হেপাটাইটিস নির্মূলের এখনই সময়

হেপাটোলজি সোসাইটি ঢাকা বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস: হেপাটাইটিস নির্মূলের এখনই সময়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০ জুলাই, ২০২২। এ আলোচনার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

অংশগ্রহণকারী

অধ্যাপক মবিন খান

সভাপতি, হেপাটোলজি সোসাইটি; প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, হেপাটোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ

অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম

সাবেক উপাচার্য, বিএসএমএমইউ

অধ্যাপক মো. শাহিনুল আলম

সাধারণ সম্পাদক, হেপাটোলজি সোসাইটি, ঢাকা, বাংলাদেশ। অধ্যাপক, হেপাটোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ।

ডা. মো. গোলাম আযম

বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক, হেপাটোলজি সোসাইটি, ঢাকা, বাংলাদেশ। সহযোগী অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও লিভার বিভাগ, বারডেম

অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী

প্রতিষ্ঠাতা, ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ

অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম

প্রেসিডেন্ট, অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি)

অধ্যাপক মোজাহেরুল হক

সাবেক উপদেষ্টা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া)

অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা

বিভাগীয় প্রধান, শিশু বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ

ডা. মো. গোলাম মোস্তফা

অধ্যাপক, হেপাটোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ

ডা. মো. আকমত আলী

অধ্যাপক, লিভার বিভাগ, আদ-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ

ডা. মো. সাইফুল ইসলাম এলিন

লিভার বিশেষজ্ঞ, লিভার বিভাগ, বিএসএমএমইউ

ডা. তানভীর আহমাদ

সহকারী রেজিস্ট্রার (মেডিসিন), কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ঢাকা।

এস এম মাহমুদুল হক পল্লব

এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (সেলস ও মার্কেটিং), বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস

সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম

সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

সঞ্চালনা

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

আব্দুল কাইয়ুম

প্রতিবছর আমরা বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করি। হেপাটাইটিস যেন না হয়, সে জন্য জরুরি উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সবার হেপাটাইটিস ইনজেকশন নেওয়া প্রয়োজন। এটা টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা দরকার। আজকের আলোচনায় এসব বিষয় আসবে।

মো. গোলাম আযম

সারা বিশ্বে ভাইরাল হেপাটাইটিস একটি মারাত্মক ব্যাধি। অন্যদিকে এটি প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য ব্যাধিও বটে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কার্যকর টিকা বিদ্যমান আর এখন হেপাটাইটিস সি ভাইরাস প্রতিরোধী মুখে খাওয়ার ওষুধ অধিকতর কার্যকর হওয়ায় পৃথিবী থেকে এ দুটি ভাইরাস নির্মূলের লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন রোগী কল্যাণ সমিতি ও লিভার সোসাইটিগুলো কাজ করে যাচ্ছে।

একজন ব্রিটিশ নাগরিক মি. চার্লস গোর, যিনি ১৯৯৫ সালে হেপাটাইটিস সি–তে আক্রান্ত হন এবং পরে মাত্র তিন বছরের মধ্যে ওনার লিভার সিরোসিস রোগ শুরু হয়। ওই সময়ে হেপাটাইটিস সির চিকিৎসা নিয়ে কোনো সর্বসম্মত গাইডলাইন ছিল না। যা ছিল, তা–ও অনেক ব্যয়বহুল। কোনো গাইডলাইন না থাকায় এই রোগের চিকিৎসায় স্বাস্থ্যবিমা ছিল না।

চার্লস গোর ২০০০ সালে এ রকম িতনজন রোগী নিয়ে হেপাটাইটিস সি ট্রাস্ট গঠন করেন। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের রোগীদের নিয়ে ২০০৪ সালের ১ অক্টোবর প্রথম আন্তর্জাতিক হেপাটাইটিস সি সচেতনতা দিবস পালন শুরু করেন। ইতিমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রোগী গ্রুপগুলো বিচ্ছিন্নভাবে হেপাটাইটিস দিবস পালন করে আসছিল। এ জন্য ২০০৮ সালে সব কটি রোগী গ্রুপ মিলে ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স গঠন করে এবং ১৯ মে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রচার–প্রচারণার কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১০ সালের ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে হেপাটাইটিস বির আবিষ্কারক নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গের জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ঘোষণা করা হয়।

