টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তায় জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি

জয়েন্ট অ্যাকশন ফর নিউট্রিশন আউটকাম (জানো) প্রকল্প ও প্রথম আলোর উদ্যোগে ‘টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তায় জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৩ মার্চ ২০২৩ কক্সবাজারের একটি হোটেলে। আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অস্ট্রিয়ান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের সহায়তায় পরিচালিত জানো প্রকল্পের অংশীজন হচ্ছে কেয়ার বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও ইকোসোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। 

অংশগ্রহণকারী

মোহাম্মদ হাসান শাহরিয়ার কবির

মহাপরিচালক, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (বিএনএনসি) 

মার্গারিতা ক্যাপালবি

কর্মসূচি ব্যবস্থাপক, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন,   খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, ইইউ ডেলিগেশন

মাহবুবুর রহমান

গবেষণা পরিচালক, খাদ্য পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ ইউনিট, খাদ্য মন্ত্রণালয় 

কবিতা বোস

কান্ট্রি ডিরেক্টর, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

আমানুর রহমান

ডিরেক্টর, গ্রামীণ অতি-দারিদ্র  কর্মসূচি, কেয়ার বাংলাদেশ 

ড. মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান

জ্যেষ্ঠ দলনেতা, জানো প্রকল্প

মো. রফিকুল ইসলাম

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, নীলফামারী

হুমায়রা মণ্ডল

জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা, রংপুর

কামরুল হুদা

ডেপুটি সেলস ম্যানেজার, এসিআই  অ্যানিমেল হেলথ

মুক্তা বেগম

জানো প্রকল্পের উপকারভোগী

মোহিনী কান্তি রায়

জানো প্রকল্পের উপকারভোগী

মারুফ আজম

পরামর্শক, পাবলিক-প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট, কেয়ার বাংলাদেশ 

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনা

আমানুর রহমান

আমানুর রহমান

আমরা জানি, পুষ্টি একক কোনো কাঠামো নয়। এটি একটি বহুমুখী বিষয়। সে বিষয়ে আজ আমরা আলোচনা করব। আসলে খাদ্য ছাড়া পুষ্টি সম্ভব নয়। আবার খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হলে খাদ্য সরবরাহ সম্ভব নয়। খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে দুর্যোগ কিংবা জলবায়ু পরিবর্তন—সব কটি সরাসরি সম্পৃক্ত। খাদ্যের উৎপাদন যদি সহনশীল না হয়, তাহলে সামঞ্জস্য থাকবে না। আবার শুধু খাদ্য পেলে হবে না, এর দামও আয়ত্তের মধ্যে থাকতে হবে। আজকের গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনা শুরুর জন্য কবিতা বোসকে আহ্বান জানাচ্ছি।

কবিতা বোস

কবিতা বোস

বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। আমরা এমন ভৌগোলিক অবস্থানে জন্মেছি বা বসবাস করছি, যেটি বিভিন্ন দিক থেকে আশীর্বাদপুষ্ট হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের দিক থেকে আমরা অভিশপ্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনায় আমাদের আশীর্বাদই বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খাপ খাওয়ানোর জন্য বিপুলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নানা ধরনের কাজ হচ্ছে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এশিয়া মহাদেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে এক নম্বর বিবেচনা করা হয়। কয়েক বছর আগে একটি বৈশ্বিক সম্মেলনে মেক্সিকোতে গিয়েছিলাম। সেখানেও বাংলাদেশ বাংলাদেশ রব উঠেছিল। অর্থাৎ বৈশ্বিকভাবেও বাংলাদেশের উদ্যোগগুলো স্বীকৃত।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশ যেভাবে খাপ খাওয়াচ্ছে, সেটি কীভাবে হচ্ছে? সেটি কি শুধু নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আসে, না। এটা কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষের অবদান। অবশ্য সরকার নীতিমালা করছে, অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা বা কৌশলগত পরিকল্পনা রয়েছে। এটাতে প্রমাণ করে দেয় যে এ ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য আমাদের সরকার কতখানি সক্রিয়। পরিকল্পনার কথা বলি, অর্থ বরাদ্দের দিক বলেন, এমনকি আন্তমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে এবং প্রতিটি কর্মসূচিতে সেটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিংবা কৃষি হোক—সব জায়গায় জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুকে ফোকাস করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে যদি খাদ্যের কথা বলা হয়, প্রায় শতভাগই আসে কৃষি থেকে। কৃষি যদি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারে, তাহলে খাদ্য উৎপাদনের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। পুষ্টি তো অনেক দূরের কথা। পুষ্টিকে মাথায় রেখে কৃষিকে জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য জানো প্রকল্পের উদ্যোগে বিশেষ কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যালয় পর্যায়ে কাজ চলছে। সেখান থেকে তা গ্রাম পর্যায়ে, পারিবারিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি কমিউনিটি আন্দোলন তৈরি করা হয়।

