আবদ্ধ ও ড্যাম্প পরিবেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রথম আলোর আয়োজনে ও বার্জার পেইন্টস–এর সহযোগিতায় ‘আবদ্ধ ও ড্যাম্প পরিবেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৮ নভেম্বর ২০২৩। এ আলোচনার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

অংশগ্রহণকারী

মো. জাকির হোসেন সরকার

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ; সভাপতি, বাংলাদেশ ইন্টারভেনশনাল

আবিদ হোসেন মোল্লা

অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল

শাহনূর শারমিন

সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

জাহেদ পারভেজ

সহকারী অধ্যাপক, চর্মরোগবিশেষজ্ঞ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

হেলাল উদ্দিন আহমেদ

মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ; অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

দিলারা জাহিদ

পরিচালক, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সাঈদা আক্তার

প্রধান স্থপতি, মাত্রিক

গুলশান নাসরীন চৌধুরী

ইন্টেরিয়র ডিজাইনার

এ এস এম ওবায়দুল্লাহ মাহমুদ

চিফ আরঅ্যান্ডডি অফিসার, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লি.

তানজিন ফেরদৌস আলম

চিফ মার্কেটিং অফিসার, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড

সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম

সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

সঞ্চালনা

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

সুপারিশ

  • ঘরের দেয়ালে মানসম্মত ও ড্যাম্পপ্রুফ রং ব্যবহার করতে হবে।

  • ভবন নির্মাণের সময় ইটের গাঁথুনির পর যথেষ্ট সময় অপেক্ষা করা দরকার।

  • রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ঘরে সূর্যের আলো প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।

  • ড্যাম্পপ্রুফ মিটার দিয়ে দেয়ালে আর্দ্রতার মাত্রা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

  • ইমারত নির্মাণবিধিতে ড্যাম্প ও আবদ্ধ পরিবেশের কথা যুক্ত করতে হবে।

  • ঘরের মেঝেতে কার্পেটের বদলে শতরঞ্জি ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • ঘরে ভারী সুতি কাপড়ের পর্দা ও বিছানার চাদর ব্যবহার করতে হবে।

  • নারী ও শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

  • প্লাম্বিংয়ের কাজে জিআই পাইপের পরিবর্তে ইউপিভিসি পাইপ ব্যবহার করা উচিত।

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

আজকের আলোচনার বিষয় খুবই প্রাসঙ্গিক। ড্যাম্প পরিবেশে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে সেভাবে চিন্তা করি না। এটা খুব আনন্দের বিষয় যে এ বিষয়ে আজ আলোচনা হচ্ছে। এ আলোচনার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ, নীতিনির্ধারক ও পরিবেশবিদেরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবেন বলে আশা করি।

এ এস এম ওবায়দুল্লাহ মাহমুদ

২০২২ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালে রঙের বাজারের আকার দাঁড়াবে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। যুক্তরাষ্ট্র বা উন্নত দেশগুলোয় মাথাপিছু পেইন্টের ব্যবহার প্রায় ১৫ লিটারের মতো। ইউরোপের দেশগুলোতে এটি ১০ লিটার। ভারতের মতো বড় জনসংখ্যার একটি দেশে এটি প্রায় ৩ দশমিক ৮ লিটার। তাদের রঙের চাহিদা উন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশে এই হার ১ লিটারের কম।

বার্জারের পক্ষ থেকে আমরা কিছু টেস্টিং নিয়ে বুয়েটের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণকারী কোটিং নিয়ে কাজ করছি। এর মাধ্যমে প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই–অক্সাইডকে শোষণ করা সম্ভব। দীর্ঘদিন কাজ করার পর আমরা দেখেছি, আমাদের রং একটি নির্দিষ্ট সময় ও জায়গায় ৪০০ পিপিএম পর্যন্ত কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করতে পারে। শুধু তা–ই নয়, এই রং কার্বন ডাই–অক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে রঙের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ফরমালডিহাইডও শোষণ করতে পারে এ কোটিং। ভবিষ্যতে এই ইন্ডাস্ট্রি কেমন হবে, সে সম্পর্কে একটু ধারণা দিতে চাই।

অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করেছে, যা সেমিকন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করে। এটি আমরা আমাদের পেইন্টের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। এ পেইন্ট উপকূলীয় এলাকায়, বিশেষ করে যেখানে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি, সেখানে ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা আরেকটি পেইন্ট নিয়ে কাজ করছি, যা মশা প্রতিরোধ করবে। এখানে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক নয়; বরং একটি ভেজিটেবল অয়েল ব্যবহার করা হবে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সারা বিশ্বে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। আমরা আরেকটি পেইন্ট নিয়ে কাজ করছি, যা তাপমাত্রা অন্তত ৫ ডিগ্রি কমাতে সক্ষম। উন্নত প্রযুক্তির এ রকম অনেক পণ্য হয়তো ১০ বছরের মধ্যে বাজারে সহজলভ্য হয়ে যাবে। বাজারে আমাদের ‘ব্রিদ ইজি ভাইরাকেয়ার’ নামের একটা পেইন্ট আছে, যেটা ভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম।

বিভিন্ন কাজের জন্য আলাদা রং তৈরি করা হচ্ছে। ঘরের দেয়ালের ড্যাম্প দূর করতে ৫ থেকে ১২ বছর মেয়াদি ড্যাম গার্ড রয়েছে বার্জার পেইন্টসের। বিভিন্ন মৌসুমে এটা দেয়ালকে ড্যাম্প থেকে সুরক্ষা দেয়। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ২০০৬ সাল থেকে বার্জারের রং সিসামুক্ত। পরিবেশের ঝুঁকি এড়াতে বার্জার রঙে ভারী ধাতু ব্যবহার করা হয় না।

মো. জাকির হোসেন সরকার

আবদ্ধ ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি সীমাহীন। এর কারণে অনিয়মিত মাথাব্যথা, মনোযোগ কমে যাওয়া, হৃৎস্পন্দন ও সহজে ভুলে যাওয়ার মতো নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। চোখ ও শরীরে অ্যালার্জি হতে পারে। বিশেষ করে শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হয়। মানবদেহের এমন কোনো তন্ত্র নেই, যা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ইংল্যান্ডে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি তিনটি বাড়ির একটি স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় অবস্থান করছে। বাংলাদেশে এমন কোনো সমীক্ষা আছে কি না, জানা নেই। নাক থেকে শুরু করে ফুসফুসের সর্বশেষ অংশ ও শ্বাসতন্ত্রের পুরো অংশই এতে আক্রান্ত হতে পারে।

শুরুতেই আসে অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ। এর শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি সামাজিক সমস্যাও অনেক। আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের মানুষ এর কারণে অস্বস্তিতে পড়েন। ব্রঙ্কাইটিস হয়, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা বা হাঁপানি হয়। সিওপিডি যাঁদের থাকে, তাঁদের আক্রান্তের হার ও জটিলতা বেড়ে যায়। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়।

আমি সবচেয়ে সাধারণ রোগ ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। এ রোগে সারা পৃথিবী ভুগছে। এর জন্য ঘরের ভেতর বা বাইরের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ সরাসরি সম্পর্কিত। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত। আরও ১০০ মিলিয়ন মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্তের ঝুঁকিতে আছে।

দেশভেদে ১ থেকে ২৯ শতাংশ মানুষ অ্যাজমায় ভোগে। আমাদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৭ মিলিয়ন মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত। বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের আক্রান্তের হার বেশি।

আমাদের দেশে আক্রান্তের হার ৫ শতাংশ, শিশুদের ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ। আমাদের ধারণা ছিল, শহরাঞ্চলে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বেশি। কিন্তু আমরা দেখেছি গ্রামাঞ্চলের মানুষ বেশি আক্রান্ত।

