এসডিজি ১২: অনলাইনে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা

ইউএনডিপি বাংলাদেশ, ইউএন এনভায়রনমেন্ট ও প্রথম আলোর আয়োজনে  ‘এসডিজি ১২: অনলাইনে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২। এ আলোচনার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

ইউএনডিপি বাংলাদেশ, ইউএন এনভায়রনমেন্ট ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘এসডিজি ১২: অনলাইনে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম আলো

  অংশগ্রহণকারী

নাজনীন আহমেদ

কান্ট্রি ইকোনমিস্ট, ইউএনডিপি বাংলাদেশ

 বজলুল হক খন্দকার

চেয়ারম্যান, সানেম, সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 ফকরুল আহসান

প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা, ইউএনডিপি বাংলাদেশ

 এম এ রাজ্জাক

চেয়ারপারসন, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড)

 মাহফুজুল ইসলাম শামীম

উপমহাব্যবস্থাপক (এসডিজি), পিকেএসএফ

 আম্বারীন রেজা

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ফুডপান্ডা বাংলাদেশ

 আমিনুল হক

নির্বাহী পরিচালক, নগদ লিমিটেড

 মাহফুজ সাদিক

চিফ কমিউনিকেশনস অফিসার, বিকাশ লি.

 নাছিমা আক্তার

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স   

 ওয়ারেসা খানম

প্রতিষ্ঠাতা, হার ই-ট্রেড

 তাহমিনা খান

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, শৈলী ডট কম

 বিপ্লব ঘোষ

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ই-কুরিয়ার

 সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম

সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

 সঞ্চালনা

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

এসডিজি-১২-এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে টেকসই উৎপাদন ও ভোগ। বৈশ্বিক পর্যায়ে ও দেশে খাদ্যের অপচয় বড় একটি সমস্যা। উন্নত বিশ্বের মানুষ প্রয়োজনাতিরিক্ত  কেনাকাটা করে এবং নষ্ট করে। দেশে অনলাইন সেবাভিত্তিক খাত বড় হচ্ছে। ফুড ডেলিভারি এখন বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু এতে পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রচুর। বাংলাদেশকে এসডিজি-১২ অর্জন করতে হলে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও পরিবেশসচেতন ভোক্তা তৈরিতে নজর দিতে হবে।  

ফকরুল আহসান

এসডিজির লক্ষ্যগুলো একটি আরেকটির সম্পূরক ও পরিপূরক; তবে কিছু  লক্ষ্যের ওপর জোর দিলে অন্যান্য লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। এসডিজি ১২ অনুরূপ একটি লক্ষ্য। ধনী ও উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে অনেক খাদ্য অপচয় হয়। অথচ এই অপচয় রোধ করা সম্ভব হলে সাব-সাহারা-আফ্রিকার মতো তৃতীয় বিশ্বের মানুষদের অভুক্ত থাকতে হয় না। উৎপাদনের বিষয়েও আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পরিবেশের ওপর কারখানার দূষণ বহুমাত্রিক; তবে পানির ওপর এর প্রভাব অত্যধিক। প্রতিটি কারখানায় এটিপির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে পরিবেশের দূষণসহ পানিবাহিত রোগবালাই  অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যা স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় কমাতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে নদী ও জলাশয়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সয়াহক হবে।

আমরা প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করি।  বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রের এক-তৃতীয়াংশ পলিথিন দ্বারা দূষিত হতে পারে। এ বিষয়ে অনলাইন সেবাদানকারীদের ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ, করোনা মহামারির পর অনলাইন সেবার জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী বেড়েছে। তাদের প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার বর্জনে কার্যকর উদে্যাগ নেওয়া প্রয়োজন এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য সরবরাহে সচেতন হওয়া জরুরি।

উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে একটু মনোযোগী হলে পরিবেশের ওপর যে প্রভাব পড়ছে, তা কমিয়ে আনা সম্ভব। এ চর্চা কেবল খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থায় নয়, সব অনলাইন সেবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ ছাড়া কাগজবিহীন লেনদেনব্যবস্থা যদি গড়ে তোলা যায়, তাহলে পরিবেশের ওপর অনুকূল প্রভাব পড়বে।