আমি নীলফামারী ও রংপুরে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেছি। আমার খুবই ভালো লেগেছে। কোন সবজি কেন দরকার, তা বোঝানো দরকার স্কুল পর্যায় থেকে। ওখানে তা করা হচ্ছে। স্কুলে শেখা কতখানি টেকসই, তা এখন বুঝতে পারছি।

গ্রামপর্যায়ে নারী-পুরুষেরা বাগানগুলো তৈরি করছেন। এগুলো কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে, তা চেষ্টা করছেন। আমরা জানি উত্তরবঙ্গে আবহাওয়া খুবই দুর্যোগপ্রবণ। যদি শীতের কথা বলি, কুয়াশার কথা বলি, যদি হঠাৎ বন্যার কথা বলি, এমন কোনো দুর্যোগ নেই যে উত্তরবঙ্গে নেই। কিন্তু সে আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে এত সুন্দর সুন্দর বাগান তৈরি করেছে মা-বাবারা। সেটির উদ্দেশ্যটা কী? শুধু পেটভরে খাব তা নয়। সেটি আমার পুষ্টি ঠিক করবে। এই যে অর্জন, এজন্য সাধুবাদ জানাই। শুধু আমাদের প্রকল্প অর্জন করছে, তা নয়, সামগ্রিকভাবে সবার অর্জন। এই শিক্ষা, এই অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান, এই অর্জন কীভাবে জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে, তা ভাবতে হবে। 

মারুফ আজম

মারুফ আজম

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশবান্ধব কৃষির কী সম্পর্ক এবং এই ক্ষেত্রে আমরা কোথায় আছি, তা আলোচনা করব। জলবায়ু সদা পরিবর্তনশীল। এই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো মোকাবিলা করে কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানোর পদ্ধতিকে বলে থাকি জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি। জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করা হয়। বিশেষ করে আমাদের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি করা খুব জরুরি। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে খাদ্যনিরাপত্তা ও খাদ্যনিরাপত্তার উন্নয়ন নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি অনুকূল পরিবেশ, অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক সাম্যতা অর্জনেও সহায়তা করে থাকে।

জলবায়ু পরিবর্তন আসলে আমাদের মতো দেশ যাদের অর্থনীতি বেশ ভঙ্গুর, বিশাল জনগোষ্ঠী বিশেষ করে উপকূলীয় জনগোষ্ঠী, গ্রামীণ ও দরিদ্র মানুষের জীবনব্যবস্থা ও সাম্যতাকে বেশ ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং ভঙ্গুর জনগণের আর্থিক উপার্জন বাড়াতেও সাহায্য করে। এরই পাশাপাশি জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি জলবায়ু জনিত ভঙ্গুরতা দূর করতে এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর টেকসই জীবনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

জানো প্রকল্পের আওতায় জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি নিয়ে বেশ কিছু কাজ করে থাকি। এর মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১ হাজার ৪১টি প্রদর্শনী প্লট করেছি। বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির চাষ করা হয়। এর মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেছি জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষির চর্চা করার জন্য। এটি পুষ্টিকে কীভাবে সহায়তা করে, পুষ্টিনিরাপত্তায় কীভাবে অংশ নেয়, সে জিনিসটি বোঝানোর চেষ্টা করছি।  

এ ছাড়া ১ হাজার ১২৫ জন সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতের ৩০৩ জনকে সহযোগিতা করা হয়েছে। কেননা এই জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি যদি কেউ করতে চায়, তার জন্য উপযুক্ত সার, বীজ, কীটনাশক—এগুলোরও দরকার আছে। এগুলোর মূল সরবরাহকারী হচ্ছে বেসরকারি খাত।