এ বছরের বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘হেপাটাইটিস নির্মূলের এখনই সময়’। গত মাসে জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস সামিটে প্রথমবারের মতো ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্সকে উৎসাহিত করেছেন।

সাইফুল ইসলাম এলিন

এ দেশের অধিকাংশ মানুষ নিম্নবিত্ত। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও হেপাটাইটিস বি ভাইরাস যেকোনো বয়সের মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। অ্যাকিউট হেপাটাইটিসের ৩৫ শতাংশ, ক্রনিক হেপাটাইটিসের ৭৫ শতাংশ, লিভার সিরোসিসের ৬০ শতাংশ এবং লিভার ক্যানসারের ৬৫ শতাংশের জন্য এখনো হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দায়ী।

বাংলাদেশে ২০০৩ সাল থেকে প্রথম ইপিআই শিডিউলে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনকে যুক্ত করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমতে দেখা যায়। আমরা যদি একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্তের হার ছিল প্রায় ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। সেখানে বর্তমানে এই হার এসে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।

২০১৮ সালে দেশব্যাপী অধ্যাপক শাহিনুল আলমের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত জনসংখ্যা প্রায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ। নারীদের চেয়ে পুরুষের আক্রান্তের হার বেশি। আবার গ্রাম থেকে শহরের মানুষই বেশি আক্রান্ত। দেশের ৮৫ লাখ মানুষ বি ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ, নারীর সংখ্যা ২৮ লাখ। আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখ চাকরিপ্রার্থী, কর্মক্ষম পুরুষ ও নারী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলেই চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণা করা হচ্ছে, যেটা মোটেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। অপর দিকে লিভারের জন্য আরেকটি ক্ষতিকর ভাইরাস হচ্ছে হেপাটাইটিস সি।

মো. গোলাম মোস্তফা

সাধারণত রক্তের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস ছড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, অনিরাপদ সুই বা সিরিঞ্জের ব্যবহার, অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা একই সুইয়ের মাধ্যমে বিভিন্নজনে ইনজেকশন ড্রাগ ব্যবহার করেন। এভাবে তাঁদের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। অনিরাপদ আকুপাংচার, টাট্টুইং, নাক-কান ছিদ্রকরণের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। টুথব্রাশ শেয়ার করার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। শেভিং উপকরণ শেয়ার করার মাধ্যমে, বিশেষ করে সেলুনে একই ‘শেভিং উপকরণ’ বিভিন্নজনের ওপর ব্যবহার করার মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হলো মাদকাসক্ত ব্যক্তি, সমকামী, অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্কে আসক্ত ব্যক্তি। আবার যাঁরা হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস বহনকারী মায়ের নবজাতক, যাঁরা চিকিৎসাসেবা-কর্মী, যাঁরা রক্ত গ্রহণকারী, যাঁরা ডায়ালাইসিস গ্রহণকারী, তাঁদের মাধ্যমেও হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস ছড়াতে পারে।

করমর্দন, কোলাকুলি, জামাকাপড়, থালাবাসন-চামচ ইত্যাদির মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস ছড়ায় না। যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তঁাদের জীবদ্দশায় ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ লিভার সিরোসিস, লিভার ফেইলিওর বা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার—দুটিই প্রাণঘাতী রোগ।

ফেরদৌসী বেগম

দেশে কতজন গর্ভবতী মা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত—এর তেমন কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে গর্ভবতী মায়েরা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা তাঁদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। এর মধ্যে রয়েছে লিভার প্রদাহ। হেপাটাইটিসের জন্য রক্ত জমাট বাঁধা ব্যাহত হয়। এ জন্য অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যেতে পারেন। গর্ভবতী নারীদের জন্ডিস হলে সেটা বড় একটা ভয়ের কারণ। কারণ, জন্ডিস মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। এটা গর্ভের শিশুকে সংক্রমিত করতে পারে। শিশুরও সমস্যা দেখা দেয়। ভ্যাকসিনের মাধ্যমে টিটেনাস, স্মল পক্স আমরা নির্মূল করতে পেরেছি। হেপাটাইটিসও নিমর্ূল করতে পারব। দেশের সব নারী যেন ভ্যাকসিন পান, এর উদ্যোগ নিতে হবে। গর্ভধারণের আগে নারীদের কাউন্সেলিং করতে হয়। বাংলাদেশে সেটা নেই বললেই চলে।

