খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় করোনার প্রভাব: বহুখাতভিত্তিক নীতি ও কৌশল ব্যবস্থাপনা

সিভিল সোসাইটি অ্যালায়েন্স ফর স্কেলিং আপ নিউট্রিশন (সিএসএ সান) ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় করোনার প্রভাব: বহুখাতভিত্তিক নীতি ও কৌশল ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১০ ডিসেম্বর ২০২০। আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

অংশগ্রহণকারী

কাজী জেবুন্নেছা বেগম

অতিরিক্ত সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; সান কান্ট্রি ফোকাল পয়েন্ট

মো. খলিলুর রহমান

মহাপরিচালক, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ

নাজমা শাহীন

অধ্যাপক, খাদ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এস এম মোস্তাফিজুর রহমান

লাইন ডাইরেক্টর, জাতীয় পুষ্টিসেবা, আইপিএইচএন

আমিনুজ্জামান তালুকদার

কান্ট্রি ডিরেক্টর, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

এবিএম ফিরোজ আহমেদ

লাইভলিহুড অ্যাডভাইজার, সান এফসিডিও

হাসিন জাহান

কান্ট্রি ডিরেকটর, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ

আবুল কালাম আজাদ

হেড অব প্রোগ্রাম, আইসিসিও

মোরশেদা চৌধুরী

সহযোগী পরিচালক, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি, ব্র্যাক

আশেক মাহফুজ

পোর্টফোলিও লিড, এলএসএফএফ, গেইন

বুলবুল ইসলাম

ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, জাতীয় পুষ্টিসেবা

নাজনীন রহমান

নিউট্রিশন লিড, কেয়ার বাংলাদেশ; কো-চেয়ার, সিএসএ ফর সান

আমির হোসেন

পুষ্টি উপদেষ্টা, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড

শেখ শাহেদ রহমান

চিফ অব পার্টি, সূচনা প্রকল্প, সেভ দ্য চিলড্রেন। সেক্রেটারি, সিএসএ ফর সান

সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম

সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

সঞ্চালনা

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

আজকের আলোচনা ক্ষুধা ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিয়ে। করোনাকালে আমরা একটু ঝুঁকির মধ্যে আছি। আমাদের দারিদ্রে্যর হার কমে আসছিল। এই সময়ে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেকের আয় কমে গেছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে বিপুল জনগোষ্ঠী। এ সমস্যার সময়ে আমরা যেন খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারি। কোভিডের কারণে অনেক এলাকায় উৎপাদন, বিতরণ ও বাজারজাতকরণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। এ জায়গায় আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। এর পাশাপাশি শিক্ষা, সুপেয় পানি, পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। এসব বিষয় নিয়েই আজ আলোচনা হবে।

আমিনুজ্জামান তালুকদার

আমিনুজ্জামান তালুকদার

সিভিল সোসাইটি অ্যালায়েন্স ফর স্কেলিং আপ নিউট্রিশন (সিএসএ ফর সান) পুষ্টি অবস্থা উন্নয়নে একটি বৈশ্বিক আন্দোলন। পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নতির জন্য (স্কেলিং আপ নিউট্রিশন) বাংলাদেশে পাঁচটি প্ল্যাটফর্ম আছে। সিএসএ ফর সান তার মধ্যে একটি। বাংলাদেশের আটটি বিভাগে আমাদের দুই শতাধিক নাগরিক সংগঠন আছে। পুষ্টিবিষয়ক লক্ষ্য অর্জনে সিএসএ ফর সান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমরা সমন্বিত ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি। জাতীয় পুষ্টি অ্যাজেন্ডার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিদ্যমান সংগঠনগুলোর সঙ্গে কার্যকরী সংযোগ করা। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ হলো এ সংক্রান্ত সব কর্মকাণ্ডে পরামর্শ প্রদান। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি কর্মপরিকল্পনায় নিয়ে আসা।

