জননীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণের রুপরেখা চাই

ইউথ ফর পলিসি এবং আইআইডির আয়োজনে “বৈষম্যহীন বাংলাদেশ: তরুণদের ভাবনা”শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ঢাকার প্রথম আলো কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

প্যানেল আলোচক

মামুন আবদুল্লাহি

লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন; শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

উমামা ফাতেমা

সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন; শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নাজিফা জান্নাত

সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন; শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

অর্পিতা শ্যামা দেব

সদস্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি  

আশরাফ উদ্দিন মাহদি

সদস্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি

সাঈদ আহমেদ

নির্বাহী প্রধান, আইআইডি

সুলতানা মেহজাবীন

ফোকাল, ইয়ুথ ফর পলিসি ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক, আইআইডি

আবদুল্লাহ আল মাসুদ

ইয়ুথ ফর পলিসি স্বেচ্ছাসেবক, রংপুর

নিলয় সাহা

ইয়ুথ ফর পলিসি স্বেচ্ছাসেবক, রাজশাহী

নিশাত আনজুম সেমন্তী

ইয়ুথ ফর পলিসি স্বেচ্ছাসেবক, ঢাকা

আথিনা চাকমা

ইয়ুথ ফর পলিসি স্বেচ্ছাসেবক, পার্বত্য চট্টগ্রাম

আসিফ ইকবাল জুবায়ের

ইয়ুথ ফর পলিসি স্বেচ্ছাসেবক, বরিশাল

সঞ্চালনা

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনা

মামুন আবদুল্লাহি

লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন; শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের তরুণেরা, এতোদিন ধরে বিশেষ করে স্বাস্থ্য নিয়ে, শিক্ষা নিয়ে এবং জলবায়ুর মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছে, বিভিন্ন জায়গায় পলিসি দিচ্ছে। এটার বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাপী একধরনের আন্দোলনও তৈরি করেছে। বাংলাদেশে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এখন তরুণদের একটা নতুন সুযোগ এসেছে। এটা তারা নতুন করে ভাবতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা নীতিমালা কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করবে। এটা হলো পলিটিক্যাল লিটেরেসি, রাজনৈতিক জ্ঞান।

আমরা দেখছি যে, গত ১৫-২০ বছরে এখানকার তরুণরা অন্যান্য নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করতে পারলেও ‘পলিটিক্যাল লিটেরেসি’র অভাব তাদের মধ্যে ছিল৷ তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা যথাযথভাবে তৈরি করতে না পারলে আগামীদিনের দেশ গঠন, রাষ্ট্র গঠন, সংস্কারের প্রস্তাবনা কোনো কিছুই সম্ভব হবে না। তরুণদের জন্য এবার একটা মোক্ষম সুযোগ। আশা করি তারা এই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে আগামীদিনের নীতিমালা তৈরিতে এবং তার বাস্তবায়নে ‘পলিটিক্যাল লিটেরেসি’ কে প্রাধান্য দেবে।

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ তৈরিতে আমাদের অগ্রাধিকার তালিকা রয়েছে। প্রথমেই আমাদের একটি গণপরিষদ প্রয়োজন। যার মাধ্যমে সংবিধান নতুনভাবে রূপান্তর করতে পারব। দ্বিতীয়ত, শাসনকাঠামো কেমন হবে, তা ঠিক করা হবে। তৃতীয়ত, আমাদের ক্ষমতার পালাবদল কীভাবে হবে, তাও নির্ধারণ করা। ১৯৯০–এর পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটা সমাধান হিসেবে এসেছে; কিন্তু তা কাজ করেনি। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতার গ্লানি ১৫ বছর ধরে বইতে হয়েছে। সে জন্য একটি সমাধানের চেষ্টা আমরা করছি।

