান হয় প্রায় ৩২ লাখ টন। চালে আমাদের কোনো সংকট নেই। গমের চাহিদা ৭৫ লাখ টন। আমাদের প্রায় ৬৫ লাখ টন গম আমদানি করতে হয়।

ব্রি ১০৮টি ধানের ভ্যারাইটির উন্নয়ন করেছে। আমাদের অনেক নতুন ভ্যারাইটির উন্নয়ন হয়েছে, যার ফলন বেশি। ২০৫০ সাল পর্যন্ত খাদ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়বে। এই চাহিদা পূরণ করতে হলে আমাদের বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। বায়োটেকনোলজি আমাদের এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। খাদ্য উৎপাদন, সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন কারণে খাদ্য নষ্ট হয়। এটা কমাতে হবে। পোকামাকড়ে খাদ্য নষ্ট করে, এ জন্য আমাদের বিজ্ঞানীরা জিনোম এডিটিং শুরু করেছেন। লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে, এমন ১২টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। গমে কিছুটা গ্লুটেন আছে। চাল একেবারে গ্লুটেনমুক্ত। কেউ বলতে পারবে না ভাত খেয়ে ক্ষতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০০ গ্রাম চালে ১০০ গ্রাম ফ্রি সুগার। ১০০ গ্রাম গমে ৩০০ গ্রাম ফ্রি সুগার। কলিফ্লাওয়ারে ৩ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম। পেঁপেতে ৭ হাজার ৮০০ মিলিগ্রাম। যেসব দেশের মানুষ ভাত খায়, সেসব দেশের মানুষ কম মোটা।

ধান গ্রিনহাউস গ্যাস গ্রহণ করে পরিবেশকে ভালো রাখে। তাই ধান উৎপাদনকে আরও লাভজনক করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কম সময়ে অধিক উৎপাদনের জন্য বায়োটেকনোলজির কোনো বিকল্প নেই। এখন আমাদের এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।

সুপারিশ

* উদ্ভাবনী উদ্যোগের সঙ্গে খাদ্যের পুষ্টিমান ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।

* জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো ও জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতে জিন প্রকৌশলের সঙ্গে অন্যান্য কৃষি উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

* জীবপ্রযুক্তি নীতি অনুসরণ করে ভবিষ্যতের খাদ্যচাহিদা ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিতে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

* কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নীতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

* টেকসই কৃষি উন্নয়নে প্রযুক্তি সফলভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সব বাধা অতিক্রম করতে হবে।

* দেশে জিনোম এডিটিং অবমুক্ত ও এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি।

* পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদার ভিত্তিতে অ্যাগ্রি–বায়োটেকনোলজি সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

মো. আরিফ হোসেন

আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।