নাজনীন আহমেদ

অনলাইন সেবার প্রসারে মানুষের জীবনযাত্রায়  ইতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয়।  একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে ভোক্তাদের  সংখ্যাও বাড়ছে।  এ ক্ষেত্রে পেমেন্ট–ব্যবস্থা ও সহজতর হয়েছে। অনলাইন সেবার কারণে পণ্যসংক্রান্ত তথ্য হাতের নাগালের মধ্যে এসে গেছে। মার্কেট এক্সেসও অনেক সহজ হয়েছে। এ খাতের প্রসার আগামী দিনগুলোতে আরও ব্যাপাক হবে, যা সহজেই অনুমেয়। তাই অনলাইনে ব্যবসার প্রসার ও ভোক্তার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে এখন থেকেই ভাবতে হবে।

অনলাইন সেবার ক্ষেত্রে ‘পুশ ডিমান্ড’ সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ প্রয়োজনাতিরিক্ত সেবা বা পণ্যের  প্রতি ঝুঁকে পড়ছে, যা সব সময় ইতিবাচক নয়।  যেমন অতিরিক্ত পণ্য সরবরাহের কারণে ও বর্জ্য সৃষ্টিতে জলবায়ুর ওপর প্রভাব পড়ে।

আমরা অনেক সময় মনে করি, কাগজের তৈরি জিনিস পরিবেশবান্ধব;কিন্তু কাগজ তৈরিতেও গাছ কাটতে হয়। অনেক পণ্য তৈরি করতে প্রচুর পানি ব্যবহার করা হয়। ফলে আমাদের জীববৈচিত্র্য হারানোর পাশাপাশি পরিবেশদূষণও হচ্ছে।

আমরা অনেক খাবার নষ্ট করি। সারা বিশ্বে উৎপাদনের পর বাজারে যাওয়ার আগেই ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয়। কেবল খাদ্যই নয়, অনেক সক্রিয় ইলেকট্রনিক ডিভাইসও আমাদের বাসায় অব্যবহৃত পড়ে থাকে। এ বিষয়গুলো নিয়ে  কাজ করতে হবে। কারণ, এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমরা উদীয়মান অর্থনীতির একটি দেশ। আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। ফলে ভোগের চাহিদা বাড়ছে। অন্যদিকে ডিজিটাল ডিভাইসের কারণে এ সুবিধাভোগের থেকে জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের শহরে প্রতিদিন ১০ হাজার ৭০৬ টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এর ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ খাদ্য থেকে আসে। এসব বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা সেভাবে নেই। ফলে একদিকে খাদ্য অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে এগুলো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থেকে পরিবেশ দূষিত করছে। এই দূষণ রোধে সরকারি ও বেসরকারি  উদ্যোক্তাদের যুগপৎ দায়িত্ব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

অনলাইন সেবার কারণে খুব সহজেই এক ক্লিকে কম সময়ে ডেলিভারি পাচ্ছি। ২০২১ সালের তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন প্রায় এক লাখ পার্সেল যাচ্ছে। এর গড় আকার হচ্ছে ৯৫০ টাকা। এটি কেবল ফুড ডেলিভারির হিসাব। করোনার সময় থেকে এটি আরও জনপ্রিয় হয়েছে। আমাদের অধিকাংশ ক্রেতা তরুণ প্রজন্মের। আবার বাসায় মা–বাবা দুজনই কাজ করায় অনলাইনে খাবার অর্ডার করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে এগুলো আরও বাড়বে। এ জন্য অনেক শক্তি খরচ হচ্ছে, কার্বন নিঃসরণ ও বর্জ্য বাড়ছে।

গত বছর অস্ট্রেলিয়ার এক সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, ২০২৪ সালে অনলাইনে খাবার অর্ডার ৬৫ মিলিয়ন বাড়বে। এতে কার্বন নিঃসরণ ১৩২ গুণ বাড়বে। আমরাও চাই ই-কমার্স খাত বড় হোক, কিন্তু আমাদের চিন্তা করতে হবে কোথায় কোথায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারি।

অনলাইন ডেলিভারিতে প্রচুর প্লাস্টিক ব্যবহার করি। আমাদের এর বিকল্প ভাবতে হবে। এখানে এমএফএসেরও ভূমিকা রয়েছে। তারা বড় ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ভোক্তার আচরণকে কাজে লাগাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ডেলিভারি টিফিন ক্যারিয়ারে হতে পারে। ক্রেতা খাবার রেখে বাটি ফেরত দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তাকে ৫ বা ১০ টাকা ছাড় দেওয়া যেতে পারে। ভোক্তার সচেতনতা দরকার। সে যা যা ভোগ করছে বা কিনছে, তার আসলেই প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, তা ভাবা প্রয়োজন।