আমাদের এখানে সবখানে বিরাজনীতিকরণ করার চেষ্টা হয়েছে। নেতা হতে তরুণদের অবশ্যই রাজনৈতিক হতে হবে। রাজনীতির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অনীহা রয়েছে। এ জন্য আমাদের রাজনীতি দূষিত হওয়ার দায় ছিল; কিন্তু রাজনৈতিক জ্ঞান ছাড়া কোনো জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব না। এ জন্য তরুণদের রাজনৈতিক জ্ঞান প্রয়োজন। এ জন্য আমরা অভ্যুত্থানের আগের কার্যক্রমগুলো ক্যাম্পাসে চলমান রেখেছি। ক্যাম্পাসে আমাদের পাঠচক্রে যারা অংশগ্রহণ করেন, হয়তো তাঁরা ভালো কিছুই শেখেন। আমরা জানি না কীভাবে এখানে আরও বেশি তরুণকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারব। এখান থেকে তাঁরা সব ধরনের নেতৃত্বগুণ অর্জন করতে পারবেন।

উমামা ফাতেমা

সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন; শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তরুণদের নতুন চিন্তাগুলো তুলে ধরার, নীতি প্রণয়নে অংশ নেওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সরকার এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে। তরুণদের নীতি প্রণয়নে অংশগ্রহণের দাবিটি দ্রুত সুরাহা করা সম্ভব। রাষ্ট্র সংস্কারে তরুণেরা সরকারকে সহায়তা করতে চাইছেন। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি তারা যেন স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠিত হয়ে তাদের দাবিগুলো আদায় করতে পারেন। এতে স্থানীয় প্রশাসন গতিশীল হবে। সরকার এ ক্ষেত্রে সহায়তা করলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাবি আদায়ের পথ উন্মুক্ত হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় প্রশাসনের ওপর চাপও কমবে।

নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের রাজনীতি দ্বিদলীয় বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে যায়। ফলে জনগণ এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে থাকে। নব্বইয়ের দশকে এ প্রক্রিয়া তৈরি না হলে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ তৈরি করতে পারত না। সে সময় জবাবদিহির শাসন তৈরি হয়নি বলেই ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালে এসে আমাদের নতুন করে সুযোগ তৈরি হয়েছে।

৫ আগস্ট–পরবর্তী ব্যবস্থাটা শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া সিস্টেমের একটা ধ্বংসাবশেষ। গত ১৫ বছরে দেশ ভীষণভাবে দুর্নীতিতে আক্রান্ত হয়েছে। তাই প্রতিটা প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আমরা এখানে একভাবে চিন্তা করছি। গ্রামীণ মানুষ হয়তো ভিন্নভাবে চিন্তা করছে। এই চিন্তার বৈচিত্র্য থাকবে। কিন্তু রাষ্ট্রের কার্যক্রম চলতে হবে নিরপেক্ষভাবে। বিগত আওয়ামী সরকার বাঙালি জাতীয়তাবাদ, প্রগতিশীলতার মতাদর্শ সবকিছু ঠিক করে দিতে চেয়েছে। রাষ্ট্র প্রতিটি জিনিসের সিদ্ধান্ত ঠিক করে দিতে চাইলেই সমস্যাটা হয়। রাষ্ট্রের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ থাকবে। রাষ্ট্র ন্যায়ের ওপর নির্ভর করে দেশ চালাবে। জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। এসব নিশ্চিত করা গেলে ভেতরকার মতবিরোধ সহিংসতার পর্যায়ে যাবে না।

আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সরকারের একটা কর্তৃত্ব তৈরি হয়, সে জন্য ইউজিসি রাখা যাবে না। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে। নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হবে। টানা পাঁচ বছর ডাকসু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলেই সারা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে।

নাজিফা জান্নাত

সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন; শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় 

২০২৪–এর গণ–অভ্যুত্থান আসলে ছাত্র-জনতা সবার সম্মিলিত প্রয়াসের কারণেই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এ গণ–অভ্যুত্থানে প্রাথমিকভাবে ও শেষ পর্যন্ত ভ্যানগার্ড হিসেবে ছিল তরুণেরা। বাংলাদেশের এখন অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা তরুণ। সেখানে এই তরুণদের চিন্তাভাবনা আমরা যদি রাষ্ট্রের নীতিমালা তৈরির জায়গায় অন্তর্ভুক্ত করতে না পারি, তাহলে বাংলাদেশে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের কথা আমরা বলছি, সেটা সম্ভব হবে না।