চার বছর ধরে এই কাজগুলো করার ফলে দেখতে পাচ্ছি, আমাদের প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগী যেসব পরিবার রয়েছে, তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ পরিবার জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি ব্যাপারটা আয়ত্ত করেছে। তারা নিজেরাই এখন এর চাষাবাদ করছে। তাদের দেখাদেখি ধীরে ধীরে আশপাশের মানুষও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এর পাশাপাশি কেঁচো সার বা ভার্মি কমপোস্ট নিয়েও কাজ চলছে। এ জন্য ৩৫ নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের কারণে প্রতিবেশী নারী ও পুরুষেরাও এতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এই ভার্মি কমপোস্ট যাতে বিক্রি করতে পারেন, উপাদানগুলো (গোবর, কেঁচো) সহজে পেতে পারেন, সে জন্য আঞ্চলিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে আরও কীভাবে বড় পরিসরে কাজ করা যায়, সে জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের যাঁরা আছেন, এখানে তাঁদের সবার মতামত চাই।

মোহিনী কান্তি রায়

মোহিনী কান্তি রায়

আমি আগে থেকে কেঁচো সার উৎপাদন করতাম। কেঁচো সার উৎপাদনের বিষয়ে জানো প্রকল্প থেকে এক দিনের প্রশিক্ষণ পাই। কেঁচো দেওয়া হয়। আগে যে সার উৎপাদন করতাম, তা গ্রামে টুকটাক বিক্রি করতেন। অনেকেই নিতে চাইতেন না। আমার ছেলে একদিন ফেসবুক থেকে মোহিনী ভার্মি কমপোস্ট নামে একটি পোস্ট দেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বাড়ছে। উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা এখন বেশি। ক্রেতা কিনতে চাইলে তা কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিই। বর্তমানে কুরিয়ার করে আশপাশের সব জেলাতেই কেঁচো সার পাঠাচ্ছি। আমার আশপাশের কৃষক ভাইয়েরাও এই সার উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

তিন বছর আগে কুরিয়ারের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারতাম না। স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করতাম। চার টাকা কেজি করে। কিন্তু ঠিকঠাক দর দিত না। আবার টাকাও দিত না নিয়মিত। ওজনেও হেরফের করে।  বর্তমানে মাসে ছয়–সাত টন কেঁচো সার হয়। অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করি। এখন ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। আর কেঁচো বিক্রি করি এক থেকে দেড় হাজার টাকা করে।

মুক্তা বেগম

মুক্তা বেগম

আমি ২০২২ সাল থেকে জলবায়ু–সহিষ্ণু সবজি বাগান করছি। আমার বাগান এখনো রয়েছে। ছোট্ট জমিতে অনেকগুলো শাকসবজি আবাদ করেছি। ওখান থেকে আমাদের পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা যেমন মেটে, তেমনি বিক্রি করে লাভও হয়। এর মাধ্যমে কিছু সঞ্চয় হচ্ছে। জলবায়ু–সহিষ্ণু বাগানে পানির নালা দেওয়া আছে। যাতে বৃষ্টির পানি আটকে না থাকে। আমি নিজেই সবজি বাগান করছি। প্রতিবেশীদের উদ্বুদ্ধ করি। এখন প্রতিবেশীদের অনেকেই বাগান করেছেন। এতে কৃষি কর্মকর্তা ও জানো প্রকল্প সহযোগিতা দেয়।

হুমায়রা মণ্ডল

হুমায়রা মণ্ডল

টেকসই পুষ্টির কথা যদি সহজভাবে বলি, যে পুষ্টি আসছে খাদ্য থেকে। খাদ্য আর কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা অনেকগুলো প্রকল্প নিয়ে কাজ করি, যেগুলো সরাসরি কৃষির সঙ্গে জড়িত। কিছু প্রকল্প আছে, পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্প। এটা আমরা এমনভাবে কৃষকের কাছে নিয়ে গেছি যে এটি কৃষকের গ্রহণ না করে উপায় নেই। একই ধরনের কাজ করছে জানো প্রকল্প। জানো আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, এতে আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে।

আমরা প্রতি ইউনিয়নে ১০০ জনের কাছে যাচ্ছি, জানো হয়তো যাচ্ছে ৩০ জনের কাছে। এভাবে সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তি এত সহজ, এটি কৃষকের কাছে টেকসইও বটে, খুব সহজ প্রাপ্তি। সহজে পাচ্ছে। তাঁরা চাইলে উঠানে আবাদ করতে পারছেন, যা আগে পতিত পড়েছিল।