একজন নারী যখন গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হন, তখনই নিশ্চিত করতে হবে যে তিনি ভ্যাকসিন নিয়েছেন কি না। গর্ভধারণের পর প্রথম যখন অ্যান্টিনেটাল কেয়ারে আসেন, তখন জানতে হবে হেপাটাইটিসের ভ্যাকসিন নিয়েছেন কি না। গর্ভধারণকালে এই টিকা দেওয়া হয় না। সন্তান প্রসবের সঙ্গে সঙ্গেই দেওয়া হয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেউ যদি হেপাটাইটিস পজিটিভ থাকেন, যৌনমিলনের জন্য তাঁদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

নজরুল ইসলাম

১৮৮৩ সালে জার্মানির ব্রিমান শিপইয়ার্ডের কর্মীদের মধ্যে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাবের ঘটনা প্রথম সিরাম হেপাটাইটিস প্রতিবেদন হিসেবে ধরা হয়। সেখানে কর্মীদের গুটিবসন্তের টিকা দেওয়া হয়। কিন্তু টিকা দেওয়ার এক থেকে সাত মাস পর কিছু কর্মী জন্ডিসে আক্রান্ত হন। তবে ছোঁয়াচে জন্ডিসের বিবরণ দিয়েছেন গ্রিক মহাপুরুষ হিপোক্রেটিস।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যৌনরোগ ক্লিনিকে একই সিরিঞ্জ ও সুচ দিয়ে অনেক রোগীকে ইনজেকশন দেওয়া হতো। দেখা যেত, এসব রোগীর মধ্যে কেউ কেউ এক থেকে তিন মাসের মধ্যে জন্ডিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ধারণা করা হতো, একই সিরিঞ্জ ও সুচ ব্যবহারের কারণে এটা হয়েছে।

১৯০৮ সালে প্রথমবারের মতো ভাইরাসকে জন্ডিসের কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়। তবে ১৯৩৭ সালে প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত এ ধারণাকে তেমন পাত্তা দেওয়া হয়নি। এ সময় ২ হাজার ২০০ জনকে ইয়েলো ফিভারের টিকা দেওয়া হলে দুই থেকে পাঁচ মাসের মধ্যেই ৫২ জন জন্ডিসে আক্রান্ত হন। বিভিন্ন রকম পর্যালোচনা করার পর প্রমাণিত হয় যে ইয়েলো ফিভার ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার সময় যে হিউম্যান সিরাম ব্যবহার করা হয়েছিল, তা হেপাটাইটিস ভাইরাসে সংক্রমিত ছিল।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ব্রিগেডিয়ার ম্যাককালাম প্রস্তাব দিলেন, পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে যে হেপাটাইটিস ছড়ায়, তাকে বলা হবে হেপাটাইটিস এ ভাইরাস। আর সুচ-সিরিঞ্জ কিংবা রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে যে হেপাটাইটিস ছড়ায়, তাকে বলা হবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। বর্তমানে হেপাটাইটিস এ, বি, সি এবং ডি রয়েছে। আরও হেপাটাইটিস ভাইরাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

আবিদ হোসেন মোল্লা

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য একমাত্র কার্যকর টিকা হলো হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন। যারা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাদের অধিকাংশই আক্রান্ত হয় শিশু বয়স থেকে। এমনকি জন্মের সময়ও আক্রান্ত হয়। ২০০৩ সালে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিনেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন ৫ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনেশনের আওতায় ছিল। এরপর থেকে ইপিআই আওতাভুক্ত করে এ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।

এখন প্রায় ৯৫ শতাংশ শিশু এই ভ্যাকসিনেশনের আওতায় এসেছে। কিন্তু শিশুদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয় দেড় মাস পর। এই দেড় মাস শিশুরা অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে। তবু ৯৫ শতাংশ শিশু ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আসার জন্য শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্তের হার এবং এ–সংক্রান্ত রোগের হার কমে গেছে।