জনপ্রশাসনে বা জননীতি তৈরিতে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে অনেকগুলো পর্যায় রয়েছে। যেমন ইউনিয়ন পর্যায়, উপজেলা পর্যায়, জেলা পর্যায়, বিভাগীয় পর্যায়। সর্বশেষে আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও তাদের অংশগ্রহণের বিষয় রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে গেলে তাদের নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি হয়েই নীতিমালা তৈরিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা একটা জাতীয় যুব কাউন্সিল (ন্যাশনাল ইয়ুথ কাউন্সিল) করতে পারি, যেখানে তরুণেরা সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের চিন্তাগুলো তুলে ধরতে পারবে।

বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। জাতীয় রাজনীতি ও ছাত্ররাজনীতি পরস্পর সংযুক্ত। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আলাপ তুলে অনেকেই একটা গোঁজামিল দিচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির সমস্যা কোথায়, কেন ছাত্ররাজনীতি সন্ত্রাসী ও লেজুড়বৃত্তিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে, সেটি খুঁজে বের করে সুস্থ ধারার রাজনীতি নির্মাণে মনোযোগ দিতে হবে। পাবলিক-প্রাইভেট সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোয় দ্রুততম সময়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন চালু করতে হবে। বিগত সরকারের আমলে ছাত্রলীগ যেভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রদের রাজনীতিতে আনতে চেয়েছে, এর বিপরীতে শিক্ষাসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে আগ্রহ ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ছাত্ররা যেন রাজনীতিতে আসে, সেই পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্র, গণমাধ্যম ও সচেতন ছাত্রদের সামষ্টিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হবেন দল-মতনির্বিশেষে সব মানুষের। গত শাসনামলে শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী শাসনের মুখপাত্র হয়ে উঠেছিলেন। দলীয় প্রধানের পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা প্রধানমন্ত্রী হলে দলের প্রতি তাঁর স্পষ্ট পক্ষপাত ও বৈষম্য দেখা যায়। এখন আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলছি। এখানে কোনো পক্ষপাত থাকবে না।

সাঈদ আহমেদ

নির্বাহী প্রধান, আইআইডি

গত দেড় দশকে বিভিন্ন দলীয়, ধর্মীয় বা মতাদর্শের ব্যানারে যেসব সরকার বিরোধী আন্দোলন হয়েছে, তার কোনটাই সফল ছিল না। একমাত্র ছাত্র আন্দোলনগুলোই ছিল সফল। এবারের জুলাই আন্দোলনেও কিন্তু ছাত্র-জনতা কোন বিশেষ ধর্ম, দল, গোত্র পরিচয়ে মাঠে আসেনি।

যদিও যে কোনো সফল আন্দোলনের পরেই তার ফল কুক্ষিগত করার জন্য বিভিন্ন দল, ধর্ম বা মতাদর্শের প্রতিযোগিতা দেখা যায়। কার কতোটা অবদান ছিল সেটা নিয়ে নতুন নতুন বিতর্ক হয়। তবে হাজারের অধিক ছাত্র-জনতা যারা শহীদ হয়েছে, তারা কিন্তু এই বিভাজনের জন্য জীবন দেয়নি। বরং আন্দোলনের মূলে ছিল একটি বৈষম্যবিরোধী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা। সুতরাং আন্দোলনের পরবর্তী সময় যেন কোনো বিশেষ দল-ধর্ম-বর্ণকে প্রাধান্য দিয়ে কোনো সংস্কার না হয় সেই দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর যেন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তার লিঙ্গ, জাত, বা ধর্মীয় কারনে বৈষম্যের শিকার না হয়।

গত এক যুগ ধরে ইয়ুথ ফর পলিসি জননীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছে। কারন প্রতিবারই আন্দোলনের পরে শাসনতান্ত্রিক কাঠামো থেকে ছাত্রদের অংশীদারত্ব ধীরে ধীরে কমে আসে। তাই জননীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণের একটি স্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য আইন ও সংবিধানে কী কী সংস্কার আনা যায়, তা ভাবতে হবে।

