রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

প্রথম আলোর উদ্যোগে ‘রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১০ ডিসেম্বর ঢাকার প্রথম আলো কার্যালয়ে।

‘রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ঢাকার প্রথম আলো কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

শেখ বশিরউদ্দীন

মাননীয় উপদেষ্টা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার কথা প্রায়ই বলা হয়। সবাই বলে, এফটিএ জাদুর কাঠি। বাস্তবে এফটিএ কোনো জাদুর কাঠির সমাধান নয় বা মহৌষধ নয়। চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য আমদানিনির্ভর। এখানে যা লেনদেন হয়, তা থেকে ২০–২২ হাজার কোটি টাকার অভ্যন্তরীণ রাজস্ব তৈরি হয়। চীনের বাজারে ৯৯ শতাংশ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য–সুবিধা পাই। আমরা চীনের সঙ্গে এফটিএ করলে হারব। আমরা জিততে পারব না। চীন প্রচণ্ড চাপ দিয়েছে এফটিএ করার জন্য। আমাদের এফটিএ করা কি ঠিক হবে?

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যখন কোথাও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে যায়, তখন এটি কেবল বাণিজ্যচুক্তি নয়। এখানে অনেক কিছু ভাবতে হবে যে আমাদের বিদেশের বাজারে কী পণ্য দেওয়ার আছে। আমাদের একটাই পণ্য, তৈরি পোশাক। আমাদের যখন ছাড় দিতে হবে, তখন ভাবতে হয়। কী ছাড় দেব এবং এর বিপরীতে আমরা কী পাব। বাণিজ্যচুক্তি এত সহজ নয়, এটা অনেক জটিল হিসাব।

গত ১৬ বছরের দুর্বৃত্তায়নে অর্থনীতিতে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তাতে সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ হয়েছে। এত খেলাপি ঋণ পৃথিবীর বহু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও নেই। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ১২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল। এর মধ্যে ছয় বিলিয়ন ডলার বিদেশি দায় অপরিশোধিত ছিল। এর মানে তখন নিট রিজার্ভ ছয় বিলিয়ন ডলার ছিল। এটি এক মাসের কম সময়ের রিজার্ভ ছিল। এখন তিন-চার মাসের রিজার্ভ আছে। যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে উত্তরণ করতে চাই। উত্তরণের ক্ষেত্রে ক্ষতের মূল বিষয় ভুলে গেলে আমরা ভুল করব।

 রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত এসএমই ও সিএমএসএমই খাত। বিশ্বের সফল অর্থনীতিগুলো বড় শিল্পপতিদের ওপর নয়, বরং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আমাদের দেশে বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে সঠিক উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই।

সরকার যখন ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে বন্ডেড ফ্যাসিলিটি অনুমোদনের দিকে যাচ্ছে, তখন প্রচলিত বন্ড লাইসেন্স ব্যবস্থার অনেক বিষয়ই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। এফওবি এক্সপোর্ট সুবিধা চালু হলে বর্তমান কাঠামোর সঙ্গে এই দুই ব্যবস্থার সমন্বয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তার বাস্তবতা অনেকটাই বদলে যাবে। একসময় বন্ড সুবিধা না থাকলে আমাদের দেশে গার্মেন্ট শিল্প গড়ে উঠত না—এটা সত্য। আবার একই সঙ্গে এই বন্ড ব্যবস্থার কারণেই অনেক সম্ভাবনাময় শিল্প গড়ে উঠতে পারেনি। সঠিক সেফগার্ড ছাড়া এই ব্যবস্থার খরচ, ডিউটি ও কস্টিং শিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মো. মাহবুবুর রহমান

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এইচএসবিসি বাংলাদেশ

পোশাকের বাইরে কোন কোন পণ্যের রপ্তানি বিলিয়ন ডলারে নিতে পারি, তা ঠিক করতে হবে। ২০ বছর আগে আমাদের রপ্তানি ৯ বিলিয়ন ডলার ছিল, এখন তা ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আগেও রপ্তানির ৮০ শতাংশ ছিল পোশাক, এখনো একই চিত্র। রপ্তানি বেড়েছে; কিন্তু পোশাকের বাইরে অন্য পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে পারিনি।

রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের ক্ষেত্রে প্রথম প্রশ্ন হওয়া উচিত আমাদের পণ্য কি বিদেশি ভোক্তার চাহিদা ও পছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? কারণ, আমরা নিজেদের বাজারের জন্য নয়, অন্য দেশের বাজারের জন্য উৎপাদন করি। পাশাপাশি দেখতে হবে, কোন পণ্যে আমাদের প্রকৃত প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা আছে এবং সেই সুবিধা স্কেল করা সম্ভব কি না। ট্যারিফ বা জিএসপির মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও এগুলো মূলত বাণিজ্য কূটনীতির ফল। আসল বিষয় হলো পণ্য ও বাজারে আমাদের অবস্থান।

এসএমই খাত রপ্তানিযোগ্য পণ্য বানাতে পারবে। তবে এত ধাপ পেরিয়ে তাদের রপ্তানি করাটা কঠিন। এ কারণে তাদের (এসএমই) জন্য একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

একসঙ্গে ১০০ পণ্যের কথা ভাবার দরকার নেই; বরং এমন পাঁচটি পণ্য বা খাত নির্ধারণ করতে হবে, যেগুলোকে বাংলাদেশি ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্ববাজারে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। ভিয়েতনামের অভিজ্ঞতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তারা পোশাকের পাশাপাশি ইলেকট্রিক্যাল ও মেশিনারি, ফুটওয়্যার, সি–ফুড, ফার্নিচারসহ একাধিক খাতে বড় স্কেল তৈরি করেছে এবং বহুজাতিক বিনিয়োগকে কাজে লাগিয়েছে।

আমরা মধ্যপ্রাচ্য ও আসিয়ানের দেশগুলোয় রপ্তানির দিকে নজর দিতে পারি। এসব দেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ তুলনামূলক সহজ। জাতীয় পর্যায়ে একটি উচ্চমানের বাজার ও পণ্যভিত্তিক গবেষণা দরকার, যেখানে নির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্য চিহ্নিত করে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য নীতিগত, অবকাঠামোগত ও দক্ষতা উন্নয়নের রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। তাহলেই পোশাকের বাইরে রপ্তানিবৈচিত্র্য বাস্তবে রূপ নিতে পারে।

আহসান খান চৌধুরী

চেয়ারম্যান ও সিইও, প্রাণ–আরএফএল গ্রুপ

রপ্তানি বাড়ানো ছাড়া আমাদের কোনো গতি নেই। ভিয়েতনাম ৩০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে পারলে আমাদের সমস্যা কোথায়? আমাদের আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কি আমদানিনির্ভর থাকব, নাকি রপ্তানিনির্ভর জাতি হব। রপ্তানি বাড়াতে চট্টগ্রাম থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত সরাসরি জাহাজ চালু করা দরকার। তাহলে আমরাই এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে পারব। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠাতে যদি ৪৫ দিন লাগে, তাহলে আমাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।

আমরা যদি সত্যিই প্রতিযোগিতামূলক রাষ্ট্র হতে চাই, তাহলে আমদানি শুল্কনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির দিকে যেতে হবে। প্রতিবছর বাজেটে আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে অর্থনীতি চালানো কোনো টেকসই সমাধান নয়। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত বাংলাদেশকে একটি বহুমুখী রপ্তানিনির্ভর দেশে রূপান্তর করা।

আমাদের সমুদ্রবন্দর পরিচালনা বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে আমরা অঙ্ক কষছি। কারণ, আমাদের ড্যামারেজ চার্জ (ক্ষতিপূরণ মাশুল) বেড়ে গেছে। কাস্টমস বিভাগকে যৌক্তিক করতে হবে। উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানোর খরচ কমাতে হবে। কারণ, ভারতের রপ্তানিকারকেরা কম খরচে আকাশপথে পণ্য পাঠাতে পারেন। তাঁরা এখানে আমাদের থেকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

সমস্যা হলো, আমরা সারাক্ষণ ছোট ছোট সমস্যার মধ্যে আটকে থাকি। এতে বড় সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয় না। প্রথমেই আমাদের নিজেদের কাছে স্পষ্ট হতে হবে—আমরা ভবিষ্যতে আমদানিনির্ভর দেশ হতে চাই, নাকি রপ্তানিনির্ভর দেশ হতে চাই। যদি রপ্তানিনির্ভর হতে চাই, তাহলে কাঠামোগত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে যেতে হবে।