আম্বারীন রেজা

২০১৭ সাল থেকে ফুডপান্ডা বাংলাদেশ ডেলিভারি হিরো গ্রুপের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। ডেলিভারি হিরো গ্রুপ বিশ্বের অন্যতম বড় একটি ফুডটেক কোম্পানি। এটি অনলাইনে খাদ্য ও বিভিন্ন পণ্য বিতরণের একটি ব্র্যান্ড প্ল্যাটফর্ম। বিশ্বের ১০০টি দেশে এই প্ল্যাটফর্মের ফুটপ্রিন্ট আছে। ফুডপান্ডা কার্বন–নিরপেক্ষ কোম্পানি। আমরা জাতিসংঘের এসডিজির বিষয়ে সচেতন।

বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই ফুডপান্ডার কার্যক্রম রয়েছে। ঢাকার বাইরেও আমাদের ব্যবসার বড় একটি অংশ আছে। আমরা রেস্তোরাঁ ও হোম শেফদের সঙ্গে কাজ করি। আমরা তারকা হোম শেফদের সঙ্গে নয়, যঁাদের আয়ের উৎস তৈরির জন্য বাসা থেকে কাজ করা প্রয়োজন, তঁাদের সঙ্গেই কাজ করি। বর্তমানে আমরা কার্বন ফুটপ্রিন্ট নিয়ে কথা বলছি। বাংলাদেশসহ এশিয়ার ১২টি দেশে আমাদের কার্যক্রম আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে আমাদের ৯৬ শতাংশ ডেলিভারিতে বাইসাইকেল ব্যবহার করা হয়।

বাইরের দেশগুলোতে মোটরসাইকেল, এমনকি গাড়ি দিয়েও ফুড ডেলিভারি হয়। এ জায়গায় বাংলাদেশের ডেলিভারির ব্যবস্থা টেকসই। প্যাকেজিং একটি বড় চ্যালেঞ্জ। টেকসই প্যাকেজিং নিয়ে আমাদের পাইলট প্রকল্প চলছে। বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিং নিয়েও আমরা
কাজ করছি।

খাদ্য অপচয় নিয়েও ফুডপান্ডা কাজ করছে। আমরা রবিনহুড ও বিদ্যানন্দের সঙ্গে কাজ করছি। প্রতিদিনই আমাদের কিছু খাবার ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয় না। সে খাবারগুলো আমরা বিদ্যানন্দকে দিই। কোনো রেস্টুরেন্টের উদ্বৃত্ত খাবার থাকলে তারা আমাদের জানায়। আমরা রবিনহুডকে জানালে তাদের স্বেচ্ছাসেবীরা তা নিয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে বিতরণ করে। আমরা নারী ও তরুণদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছি।

ওয়ারেসা খানম

হার ই-ট্রেড মূলত একটি নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম। নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নেও আমরা সহায়তা দিয়ে থাকি। হার ই-ট্রেডে দুই ধরনের দল আছে। যাদের একটি দল মিড লেভেল গ্রোথের দিকে গেছে।

অন্য দলটি একেবারে প্রান্তিক। তারা কেবল জানে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে মার্কেটিং করা যায়। এ গ্রুপের লোক সংখ্যায় অনেক বেশি। তাঁদের বেশির ভাগেরই ট্রেড লাইসেন্স নেই। ফলে ব্যবসাকে গ্রোথ লেভেলে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় সুবিধা থেকে তঁারা বঞ্চিত।

প্রতিটি জিনিসের পরিমিত ব্যবহার ও সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার তঁারাই জানেন বলে আমার মনে হয়। তঁারা খুবই স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। গ্রোথ লেভেলে যাওয়ার আগে তঁারা অনেক সংগ্রাম করে থাকেন।

হার ই-ট্রেডে যেসব উদ্যোক্তা আছেন, তঁাদের আমরা পরিবেশের ক্ষতি না হয় এমন পণ্য দিতে বলে থাকি। আমাদের কিছু নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আছে। এ জন্য আমাদের সেবার একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়েছে। 