এ ছাড়া পুষ্টিসংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি করা, পুষ্টি অবস্থা উন্নতির জন্য নাগরিক সংগঠনগুলো শক্তিশালী করা। এ–সংক্রান্ত অংশীদার ও জনসাধারণের মধ্যে পুষ্টি অবস্থা উন্নয়নে সচেতনতা বৃদ্ধি করা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এগুলো সিএসএ ফর সানের কৌশলগত বিষয়। কোভিডকালেও সিএসএ ফর সান খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ জরুরি। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে ভার্চ্যয়ালি প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। সচেতনতা তৈরির জন্য আমরা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পোস্টার, লিফলেট, মাইকিংসহ বিভিন্ন মিডিয়া ক্যাম্পেইন করি। এ– সংক্রান্ত সরকারি উদ্যোগগুলো ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দিই। এ ছাড়া সচেতনতা তৈরির জন্য আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে ওয়েবিনার মিটিং করেছি।

মোরশেদা চৌধুরী

মোরশেদা চৌধুরী

বিগত কয়েক দশকে আমরা দারিদ্র্য বিমোচনে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছি। খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তায় আমরা যথেষ্ট এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু করোনা অতিমারির জন্য আমাদের এই অগ্রযাত্রা দুভাবে প্রভাবিত হয়েছে। প্রথমত, মার্চ থেকে মে মাসের লকডাউনে সময় অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আরেকটা হলো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের যাঁরা কাজ হারিয়েছে তারা এ ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেননি। বিশেষ করে তাঁঁদের মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টি অনিরাপত্তা।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের একটা যৌথ গবেষণায় এ দুটি বিষয় পরিষ্কারভাবে এসেছে। সেখানে তারা প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের উপরে একটা গবেষণা করেছে। গবেষণায় এসেছে যে শহরের প্রায় ৭৫ শতাংশ ও গ্রামের ৬২ শতাংশ মানুষের আয় কোনো না কোনোভাবে কমেছে। পরবর্তী সময়ে মানুষ বিভিন্নভাবে খাপ খাইয়ে চলছে। তাঁরা এই পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে প্রথমত তাঁদের সঞ্চয় খরচ করছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁরা খাবার খরচ কমিয়ে দিয়েছেন। অর্ধেক পরিবার প্রাণিজ আমিষ ও ফলমূল খাচ্ছে না।

ব্র্যাকের আরেকটা গবেষণায় দেখা গেছে যে ৭৩ শতাংশ নারী ও ৬৭ শতাংশ পুরুষ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাচ্ছে না। অর্থাৎ এ প্রভাবটা নারীদের ওপর বেশি পড়ছে। গড়ে ২৮ শতাংশ পরিবারের খাবারের ওপর করোনার প্রভাব পড়েছে। করোনা আগে এসব পরিবার যে খাবার খেতে, তার পরিমাণ তারা কমিয়ে দিয়েছে। কারণ তাদের খরচ কমাতে হবে। গবেষণায় এসেছে কোনো রকম সহায়তা না পেলে নিম্নবিত্ত পরিবারে তিন দিনের খাবার খরচ থাকে। তারপর কোনো সহায়তা না পেলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। ৭৭ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে করোনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কোভিড আক্রান্ত পরিবারকে স্বল্প সময়ের জন্য খাদ্যসহায়তা দিতে হবে। সরকারিভাবে পুষ্টিকর খাবার স্বল্প মূল্য বিতরণ করা যেতে পারে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা ও ঋণসহায়তা প্রদান করতে হবে। যেন তারা পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন করতে পারে।

আবুল কালাম আজাদ

আবুল কালাম আজাদ

কৃষকদের অধিকার ও জীবনমান উন্নত করতে ১৯৭২ সাল থেকে ইকো (আইসিসিও) কোঅপারেশন বাংলাদেশে কাজ করছে। সিএসএ ফর সানের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে ইকো (আইসিসিও) সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কোভিডের শুরুতে অনেক মানুষ শহর থেকে গ্রামে চলে গেছেন। শহর এলাকার গৃহকর্মী, গার্মেন্টস কর্মী, পরিবহন খাতের লোকজন ও ক্ষুদ্র অনেক ব্যবসায়ী গ্রামে চলে গেছে। তাঁরা একসময় গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন। এখানে তাঁরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশায় জড়িত ছিলেন। ফলে তাঁরা কৃষিকাজের দক্ষতা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই গ্রামে গিয়ে তারা কৃষিকাজে ঠিকমতো ফিরতে পারছেন না। সেই জায়গায় একটু নজর দেওয়া দরকার।