ট্যারিফ ব্যবস্থাও বড় চ্যালেঞ্জ। ভারত আসিয়ান অঞ্চলে শূন্য শুল্ক–সুবিধা পাচ্ছে, কিন্তু আমরা তা পাচ্ছি না। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অভাব আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণকে সীমিত করছে। রপ্তানি বাড়াতে হলে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বাছাই করে সেগুলোর জন্য টার্গেটেড ট্যারিফ ও বাণিজ্য কৌশল নিতে হবে।

সৈয়দ এস কায়সার কবির

সহসভাপতি, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি এবং এমডি, রেনাটা পিএলসি

দেশের উদ্যোক্তাদের ক্রিমিনাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সেটি বাদ দিতে হবে। উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দিতে হবে। পণ্য রপ্তানি করে বাড়তি ডলার পেতে হলে ডলারকে বাইরে যেতে দিতে হবে। অর্থাৎ বিদেশে বিনিয়োগ সহজ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, বিনিয়োগ করবেন না; ওষুধের দাম কমান।

ওষুধের দাম কম বললে মন্ত্রণালয় বলে, দাম আরও কমান; আপনারা চুষে খাচ্ছেন। অথচ সময়ের ব্যবধানে ওষুধে নিট মুনাফা ১৫ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশ হয়েছে। দুনিয়ার মধ্যে ওষুধের দাম সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। দয়া করে আমাদের রক্তচোষা বলবেন না। উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দিন। ওষুধশিল্পের বৈচিত্র্যকরণ করা উচিত। কারণ, ওষুধে মূল্য সংযোজন অনেক বেশি।

ফার্মাসিউটিক্যাল খাতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করার অনেক কারণ রয়েছে। এই মুহূর্তে ডলারের পরিমাণ বা রপ্তানিতে গার্মেন্টসের শতাংশ কত—সেটাই মুখ্য নয়। গার্মেন্টস রপ্তানির বড় অংশ দখল করে আছে, এটা নিয়ে হাহাকার না করে আমাদের শিল্প বৈচিত্র্যকরণে মনোযোগ দেওয়া দরকার। বিশেষ করে যেখানে উচ্চ মূল্য সংযোজন সম্ভব এবং দেশেই মেধা ধরে রাখা যায়।

যদি ওষুধ রপ্তানির জন্য আমাদের কোম্পানিগুলো মার্কিন বাজারের জন্য সব অনুমোদন করে, তাহলে বাংলাদেশের পণ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। তখন পণ্যের মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না। সে জন্য ওষুধশিল্পের উন্নয়নে জোর দিন।

রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে আরেকটি বড় বিষয় হলো, বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিয়োগ নীতি। ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে লাইসেন্সিং, বিদেশে বিনিয়োগ বা প্রযুক্তি কেনার ক্ষেত্রে ডলার বাইরে পাঠাতে হয়। কিন্তু ফরেন এক্সচেঞ্জ নীতির জটিলতায় বারবার অনুমতির মুখোমুখি হতে হয়। অথচ ডলার আনার জন্যই অনেক সময় ডলার বাইরে যেতে দিতে হয়—এই বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হবে।

এ ছাড়া পণ্য রেজিস্ট্রেশন, আন্তর্জাতিক পরিদর্শন ও অনুমোদনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা বড় বাধা। লাখ লাখ ডলার খরচ করেও বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ঔষধ প্রশাসনকে দীর্ঘদিন ধরে যেভাবে অপরাধীকরণ করা হয়েছে, তাতে কিছু গোষ্ঠী সুবিধা পেয়েছে, কিন্তু সামগ্রিক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্ত করতে হবে।

মো. নাসির খান

সহসভাপতি, চামড়া পণ্য ও জুতা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতি

রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে আমরা কীভাবে বাস্তবে এগোতে পারি; অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বর্তমান কাস্টমস বন্ড ব্যবস্থা রপ্তানিকারকদের জন্য সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও দুর্নীতিগ্রস্ত। এই ব্যবস্থার জটিলতা বাইরে থেকে বোঝা যায় না, শুধু যারা প্রতিদিন রপ্তানি করে, তারাই জানে। বন্ড লাইসেন্স পেতে অসংখ্য দপ্তরের অনুমোদন লাগে, ইনবন্ড–আউটবন্ড প্রক্রিয়া এতটাই জটিল যে উৎপাদন ও শিপমেন্টে মারাত্মক বিলম্ব হয়। এর ফলে রপ্তানিকারকদের ডেমারেজ, দেরিতে শিপমেন্ট ও অদৃশ্য খরচ মিলিয়ে বিপুল ক্ষতি হয়, যা সরাসরি প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়।