তবে প্যাকেজিংয়ের বিষয়ে আমরা এখনো হাত দিতে পারিনি, এটা সত্যি। এর কারণ, প্রত্যেক উদ্যোক্তাই নিজেদের পছন্দ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করেন।

তাহমিনা খান

আমি জুয়েলারি ও ফেব্রিক নিয়ে কাজ করি। মূলত এটি বুটিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড। ‘মাম্মিস পিকল’ নামে আমার একটি সাব-ব্র্যান্ড আছে, যা মূলত আচারের। আমার মা খুব ভালো আচার বানান। এই খাবার একেবারেই দেশীয়। সে ভাবনা থেকেই আমি শুরু করি। দেশি পণ্যের সুবিধা হচ্ছে, প্লাস্টিক ও ওয়ান টাইম বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা যায়। এটি রিসাইকেল করা যায়।

আমাদের কাছ থেকে কেনা আচারের বোতল কেউ ফেরত দিলে, তাকে ১২ টাকা ছাড় দেওয়া হয়। আমরা ১১ টাকা দিয়ে এটি কিনি। এতে দেখা যায়, আমাদের ৬০ শতাংশ বোতল ফেরত আসে।

এতে কিছুটা লোকসান হলেও কিছু স্থায়ী ক্রেতা তৈরি হয়। আমরা বোতলে প্লাস্টিকের ছিপির বদলে ধাতুর ছিপি ব্যবহার করি, যেন খাবারের মান ঠিক থাকে।

অনলাইন রিটার্ন, পলিসি সহজ হলে ভালো হয়। খাবার ক্ষেত্রে প্রিজারভেটিভস না দেওয়ায় এটি ফেরত আসতে দেরি হলে ফাঙ্গাস পড়ে যায়। ফলে এ খাবার পুনর্ব্যবহার সম্ভব হয় না।

অনেক সময় ভোক্তা কুরিয়ারে রিটার্ন দিলে বোতল ভেঙে পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। কারণ, আমরা ভালোভাবে মোড়কজাত করলেও তঁারা সেটি করতে পারেন না।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবার কারণে ডেলিভারি প্রক্রিয়া অনেক দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা যায়।

নাসিমা আক্তার

করোনার সময় অনেক নারী উদ্যোক্তা হয়েছেন। তঁারা বিশেষ করে খাবার নিয়ে কাজ করেছেন। আমাদের প্ল্যাটফর্মে এমনও অনেক নারী আছেন, যঁারা কখনো এ রকম কাজ করেননি। প্রথমে আমাদের উদ্যোক্তা ছিলেন ৩০ হাজার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সদস্যসংখ্যা হয়েছে ১০ লাখ। সেখানে চার লাখ উদ্যোক্তা রয়েছেন।

আমরা নারীদের অনলাইনে আনার বিষয়ে দুটি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। প্রথমত, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি অনেক বড় একটি সমস্যা। তঁাদের ল্যাপটপ কেনার সামর্থ্য নেই, একটি স্মার্টফোন আছে। এটি দিয়ে ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়, ফেসবুকে পোস্ট করতে হয়। ইন্টারনেট না পেলে এসব কাজ করা যায় না।

তেঁতুলিয়ার একজন নারী ফোর–জি সুবিধা পান না, যেটি আমরা ঢাকায় বসে পাচ্ছি। এ জায়গাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত হচ্ছে আমাদের ডেলিভারি সার্ভিস।  ই-কুরিয়ারের সঙ্গে আমাদের পার্টনারশিপ আছে। আমরা চাই, শেষ পর্যায় (লাস্ট মাইল) পর্যন্ত আমাদের ডেলিভারি যেন মসৃণ হয়।

এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনই পারবে শেষ মাইল পর্যন্ত যেতে।

তেঁতুলিয়ার ওই প্রান্তে হয়তো একজন নারী পণ্য নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু তিনি জানেন না কত দূরে গিয়ে তঁাকে ডেলিভারি দিতে হবে। পদ্মা সেতু হওয়ায়  দক্ষিণ বঙ্গের সুবিধা হয়েছে। কারণ, খাবার ডেলিভারিতে দু-তিন দিন লাগলে খাবার নষ্ট হয়ে যায়। প্যাকেজিং নিয়ে অবশ্যই কৌশলগত পরিকল্পনা প্রয়োজন। আমাদের যে উদ্যোক্তারা শাড়ি-গয়না নিয়ে কাজ করছেন, তঁারা প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করছেন।