আমরা একটা মডেল দিয়েছি কালিকাপুর মডেল। যেখানে পুষ্টি বাগান করতে হবে। ১ শতক জমিতে করলে, চারজনের পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং সহজলভ্য হবে। এভাবে আমরা কাজ করছি। আমাদের আরও একটি প্রকল্প আছে। সরকারের। সমন্বিত শস্য ব্যবস্থাপনা। এই প্রকল্পের আওতায় আরও একটি সহজ মডেল আছে, যে বসতবাড়ি আছে, সেখানে যেটি হবে, সেটিই লাগানো হবে। খালি জমি থাকলে চাষাবাদ করা হবে। স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কচু লাগানো হবে। ছায়াযুক্ত স্থানে আদা, হলুদ লাগাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিটি জায়গা যাতে আবাদযোগ্য হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে।

জানো প্রকল্পে যেটি দেখেছি, মাঠপর্যায়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁরাও প্রশিক্ষণ দেন। জানোও দিচ্ছে। এতে মাঠপর্যায়ের কর্মীরা সমৃদ্ধ হচ্ছেন। আর্থিকভাবে ও জ্ঞান অর্জন করেছে। তাঁরাও খুশি। কৃষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

বাংলাদেশে বীজের বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিএডিসি। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি, এরা আমাদের ২৫ শতাংশ বীজ দিতে পারে। তবে আমরা কৃষককে প্রতিটি ফসলের ক্ষেত্রে বীজ সংরক্ষণ, উৎপাদন ও বীজ বিতরণ নিয়ে কয়েকটি প্রকল্প আছে। সে প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। কীভাবে বীজ উৎপাদন করবে, সংরক্ষণ করবে, কীভাবে বিতরণ করবে। জানো মার্কেট লিংকেজের কাজ করছে। যাতে সহায়তা হচ্ছে। আর প্রাকৃতিক বালাইনাশক হিসেবে নিমপাতা, নিশিন্দা পাতা, বিষকাঁটালি, তামাকের গুঁড়া কার্যকর।

মো. রফিকুল ইসলাম

মো. রফিকুল ইসলাম

ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের যে বিষয় বা ধারণা, আমি মনে করি যে আমাদের জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। জলবায়ু একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। ২০–৩০ বছরে পরিবর্তন হয়। যেকোনো ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্র বীজ একটি বড় ফ্যাক্টর। সে জাতগুলোর কোনোটা লবণাক্ত–সহিষ্ণু হতে পারে, কোনোটা খরা–সহিষ্ণু হতে পারে, কোনোটা বন্যা–সহিষ্ণু হতে পারে। এই জাতগুলো আমরা আবিষ্কার করতে পারি। আমাদের যাঁরা বৈজ্ঞানিকেরা আছেন, তাঁরা কাজ করছেন। এটা যদি পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে, তাহলে কৃষিকে উন্নত ও সমৃদ্ধ  করতে পারব। পুষ্টির বিষয়ে নিরাপত্তা দিতে পারব।

জানো প্রকল্পের আওতায় তাঁরা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ও প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। তাঁদের একটি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০টি করে পুষ্টি বাগান করে দেওয়া হচ্ছে। এখানে লালশাক, পালংশাক, কলমিশাক, লতাজাতীয় শসা, মিষ্টিকুমড়া, লাউ চাষ হবে। এ ছাড়া ছয়টি করে ফলের চারা দিচ্ছেন। ডালিম, পেঁপে, মাল্টা, জাম্বুরা আছে। সুন্দর কাঠামো করে দিয়েছেন। দেড় শতক জমিতে এটা করতে হবে। একটি পরিবারের বছরব্যাপী পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য শাকসবজি আবাদ করে খেতে পারে, সে ব্যবস্থা করেছি। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে জানো প্রকল্পের আওতায়ও এই ধরনের কাজ হচ্ছে। জানো প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করলে পুষ্টির ঘাটতির চাহিদা পূরণ করতে পারব।

পুষ্টির পাশাপাশি নিরাপদ কৃষির কথাও চিন্তা করেছি। এখানে যেহেতু কৃষক নিজেই করছেন, তিনি কিনছেন না। তিনি যাতে পুষ্টির পাশাপাশি নিরাপদ শাকসবজিও পেতে পারেন। এ জন্য তাঁদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাঁদের জৈব সার, জৈব বালাশনাশক ব্যবহার করতে বলা হয়।