হাঁপানি হলে কাশি হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, বুকের ভেতর চাপ অনুভূত হয়, বুকের ভেতর সাঁ সাঁ শব্দ হয়। এতে স্বাভাবিক কর্মঘণ্টা কমে যায়। আমরা সবাই জানি, হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, নির্মূল নয়। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।

বাসায় রোদ না এলে বা আলো-বাতাস প্রবেশ না করলে এমনটি হতে পারে। হাঁপানি অ্যালার্জিক হতে পারে, আবার নন-অ্যালার্জিক হতে পারে। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় অ্যালার্জিক অ্যাজমায় আক্রান্ত রোগীরা বেশি ভোগেন। নন-অ্যালার্জিক রোগীরাও এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বাসা রং করার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ঘর রং করার অন্তত ১৫ দিনের মধ্যে ঘরে বসবাস না করা। বাসায় যেন পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করতে পারে। এ বিষয়ে স্থপতিদের ভূমিকা জরুরি। নকশায় ঘর কেবল সুন্দর করা না, আলো-বাতাসের বিষয়টিও যেন গুরুত্ব পায়।

শাহনূর শারমিন

সবাই জানেন যে সংক্রমণ এড়াতে হলে আমাদের প্রচুর আলো–বাতাসের প্রয়োজন। আমরা বদ্ধ ও স্যাঁতসেঁতে জায়গা চাই না। স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য আমরা আলো-বাতাসপূর্ণ এলাকাতেই যাই। আবদ্ধ ও ড্যাম্প পরিবেশে সংক্রামক ও অসংক্রামক দুই ধরনের রোগই হতে পারে। কেউ সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছে, কেউ পরোক্ষভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একে গরিবের রোগ বলতে পারি।

আমাদের দেশে এত ক্যাম্পেইন চলার পর এখনো লাখো মানুষ টিবিতে আক্রান্ত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক টিবি রোগী আসেন, তাঁদের সবার চিকিৎসা করা কঠিন। স্যাঁতসেঁতে ও আবদ্ধ পরিবেশ টিবির জন্য আদর্শ। বাতজ্বর তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুতর একটি সমস্যা।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, গাদাগাদি করে বসবাস, ঠান্ডা ও ড্যাম্প পরিবেশে এটি হয়। ধীরে ধীরে এটি গলায় ও ত্বকে আক্রমণ করে হৃৎপিণ্ডে যায় ও হৃৎপিণ্ডের কপাটিকা নষ্ট করে। এর চিকিৎসাও দীর্ঘমেয়াদি। পাঁচ বছর ইনজেকশন নিতে হয়, ওষুধ খেতে হয়। এগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর রোগ বলে আলোচনায় কম আসে । এসব রোগের প্রধান কারণ ড্যাম্প ও আবদ্ধ জায়গা।

আমরা সবাই জানি স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের সমস্যাগুলো। কিন্তু এর প্রতিরোধ করি না। আমাদের দেশ গ্রীষ্মমণ্ডলীয়, এখানে প্রচুর সূর্যের আলো থাকে। কিন্তু আমরা মনে করি সূর্যের আলোতে গেলে গা পুড়ে যায়, হিট স্ট্রোক হয়, গায়ের রং কালো হয়ে যায়। কিন্তু এখানে যে ভিটামিন ডি রয়েছে, যা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে অনেক শক্তিশালী করে। সূর্যের আলোকে আমরা নানাভাবে ব্যবহার করতে পারি, যা আমরা করছি না।

জাহেদ পারভেজ

ড্যাম্প আবহাওয়ার কারণে একধরনের ছত্রাকজনিত রোগ হয়। এর কারণে ত্বক, বিশেষ করে মাথার চুল পড়ে যায়। সাইকো ডার্মাটোলজি এর নতুন একটি শাখা। এ রোগে আক্রান্তরা অধিকাংশই স্যাঁতসেঁতে ঘরে থাকেন। রাতে ঘুমালে তাদের মনে হয় মাথার ওপর থেকে কিছু একটা পড়ছে এবং অনেক চুলকানি হয়। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের শরীরে কিছুই পাই না। সাইকিয়াট্রিস্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছত্রাকের প্রতি একধরনের মানসিক ভীতি থেকে এ সমস্যার সৃষ্টি। তাদের অযথা চুলকানির কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