খাবারের ক্ষেত্রে এটি সম্ভব নয়। প্যাকেজিং নিয়ে যঁারা কাজ করেন, এ বিষয়ে তঁাদের আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।

বিপ্লব ঘোষ

আমরা ২০১৪ সালে দুটি সাইকেল নিয়ে ই-কুরিয়ারের যাত্রা শুরু করি। সাইকেলের সুবিধা হচ্ছে, এতে কোনো জ্বালানি খরচ লাগে না। এটি ইউরোপে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। বাংলাদেশে এটি কার্যকর হতে পারে বলে আমার মনে হয়েছিল। কারণ, এটি সাশ্রয়ী এবং ঢাকা শহরের যানজটে দ্রুত ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব। কুরিয়ারের ক্ষেত্রে আমরা প্রথম একটি ইনোভেশন নিয়ে আসি। কুরিয়ারের ক্ষেত্রে একটি পিওডি (প্রুফ অব ডেলিভারি) দেওয়া হয়, যাতে ক্রেতার স্বাক্ষর করতে হয়। আমরা একে ডিজিটাল করি।

ই-কুরিয়ারের শুরুই হয়েছে অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। আমরা বুকিং প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল করেছি, এখানে কোনো বুকিং স্লিপ নেই। ওটিপির মাধ্যমেই যে পণ্য সংগ্রহ করে, সে বিক্রেতার সঙ্গে ভেরিফিকেশন করে নেয়। এর ফলে কাগজের কোনো ব্যবহার নেই। খাদ্যের ক্ষেত্রে অনলাইন পেমেন্ট বেশি হলেও জুয়েলারি বা এ ধরনের পণ্যে ক্যাশ অন ডেলিভারিই বেশি।

শুরুর দিকে আমরা পলিব্যাগ ব্যবহার করতাম। তারপর ২০১৯ সালে রিসাইকেল করা যায়, এমন পলিব্যাগ ব্যবহার করি। একটি পলিব্যাগ চার থেকে পাঁচবার ব্যবহৃত হয়। এটি মার্ক করা থাকে।

অনলাইন সেবা ও ব্যবসা পরিবেশবান্ধব করতে লজিস্টিক সেবা যঁারা দেন, তঁারা ভাগাভাগি করে গুদাম, গাড়ির ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, দেখা যায় একজন তঁার পুরো গাড়ির ধারণক্ষমতা সব সময় ব্যবহার করেন না। সে ক্ষেত্রে অন্যরা সে গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। এতে জ্বালানির অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে।

দক্ষিণ বঙ্গে আমাদের যে গাড়িগুলো যায়, সেগুলো ফেরার পথে শসা, নারকেলের মতো কৃষিপণ্য নিয়ে আসে। এতে খরচ অনেক কম হয়। আমরা প্রান্তিক এলাকায় দোকান দিচ্ছি। ফলে প্রান্তিক যেসব উদ্যোক্তা লজিস্টিকস সহযোগিতা  পান না, তিনি সেখানে পণ্য দিতে পারেন।

আমিনুল হক

‘নগদ’ শুরু থেকেই টেকসই লক্ষ্যমাত্রার দিকে নজর দিচ্ছে। ভোগ ও উৎপাদনকে দায়িত্বশীল করতে প্রতিটি পর্যায়ে ভ্যালু অ্যাড করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনো ৯০ শতাংশ লেনদেন সরাসরি নগদ অর্থের মাধ্যমে হচ্ছে। একে ক্যাশলেস বা কাগজবিহীন করতে আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

অর্থনীতিতে সরাসরি অর্থ আদান–প্রদানের জন্য  টাকা দ্রুত লেনদেনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনসংখ্যার বড় একটি অংশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মধ্যে আসতে পারেনি। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে সুবিধাগুলো পৌঁছানো যায় না।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অ্যাকাউন্ট খোলার জটিলতা। ফরম পূরণ, জমা, ভেরিফিকেশনসহ এটি সম্পন্ন করতে অনেক সময় লেগে যায়। এ জন্য নগদ প্রথম মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) হিসেবে প্রথম ডিজিটাল কেওয়াইসি (নো ইওর কাস্টমার) চালু  করেছে। এটি বাংলাদেশের আর্থিক খাতে একটি অন্যতম মাইলস্টোন। এখন আমাদের গ্রাহকসংখ্যা ৬ কোটি ৭১ লাখ।

