৫০ বছরে আইইউসিএন বাংলাদেশ

প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমের ৫০ বছর পূরণ করল। একই সঙ্গে সংগঠনটির বৈশ্বিক কার্যক্রমের ৭০ বছর পূর্তি হয়ে গেল। এই উপলক্ষে সংগঠনটির বৈশ্বিক মহাপরিচালক ব্রুনো ওবারলিসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেন এবং আইইউসিএন বাংলাদেশের সদস্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাঁরা একটি গোলটেবিল বৈঠক করেন। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের আলোচনার নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো।

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর

চেয়ারপারসন, আইইউসিএন বাংলাদেশ জাতীয় কমিটি।

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর

বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক সময় অতিক্রম করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমরাও বহুমুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের জলবায়ু সংকট, জীবনবৈচিত্র্য বিপন্নতা, কোভিড-১৯ সংক্রমণের মতো বড় বিপর্যয় এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি নিয়ে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামলে আমরা কীভাবে সামনের দিনে উন্নয়নের পথে এগোব। আবার একই সঙ্গে প্রকৃতি ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে সুরক্ষা করব, তা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

আইইউসিএন প্রকৃতি সুরক্ষার কাজে বিশ্বে ৭০ বছর ও বাংলাদেশে ৫০ বছর পূর্তি করেছে। এই সময়ের মধ্যে আইইউসিএন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ বন্য প্রাণী রক্ষায় অবদান রেখে চলেছে। অন্যান্য সমস্যার মতো আমাদের সামনে প্লাস্টিক ও বায়ুদূষণের মতো আন্তসীমান্ত সমস্যা সামনে এসেছে।

বঙ্গোপসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরে সামরিক মহড়া হচ্ছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সমুদ্রপথে উত্তেজনা বাড়ছে। সমুদ্রকেন্দ্রিক যোগাযোগ বেড়ে যাওয়া এবং সমরাস্ত্র প্রদর্শনী বেড়ে গেছে। সমুদ্রের প্রাণী তিমি ও ডলফিনের জন্য এসব তৎপরতা বিপদ বাড়িয়ে তুলেছে। নদীপথে বড় যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়া এবং ট্রানজিটের আওতায় জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় ইরাবতী ও গাঙ্গেয় ডলফিনের জন্য বড় সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথেও এগোতে হচ্ছে। আমাদের প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। প্রকৃতি রক্ষা করে আমরা কীভাবে উন্নয়নের পথে এগোব, তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। উপকূলীয় এলাকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভালো অভিজ্ঞতা আছে। সুন্দরবনের ওপর আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান তৈরি হয়েছে। যেখান থেকে বিশ্ববাসী সমৃদ্ধ হতে পারে। আবার প্রভাবশালীদের মাধ্যমে দ্রুত বন ও জলাভূমি দখল হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করব, তা ভাবতে হবে। একই সঙ্গে আন্তসীমান্ত প্রতিবেশগত এলাকাগুলোর ব্যবস্থাপনা নিয়েও আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে।

বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আবার আন্তসীমান্ত নদীগুলোতে

বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে আঞ্চলিক সমস্যা আছে। এই সব কটিকে একসঙ্গে আমলে নিয়ে কাজ করতে হবে। আবার নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প বলছি। কিন্তু এই উৎসকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সহজলভ্য এবং কম ব্যয়বহুল করতে হবে।

বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের পাশাপাশি আমাদের ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও চর্চাকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

আমাদের প্রকৃতি রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি বাসযোগ্য পৃথিবী হিসেবে গড়ে তুলতে এর কোনো বিকল্প নেই।

ব্রুনো ওবারলি

মহাপরিচালক, আইইউসিএন।

ব্রুনো ওবারলি

আইইউসিএন মূলত তার সদস্য সংস্থাগুলোর একটি জোট। তাই আমাদের প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ দেশ ও এলাকার সমস্যার সমাধান নিজেদের করতে হবে। প্রতিটি দেশকে তার নিজের সংস্থাগুলোর মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে হবে। আইইউসিএন মূলত বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের পথ ধরে এগোয়। আমরা নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়াতে যেমন কাজ করি, তেমনি জনগণের সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখি।