যারা শতভাগ রপ্তানি করে, তাদের জন্য ব্যাংক গ্যারান্টির ভিত্তিতে সহজ ও স্বচ্ছ বন্ড সুবিধা চালু হলে আলাদা লাইসেন্সের প্রয়োজন থাকবে না। এতে দুর্নীতি কমবে, সময় বাঁচবে ও উৎপাদন ব্যয় কমবে। রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে এটি একটি মৌলিক সংস্কার।

আমাদের মূল ফোকাস হওয়া উচিত ভ্যালু অ্যাডিশন। গার্মেন্টসের মতো অন্য খাতেও যদি কাঁচামাল আমদানি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে রপ্তানি অনুমোদন দেওয়া হয়, তাহলে জুতা, চামড়া, প্লাস্টিক, পাট, সিরামিক, ফার্নিচার, ওষুধ ও গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ—এই খাতগুলো দ্রুত বড় আকার নিতে পারে। সমস্যাটা সম্ভাবনায় নয়, সমস্যাটা অপারেশনাল জটিলতায়।

কাস্টমস ও বন্দরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও বড় চ্যালেঞ্জ। বন্দর সক্ষম হলেও কাস্টমস প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা পুরো সাপ্লাই চেইনকে আটকে দেয়। একই পণ্যের জন্য একাধিক মূল্যায়ন, দীর্ঘ ক্লিয়ারেন্স সময়—এসব রপ্তানিকে ব্যয়বহুল করে তোলে।

রূপালী চৌধুরী

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বার্জার পেইন্টস

রপ্তানির বাড়াতে সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা, কমপ্লায়েন্স ও লজিস্টিকস সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হলে উৎপাদন মান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা ছাড়া বিকল্প নেই। একবার আমরা থাইল্যান্ডে একটি পণ্য রপ্তানির চেষ্টা করেছিলাম। পণ্যটি তারা পছন্দ করলেও ভারতের সঙ্গে তাদের এফটিএ থাকায় ৫ শতাংশ দামের তারতম্যের কারণে আমরা বাজারে টিকতে পারিনি। এরপর আমরা কৌশল বদলে আমদানিনির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করেছি। আগে যেসব পণ্য বাইরে থেকে আনতাম, যেমন ফুড গ্রেড ক্যান, সেগুলো দেশে তৈরি করেছি; কিন্তু এখানেই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সার্টিফিকেশন।

বাংলাদেশে সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের নয়। ফলে পণ্য সার্টিফাই করাতে আমাদের ভারত বা সিঙ্গাপুরে যেতে হয়। এতে খরচ বাড়ে, সময় নষ্ট হয়, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়। কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে শিল্পপণ্য—সব ক্ষেত্রেই প্রত্যয়ন ও পরীক্ষায় নানা অসংগতি রয়েছে। সে জন্য সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্যাটাগরি-স্পেসিফিক আধুনিক ল্যাবে রূপান্তর করা জরুরি, যা আন্তর্জাতিক মানে স্বীকৃত হবে। এখানে সরকারকে ইনস্টিটিউশন ডেভেলপমেন্টে বিনিয়োগ করতেই হবে, আর বেসরকারি খাত সেখানে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কমপ্লায়েন্স। আমরা একসময় যেসব বাজারে শক্ত অবস্থানে ছিলাম, সেখান থেকে ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়েছি। কারণ, আমাদের পরিদর্শন, অডিট ও মাননিয়ন্ত্রণ অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল। ফলে বাজারে আস্থা নষ্ট হচ্ছে। রপ্তানি বৈচিত্র্য ধরে রাখতে হলে কমপ্লায়েন্স শক্ত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