যেমন, ফিলিপাইন, কেনিয়া, উগান্ডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে যুব কাউন্সিল করা হয়েছে। এছাড়াও ফিনল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশে যুব আইন বা যুবনীতির মাধ্যমে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। ভবিষ্যতের পৃথিবী তরুণদের হাত ধরেই আগাবে। সুতরাং দেশ পথ হারালে আন্দোলনই যেন একমাত্র পথ না হয়ে ওঠে সেটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, তরুণদের কাঠামোবদ্ধভাবে জননীতিতে নিয়মিত অংশগ্রহণের জায়গা তৈরি হওয়া প্রয়োজন।

অর্পিতা শ্যামা দেব

সদস্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি

তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সেটি কীভাবে হবে? উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য আগে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আমি রাজনীতিতে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, এসব ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের কাজ। নোংরা রাজনীতির চর্চাও রয়েছে। এ চিন্তা আমাদের সবার মধ্যে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের অধ্যয়নকালে ডাকসুর জন্য ছোট ছোট আন্দোলন হতে দেখেছি।

২০১৮ সালের প্রথমবার কোটা আন্দোলনের পর ডাকসুর জন্য বড় ধরনের আন্দোলন হলো। এরপর প্রায় ২৮ বছর পর ডাকসুর নির্বাচন হলো। ডাকসু নির্বাচনের পর ক্যাম্পাসে ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখেছি। ডাকসুতে নির্বাচিতদের বেশির ভাগই আগে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। আমি নিজেও হল সংসদে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছি। নতুন নতুন মানুষ এখানে এসেছেন, যাঁরা আগে হয়তো পড়াশোনা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ আবার ফিরিয়ে নিয়ে আনতে হবে। তাহলে তরুণেরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে এবং জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে পারবে। ডাকসু থেকে নির্বাচিত পাঁচজনের সিনেটে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ থেকে প্রতিনিধিদের আমরা সংসদে পাঠাতে পারি। তারা সে জায়গা থেকে রাষ্ট্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। হঠাৎ এসে কেউ কাজ করতে পারবে না। ইতিবাচক রাজনীতি করলে তরুণেরা স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে আরও বেশি করে যুক্ত হবে।

পরিবর্তনগুলো পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। আমার চিন্তাভাবনার বিকাশ পরিবার থেকেই শুরু হয়েছে। পরিবার থেকেই আমার মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো এসেছে। পরিবারের মধ্যে গিয়ে রাষ্ট্র এই পরিবর্তনগুলো করতে পারবে না। এর জন্য আমাদের নিজেদের এগিয়ে আসতে হবে। ৫ আগস্টের পর ভাস্কর্য ভাঙা, বিভিন্ন জায়গায় আগুন দেওয়াসহ মবজাস্টিস কোনোভাবেই কাম্য নয়। এখন সংখ্যালঘুরা অনেকেই ভয়ের মধ্যে আছেন। জাতীয় নাগরিক ঐক্য প্ল্যাটফর্মটির তরুণদের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। সে জন্য আমরা এখানে সব ধরনের মানুষ একত্র হয়েছি।

আশরাফ উদ্দিন মাহদি

সদস্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি

সব বাইনারি ভেঙে আমরা আন্দালন করেছি। সাংস্কৃতিক বিভাজন থাকলে আমরা এটা করতে পারতাম না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সব মত ও সংস্কৃতির সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে। এখানে আমাদের সবার একসঙ্গে কাজ করার বিকল্প নেই। জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে আমরা যাত্রাবাড়ীতে অনেকগুলো মাদ্রাসায় গিয়েছি। সেখানে শহীদ পরিবার ও সব অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেছি। মাজার ভাঙা যাবে না–এ বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। ভাস্কর্য, মন্দির, মন্দিরের ভেতরের ভাস্কর্য ভাঙা যাবে কি না, এ বিষয়ে মূলধারার ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্য স্পষ্ট। তাঁরা বিভিন্ন সেমিনার ও জনসভায় সব ধর্মীয় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন।

আওয়ামী দুঃশাসনের গত তিন মেয়াদে কিছু শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এ সময় তরুণেরা ভাবতেন রাজনীতি করা তাঁদের কাজ নয়। ‘আমি রাজনীতি ঘৃণা করি’ –এই বক্তব্য ছিল খুব জনপ্রিয়। রাজনৈতিক সচেতনতা, সমালোচনা ও পর্যালোচনার জায়গাগুলো নিয়ে বিস্তর চিন্তা হতে পারে।