গত আমন ধানের মৌসুমে বন্যা ছিল। সে কারণে খাদ্যের পর্যাপ্ততা, প্রবেশাধিকার ও টেকসই বিষয়ে জোর দেওয়া দরকার। খাদ্যের পর্যাপ্ততা বাড়ানোর জন্য বহুমুখী ও সহনশীল কৃষিব্যবস্থা প্রসার করা দরকার। এটা করার জন্য বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার ফুড সিস্টেমের ওপর জোর দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসা ও আধুনিক প্রযুক্তির ওপর জোর দেওয়া দরকার। গত করোনা সময়ে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত দ্রব্যের ভালো দাম পাননি। ফলে আবার নতুন বিনিয়োগ করে উৎপাদন করতে তাঁদের যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হয়েছে। সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা হয়তো তাঁদের ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এটা কতটুকু পৌঁছেছে, তা নিশ্চিত নয়। সে জন্য ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন থাকা উচিত।

নাজমা শাহীন

নাজমা শাহীন

পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তায় আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছিলাম। ক্ষুধা নির্মূল করে আমাদের লক্ষ্য অর্জনের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। এ সময় করোনা মহামারিতে একটা অদ্ভুত অবস্থা তৈরি হলো। সেটা হলো করোনার শুরুতে কৃষকেরা উৎপাদন করছেন কিন্তু তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছিলেন না। আর বড় শহরগুলোর মানুষ খাদ্য পাচ্ছিলেন না। পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে খাদ্য সরবরাহ ভীষণভাবে ব্যাহত হলো। ফলে প্রথমত প্রান্তিক জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাঁদের আয় কমে যায়। আয় কমে গেলে মানুষ প্রথমেই খাদ্যের পেছনে ব্যয় কমিয়ে দেন। কারণ বাসাবাড়াসহ অন্যান্য খরচ তাঁঁকে দিতেই হবে।

আমাদের জনগোষ্ঠীতে আমরা ভাত বেশি খাই। কার্বোহাইড্রেট অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ক্রনিক ডিজিজের হার মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছিল। এর একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আছে। করোনার সময়ও একটা আপৎকাল। সে জন্য করোনার সময়ে সরকারের কাছে একটা খাদ্য প্যাকেজ প্রস্তাব করেছি। খাবার প্যাকেজের সঙ্গে কিছু নগদ অর্থ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তারা যেন তাজা শাকসবজি, মাছ-মাংস কিনে খেতে পারে। এতে কৃষকেরাও তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। এখন আধুনিকায়নের ফলে অনেক কৃষক সরাসরি তাঁদের পণ্যদ্রব্য অনলাইনে বিক্রি করছে। এ ছাড়া সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় সরকার বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এগুলো স্বল্পমেয়াদি সহায়তা। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কৃষককে প্রণোদনা দেওয়ার বিকল্প নেই।

এ বি এম ফিরোজ আহমেদ

এ বি এম ফিরোজ আহমেদ

কোভিড-১৯ সময়ে পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। করোনার কারণে বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে। করোনায় একদিকে আমরা সবাই স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে আছি। অন্যদিকে আমাদের বিশেষ করে গরিব মানুষের অর্থনীতি ও জীবনমানে প্রভাব পড়ছে। এটা বাংলাদেশের পুষ্টিনিরাপত্তায় সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষকে খাবারের গুণমান ও পরিমাণে আপস করতে হচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় নগদ টাকা ও খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কৃষিনীতির আওতায় সরকার পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কৃষিকে উৎসাহিত করছে। সে জায়গা থেকে পুষ্টিকর কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সরকার এ মুহূর্তে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করছে। আমরা উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন হিসেবে সরকারের সঙ্গে কাজ করছি। সরকারকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করছি। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের একটা বিশাল প্রভাব খাদ্য ও পুষ্টির ওপর পড়ে। এগুলো আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমদের ৩০ শতাংশের বেশি জনসংখ্যা হলো তরুণ এ জায়গাটায় খেয়াল রাখতে হবে। গ্রামীণ ও কৃষি স্থানান্তরের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এটা খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