যেসব গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থাকে, জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সে মায়ের নবজাতককে স্থায়ী ও তাৎক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য হেপাটাইটিস বি ইমিউনোগ্লোবিউলিন টিকা দেওয়া হয়। কিন্তু এটা সহজলভ্য নয়। আবার অনেক গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আছে কি না, সেটা আমরা জানি না। এসব বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

মোজাহেরুল হক

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোয় ৪৫ লাখ অপরিণত শিশুর মৃত্যু রোধ করতে হবে। আমাদের কৌশলগত পরিকল্পনা নিতে হবে। এটা হলো কী করতে চাই, কত দিনের মধ্যে করতে চাই এবং কীভাবে করতে চাই। আমাদের হেপাটাইটিসের একটা বিশ্ব কৌশলপত্র আছে। এর আলোকে একটা নিজস্ব কৌশলপত্র তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশে এটা নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা ভাববেন কত দিনের মধ্যে কী লক্ষ্য নিয়ে কীভাবে একটা কৌশলপত্র তৈরি করবেন। কারণ, ২০৩০ সালে আমাদের ৯০ শতাংশ হেপাটাইটিস ইনফেকশন কমাতে হবে আর ৬০ শতাংশ মৃত্যু কমাতে হবে।

দেশের ৭২ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। তাদের সবচেয়ে কাছে যে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আছে, সেটা হলো ৬ হাজার মানুষের জন্য একটা কমিউনিটি ক্লিনিক। এটা কাজে লাগাতে হবে। আমরা রোটারি ক্লাবের মাধ্যমে এই ইনজেকশন দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গ্রামের মায়েরা এই ইনজেকশন কোনোভাবে নিতে চান না। আমরাও আর দিতে পারিনি। তাহলে এসব মানুষকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতার উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হেপাটাইটিসকে বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা বলেছে। তাই হেপাটাইটিস রোধে এখনই একটা কার্যকর কৌশলগত পরিকল্পনা নিতে হবে।

মোহাম্মদ আলী

আমি মনে করি, যে রোগের চিকিৎসক হিসেবে আমি কাজ করি, সে রোগ প্রতিরোধেও আমাকে কাজ করতে হবে। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস প্রতিরোধযোগ্য। প্রতি ৩০ সেকেন্ডে বিশ্বে হেপাটাইটিসে একজন মানুষ মারা যায়। প্রতি দিন চার হাজার মানুষ মারা যায়। আমাদের দেশের ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানে না তাদের শরীরে এই ভাইরাস আছে কি না। হেপাটাইটিস বি এবং সি—এই দুই ভাইরাস লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারের জন্য দায়ী। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে লিভার ক্যানসার হলো ক্যানসারে মৃত্যুর তৃতীয় কারণ।

১৯৯৯ সালে লিভার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা-উপজেলায় আমি গিয়েছি। তাদের হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস সম্পর্কে প্রায় ধারণাই নেই। লিভার রোগ বলতে তারা জন্ডিসকে বোঝায়। শিশুদের ভ্যাকসিনের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। এই তথ্যগুলো তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। একটু উদ্যোগ নিলে এই ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠীকে হেপাটাইটিস ভাইরাস সম্পর্কে জানানো যায়। বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিবছর মারা যায়। হেপাটাইটিস ডাক্তারের সংখ্যা অনেক বাড়াতে হবে। কোনো পরিবারে একজনের হেপাটাইটিস হলে প্রায় সবার হবে। তাই হেপাটাইটিস নির্মূলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

মো. আকমত আলী

ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বে ২৯ দশমিক ৬ কোটি মানুষ ক্রনিক হেপাটাইটিস বি এবং ৫ দশমিক ৮ কোটি মানুষ ক্রনিক হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের মধ্যম সংক্রমণ হার ২০১১ সালে ছিল ৬ দশমিক ৫। ২০২১ সালে কমে হয়েছে ৪ শতাংশ। স্বল্প সুবিধাসম্পন্ন দেশগুলোয় উচ্চ হারের প্রবণতা চলতে থাকলে এর জটিলতা আরও বাড়বে। লিভার সিরোসিসের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ এবং লিভার ক্যানসারের শতকরা ৮০ ভাগ হয়ে থাকে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস সংক্রমণের কারণে।