সামিম আহমেদ

সভাপতি, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন

গার্মেন্টসের বাইরে গিয়ে আমরা রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে কী করতে পারি। এ ক্ষেত্রে প্লাস্টিক খাত একটি বড় সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিক শিল্পের ভেতরে বহু উপখাত রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি সরাসরি রপ্তানিযোগ্য। এর মধ্যে খেলনা, গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ, ব্যাগ ও প্যাকেজিং এবং গৃহস্থালি পণ্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আমাদের বড় সমস্যা হলো—বাস্তবে যে রপ্তানি হচ্ছে, তার একটি বড় অংশ পরিসংখ্যানে ধরা পড়ে না। প্লাস্টিক গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ, ইউনিট প্যাকেজিং বা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্যের প্যাকেজিং হিসেবে যে রপ্তানি হয়, সেগুলো মূলত প্রচ্ছন্ন রপ্তানি। নীতিমালায় এগুলোকে সরাসরি রপ্তানি হিসেবে দেখানোর কথা থাকলেও বাস্তবে তা প্রতিফলিত হয় না। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো—বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি। সঠিক তথ্য না থাকায় খাতভিত্তিক রপ্তানি মূল্যায়ন ব্যাহত হয়। অথচ প্রচ্ছন্ন ও সরাসরি—উভয় ধরনের রপ্তানি একসঙ্গে বিবেচনা করলে অনেক খাতই বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এতে বিনিয়োগ, নীতি সহায়তা ও আন্তর্জাতিক বাজারে দর-কষাকষি সহজ হতো।

প্লাস্টিক শিল্প এখন একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশীয় কাঁচামাল উৎপাদন বাড়ছে, রিসাইক্লিং সক্ষমতা তৈরি হয়েছে, ফলে আমদানিনির্ভরতা কমছে। একই সঙ্গে প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য, বিশেষ করে আধুনিক খেলনা, ইলেকট্রনিক ও মেকানিক্যাল কম্পোনেন্টযুক্ত পণ্যে মূল্য সংযোজন বাড়ছে। এ জায়গাটিতে আমাদের আরও বিনিয়োগ ও নীতিগত স্বীকৃতি দরকার। প্লাস্টিকের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য, নন-লেদার জুতা, হস্তশিল্প, হালকা প্রকৌশল ও আসবাব খাতেও রপ্তানির বড় সম্ভাবনা রয়েছে।

মো. শাহজাহান চৌধুরী

সভাপতি, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন

একসময় প্রক্রিয়াজাত ও হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত ছিল। কিন্তু নীতিগত দুর্বলতা, কাঁচামালের সংকট ও বাস্তবসম্মত সহায়তার অভাবে আজ এই খাত অনেক নিচে নেমে গেছে। স্বাধীনতার পর যে খাতটি ধারাবাহিকভাবে গড়ে উঠেছিল, সেটি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে পারেনি। আমরা যারা এখন এই ব্যবসায় আছি, তারা মূলত দ্বিতীয় প্রজন্ম। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি দেখেছি, সমস্যাগুলো নতুন নয়, দীর্ঘদিনের জমে থাকা কাঠামোগত সংকটই আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে।

বিশ্ববাজারে চিংড়ি ও হিমায়িত মাছের বিশাল চাহিদা রয়েছে। বাগদা চিংড়ি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পণ্য হলেও পর্যাপ্ত কাঁচামাল, আধুনিক চাষব্যবস্থা ও নীতিগত সহায়তার অভাবে আমরা সেই বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারিনি। ফলে সম্ভাবনার তুলনায় আমাদের অংশ খুবই সীমিত। বাস্তবতা হলো, খাতটির মূল শক্তি থাকা সত্ত্বেও আমরা তা কাজে লাগাতে পারছি না।

বর্তমানে কিছু কারখানা বিশ্বমানের রপ্তানি করছে, কিন্তু অধিকাংশ কারখানা টিকে থাকার লড়াইয়ে আছে। একসময় যেসব কারখানা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ছিল, তার বড় অংশই এখন বন্ধ বা প্রায় অচল। এতে শুধু রপ্তানি নয়, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ—সবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আমাদের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো উচ্চ সুদের হার। কৃষিপণ্য হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি থাকলেও আমরা কৃষি খাতের মতো সুবিধা পাই না। এত বেশি সুদে ঋণ নিয়ে কোনো দেশেই টেকসই রপ্তানি সম্ভব নয়। নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে আমার স্পষ্ট দাবি—এই খাতকে কৃষিভিত্তিক রপ্তানি হিসেবে বিবেচনা করে অর্থায়ন ও ভর্তুকির কাঠামো সহজ করতে হবে।