গত ১৫ বছর কীভাবে পাঠ করব এবং এর সমাধান যে সব তরুণের কাছে থাকবে, তাঁদের কাছে আমি নেতৃত্বভার দিতে প্রস্তুত। সমাজের সবখানে তরুণদের অংশগ্রহণের একটা প্রক্রিয়া থাকা অবশ্যই জরুরি। তাঁরাও সমাজের অংশীজন। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের পাশ কাটিয়ে আমরা কোনো কিছু করতে পারব না। বিভিন্ন উন্নত দেশের রাজনীতিবিদ বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তরুণদের ইন্টার্নশিপের একটা ব্যবস্থা থাকে। এরপর তাঁরা পারদর্শিতা অর্জন করে রাজনীতিতে আসেন। আমার কাছে এটি সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি মনে হয়। আমরা রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সামাজিক কাঠামো থেকেও আমরা ফ্যাসিবাদ দূর করতে চাই।

আমাদের নাগরিক দক্ষতা উন্নয়নের জোর দেওয়া উচিত। ৫ আগস্টের অভ্যত্থানের পর বিভিন্ন খাতে একটা শূন্যতা দেখা দিয়েছে। তখন ছাত্ররা ট্রাফিক সামলানোসহ অনেক দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা তাঁদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারিনি। উন্নত দেশগুলোতে নাগরিকদের এই ধরনের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়। সমস্যার সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তরুণদের ভূমিকা রাখতে হবে। এ জন্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।

সুলতানা মেহজাবীন

ফোকাল, ইয়ুথ ফর পলিসি ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক, আইআইডি

জননীতিতে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে কাঠামোবদ্ধ করা এখন সময়ের প্রয়োজন। তবে এই অংশগ্রহণকে কার্যকর করতে হলে সাম্য ও সমতার মধ্যকার সূক্ষ্ম পার্থক্য বোঝা জরুরি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন চাহিদা ও প্রয়োজনের প্রতিও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। বরিশালের নদীর সমস্যা ও পাহাড়ের সমস্যাকে সমান অধিকারের জায়গায় চিন্তা করলে হবে না। বরং এগুলো আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ

পর্যন্ত তরুণদের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, জনপ্রতিনিধি ও  তরুণরা একত্রে মিলে কাজ করতে পারবে। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে শুধু আইন কানুনই যথেষ্ট নয়, সামাজিক চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও জরুরি।

স্কুল ও কলেজ পর্যায় থেকে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাজের পাশাপাশি জননীতি বিষয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তাহলে ছোটবেলা থেকেই তরুণদের মধ্যে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এবং তারা নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে যা পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে জননীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণের কাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আইআইডি এর ইয়ুথ ফর পলিসি নেটওয়ার্ক মূলত জননীতি সম্পর্কে তরুণদের সচেতন ও সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন কর্মসূচি, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে জননীতি সম্পর্কিত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে তাদেরকে দেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য প্রস্তুত করা।

আবদুল্লাহ আল মাসুদ

ইয়ুথ ফর পলিসি স্বেচ্ছাসেবক, রংপুর

বর্তমানে শিক্ষা সংষ্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাঠ্যক্রমের একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আমরা প্রত্যাশা করছি। সাম্প্রতিক সময়ের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক শাসনের নির্ধারিত পাঠ্যবইগুলো পড়ে এসেছে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসানামল ও নেতাদের  কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। তাই শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনায় আনা উচিত। পাঠ্যক্রমে সংখ্যালঘু শব্দ বাদ দিয়ে সবাইকে বাংলাদেশি হিসেবে তুলে ধরতে হবে এবং তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে। কীভাবে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে পাঠ্যপুস্তকে নিবন্ধ থাকা দরকার। শৈশব থেকেই শিক্ষার্থীদের এগুলো জানানো গেলে তারা সঠিকভাবে তা শিখতে পারবে।

বর্তমান পাঠ্যক্রমে একজন বিশেষ নেতা ও তাঁর পরিবারের প্রচারণা এসেছে। এ জায়গায় পরিবর্তন নিয়ে আসা উচিত। তাহলে আজ বা আগামীতে আমরা সমাজে তার পরিবর্তন দেখতে পাব।