এই কৌশল বাস্তবায়ন না করলে এত গ্রহাক হতো না। প্রতিবছর ক্যাশ ব্যবস্থাপনায় সরকারের ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। নগদ কীভাবে একে ডিজিটাল উপায়ে করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছে।

উৎপাদন ভ্যালু চেইন ঘুরে প্রকৃত বিক্রেতার কাছে টাকা পৌঁছাতে পাঁচ থেকে সাত দিন লেগে যাচ্ছে। অথচ এমএফএসের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক
এক ক্লিকে সেটেলমেন্ট করতে পারছে। পরদিনইতার অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা এটি বাস্তবায়ন করেছি এবং এর সুফল আসতেশুরু করেছে।

পোস্ট অফিসের সঙ্গে আমরা কাজ করছি, কীভাবে তাদের সুযোগ কাজে লাগান যায়, সেটা নিয়ে ভাবছি। আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে শুরু থেকেই কাজ করছি।

আমরাই বাংলাদেশে প্রথম ক্যাশ আউট চার্জ ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশে নিয়ে আসি। এর ফলে কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছে। নগদের কারণে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা চার্জ কম দিতে হয়েছে। যঁারা পরিবেশবান্ধব পণ্য নিয়ে কাজ করবেন, নগদ তঁাদের সুবিধা দেবে।

মাহফুজ সাদিক

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আছেন, যঁাদের ট্রেড লাইসেন্স নেই। তঁাদের কীভাবে আমরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনতে পারি, সে জন্য কাজ করছি। এসডিজি-১২ অর্জনের জন্য বাংলাদেশে ব্যাংকের নির্দেশনায় আমরা পার্সোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্ট নামে বিশেষ একটি অ্যাকাউন্ট সেবা চালু করেছি। বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও একটি বড় অংশ এখনো বাটন ফোন ব্যবহার করে। তঁাদের কীভাবে সেবাগুলো সহজ করে দেওয়া যায়, সে বিষয়েও চেষ্টা করছি।

বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ক্রেতা কোনো পণ্য কেনার সময় এ বিশ্বাসের বিষয়টি আসে। এমএফএসের প্রথম চিন্তাই ছিল বিশ্বাস অর্জন করা। আমাদের নিকট অতীতের অভিজ্ঞতা অতটা সুখকর নয়। আমরা যে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে কাজ করি, তাতে গত এক থেকে দুই বছরে গ্রাহকের আস্থার সংকট তেরি হয়েছে। যেকোনোভাবে ব্যবসা বৃদ্ধি করার প্রবণতা থেকে সরে আসার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি। রিটার্ন পলিসিতে পণ্য ফেরত দিয়ে গ্রাহক তার অর্থ ফেরত পাচ্ছে কি না, এটি বড় বিষয়। মানুষ টাকা পায়নি, এমন অনেক উদাহরণ আছে। যেসব ইকোসিস্টেমে টাকা আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, আমরাই প্রথম এ ধরনের ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছি।

যদি নিয়মনীতি ও রেগুলেশনের মধ্যে থেকে ব্যবসাকে এগোতে না পারি এবং একবার যদি গ্রাহক ও ভোক্তাদের ভরসার জায়গায় আটকে যাই, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

মাহফুজুল ইসলাম শামীম

অনলাইন সেবা প্রদানের সমস্যা হলো ভোক্তা হিসেবে আমরা অনেকগুলো অপশন পাচ্ছি। জোর করে চাহিদা তৈরির  প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। টেকসই প্যাটার্ন লক্ষ করছি না এবং অপচয় ও দূষণকে উসকে দিচ্ছে।

জাতিসংঘের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে বাংলাদেশে প্রতিবছর জনপ্রতি ৬৫ কেজি খাবার অপচয় করা হয়। এটি আমাদের মোট উৎপাদনের ১৭ শতাংশ। যে কোম্পানিগুলো পুশ ডিমান্ড তৈরি করছে, তাদেরও একটি দায়িত্ব রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানগুলো খাবার ফরমাশের ক্ষেত্রে ভোক্তা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার নিচ্ছেন কি না, এমন কোনো অপশন রাখতে পারে।