সীমিত সুবিধার অন্তর্ভুক্ত দেশের মানুষের হেপাটাইটিস বি এবং সির চিকিৎসা ও প্রতিরোধে জনগণ এবং চিকিৎসাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও জনশক্তি, সর্বোপরি সরকারের উপযুক্ত ও কার্যকর ভূমিকা রাখা জরুরি। হেপাটাইটিস বি এবং সির চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও সীমিত সুবিধার অন্তর্ভুক্ত দেশের মানুষের জন্য তা বহন করা কঠিন বিধায় এসব ওষুধের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা জরুরি।

টিকা দেওয়ার মাধ্যমে কেবল হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধ নয়, লিভার ক্যানসারও অনেকাংশে কমানো সম্ভব। হেপাটাইটিস সির মুখে খাওয়ার ওষুধের মাধ্যমে প্রায় শতভাগ রোগ নির্মূল সম্ভব, কিন্তু দাম অনেক বেশি বিধায় বিনা মূল্যে কিংবা স্বল্প মূল্যে সরবরাহ করা হলে তা খুবই ভালো ফল আনবে, যেমনটি সম্ভব হয়েছে যক্ষ্মা রোগীদের বেলায়।

তানভীর আহমাদ

কোভিড-১৯ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ দুভাবেই লিভারকে আক্রান্ত করে থাকে। বেশির ভাগ রোগীর শুধু লিভার এনজাইম বেড়ে থাকে। কিছু রোগী জন্ডিস নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু যাঁরা ক্রনিক হেপাটাইটিস বি অথবা সি ভাইরাসের কারণে আগে থেকেই লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন, কোভিড-১৯–এর কারণে তাঁদের পেটে পানি আসা, রক্তবমি হওয়ার মতো মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এশিয়া প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার কর্তৃক গবেষণায় তা দেখা যায়।

হেপাটোলজি সোসাইটি ঢাকা, বাংলাদেশ লিভার রোগে আক্রান্ত রোগীদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার একটি নির্দেশনা প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশে টিকা দেওয়া শুরুর প্রথম দিকেই। যেখানে বলা হয়েছে, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা ক্রনিক হেপাটাইটিস বি বা সি রোগে আক্রান্ত রোগীদের ঝুঁকি বিবেচনায় দ্রুত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতে হবে।

যাঁদের লিভার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের রোগী, লিভার ক্যানসারের রোগী, ক্রনিক লিভার ডিজিজ বা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড, লিভার রোগে আক্রান্ত রোধের পরিচর্যাকারী বা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমেই কোভিড-১৯ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যেতে হবে।

মো. শাহিনুল আলম

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস পজিটিভ হলেই চাকরির জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত নয়। দেশের সব সরকারি হাসপাতালে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের পরীক্ষা বিনা মূল্যে করতে হবে। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর, বিশেষ করে প্রজনন সক্ষম নারী, শিশু ও কিশোরদের চিকিৎসা বিনা মূল্যে প্রদান করা প্রয়োজন নবজাতককে ইপিআই ভ্যাকিসনেশনের আওতায় আনতে হবে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস পজিটিভ নারীর নবজাতককে বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন ও ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া দরকার। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস চিকিৎসার সব ওষুধকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ঘোষণা করে এর কাঁচামালের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট কমিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দাম কমানো প্রয়োজন। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের ওষুধ বাংলাদেশে উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের সব চিকিৎসা পৃথিবীর মধ্যে সর্বনিম্ন মূল্যে বাংলাদেশেই সম্ভব। এ কথা দেশের স্বার্থে গণমাধ্যমে প্রচার করা জরুরি। উপজেলা পর্যন্ত ভালো প্রশিক্ষণ ও উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফারেল সিস্টেম থাকা প্রয়োজন।

এস এম মাহমুদুল হক পল্লব

এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে হেপাটাইটিস নির্মূল করতে হবে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশ হতে যাচ্ছি। পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে এখন যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি, ২০৩০ সালের পর এটা পাব না। এসডিজির লক্ষ্য হলো রোগীর কাছে ওষুধের পর্যাপ্ততা ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে আমাদের ওষুধের ফরমুলেশন প্ল্যান ডেভেলপ করতে হবে। আমরা নিজেরা যেন ড্রাগ ডেভেলপ করতে সক্ষম হই।