সায়েমা হক বিদিশা 

অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ ও  প্রো–উপাচার্য (প্রশাসন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সার্বিক সমস্যার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শ্রমিকের দক্ষতা এবং গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ। এই জায়গায় বিনিয়োগ বাড়লে শ্রমিক, মালিক—সব পক্ষই উপকৃত হবে। এর সঙ্গে যুক্ত আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে খাদ্যভিত্তিক এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা প্রায়ই বলেন, তাঁরা নিজের মতো করে কাজ করছেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা পাচ্ছেন না। যেহেতু এই খাতগুলো শ্রমঘন, তাই এখানে তুলনামূলকভাবে বেশি নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দরকার, যা আমরা এখনো পর্যাপ্তভাবে দিতে পারছি না।

প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে শ্রমিকের দক্ষতা কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে, সেটিও বড় প্রশ্ন। আপস্কিলিং, রিস্কিলিং এবং প্রযুক্তিগত অভিযোজন—এই তিন জায়গায় আমাদের ঘাটতি স্পষ্ট। এর পাশাপাশি দুর্নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে, যেগুলো এক দিনে দূর করা সম্ভব নয়। তবে কাঁচামালের অপ্রতুলতা, উচ্চ ফ্রেট চার্জের মতো নির্দিষ্ট সমস্যাগুলো কিছু খাতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে অ্যাগ্রো প্রসেসিং, কৃষি ও পাট খাতে।

ফ্রোজেন ফুড খাতের ক্ষেত্রেও আমরা একসময় যে সম্ভাবনার কথা বলতাম, সেখান থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি। কিছু উচ্চফলনশীল জাতের অভাবে আমাদের উৎপাদনশীলতা কম, ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছি। একইভাবে চামড়া খাতে পরিবেশগত মান, সিইটিপির সীমাবদ্ধতা ও সার্টিফিকেশন–সংক্রান্ত জটিলতা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। এখানে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে না পারায় আমরা একটি বড় সুযোগ হারাচ্ছি।

ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি। ফার্মেসি, বায়োকেমিস্ট্রি, জেনেটিকস ও মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে পড়া তরুণদের জন্য এখানে ভালো সুযোগ রয়েছে। পাট ও প্রাকৃতিক ফাইবারভিত্তিক পণ্যের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিং ও মাননিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। শুধু কাঁচামাল নয়, উচ্চমূল্যের সৃজনশীল পণ্য তৈরি করে নতুন বাজার ধরার সুযোগ রয়েছে।

নাহিয়ান রহমান

নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)

বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে যে বিপুল পরিমাণ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে, তার বেশির ভাগই রপ্তানিমুখী শিল্প খাতে গেছে। ফলে দেশটির রপ্তানি খাত বড় হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের উন্নয়নেও ভিয়েতনামের এই এফডিআই মডেলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে। ভিয়েতনামে যাওয়া প্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ইন্টেলসহ বড় এফডিআই প্রকল্পগুলো রপ্তানিনির্ভর। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য ভিয়েতনামে উৎপাদিত হয়ে অন্যান্য দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিনিয়োগের পাশাপাশি দক্ষতা স্থানান্তর ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে দেশটির শিল্প খাতে সক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমান ‘ট্যারিফ ফোবিয়ার’ সময়ে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ অপরিহার্য।

রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হলে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে অন্তত ২০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় আসতে হবে। সে লক্ষ্য অর্জনে তৈরি পোশাকের বাইরের খাতগুলোয় প্রবৃদ্ধি আড়াই গুণ বাড়াতে হবে।

একটি ছোট অর্থনীতিতে প্রাথমিকভাবে এক থেকে দুটি খাতে বেশি নজর দেওয়া স্বাভাবিক। যেমন ষাট থেকে সত্তরের দশকে কোরিয়ার তৈরি পোশাক ছিল প্রধান রপ্তানি খাত। পরে তারা অন্যান্য খাতে বিস্তার ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সঠিক খাত চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী প্রাধান্য দেওয়াই মূল চ্যালেঞ্জ।

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বিডা নিয়মিত কাজ করছে। দেশের রপ্তানি খাতের সম্ভাবনাময় শীর্ষ খাতগুলো চিহ্নিত করতে ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়েছে বিডা। বিনিয়োগ, দক্ষতা স্থানান্তর ও রপ্তানি সম্ভাবনার আলোকে আটটি খাত নিয়ে একটি হিট ম্যাপও তৈরি করা হয়েছে।

বিডায় আটটি খাতের জন্য আলাদা ডেস্ক আছে। ব্যবসায়ীরা এসব খাতের বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয় তথ্য বিডা থেকে জানতে পারবেন। সরকারও এসব খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে নীতিনির্ধারণ করতে পারে।