খোসপাঁচড়া রোগ অণুজীব দ্বারা সৃষ্টি হয়। আবদ্ধ ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এর প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছত্রাকজনিত রোগ তীব্রভাবে বেড়েছে। এটি প্রতিরোধে আমরা যেসব ওষুধ ব্যবহার করতাম, তার সব কটিই এখন রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেছে। অর্থাৎ কোনো ওষুধেই আর কাজ করছে না। এখন আমরা কম্বিনেশন থেরাপির ওপর ভরসা করছি, যেখানে একাধিক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

এ চিকিৎসা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত নয়, এর কিছুটা ধারণা, কিছুটা পূর্ব অভিজ্ঞতা। অর্থাৎ আমরা এখন সাধারণ ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিকারে হাতড়ে হাতড়ে চিকিৎসা দিচ্ছি।

অনেক রোগী বলছেন, তাঁরা মেসে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকছেন, কিন্তু মেস যে বদলাবেন, সেই সামর্থ্য তাঁদের নেই। তাই প্রতিকার না করে আমাদের প্রতিরোধের প্রতি জোর দিতে হবে।

আবিদ হোসেন মোল্লা

মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের স্বাস্থ্যের ওপর। বদ্ধ আবহাওয়ায় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকসহ বিভিন্ন রোগজীবাণুর সংক্রমণ হয়। এর বাইরে ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের ভেতরে ধূমপান, রান্নার ধোঁয়া এ দূষণের কারণ। আমাদের শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ—সবারই ভিটামিন ডি–এর অভাব রয়েছে। এখন আমরা রিকেটস রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী পাচ্ছি। অথচ গত ২০ বছরে আমরা রিকেটস রোগী দেখিনি।

স্যাঁতসেঁতে ঘরে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের মধ্যে শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে। মায়ের গর্ভধারণ থেকে শুরু করে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু বলা হয়। তাদের জীবনের একটা অংশ থাকে মায়ের পেটে, আরেকটা অংশ বাইরে। প্রতিকূল পরিবেশের কারণে উভয় ক্ষেত্রেই একজন শিশু আক্রান্ত হতে পারে।

একজন গর্ভবতী মা যখন এ ধরনের স্যাঁতসেঁতে ঘরে থাকেন, তখন তাঁর সঙ্গে গর্ভে থাকা শিশুও আক্রান্ত হয়। সে স্বল্প অক্সিজেন ও স্বল্প আলোকমাত্রার শিকার হচ্ছে। গর্ভাবস্থায় একজন শিশু যতটা বাড়ার কথা ততটা বাড়তে পারে না। ফলে তার ফুসফুস অপরিণত থাকে, যা জন্ম–পরবর্তীকালে তাকে বেশ ভোগায়। শিশুরা বৃদ্ধিরত অবস্থায় থাকে। তার শরীরের অঙ্গগুলো অপরিণত অবস্থায় থাকে, তার রোগ ইমিউন সিস্টেমও অপরিণত অবস্থায় থাকে। তাই শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। একবার যদি তার শরীরে রোগজীবাণুর সংক্রমণ হয়, টক্সিনের কুপ্রভাব পড়ে, তাহলে তার ভোগান্তি অনেক। কারণ, তার শরীরে রোগজীবাণুর সঙ্গে লড়ার মতো শক্তি নেই। জন্ম–পরবর্তী সময়ে শিশু সব সময়ই ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। ঘরে যদি পর্যাপ্ত আলো-বাতাস না থাকে, তাহলে শিশুটি সর্বক্ষণ টক্সিনের মধ্যেই থাকছে। শিশুদের শ্বাসপ্রশ্বাসের হার পরিণত মানুষের তুলনায় বেশি। প্রতিবারই প্রশ্বাসের সঙ্গে টক্সিন তার ফুসফুসে যাচ্ছে। এ জন্য শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয় এবং তাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব কারণে বয়সের অনুপাতে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ, বুদ্ধিমত্তা, শিখনপ্রক্রিয়া, মিথস্ক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হয়।