২৫০টি নিবন্ধিত ওষুধ কোম্পানি একসঙ্গে কাজ করছি। আমরাই প্রথম বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ওষুধ উৎপাদন করি। বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস এ ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক। প্রথম দিকে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের চিকিৎসা খরচ ছিল প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখন ৮৪ হাজার টাকার মধ্যে চিকিৎসার ওষুধও পাওয়া য়ায়।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এ সময় বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দেশের মোট চাহিদার ৯৫ শতাংশ ওষুধ এখন দেশেই উৎপাদিত হয়। আরও গর্বের বিষয়, আমাদের উৎপাদিত ওষুধ বিভিন্ন দেশের মানুষ গ্রহণ করছে। একবার একজন ব্রিটিশ নাগরিক হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর চিকিৎসার খরচ ছিল প্রায় ৮৪ হাজার ডলার। ইনস্যুরেন্সে এ ব্যয় বহনের ব্যবস্থা ছিল না।

তিনি কম দামি ওষুধ খুঁজতে থাকেন। তখন তিনি তাঁর ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে বাংলাদেশের বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের একটা ওষুধ পান। তিনি কান্না করে বলতে থাকেন যে তিনি তাঁর জীবন ফিরে পেয়েছেন। আমাদের সফলতা হলো হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ আজ বিকনের ওষুধ গ্রহণ করছে।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কার্যকর ও সহজলভ্য ওষুধও আমরা আবিষ্কার করছি। দামও কমে আসবে বলে আশা করি। আমরা একটি সচেতন বার্তা তৈরি করেছি। এ সচেতন বার্তা দেশের ৬ কোটি মোবাইল গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।

মবিন খান

আমরা হয়তো কোভিডের ভয়াবহতা থেকে বেরিয়ে এসেছি। কিন্তু হেপাটাইটিস বি এবং সি মুক্ত বিশ্বের লক্ষ্যে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস নির্মূলের পরিকল্পনা নিয়েছে। পৃথিবীতে প্রায় ৩৩ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত। হেপাটাইটিস রোগীর ৯৫ শতাংশ জানে না যে তাদের এই রোগ আছে। সে জন্য ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স ২০৩০ সাল নাগাদ যারা জানে না যে তাদের হেপাটাইটিস আছে, রোগনির্ণয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ১ কোটি হয়েছে। তবে ২০৩০ সাল নাগাদ ৪ কোটি রোগীর চিকিৎসা শুরু করার লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনো অনেক দূরে।

বিশ্বে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ১৪ লাখ থেকে কমে ১১ লাখ হয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ মৃত্যু ৫ লাখের নিচে আনার কথা। কিন্তু কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে হেপাটাইটিস নির্মূল অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল হেলথ সেক্টর স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী, হেপাটাইটিস নির্মূলে মূলত পাঁচটি জায়গায় কাজ করতে হবে—হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকাদান, হেপাটাইটিসে আক্রান্ত মায়ের সন্তান জন্মদানের সময় নবজাতককে টিকাদান, নিরাপদ ইনজেকশনের ব্যবহার, হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ডায়াগনসিস ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে হেপাটাইটিস বি টিকার কাভারেজ ৮২ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশের উন্নীত করা হয়েছে।

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশও হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্যে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২০ সালের একটি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রায় ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। সি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা আগের তুলায় যথেষ্ট কম।

ফিরোজ চৌধুরী

আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

সুপারিশ

  • হেপাটাইটিস পজিটিভ হলেই চাকরির জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত নয়।

  • হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস চিকিৎসার সব ওষুধকে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

  • হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামালের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট কমিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দাম কমানো জরুরি।

  • হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

  • হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা সবার জন্য বিনা মূল্যে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

  • হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের পরীক্ষা অল্প ব্যয়ে করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা দরকার।

  • হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের মুখে খাওয়ার ওষুধের মাধ্যমে প্রায় শতভাগ রোগ নির্মূল সম্ভব। কিন্তু এর দাম কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

  • অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, সুই-সিরিঞ্জের ব্যবহার ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্কের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস ছড়ায়। এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।