নিলয় সাহা

ইয়ুথ ফর পলিসি স্বেচ্ছাসেবক, রাজশাহী

তরুণদের ক্ষমতায়নে রাষ্ট্র সরাসরি অঙ্গীকারবদ্ধ । জাতীয় যুবনীতি ২০১৭ বাস্তবায়িত হলে অনেক সংকটের টেকসই  সমাধান নিশ্চিত হবে।

সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের কথা বলতে গেলে গত ৫ আগষ্টের পরে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে কাওয়ালীকে সাংস্কৃতিক কর্মীদের বিজয় বলে মনে হয় । একইসাথে  মূলধারার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড যেন অন্য কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত না হয়, তা নিয়েও আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন । আমাদেরকে মিশ্র সাংস্কৃতিক চর্চার সহাবস্থান যেকোনো ভাবেই নিশ্চিত করতে হবে।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে, ভিন্ন ভিন্ন চেতনা ও আদর্শের সাংস্কৃতিক চর্চার অবাধ আত্নবিকাশের  ভবিষ্যত নিয়ে আমি কিছুটা শঙ্কিত। সেইসাথে দেশে বসবাসরত জাতিগত, ধর্মীয়সহ যেকোনো পরিচয়ের  সংখ্যালঘুরা যে মনস্তাত্ত্বিক ভীতির মধ্যে বসবাস করে সে বিষয়ে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে দৃশ্যমান উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে । শুধুমাত্র সংখ্যায় কম হওয়ায় কাউকে যেন রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও ঐতিহাসিক সামাজিক প্রেক্ষাপট হীনম্মন্যতার দিকে ঠেলে না দেয় এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও জোর দিতে হবে।

দুঃখজনক হলেও বর্তমানে সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংখ্যালঘুরা একধরনের প্রচ্ছন্ন মনস্তাত্ত্বিক শঙ্কার মধ্যে আছে। এ শঙ্কা ৫ আগস্টের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে হয়। বাংলাদেশে জরুরি ভিত্তিতে ভয়ের ও আতঙ্কের সংস্কৃতির অবসান হওয়া উচিত।

নিশাত আনজুম সেমন্তী

ইয়ুথ ফর পলিসি স্বেচ্ছাসেবক, ঢাকা

দেশের কাজে অবদান রাখার জন্য তরুণদের নিজেদেরও জানাশোনা থাকা প্রয়োজন। সংসদে তরুণদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকলে নিজেকে গঠনের পাশাপাশি দেশ গঠন করাও তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। জাতীয় সংসদের জন্য বলব, ফ্লোরক্রসিং বিষয়ক ৭০ অনুচ্ছেদটি সংশোধন করা দরকার। এর ফলে একজন সাংসদ নিজের দলের বাইরে গিয়ে যেন মতামত প্রকাশ করতে পারেন।

নব্বইয়ের পরে ২০১৮ সালে ডাকসু ছাড়া আর কোনো ছাত্রসংসদ দেখা যায় না। প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিতভাবে হওয়া জরুরি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালেয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশে সবচেয়ে বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

পরিবার থেকে শুরু করে স্থানীয় বিষয়গুলোতে নারীর মতামত মতামতের মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলের সালিশি সভায় ১০ থেকে ১৫ জন পুরুষ সদস্য থাকে। সেখানে নারী সদস্যের দেখা যায় না বললেই চলে।  নারী আয় করলেও সংসারের সিদ্ধান্ত পুরুষ সদস্য নিয়ে থাকে।  এই মানসিকতা পরিবর্তন না হলে নীতিমালা তৈরি পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ প্রান্তিক পর্যায়ে থেকে যাবে।  তাই তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের মতামতের মূল্যায়ন দিতে হবে।

আথিনা চাকমা

ইয়ুথ ফর পলিসি স্বেচ্ছাসেবক, পার্বত্য চট্টগ্রাম

আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ চাই। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায় থেকে  কাজ করতে হবে। ‘রাজনীতি ঘৃণা করি’ –এ কথাটা আমার সঙ্গে যায় না। একজন  শিশু জন্ম নেওয়ার পর, তার অধিকার সরকারের কাছে চাওয়ার মাধ্যমেই আমরা একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ঢুকে যাই। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সংসদ পর্যন্ত আমি কীভাবে আসতে পারব? সে জন্য রাজনৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক তাদের ভোটাধিকার সম্পর্কেও জানে না। মূলধারায় আসার জন্য রাজনৈতিক সচেতনতা খুবই প্রয়োজন।