হেলাল উদ্দিন আহমেদ

একজন শিশু যখন ছোট ও বদ্ধ ঘরে বেড়ে ওঠে, ছোট স্কুলঘরে পড়তে থাকে, মাঠ থাকে না, তখন তার চিন্তা করার সক্ষমতা কমে যায়। ফলে তার চিন্তাগুলো হয়ে যায় খুব ছোট। বদ্ধ ও জনাকীর্ণের সংজ্ঞা ও নির্দেশকগুলো ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডে একরকম, আবার যুক্তরাষ্ট্র বা জাতিসংঘের স্ট্যান্ডার্ড অন্য রকম। যুক্তরাষ্ট্রে একটি ঘরে একজনের বেশি লোক বাস করাকেই জনাকীর্ণ ধরে নেওয়া হয়। জাতিসংঘের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৩, অর্থাৎ একটি ঘরে তিনজনের বেশি মানুষ বাস করলে তাকে জনাকীর্ণ বলা হবে। জাতিসংঘের একটি স্বাস্থ্যসম্মত গৃহায়ণ গাইডলাইন আছে।

অনেক সুরম্য অট্টালিকা ও রেস্তোরাঁ আছে, যেখানে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কারণে অস্বস্তি লাগে। সে জায়গায় বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করা হচ্ছে না।

ড্যাম্প পরিবেশে তিনটি কারণে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিপন্ন হয়। এগুলো হচ্ছে জীববৈজ্ঞানিক, মানসিক ও সামাজিক। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকলে মাথাব্যথা হতে পারে, মেজাজ খিটখিটে হতে পারে, মনোযোগ কমে যায়। অনেক সময় এমন হয় যে হঠাৎ করে রোগী বুঝতে পারেন না তিনি আসলে কোথায় আছেন। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে বিষণ্নতা আক্রান্ত করতে পারে।

ড্যাম্প ও বদ্ধ জায়গায় সমাজের প্রান্তিক মানুষ থাকেন। আর্থিক টানাপোড়েনে তাঁদের মধ্যে ক্রমাগত একটা মানসিক চাপ তৈরি হতে থাকে, যা তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে। মানসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে গেলে দেখা যায়, ছত্রাক, বদ্ধ ঘর ও ড্যাম্প আমাদের আশাহীন একটা চিত্র তুলে ধরে।

সামনে যখন আমরা কোনো খোলা জায়গা বা বড় মাঠ দেখি, তখন আমাদের ভালো লাগে। কারণ, আমাদের মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারগুলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সেভাবে থাকে। সুন্দর ছবি দেখলে বা সুরেলা গান শুনলে ভালো লাগে। চিৎকার শুনলে বিরক্ত লাগে, বীভৎস ছবি দেখলে খারাপ লাগে। এসবের কারণ, আমাদের মস্তিষ্ক এভাবে অভ্যস্ত নয়। ঠিক সে রকমভাবে আমার দেয়ালটি যদি স্যাঁতসেঁতে না হয়, ঘরটা যদি আবদ্ধ না হয়, তখন আমার আত্ম-অনুভূতি ভালো থাকে।

শিশুদের দিকে আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। যত ধরনের মানসিক রোগ আছে, তার অর্ধেক শুরু হয়ে যায় ১৪ বছরের আগে। জাতিসংঘের সহযোগিতায় ইউরোপের আটটি বড় শহরে গৃহস্থালির ওপর একটি গবেষণা করা হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৩ শতাংশ ঘর স্যাঁতসেঁতে ছিল, মোল্ড পাওয়া গেছে। এসব ঘরে যাঁরা বসবাস করেছেন, তাঁরা অন্যদের তুলনায় তিন গুণ হতাশার মধ্যে ছিলেন। ৭০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে এর হার সবচেয়ে বেশি ছিল, নারীদের মধ্যে হতাশার হার বেশি ছিল। অর্থাৎ যাঁরা বেশির ভাগ সময় এ ধরনের বদ্ধ ও স্যাঁতসেঁতে ঘরে থাকেন, তাঁদের হতাশা বেশি দেখা গেছে।