কামরুল হুদা

কামরুল হুদা

আলোচনায় পুষ্টির কথা এসেছে। পুষ্টির বড় একটা অংশ আসে প্রাণিজ আমিষ থেকে। আমরা যদি প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলি, সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মানুষ প্রোটিনের জন্য মাছ, মাংস ও ডিমের ওপর নির্ভরশীল। এই তিনটি যদি খামারিরা সঠিকভাবে উৎপাদন করেন, মার্কেট পর্যন্ত পৌঁছানোর পর যদি নিজের কিছু না থাকে, আর্থিকভাবে লাভবান না হন, তখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।

মাঝেমধ্যে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এখন যেমন ডিমের দাম নিয়ে আলোচনা চলছে। একটা ডিম ১০-১২ টাকা হলে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু একটা ডিম উৎপাদনে কত টাকা খরচ হয়, তা কেউ ভেবে দেখেন না। একটি ডিম পাড়া মুরগিকে প্রতিদিন গড়ে ১২০ গ্রাম খাবার খেতে দিতে হয়। ১২০ গ্রাম খাবারের দাম আট টাকা। এর সঙ্গে ওষুধ, বিদ্যুৎ, বিনিয়োগ, পরিশ্রম, শ্রমিক—এগুলো মিলিয়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। ডিমের দাম যাতে সাধ্যের মধ্যে থাকে, এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে উৎপাদন খরচ কম পড়ে। করোনা মহামারি মোকাবিলা করতে হয়েছে। এ ছাড়া আমরা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি।

ড. মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান

ড. মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান

জলবায়ু–সহিষ্ণু কৃষি ও টেকসই পুষ্টি—এ দুটির সঙ্গে তথ্য নিশ্চিত করতে হবে। যাঁরা কৃষির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের তথ্য পৌঁছে দিতে হবে। পুষ্টির চাহিদা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি তথ্যও। নতুন বীজ কখন আসছে, বাজারজাতকরণ কীভাবে হবে—সে তথ্য পৌঁছে দিতে হবে কৃষকদের কাছে। তাঁরা যেন সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পান। আর সমন্বয়ের কাজটি ঠিকভাবে করতে হবে।

কৃষকদের কাছে প্রয়োজনীয় কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ কৃষকদের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করছে, যার ফলে কৃষকের কোন সময়ে কোন ধরনের ফসল উৎপাদন করতে হয়, ভালো ফসল উৎপাদনের জন্য কী ধরনের উপকরণের প্রয়োজন হয়, সেসব বিষয়ে জানতে পারছে। এর পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঠপর্যায়ের সহযোগিতাও পাচ্ছে।

মার্গারিতা ক্যাপালবি

মার্গারিতা ক্যাপালবি

আমি মনে করি, আপনাদের কাজগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে টেকসই জমির জন্য কাজ করছেন, যা সঠিক সংযোগ তৈরি করছে, যা আমাদের প্রয়োজন। জানো প্রকল্পের ভালো ফল এখনো পুরোপুরি পাওয়া যায়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বলতে পারি, আমরা ২০ বছর ধরে খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি খাত নিয়ে কাজ করছি। ২০০৬ থেকে আমরা খাদ্য মন্ত্রণালয়কে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছি। খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টিনিরাপত্তার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

এখানে অন্য কিছু সমস্যাও আছে যা খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন জলবায়ু পরিবর্তন। যেটি আমাদের আজকের আলোচনার প্রধান আলোচ্য বিষয়। আমরা জলবায়ু এবং সামাজিক নিরাপত্তা এসব সমাধানের জন্য কাজ করছি। জলবায়ু পরিবর্তনকে আমরা একটি সুযোগ হিসেবে দেখতে পারি। যেমন সারের কথাই ধরতে পারেন। সারের দাম দিন দিন বাড়ছে। আমরা অর্গানিক সার উৎপাদন করে সারের উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করতে পারি এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। নানান চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য নতুন নতুন পথ খুঁজতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম একটি সহনশীল দেশ। আপনারা সহনশীল ও স্মার্ট৷ তাই চ্যালেঞ্জকে সুবিধায় পরিণত করতে আপনাদের কাজ করতে হবে।