প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারকে আমরা গুরুত্ব দিই। আমাদের সদস্য সংস্থাগুলো একই কাজ করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতের মধ্যে টেনশন তৈরি হয়। কারণ, প্রতিটি দেশের নিজস্ব নিয়ম এবং অগ্রাধিকার আছে। আবার বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যাও রয়েছে। এ দুটির মধ্যে সমন্বয় করা কঠিন কাজ। অনেক সময় বেসরকারি খাতের সঙ্গে আমাদের কাজ করা উচিত কি উচিত নয়, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কারণ, অনেক পরিবেশ সমস্যা বেসরকারি খাতের মাধ্যমে তৈরি হয়। আবার তারা সমস্যার সমাধানের জন্য কাজ করতে চায়। ফলে এই দ্বন্দ্বের সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আমাদের জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে কাজ করতে হবে। আমরা প্রতিটি দেশের নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং সফলতা ও চ্যালেঞ্জগুলোকে আমলে নিই। সেগুলোকে বৈশ্বিকভাবে তুলে ধরি। আইইউসিএন বৈশ্বিক কার্যালয়ের মোট তহবিলের অর্ধেক অর্থ সদস্যদেশগুলোকে প্রকৃতি সুরক্ষার কাজে জোগান দেয়। ৯০টি দেশের এক হাজারের বেশি সদস্য এবং ৮০টি জাতীয় কমিটি আছে। এই সব কটি দেশ এবং সংগঠনের কাজ তদারকি করাও আমাদের কাজ। আমাদের কাজের কিছু নীতিমালা ও নৈতিক ভিত্তি আছে। আমরা স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক—সব পর্যায়ে তা অনুসরণ করতে চাই।

বিশ্বে জীববৈচিত্র্য রক্ষার চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও বন্য প্রাণী থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সমস্যাও বাড়ছে। ফলে আমাদের অগ্রাধিকার বিবেচনা করে কাজ করতে হচ্ছে। আবার প্রতিটি দেশের কাজ করার কিছু রাজনৈতিক অগ্রাধিকার থাকে। আমরা সেটিকেও বিবেচনা করতে চাই। বিশ্বে ৮০ শতাংশ জীববৈচিত্র্য কৃষি উৎপাদনের জন্য নষ্ট হয়েছে। আবার খাদ্য উৎপাদন করতে না পারলে মানুষের জন্য বড় সমস্যা তৈরি হবে।

পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সংগঠনের সদস্যদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রতিটি সংগঠনকে তার নিজ এলাকায়, নিজ দেশে, আঞ্চলিকভাবে ও বৈশ্বিকভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রতিটি সংগঠন একে অপরের দক্ষতা বাড়াতে সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়াতে হবে। কোথাও প্রকৃতি ধ্বংসের ঘটনা ঘটলে যার যার জায়গা থেকে অবস্থান নিতে হবে। প্রকৃতিকে সুরক্ষা না দিয়ে মানুষের উন্নয়ন সম্ভব নয়। নিজেদের উন্নয়ন করতে গিয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হলে সেই উন্নয়ন টেকসই হবে না। তাই প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করে উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। আইইউসিএনের বৈশ্বিক কার্যালয় সবার কণ্ঠস্বরকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য কাজ করে। সেটি অব্যাহত থাকবে।

গ্রেথেল এগুইলার

উপমহাপরিচালক, আইইউসিএন।

গ্রেথেল এগুইলার

আইইউসিএন প্রথমত তাদের সদস্যদের মধ্যে জ্ঞান বিনিময় করে। আগে এসব জ্ঞান বিনিময় খুব কঠিন ছিল। সব দেশের সদস্যরা তিন–চার মাসে হয়তো একবার অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পেতেন। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে প্রতিমুহূর্তের কাজ সংগঠনগুলো দ্রুত জানতে পারে। ওয়েবিনার, ফেসবুক ও ইউটিউবে তা প্রচারের মাধ্যমে দ্রুত সবাই সবার কাজ সম্পর্কে জেনে যাচ্ছে। তবে সংগঠনগুলো অভ্যন্তরীণভাবে কীভাবে কাজ করছে, কোন ধরনের সমস্যা তারা অনুভুব করছে, তা আমাদের জানতে হবে।