আমি কারওয়ান বাজারে প্রবেশ করতেই দেখেছি রাস্তার পাশে টমেটো আর শিম রাস্তায় পড়ে আছে। গাড়ির চাপায় নষ্ট হচ্ছে। অথচ দেশে আজ চার কোটি মানুষের খাদ্যের অভাব রয়েছে।

পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদনে পিকেএসএফ সরাসরি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৩৭৯ জন উদ্যোক্তার সঙ্গে কাজ করেছে। আমরা সরাসরি আর্থিক সুবিধা দিয়েছি ১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি জনকে। আমরা সরাসরি ৫৪ হাজার ৪৭২টি উদ্যোগকে পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের জন্য সহায়তা করেছি এবং এখনো করছি। পিকেএসএফ এসডিজি ১২–এর মোট ১১টি লক্ষ্যমাত্রার আটটি সূচকে সরাসরি কাজ করছে।

ধরা যাক, কারও মাছের খামার আছে। সেখানে মাছ বেশি খেলো কি না, তা দেখা হয়। মাছকে খাবার দিলে সে খেতেই থাকবে। আমরা পানির মধ্যে আইওটি ডিভাইস বসিয়েছি। মাছের পেট ভরে গেলে আর খাবার দিলে তা অপচয় হবে। উৎপাদনব্যবস্থাকে টেকসই করতে হলে খাদ্যকে সঞ্চয় করতে হবে। আমরা উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রযুক্তি স্থানান্তরে ব্লক চেইন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠা করেছি। কৃষকের ধান উৎপাদন, কখন তাকে সার দিতে হবে, সার বেশি হয়েছে কি না, জৈব সার দেওয়া প্রয়োজন নাকি রাসায়নিক সার দিতে হবে, পরিবেশের ওপর এর প্রভাব কী—এসব জানার জন্য আমরা আইওটি ডিভাইস ব্যবহার করছি।

এম এ রাজ্জাক

টেকসই প্যাকেজিং  করে খাবার ডেলিভারি করতে হবে। টেকসই প্যাকেজিং মানে ক্রেতা হয়তো মনে করেন মোটা ও শক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থ এটি নয়। ভোক্তার সচেতনতা বৃদ্ধি না করতে পারলে সমস্যা থেকেই যাবে। বর্জ্য ও দূষণ—দুটি বিষয়ে ভাবতে হবে। প্রশান্ত মহাসাগরে বিরাট একটা এলাকায় প্লাস্টিক ও বর্জ্য জমে আছে। এর আয়তন ৬২০ হাজার বর্গমাইল। এগুলো অপসারণে কাজ করা হচ্ছে। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী দু–তিনটি দেশ ছাড়া পাবলিক পলিসির ক্ষেত্রে বণ্টনসংক্রান্ত যে কৌশল আছে, তা পুরোপুরি ভেঙে গেছে। আমরা যে চরম বৈষম্যমূলক একটি সমাজ তৈরি করেছি, সেখানে পরিমিত ভোগ সব শ্রেণির জন্য  সমানভাবে প্রজোয্য নয়।  অর্থনীতিতে বলা হয়, উৎপাদন বাড়বে, জিডিপি বাড়বে, তবে সেখানে দূষণ ও বর্জ্যের কারণে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা হিসাব করা হয় না।

আমাদের সমাজে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু সে হারে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। আমরা অনেক বেশি মূলধন নিবিড় যন্ত্র ব্যবহার করছি। গার্মেন্টসে অটোমেশন হয়েছে। ১০ বছর আগে আমরা ১২-১৩ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করতাম। এ বছর আমরা ৪২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছি। কিন্তু কাজ করা লোকের সংখ্যা একই আছে বরং কোনো কোনো  ক্ষেত্রে হয়তো কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় হচ্ছে সেবাভিত্তিক শিল্পায়নের চিন্তা করা।

যঁারা অনলাইন সেবা দিচ্ছেন, তঁাদের অবদান এই মুহূর্তে ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে। আগামী দিনে অর্থনীতিতে তঁাদের অবদান অনেক বাড়বে। এই খাতের বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেক, এমএফএস–ও এর সঙ্গে যুক্ত। অর্থনীতিকে একটি মেশিন হিসেবে চিন্তা করলে এ খাত সেই মেশিনকে সচল রাখতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