মাহবুবুর রহমান

মাহবুবুর রহমান

আমাদের জাতীয় খাদ্যনীতি তৈরি হয় ২০০৬ সালে। সরকার যুগের চাহিদা, সময়ের চাহিদা ও অর্থনৈতিক অবস্থা—সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এটিকে পরিবর্তন করে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নীতি ২০২০ করেছে। সে খাদ্যনীতির আমরা একটি প্ল্যান অব অ্যাকশন করেছি। সেটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সে জন্য সব মন্ত্রণালয়কে নিয়ে প্ল্যান অব অ্যাকশন করেছি। তারপর আমরা কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান করেছি। কোন জায়গায় আমাদের বিনিয়োগ কত দেওয়া আছে, বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠী কোন খাতে কতটি প্রকল্প নিয়েছে। আসলে আমরা দেখেছি, পুষ্টির জায়গায় বরাদ্দ অনেক কম। এই জায়গায় আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। দাতাদের সামনেও উপস্থাপন করেছে এই জায়গা আমাদের কাজ করতে হবে।

উৎপাদনের কথা এলে এখানে অর্থনীতির কথা চিন্তা করতে হবে। কৃষক আমার আপনার চেয়ে বড় অর্থনীতিবিদ। যদি উৎপাদন করে সে লাভবান হতে না পারেন, যদি ঝুঁকি থাকে, তাহলে কৃষক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যাবেন না। এখানে পুষ্টির বিষয় আছে। তবে তা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে হবে। টেকসই হতে হবে।

একসময় আফ্রিকান মাগুর ছিল, উৎপাদন অনেক বেশি ছিল। পরে তা সম্প্রসারণ করতে দেওয়া হয়নি। একসময় গমে আমাদের ভালো উৎপাদন ছিল। একবার ১৩ লাখ মেট্রিক টন গম উৎপন্ন হয়েছিল। এখন কিন্তু ১০ লাখ মেট্রিক টন গমও হচ্ছে না। আমাদের কিন্তু গমের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলছে। প্রতিবছর ৭৫ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করতে হতো। এখন এমন একটি সময় এসেছে—কোভিড মোকাবিলা করছি, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা করছি। তারপরেও আমরা মনে করি, আমরা খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তার দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখনো ভালো অবস্থানে আছে, সংকট মোকাবিলা করা অন্যান্য দেশের তুলনায়।

পুষ্টি তো একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। পুষ্টির ফলাফল এক দিনে পাওয়া যাবে না। গবেষকদের কাছ থেকে শুনছি, এ পরিস্থিতিতে খাদ্যনিরাপত্তার সংকট নেই। তবে পুষ্টিনিরাপত্তায় ঘাটতি হতে পারে। আবার দেখেন, গমের দাম এবার দ্বিগুণ হয়ে গেছে গত বছরের তুলনায়। আমরা টাকা নিয়ে ঘুরছি, কিন্তু গম কিনতে পারছি না। প্রাইভেট সেক্টরও গম আনতে পারছে না। আমাদের নিজস্ব যে উৎপাদন আছে, যেসব শাকসবজি পুষ্টির জন্য। আমি বলতে পারি, ধান উৎপাদনে আমরা স্বনির্ভর। ভাতের ওপর নির্ভরতা কমছে। তবে টাকা থাকলেও আনতে পারছি না গম। তাই বিকল্পের দিকে যেতে হবে। পুষ্টিকর খাবারের কথা চিন্তা করতে হবে। দরিদ্র জনগণের জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে আমরা কর্মক্ষম জাতি বলেন, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পিছিয়ে যেতে পারি। তবে নীতিমালার ক্ষেত্রে আমরা ভালোভাবে কাজ করছি।

এখন ‘জানো’ প্রকল্পের কাজ চলছে। তার সম্প্রসারণের বিষয়ে কী হবে? এর ব্যপ্তি বাড়ানো দরকার। কেননা, এই প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

মোহাম্মদ হাসান শাহরিয়ার কবির

মোহাম্মদ হাসান শাহরিয়ার কবির

অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি পুষ্টি দিয়ে শুরু করছি। পুষ্টিনিরাপত্তা নিজেই টেকসই, পুষ্টি ও নিরাপত্তা। তিনটি শব্দেরই ভিন্ন ভিন্ন অর্থ রয়েছে। প্রথমত, টেকসই নির্ভর করে সক্ষমতার ওপর। আপনি আপনার কৃষককে কতটুকু সক্ষম করতে পারছেন? সরবরাহ মাধ্যম কাজ করছে কি না। সব দিক দিয়ে টেকসই হতে হবে। এটি একটি প্যাকেজ। বীজ ও সার বিশেষ করে নন–রাসায়নিক সার, জৈব সার সরবরাহ করা। এগুলো হচ্ছে মূল বিষয়।