আইইউসিএনের সদস্য সংগঠনগুলো পরস্পরের সহযোগিতার মাধ্যমে একই ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। এটি এখনো আমরা করছি। তবে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ালে তহবিল সংগঠন আরও সহজ হবে। আমাদের সদস্য সংগঠনগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে কর্মপদ্ধতি ঠিক হয়। অবশ্যই আমাদের নিজস্ব কিছু ঘোষিত নীতিমালা আছে। তবে পরিস্থিতির চাহিদা মেটানোকে আমরা সবার আগে গুরুত্ব দিই। এ জন্য আমরা আঞ্চলিক ফোরাম ও বৈশ্বিক কংগ্রেস করে থাকি। সেখান থেকে আমরা প্রতিটি দেশের সমস্যা, চাহিদা ও অগ্রাধিকারগুলো জানার চেষ্টা করি।

আইইউসিএন বৈশ্বিকভাবে নতুন কয়েকটি চিন্তাকাঠামো–টুল তৈরি করেছে, যা সবার জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ বাড়াবে। তবে তা সফল হবে সদস্যদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। সেগুলো আমরা সদস্য দেশ ও সংগঠনগুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব। সদস্য সংগঠনগুলো যদি তাদের নিজ নিজ দেশে ভালোমতো কাজ করে, তাহলে তা বৈশ্বিকভাবে আমাদের কাজকে শক্তিশালী করবে। বাংলাদেশ আইইউসিএন জাতীয় কমিটি যথেষ্ট ভালোমতো কাজ করছে। রোহিঙ্গা শিবিরে আইইউসিএন বেশ ভালোমতো কাজ করছে। প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী রক্ষায় বাংলাদেশের কাজ অন্য দেশগুলোর জন্য অনুসরণীয়। কারণ, তারা সংরক্ষণকে মানবাধিকারের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এটা অন্য দেশগুলোর জন্য শিক্ষা হতে পারে। কারণ, প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী রক্ষা না করলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না।

ডিন্ডো ক্যাম্পিলন

পরিচালক, আইইউসিএন, এশিয়া।

ডিন্ডো ক্যাম্পিলন

বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে প্রথম দেশ, যেখানে আইইউসিএনের মহাপরিচালক, উপমহা পরিচালক এবং এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক একসঙ্গে পরিদর্শনে এসেছেন। আইইউসিএন বাংলাদেশ কার্যালয় যথেষ্ট ভালো কাজ করছে। অনেক জটিল ও কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েও কাজের এলাকা বিস্তৃত করেছে। বাংলাদেশ কার্যালয়ের চেয়ারম্যান রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ও কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিনের নেতৃত্ব এ জন্য ধন্যবাদ পেতে পারে। বাংলাদেশের জলাভূমি, বনভূমি, বন্য প্রাণী ও নদ–নদী খুব বৈচিত্র৵পূর্ণ। এগুলো রক্ষায় বাংলাদেশ কার্যালয় ইতিবাচক কাজ করে চলেছে।

বাংলাদেশের আইইউসিএনের সদস্য রাষ্ট্রগুলো একই সঙ্গে বৈশ্বিক জোটের অংশ। ফলে একটি বাংলাদেশি সংগঠন অন্য আরেকটি দেশের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে পারে। আমাদের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কার্যালয় এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে।

হাসনা মওদুদ

কাউন্সিলর, আইইউসিএন (অনলাইনে যুক্ত)।

হাসনা মওদুদ

আইইউসিএন বাংলাদেশে যেসব সংস্থা রয়েছে, তাদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাস করা মেধাবীরা রয়েছেন। যাঁদের অনেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। তাঁদের নেতৃত্বে পরিচালিত সংস্থাগুলোর তৃণমূল পর্যায়ে কাজের বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে। উচ্চশিক্ষা ও তৃণমূলের অভিজ্ঞতা—এই দুটি একসঙ্গে থাকার কারণে তাঁরা বেশ সফলভাবে বাংলাদেশের প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে পারছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষ বাংলাদেশ থেকে তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। এশিয়া অঞ্চলকে আইইউসিএনের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। কারণ, এই অঞ্চলের পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ। এগুলো রক্ষা করতে স্থানীয় অভিজ্ঞতাকে বৈশ্বিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।

রাকিবুল আমিন

আবাসিক প্রতিনিধি, আইইউসিএন, বাংলাদেশ।

রাকিবুল আমিন

আইইউসিএন তার বাংলাদেশের সদস্য সংগঠনগুলোর জন্য সেমিনার, কর্মশালা ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। এ ছাড়া আঞ্চলিক নদী ব্যবস্থাপনা নিয়েও আমরা কাজ করছি। বন ব্যবস্থাপনা ও বন্য প্রাণী রক্ষায় আমরা নতুন প্রক্রিয়ায় কাজ করছি। হাতি ও বাঘের জন্য আন্তসীমান্ত করিডর তৈরির জন্য গবেষণা ও কারিগরি সহায়তা দিতে সরকারের সঙ্গে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী রক্ষায় আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি।