মোহাম্মদ হাসান আরিফ

ভাইস চেয়ারম্যান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)

বিদেশে বিভিন্ন বাংলাদেশি দূতাবাসে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কমার্শিয়াল উইংগুলোকে একীভূত করে একটি স্বতন্ত্র ট্রেড প্রমোশন এজেন্সি বা বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা গঠন করতে হবে। আমাদের দেশের বাইরে বিভিন্ন দূতাবাসে কমার্শিয়াল উইং আছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় এই কমার্শিয়াল উইংগুলো কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে, তা নিয়ে এক সাবেক কমার্শিয়াল কাউন্সেলর হিসেবে আমার নিজেরই সন্দেহ আছে। এ কারণে অন্যান্য দেশের মতো করে এসব কমার্শিয়াল উইংসহ ইপিবিকে একটি আলাদা ট্রেড প্রমোশন এজেন্সি করা সময়ের দাবি হয়ে গেছে। একজন কমার্শিয়াল কাউন্সেলর চার বছর কাজ করে কাজ শেখেন। এরপর দেশে ফিরে উপসচিব হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ আমাদের কমার্শিয়াল উইংগুলোয় কোনো রকম কার্যকর উন্নয়ন হচ্ছে না। ফলাফলও তাই খুবই দুর্বল। নতুন সংস্থা গঠিত হলে সেটি ইপিবি ও কমার্শিয়াল উইংগুলোকে সমন্বয় করে এবং বিদেশে অবস্থান করে শুধু বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রমোশনের কাজ করবে।

বেসরকারি খাতকে কীভাবে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যায়, সেটিও গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। নতুন বাজার খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পণ্য বৈচিত্র্যকরণের পাশাপাশি নতুন বাজার শনাক্ত করা ও পণ্যের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে রপ্তানি বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজার অনুসন্ধানে সরকার, ইপিবি ও উদ্যোক্তাদের যৌথভাবে এগোতে হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সফর করতে হবে। যে অঞ্চলগুলোয় এখনো আমরা খুব বেশি প্রবেশ করতে পারিনি, বিশেষ করে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, আসিয়ান বা দক্ষিণ আমেরিকার মতো দেশগুলোয় নজর দেওয়া প্রয়োজন।

একজন ভোক্তা হিসেবে আমি চাইব, দেশে ভালো মানের পণ্য কম দামে পাওয়া যাক। এ জন্য অর্থনীতিতে বিদ্যমান অ্যান্টি–এক্সপোর্ট বায়াস (রপ্তানিবিরোধী মনোভাব) দূর করা জরুরি।

  • রপ্তানি খাতের জন্য বন্ড ও লাইসেন্সপ্রক্রিয়া সহজ করে সময়

ও খরচ কমানো।

  •  স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত কাস্টমস ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

  • ছোট ও মাঝারি ব্যবসাকে সহায়তা

    করে এক্সপোর্ট হাউস ও ট্রেডিং কোম্পানি তৈরি করা।

  • কাঁচামাল উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।

  • রপ্তানি খাতে নতুন পণ্য ও খাত চিহ্নিত করে বৈচিত্র্যকরণ।

  • সরকারি নীতিমালা ও প্রক্রিয়াকে সহজ, দীর্ঘমেয়াদি ও সময়োপযোগী করা।

অংশগ্রহণকারী:

শেখ বশিরউদ্দীন

মাননীয় উপদেষ্টা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

রূপালী চৌধুরী

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বার্জার পেইন্টস

সৈয়দ এস কায়সার কবির

সহসভাপতি, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি এবং

এমডি, রেনাটা পিএলসি

আহসান খান চৌধুরী

চেয়ারম্যান ও সিইও, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

 

মোহাম্মদ হাসান আরিফ

ভাইস চেয়ারম্যান,

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)

নাহিয়ান রহমান

নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)

সায়েমা হক বিদিশা 

অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ ও সহ-উপাচার্য (প্রশাসন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মো. মাহবুবুর রহমান

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এইচএসবিসি বাংলাদেশ

 

সামিম আহমেদ

সভাপতি, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন

মো. শাহজাহান চৌধুরী

সভাপতি, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন

মো. নাসির খান

সহ–সভাপতি, চামড়া পণ্য ও জুতা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতি

সঞ্চালনা

শওকত হোসেন

হেড অব অনলাইন, প্রথম আলো