আজকের দিন শুরু, এটি শেষ নয়। প্রধানমন্ত্রী চান, সমন্বিতভাবে উন্নয়নের রূপরেখা লক্ষ্যমাত্রা পূরণের। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভিশনের কথা বলেন। যা কোনো একটি মন্ত্রণালয়ের বা কোনো একটি মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। টোটাল প্যাকেজকে আমরা যদি তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়ণ করতে চাই, তাহলে দুটি–তিনটি জিনিস করতে হবে। আমাদের কৃষকদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কৃষকের পুষ্টিমানকে নিশ্চিত করতে হবে। তাঁর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে ভাবতে হবে। এগুলো নির্ভর করে পুষ্টির ওপর। তিনি চাষাবাদ করেন। 

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। মাঝেমধে৵ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়। আমাদের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চল এলাকা ভিন্ন। এ বিষয়গুলোর ওপর প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান এবং তাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রচুর গবেষণাভিত্তিক কাজ করছেন। যার জন্য এখন কোন মাটিতে কী ধরনের শস্য আবাদ হবে, তা এখন হাতের মুঠোয়। এটাই স্মার্ট বাংলাদেশ। এখন সেটি প্রতিটি বিষয়ে নিয়ে আসতে হবে।

বীজ সরবরাহের দুটি মাধ্যম রয়েছে। এর একটি হচ্ছে, বাজার থেকে কেনা এবং অন্যটি কৃষকেরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন করতে পারেন। দুটি জিনিসই করতে হবে। বীজ ব্যবস্থাপনায় নিয়ে মানুষকে জানাতে হবে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কীভাবে বীজ কিনতে হবে, তা জানতে হবে। আর বীজ ব্যবসায়ীদের প্রশাসনের আওতায় থাকতে হবে। এভাবে যদি আমরা এগোতে পারি, তাহলে খুব  ভালো হয়।

আমাদের করার আছে অনেক কিছু। যেমন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে, সব অংশীজনকে কাজ করতে হবে। আরও ভালো ব্যবস্থাপনা, বীজ ব্যবস্থাপনা, চাষাবাদ কম খরচ করে বেশি উৎপাদন করা।বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক, যেমন পার্বত্যাঞ্চলে যে ধরনের ফসল হবে, সেটি বরিশাল অঞ্চলে হবে না। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করলে সবাই উপকৃত হবেন। 

ফিরোজ চৌধুরী

আশা করা যায়, প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো নীতিনির্ধারকেরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবেন। গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ।

সুপারিশ

■ জলবায়ু–সহিষ্ণু কৃষি পদ্ধতি প্রচলনে সরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে।

■ উৎপাদক ও ভোক্তাপর্যায়ে সচেতনতা ও তথ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি।

■ উৎপাদক পর্যায়ে জলবায়ু–সহিষ্ণু কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করতে হবে।

■ বেসরকারি পর্যায়ে জলবায়ু–সহিষ্ণু কৃষি সরঞ্জামের সরবরাহ শক্তিশালী করা দরকার।

■ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

■ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি ও বেসরকরি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

■ কমিউনিটি পর্যায়ের প্ল্যাটফর্মগুলোকে জলবায়ু–সহিষ্ণু কৃষি পদ্ধতি সম্প্রসারণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশ নেন

নুসরাত জাহান (উপপরিচালক, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (বিএনএনসি) 

মো.আখতার ইমাম (উপপরিচালক, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (বিএনএনসি) 

ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার (পরিচালক, স্বাস্থ্য কর্মসূচি, কেয়ার বাংলাদেশ)

আফরোজ মহল (পরিচালক–প্রোগ্রাম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ)

নিহার কুমার প্রামাণিক (টেকনিক্যাল অফিসার, নিউট্রিশন সেনসিটিভ এগ্রিকালচার, জানো প্রকল্প)

মো. গোলাম রব্বানী (ব্যবস্থাপক, মাল্টি-সেক্টোরাল গভর্নেন্স, জানো প্রকল্প)

পোর্শিয়া রহমান (সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক, জানো প্রকল্প)