শকুন রক্ষায় আইইউসিএন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। আমাদের কার্যক্রমের সফলতা হিসেবে বাংলাদেশের শকুন বিলুপ্তির পথ থেকে রক্ষা পেয়েছে। শকুনের জন্য ক্ষতিকর বেশ কিছু ওষুধ নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমরা কাজ করেছি। বাংলাদেশ সরকার তা করেছে। ফলে এখন শকুনের সংখ্যা বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি রক্ষায় আমরা কাজ করছি।

কোভিডের সময়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি, প্রকৃতি রক্ষা ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে ওয়েবিনারসহ নানা কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। বাংলাদেশের বৃক্ষসম্পদ নিয়ে আমরা জরিপ করছি। ফলে সামগ্রিকভাবে আমাদের প্রকৃতি সুরক্ষায় আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। এ ক্ষেত্রে আমরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কার্যালয় থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি।

রুনা খান

নির্বাহী পরিচালক, ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ।

রুনা খান

আমরা ২০ বছর আগে যখন ফ্রেন্ডশিপ প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করি, তখন দুর্গম এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দিই। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, দেশের প্রত্যেকটি মানুষের ভালোমতো বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আর যেকোনো দুর্যোগ বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে ওই গরিব মানুষেরা। ফলে তাঁদের জীবন–জীবিকা রক্ষা এবং উন্নতি করার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বনায়নকে আমরা গুরুত্ব দিই। যেমন আমরা উপকূলীয় এলাকায় মানুষের সুরক্ষার ক্ষেত্রে ম্যানগ্রোভ বন সৃজন করেছি। এ পর্যন্ত দুই হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বন সৃজন করেছি। এর মাধ্যমে আমরা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করার সুযোগ করে দিয়েছি। তার পরে তাদের জন্য অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা ও সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে যারা ভাসমান জনগোষ্ঠী, জলবায়ু উদ্বাস্তু এবং বিশেষ করে নারীদের জন্য আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসছি।

মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান

নির্বাহী পরিচালক, সিইজিআইএস।

মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান

বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। এ জন্য যথেষ্ট জ্ঞান ও প্রযুক্তি বাংলাদেশের আছে। আমরা আইইউসিএনের সহায়তায় জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ প্রটোকল তৈরি করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। দেশে নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। এগুলোর প্রভাব জীববৈচিত্রে৵র ওপরে কতটুকু পড়ছে, কোথায় সুরক্ষা দরকার, তা বোঝার জন্য তদারকি করতে হবে।

সিইজিআইএস থেকে বাংলাদেশ সরকারের জন্য জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ), সুন্দরবনসহ আশপাশের এলাকার জন্য আঞ্চলিক সমীক্ষা থেকে শুরু করে সরকারি–বেসরকারি সংস্থার বড় প্রকল্পের জন্য প্রতিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করে দিচ্ছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো আইইউসিএনের সদস্য সংগঠনগুলো কাজে লাগাতে পারে।

আনোয়ারুল ইসলাম

প্রধান নির্বাহী, ওয়াইল্ড টিম বাংলাদেশ।

আনোয়ারুল ইসলাম

বাঘ হচ্ছে বাংলাদেশের সুন্দরবনের পাহারাদার। আমরা বাঘ রক্ষায় কাজ করছি। তবে সুন্দরবনের প্রতিবেশ ব্যবস্থা সুরক্ষা দিলে বাঘ রক্ষা পাবে।

বাঘ হচ্ছে সুন্দরবনের রক্ষক। তাই সুন্দরবন রক্ষা করতে হলে আমাদের বাঘ বাঁচাতে হবে। সুন্দরবন ঝড়জলোচ্ছ্বাস থেকে আমাদের মায়ের মতো আগলে রাখে।