দিলারা জাহিদ

খুব সহজ ভাষায় আমরা পরিবেশ বলতে যা বুঝি, তা হচ্ছে একটা সুন্দর অবস্থা, যেখানে আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, আলো-বাতাস নিশ্চিত হয়। আমরা শারীরিক ও মানসিক রোগমুক্ত একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই। পোকামাকড়ের ঘরবসতির মতো পরিবেশ নিশ্চয়ই চাইব না। আমাদের এমন অনেক দুর্যোগপূর্ণ জায়গা আছে, যেখানে ক্রমাগত বৃষ্টি হয়, জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। লবণাক্ততার কারণে দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে।

স্বাস্থ্য খাতে যেমন বলা হয় প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম, তেমনি দুর্যোগের ক্ষেত্রেও বলা হয় প্রস্তুতি পর্বে বেশি জোর দেওয়া। যদি ইন্টেরিয়র ডিজাইনে কিছু খরচ করি বা দেয়ালে ড্যাম্প–প্রতিরোধী ব্যবস্থা নিই, তাহলে তা পরবর্তী চিকিৎসা–সংক্রান্ত কাজে যে খরচ, তা কমে আসবে। এ বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা জরুরি।

ঘর খোলা হোক বা বদ্ধ হোক, নারীরাই কিন্তু অধিকাংশ সময় ঘরে কাটান। সুতরাং এটি অবশ্যই বিবেচনার বিষয় অর্ধেক জনগোষ্ঠী কোন পরিবেশে থাকছে। একজন ছেলের তুলনায় একজন মেয়ে যদি অ্যাজমা বা চর্মরোগে আক্রান্ত হন, তাহলে তাঁর সামাজিক প্রতিবন্ধকতা অনেক বেশি হয়।

ভবনের সৌন্দর্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার মধ্যে স্বাস্থ্যের বিষয়টিও থাকতে হবে। গৃহ পর্যায়ে ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এ বিষয়টি মেনে চলা জরুরি। এসব বিবেচনা করে রং করা উচিত। স্কুলের ক্ষেত্রে রং কেমন হবে, আবার বাসাবাড়ি বা ড্রয়িংরুমই–বা কেমন হবে—এসব বিষয় চিন্তা করা উচিত। ড্যাম্প সরাতে গিয়ে নতুন করে কোনো দূষিত পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়টিও খেয়াল রাখা জরুরি।

আমরা বিল্ডিং কোড নিয়ে কথা বলি কীভাবে ভূমিকম্প–প্রতিরোধী ভবন তৈরি করব। একইভাবে ভবনের রং কেমন হবে, তা ড্যাম্পপ্রতিরোধী পদ্ধতিতে করা যাবে কি না, তা আলোচনায় আনা দরকার। আমাদের দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থাও বিবেচনা করতে হবে। এই প্রযুক্তিগুলো যেন সবার সাধ্যের মধ্যে থাকে।

আমাদের বড় একটা জনগোষ্ঠী গ্রামাঞ্চলে বাস করে। এ বিষয়গুলো যেন তাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে, সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি এ–সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। এটি করা গেলে সমস্যাগুলো সামনে আসবে এবং তা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।