আমি নিজে ছোটবেলা থেকে নেতৃত্ব–সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। এ দক্ষতাগুলো পাহাড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমি কাজ করছি। ছোটবেলায় দুনিয়ার খবর জানার একমাত্র উপায় ছিল পত্রিকা পড়া। সে সুযোগও আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সবাই পেত না। এ রকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকে আমরা মূলধারায় কীভাবে আসব? প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চল থেকে মূলধারাকে অনেক দূরের ও ঝাপসা মনে হয়। এ বাধা কাটিয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় উপায় হলো শিক্ষা।

আসিফ ইকবাল জুবায়ের

ইয়ুথ ফর পলিসি স্বেচ্ছাসেবক, বরিশাল

বাংলাদেশের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হবে। এজন্য বিশেষভাবে উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ কথা বলছি। এর জন্য জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব তৈরির পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব তৈরির কাজ শুরু করতে হবে। গ্রামীণ এলাকা ও শহরাঞ্চল, সবখানেই নেতৃত্ব তৈরির এখনই উৎকৃষ্ট সময়।

সংসদ সদস্য হওয়ার বয়স ২৫ বছর থেকে কমিয়ে আনা যেতে পারে। এটি ২১ থেকে ২৫ বছরের মাঝামাঝি একটা জায়গায় হতে পারে। ২৫ বছেরর আগেই তরুণেরা সংসদ সদস্য হতে পারলে রাষ্ট্র উন্নয়নের দিকে আরও এগোবে।

সাংস্কৃতিচর্চা করেন এমন মানুষদের নিয়ে এলাকাভিত্তিক অসম্প্রদায়িক কমিটি হতে পারে। তাহলে প্রতিষ্ঠান ভাঙা বা মাজার ভাঙার জায়গাটা দেখতে হবে না। এর একটা এলাকাভিত্তিক সমাধান হয়ে যাবে। চিন্তা করার ক্ষেত্রে সবার জন্য সমন্বিতভাবে চিন্তা করতে হবে, নারীদের জন্য পুরুষদের এবং পুরুষদের জন্য নারীকে ভাবতে হবে। তাহলে শুধু নারীদের জন্য নারীকে আলাদা করে চিন্তা করতে হবে না।

এ গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন আইআইডির যুগ্ম পরিচালক ও ইয়ুথ ফর পলিসির প্রধান সানজিদা রহমান, সহযোগী গবেষক মুহাম্মদ তানবীরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক উখিং নু চাক, আরাফা আক্তার ও মো. রমজান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইয়ুথ ফর পলিসির স্বেচ্ছাসেবক বিইউপির শিক্ষার্থী শবনম সুলতানা, বান্দরবান কলেজের শিক্ষার্থী রংথইন ম্রো ও ইতি চৌধুরী, জলবায়ু কর্মী ও হলিক্রস কলেজের শিক্ষার্থী আরুবা ফারুক, বন্ধুসভা ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার সীমান্ত, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আসহাবিল ইয়ামিন ও স্কলাস্টিকা স্কুলের শিক্ষার্থী গার্গী তনুশ্রী পাল

সুপারিশ

  • তরুণদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তৈরিতে বিরাজনীতিকরণ ও দলীয় লেজুড়বৃত্তি ত্যাগ করতে হবে।

  • নির্বাচিত ছাত্র সংসদের মাধ্যমে তরুণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।

  • স্থানীয় পর্যায়ে তরুণদের সংগঠিত করা ও নেতৃত্ব বিকাশে উদ্যোগ নিতে হবে।

  • জাতিগত ও সংখ্যালঘুদের উপর আরোপিত ভীতি ও বৈষম্য দূর করতে হবে।

  • সংবিধান ও আইনি কাঠামোর মাধ্যমে তরুণদের জননীতিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

  • শিক্ষাক্রম সংস্কারে প্রমাণভিত্তিক উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।