শীতল কুমার নাথ

প্রকল্প পরিচালক, কোডেক।

শীতল কুমার নাথ

আমাদের ডলফিন, ইলিশ, রক্ষিত বনভূমি ও এলাকা সংরক্ষণে অনেক বছরের অভিজ্ঞতা আছে। কক্সবাজারে দুটি সংরক্ষিত বন রয়েছে। একটি টেকনাফ বনভূমি ও আরেকটি শেখ জামাল জাতীয় উদ্যান। টেকনাফ-পেনিনসুলা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) রয়েছে। রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ার পর সেখানকার সাড়ে চার হাজার একরের ওপরে বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। কোডেক প্রায় ২০ লাখ মানুষকে সেবা দিচ্ছে। তবে আমরা মূলত উপকূলীয় এলাকায় কাজ করছি। তবে এখন আমরা দেশের সমতল ভূমিতে কাজ শুরু করছি।

আইইউসিএন বাংলাদেশের সদস্যরা সারা দেশে যেসব কাজ করছেন, তা অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর পরিদর্শন করতে পারেন। যারা ভালো কাজ করছে ও অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে, তা সবার কাছে তুলে ধরা উচিত। যাতে ভালো কাজগুলো উৎসাহ পায় ও অন্যরা সেখান থেকে শিখতে পারে।

মুকিত মজুমদার বাবু

চেয়ারম্যান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন।

মুকিত মজুমদার বাবু

আমরা ‘ভারসাম্যপূর্ণ প্রকৃতি, ভালো জীবন’ স্লোগান নিয়ে ২০০৯ সালে কাজ শুরু করি। আমরা টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রকৃতি সুরক্ষা ও বন্য প্রাণী রক্ষা নিয়ে কাজ করি। এ ব্যাপারে আমরা সচেতনতা তৈরির জন্য কাজ করছি। আমরা দেশের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি বিষয়ে গবেষণা ও প্রচারণা চালিয়ে থাকি। আইইউসিএন একাডেমি একটি ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান সদস্য সংগঠনের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের তরুণ প্রকৃতি ও পরিবেশ পেশাজীবীদের সেখানে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল পলিসি সেন্টার আরেকটি ভালো উদ্যোগ। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে, যাতে তা আরও কার্যকর হতে পারে। সদস্য সংস্থাগুলো সেখান থেকে তথ্য ও নীতিসহায়তা পায়। একই সঙ্গে আইইউসিএনের ভবিষ্যতের কাজে তা সহায়ক হয়।

এম মনিরুজ্জামান খান

প্রকল্পপ্রধান, ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগ।

এম মনিরুজ্জামান খান

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। আবার দ্রুত শিল্পায়নের দিকে যাচ্ছে। ব্র্যাকে আমার বন নামে একটি কার্যক্রম শুরু করেছি। এটা তিন ধরনের বৃক্ষরোপণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করছে। ওই গাছ ২০ বছরের জন্য কাটা যাবে না, এমন শর্ত দেওয়া হয়। মূলত পড়ে থাকা জমিতে তা সৃজন করা হয়। কৃষিজমি যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকেও আমরা খেয়াল রাখি।

আমাদের এ ধরনের কার্যক্রমগুলো আইইউসিএনের অন্তর্ভুক্ত অন্য দেশের সংস্থাগুলো অনুসরণ করতে পারে। আবার অন্য দেশের ভালো অভিজ্ঞতা ও সফল উদ্যোগগুলো থেকে শিখতে পারে।

আমরা অভিযোজন ক্লিনিক তৈরি করছি। যেখান থেকে মানুষ এসে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়ে চলতে হবে, তা শিখতে পারে। মানুষ যখন অসুস্থ হয়, তখন ক্লিনিকে যায়। তেমনি আমাদের জমি কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে, সে আমাদের ক্লিনিকে আসতে পারে। আমরা পরিবেশ, প্রকৃতি ও জলবায়ু নিয়ে সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রকৃতি সুরক্ষায় বৈশ্বিক তহবিলগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে আইইউসিএন প্রধান কার্যালয় সদস্যদেশগুলোকে সহযোগিতা দিতে পারে।

শারমিন মুর্শিদ

নির্বাহী পরিচালক, ব্রতী।

শারমিন মুর্শিদ

বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো রক্ষার জন্য আমরা অনেক দিন ধরে কথা বলছি। নদ–নদীসহ জলাভূমিগুলো রক্ষায় অনেক ধরনের সরকারি-বেসরকারি কমিটি হয়েছে। আমি নিজেও জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির সদস্য ছিলাম। নদীগুলো রক্ষায় অনেক ধরনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা খুব একটা কাজে লাগছে না। নদী দখল, দূষণ ও ধ্বংস বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমরা মুখে বলি ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে ভূগর্ভের পানি তুলে প্রকৃতির জন্য বিপদ বাড়াচ্ছি।