গুলশান নাসরীন চৌধুরী

এখনই আমরা সব বাসা ড্যাম্পমুক্ত করতে পারব না, খোলামেলাও করতে পারব না। কিন্তু একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে আমি মনে করি বাসায় যেন আলো-বাতাস ঢুকতে পারে এবং ড্যাম্প ভাবটা চলে যেতে পারে। স্থপতিরা যখন বাড়ি তৈরি করেন, তখন তিনি পরিকল্পনা করেই করেন। কিন্তু রাজমিস্ত্রি যখন পরিকল্পনা করেন, তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমরা অনেক বাড়িতে দেখি, ড্রয়িংরুমের দরজা এক দিকে, জানালা অন্য দিকে। অর্থাৎ ক্রস ভেন্টিলেশন নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা সংস্কারের সময় ক্রস ভেন্টিলেশন করি যেন বাতাস চলাচল করতে পারে। আবার বাসার পাশে একটু জায়গা থাকলে নিমগাছ লাগানোর কথা বলি। গাছটি বড় হলে এর বাতাস ভেতরে আসবে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে।

আমি সব সময় চেষ্টা করি, ইন্টেরিয়র ডিজাইন দেশি উপকরণ দিয়ে করার। পাশাপাশি খরচ যাতে কম হয়। বাসায় কার্পেট করার সময় লক্ষ রাখতে হয়, ওই বাসায় শিশু আছে কি না। কারণ, তা থেকে আঁশ বের হয়ে শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। মেঝের ড্যাম্প প্রতিরোধে কার্পেটের পরিবর্তে শতরঞ্জি ব্যবহার করা যায়। কার্পেট ব্যবহার করলে তা যেন সিনথেটিক হয়। সুতি কাপড় ধরনের ভারী পর্দা ব্যবহার করলে তা দেয়ালের ড্যাম্প কিছুটা শুষে নেয়। বেডশিট, বেডকভার, টেবিলক্লথ সুতির হলে সেগুলোও কিছুটা হলেও ড্যাম্প শুষে নেয়।

অনেক সময় কাপড়ের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এটি এড়িয়ে চলতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না সিসাজাতীয় বা খুব চকচকে রং ব্যবহার করা হোক। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চিকিৎসক রোগীকে পরামর্শ দেওয়ার সময় বাসার আসবাব, রং এসব বিষয়ে সচেতন করতে পারেন।

সাঈদা আক্তার

স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আমরা আসলে কতটা সচেতন, তা ভাবার বিষয়। সচেতনতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি একজন পরিবেশ স্থপতি। আমি লিড সার্টিফায়েড বিল্ডিং নিয়ে কাজ করি। গ্রিন ফ্যাক্টরি আমার কাজের মূল জায়গা। কোন ভবন কতটা ড্যাম্প শোষণ করবে, তা নির্ভর করে ভবনটির নকশা, আবহাওয়া, ভবন ওরিয়েন্টেড, নির্মাণপ্রক্রিয়া ও পরিচালনার ওপর। ভবনের ভেতরের বায়ুমানের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। এসব বিষয় বিবেচনায় রাখলে একটা ভবন ড্যাম্পমুক্ত করা সম্ভব। ড্যাম্পমুক্ত যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা মানুষকে বোঝাতে হবে, সচেতন করতে হবে। বিষয়টি বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিত হয়ে আসছে।

সবাই কেবল ভবনের স্বাস্থ্য নিয়েই চিন্তিত। কিন্তু ভবন ড্যাম্পপ্রুফ না হলে যে কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে, তা কারও বিবেচনায় নেই। এ দায়িত্ব কেবল ক্লায়েন্টের নয়, এটি আমাদের স্থপতিদেরও। আমাদের আবহাওয়ার নানান চরিত্রের, সব ঋতুর কথা মাথায় রেখেই ভবন নির্মাণ করতে হয়। আমরা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-২০২০ অনুসরণ করি। ডিজাইন নিয়ে এখানে অনেক কথা বলা হলেও স্বাস্থ্য নিয়ে বলা হয়নি।

সিলেটের বৃষ্টিপ্রবণ এলাকায় এক ধরনের বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার নাটোরে লবণাক্ত এলাকায় বাড়ির নকশা অন্য রকম। শুষ্ক জায়গার জন্য নকশা ভিন্ন হয়। অর্থাৎ, ভবন নির্মাণের শুরুতে আবহাওয়া-জলবায়ু বিশ্লেষণ করা হয়। ভবনের নকশার পর গুরুত্ব দিতে হয় নির্মাণ মালামালের ওপর। দেয়াল পানি ধরে রাখে, একসময় ওই পানি ছেড়ে দেয়। সুতরাং, ড্যাম্প হবেই। এটি প্রতিরোধ করতে হলে শুরুতেই নকশা ও নির্মাণপর্যায়ে মনোযোগ দিতে হবে।