সামনের দিনে নতুন ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরিতে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে এ খাতে তথ্য–উপাত্তের অভাব আছে। কাজেই আমাদের ভাবতে হবে, জাতীয়ভাবে কোনো তথ্যভান্ডার তৈরি করা যায় কি না। এখানে ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য থাকবে তা বলছি না। এ খাতে যে আশঙ্কার বিষয়টি এসেছে, তাকে আর্লি ওয়ার্নিং হিসেবে দেখতে হবে। আশার কথা হচ্ছে, এ বিষয়ে উদে্যাক্তা এবং ভোক্তার সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি।

ফজলুল হক খন্দকার

বাংলাদেশে অনলাইনে সেবাভিত্তিক খাত একটি বিকাশমান খাত। পাশ্চাত্য অর্থনীতিতে এটি বড় একটি খাত। সবাই তাৎক্ষণিক ডেলিভারি পেতে চায়। অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বব্যাপী এই ধরনের সেবার পরিধি বৃদ্ধি করছে। ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়বে। ভোক্তা হিসেবে আমরা অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় পণ্যাদি কিনে থাকি। যা সব সময় ব্যবহৃত হয় না। রিটার্ন পলিসি না থাকায় প্রচুর অপচয় হচ্ছে।

কেবল যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ মিলিয়ন কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ হচ্ছে। অ্যামাজন প্রতিদিন বাজারে ১০ বিলিয়ন ইউনিট সরবরাহ করছে। এর ফলে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে ৪৪ মিলিয়ন টন।

এর পাশাপাশি ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। আমরা এখনো সলিড বর্জ্য নিয়ে কথা বলছি। ই-বর্জ্যের জন্য আইটিইউ কাজ করছে। তারা বলছে, এটি করতে পারলে বছরে রিটার্ন হবে ৬২ বিলিয়ন ইউনিট।  ফ্রেইট, ডেলিভারি ও প্যাকেজিং থেকে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এটি বৈশ্বিক চিত্র।

 বাংলাদেশে এই সেবা খাত এখনো বিকাশমান। এটি আরও বড় হবে।  এখন থেকেই আমাদের পলিসি গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। আমরা কয়েকটি জিনিস করতে পারি। প্রথমত, তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। আমরা জানি না আমাদের কতটুকু কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে—কোন ইন্ডাস্ট্রি কতটুকু করছে।

বেসরকারি খাত এ তথ্যগুলো নিয়ে কাজ করছে৷ তাদের সঙ্গে বিবিএসের কোলাবোরেশন করতে হবে। কারণ, বিবিএস এটি না করলে এ তথ্য আমরা ব্যবহার করতে পারব না।

বিশ্বব্যাপী এসব সমস্যার যে সমাধান হচ্ছে, তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। আমাদের পলিসি ডিজাইন করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে রেগুলেটরি, ইনসেনটিভ ও ট্যাক্স পলিসি। পলিসি শুধু তৈরি করলেই হবে না, এর সঠিক বাস্তবায়ন ও জরুরি। উৎপাদক, সরবরাহকারী, ভোক্তা ও সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা তৈরি করতে হবে। প্যাকেজিং নিয়ে ইউএনডিপি কাজ করতে পারে। এ বিষয়ে গবেষণা হতে পারে যে কীভাবে প্যাকেজিং পরিবেশবন্ধব করতে পারি। তা ছাড়া এ বিষয়ে জড়িত সবার সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা সৃষ্টিতে কাজ করতে  হবে।

ফিরোজ চৌধুরী

খাদ্যের অপচয় রোধ করা খুবই জরুরি। পলিথিন ও প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং ব্যবহার করতে হবে। কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেবে বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

সুপারিশ

  • পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও পরিবেশসচেতন ভোক্তা তৈরিতে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

  • ফুড ডেলিভারিতে পলিথিন বা প্লাস্টিকের বিকল্প খুঁজতে হবে।

  • পুশ ডিমান্ডের বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।

  • খাবার যেন অপচয় না হয়, তা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

  • টেকসই ভোক্তা তৈরিতে এমএফএস ভূমিকা রাখতে পারে।

  • অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরি।

  • বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিংকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

  • অনলাইন কেনাকাটায় রিটার্ন পলিসি শক্তিশালী করা দরকার।

  • প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি বাড়াতে হবে।

  • টেকসই প্যাকেজিং নিয়ে কৌশলগত পরিকল্পনা প্রয়োজন।