আইইউসিএনের সদস্য সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সক্ষমতা বাড়াতে বৈশ্বিক কার্যালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

আতিক রহমান

নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ (বিসিএএস)।

আতিক রহমান

আশির দশকে মনে করা হতো, আমাদের দেশে পরিবেশগত সমস্যা নেই। কারণ, তখন দেশে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান কম ছিল। কিন্তু মানুষ নিজেই পরিবেশের জন্য বড় সমস্যা। মানুষের বেঁচে থাকা ও চাহিদা পূরণের জন্য পরিবেশের ক্ষতি করে।

এখন বিশ্বে মানুষের পরিবেশের প্রতি সচেতন আচরণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বনভূমি রক্ষার বিষয়টি আরও সামনে এসেছে। এত দিন শুধু গাছকে বনভূমি মনে করা হতো। এখন মানুষ, গাছ, বন্য প্রাণী ও পরিবেশ—সব মিলিয়ে বনভূমি। ফলে সবাইকে একসঙ্গে থাকার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

আমাদের মতো দেশের জন্য দারিদ্র্য পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা। কারণ, আমাদের খাদ্যের চাহিদা জোগাতে ও শর্করাজাতীয় খাদ্য উৎপাদনে পরিবেশ ও বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। তবে এগুলো

রক্ষা করে কীভাবে খাদ্য উৎপাদন করা যায়, তা ভাবতে হবে।

একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। ৩০-৩৫ বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি

সামনে এসেছে। এটি শুরুতে বিজ্ঞানীরা বলে আসছিলেন। এখন সারা পৃথিবীর সবাই এটি নিয়ে কথা বলছে।

তবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদা মেটানো, যা শিল্পোন্নত দেশগুলো শুরু করেছে। এখন বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো একই কাজ করছে। ফলে সবাইকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

বারিশ চৌধুরী

প্রকল্প গবেষক, বেলা

বারিশ চৌধুরী

আমরা প্রকৃতি সুরক্ষার ক্ষেত্রে দেখেছি, উচ্চ আদালত থেকে ইতিবাচক নির্দেশনা আসছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ সঠিক সময়ে ও নিয়মে হচ্ছে না। এটা একটা বড় সমস্যা। মানুষের চাপ ও দূষণের কারণে বনভূমি কমে আসছে। সেন্ট মার্টিনের মতো সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে। কক্সবাজারে সংরক্ষিত বন দখল করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে চাইছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্প দেশের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকায় নির্মাণ করা অবৈধ। এগুলো বন্ধ করতে হবে।

মনজুরুল হান্নান খান

নির্বাহী পরিচালক, ন্যাকোম।

মনজুরুল হান্নান খান

বাংলাদেশের প্রকৃতি সুরক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে একটি বড় ঘাটতি আছে। তা হচ্ছে, বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে পারস্পরিক মতবিনিময় হয় না। আমি নিজে সরকারের সঙ্গে ২০ বছর কাজ করেছি। আমি বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটি ফোরামে নিয়মিত আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হতে দেখিনি। যদি তা হতো, তাহলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক বিষয়ে পরিষ্কার হতে পারতেন। আবার বিজ্ঞানীরা তাঁদের অবস্থান ও ব্যাখ্যা তুলে ধরতে পারতেন। তবে বিজ্ঞানীদেরও দায়িত্ব রয়েছে তাঁদের উদ্ভাবন, আবিষ্কার ও মতামতগুলোকে সহজে সবার কাছে তুলে ধরার। যা সঠিক ও শক্তিশালী নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইইউসিএনের সদস্য সংস্থাগুলো নিজেদের মতো কাজ করছে। তাদের প্রতিটি সংস্থার প্রকৃতি সংরক্ষণে নিজস্ব অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু ভাষাগত ও কাঠামোগত কারণে এসব অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের মধ্যে বিনিময় হয় না। যে কারণে সংস্থাগুলোর সমস্যার ধরন ও তা মোকাবিলা করার স্বতন্ত্র পদ্ধতিগুলো পরস্পরের মধ্যে আলোচনা হয় না। সমাধানের এসব পথ ও অভিজ্ঞতাগুলো বিনিময়ের জন্য একটি সেন্টার তৈরি করতে হবে, যা অনেক দেশের জন্য সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।