দ্রুত নির্মাণ করতে বলা হলে তো সমস্যা হবেই। বহুতল ভবনে সব মেশিনারিজ নিয়ে কাজ করা সহজ কথা নয়। সুতরাং যে নির্মাণ উপকরণের যে প্রকৃতি, তাকে সে সময়টা নিতে হবে।

ড্যাম্প হওয়ার ক্ষেত্রে প্লাম্বিং অনেক বড় একটি কারণ। আমাদের বহুতল ভবনের প্রতিটি টয়লেট ও রান্নাঘরে দেয়ালে ড্যাম্প। প্লাম্বিংয়ের লাইনগুলো যখন একটা ডাক্টের মধ্য দিয়ে যায়, সেখানে প্রতিটি জয়েন্টে কাজ খুব সচেতনতা ও সঠিক তদারকি জরুরি। এসব ক্ষেত্রে অনেকে জিআই পাইপ ব্যবহার করেন। আমরা পরামর্শ দিই ইউপিভিসি পাইপ ব্যবহারের। এটি একটু ব্যয়বহুল হলেও ড্যাম্প থেকে সুরক্ষা দেবে।

প্লাম্বিংয়ে লিকেজ থেকে ড্যাম্প হয়। পাশাপাশি ভবন নির্মাণের পর অন্তত এক মাস সময় নিয়ে সবকিছু যাচাই করে বসবাস করা উচিত। পাশাপাশি ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্লাম্বিং, ইলেকট্রিসিটিসহ সব নকশা সংগ্রহ করতে হবে, যাতে পরবর্তী সময়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধান করা সম্ভব হয়।

তানজিন ফেরদৌস আলম

ড্যাম্প পেইন্টের বিজ্ঞাপন করার আগে আমি নিজেও জানতাম না আবদ্ধ ও স্যাঁতসেঁতে ঘরের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে। আমরা পরবর্তী সময়ে আমাদের ক্যাম্পেইন পরিবর্তন করি। প্রচলিত ধারার পরিবর্তে মানুষকে সচেতন করতে আমরা নতুন ক্যাম্পেইন শুরু করি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, যাতে মানুষ দ্রুত ড্যাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। আমরা এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, তাই আমরা সব বিশেষজ্ঞের কাছে যাচ্ছি। আজকের আলোচনাও এর একটি অংশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশে এর আগে কেউ এভাবে কথা বলেনি।

আমরা দেয়ালের সঙ্গে টক্সিক রিলেশনশিপ নিয়ে কাজ করছি। ড্যাম্প থেকে কী কী সমস্যা হতে পারে, আমরা সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করব। আজকের আলোচনা থেকে নতুন অনেক কিছুই এসেছে, যা আমরা নতুন ক্যাম্পেইনে তুলে ধরব।

সিএসআরের ভূমিকার কথা আলোচনায় এসেছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলছে, সিএসআর দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা বিক্রি করব, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা সামাজিক সমস্যার সমাধান করেই তা করতে চাই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই।

আমাদের দেশে অনেক সমস্যা আছে। এ সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। দেশের বাইরে চলে যাওয়া সমাধান হতে পারে না। কানাডা কিংবা অন্যান্য দেশে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

আমার অনেক সহকর্মী কানাডায় চলে গেছেন। তাঁরা এ দেশে দূষণসহ নানা সমস্যার অজুহাত দেখান। এ সমস্যা আমাদের সমাধান করতে হবে। এ জন্য আমাদের সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।

ফিরোজ চৌধুরী

বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় স্বাস্থ্যগত ও পরিকল্পনার বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে এসেছে। নীতিনির্ধারকেরা বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।