হাসিন জাহান

হাসিন জাহান

ওয়াটারএইড বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে কাজ করছে। আমরা নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও ভালো হাইজিনের বিষয়টি তুলে ধরি। এর সঙ্গে পুষ্টিনিরাপত্তা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিরাপদ পানি ও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কারণে নানা ধরনের অসুখ হয়। শতকরা ৮০ ভাগ রোগ পানিবাহিত। বিশ্বে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মানুষ স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সাড়ে আট শ মিলিয়নের বেশি মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। ফলে প্রতিবছর ৪০ লাখ মানুষ পানিবাহিত রোগে মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ১০ লাখ। পুষ্টির যেসব নীতি ও পরিকল্পনা হয়, তাতে নিরাপদ পানির বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য আর্থিক বরাদ্দ যেন থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ–সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করতে হবে।

আশেক মাহফুজ

আশেক মাহফুজ

বাংলাদেশে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ১০০টি বড় কোম্পানি এসবিএনের (সান বিজনেস নেটওয়ার্ক) সদস্য। গেইন বাংলাদেশে ১০ বছরের অধিক সময় ধরে কাজ করছে। পুষ্টিকে কীভাবে বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি বা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত করা যায়, সে জন্য আমরা বিভিন্ন সময় মিটিং, সেমিনার ও ওয়ার্কশপ করে থাকি। যেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়িক মডেল শেয়ার করি। এসবিএন সদস্যদের আমরা কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ব্যাংকঋণ পেতে সব সময় সমস্যার সম্মুখীন হয়। সে উদ্ভাবনী ব্যবসায় আমরা আর্থিক সহায়তা দিই। এসবিএনের মাধ্যমে আমরা পাঁচটি সাব ন্যাশনাল কমিটি করেছি। কমিটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি ১৫০ উদ্যোক্তাকে পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা এবং বিনিয়োগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রশিক্ষণটিতে কীভাবে পুষ্টিকর খাবার তৈরি করবে ও স্বাস্থ্যবিধি মানবে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। সম্প্রতি আমরা একটা বড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি, যেখানে পোশাকশিল্প কর্মীদের জন্য পুষ্টিকর, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য চিহ্নিত করা হবে। এর মাধ্যমে আমরা বেশ কিছু ব্যবসা চালু করতে পেরেছি। যেমন যারা বাটারবান খায় তাদের জন্য পিনাট বাটারবান চালু করেছি। এ কার্যক্রম চলছে। সরকার, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি সংগঠনসহ সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে পারব।

আমির হোসেন

আমির হোসেন

বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ থেকে আমরা জনগণের পুষ্টি মানোন্নয়নে নানা রকম কাজ করে থাকি। সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ থেকে একটা কোভিড প্রজেকশন অ্যানালাইসিস প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, কোভিডের কারণে খাদ্যনিরাপত্তায় কতটা প্রভাব পড়তে পারে। আমরা যদি পুষ্টি পরিস্থিতির তথ্য পেতে চাই, তাহলে সেখান থেকে পরিষ্কারভাবে ধারণা পাব। আমরা মনে করি, কোভিড–পরবর্তী সময়ে বহুখাতভিত্তিক পদক্ষেপগুলো আরও জোরদার করা উচিত। বিশেষ করে পুষ্টি পরিস্থিতিকে সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসা দরকার।

বুলবুল ইসলাম

বুলবুল ইসলাম

আমাদের গত ১০ বছরের অর্জন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। পুষ্টি নির্দেশকগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) দিকে এগোচ্ছি। এর মধ্যে কোভিড এসে বিশ্বব্যাপী সব ওলটপালট করে দিয়েছে। স্কেলিং আপ নিউট্রিশনের (সান) পক্ষ থেকে কোভিড শুরু হওয়ার পরপরই বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে ছয়টি প্ল্যাটফর্ম আছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা বিভিন্ন চলমান কর্মসূচি কীভাবে আরও ভালো করা যায় ও কোভিড–সংক্রান্ত নতুন কী কর্মসূচি নেওয়া যায়, তা নিয়ে কাজ করেছি। পুষ্টির সঙ্গে খাদ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সে জন্য আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদিত পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোভিড পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা পরিকল্পনা করা গেলে খুব ভালো হবে। এ পরিকল্পনায় পুষ্টির অধীনে কী কী থাকবে, খাদ্যনিরাপত্তায় কী কী থাকবে, তা নিয়ে আসা গেলে চ্যালেঞ্জগুলো সহজে মোকাবিলা করা যাবে। হতদরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের জন্য সরকার ইতিমধ্যে একটা প্রণোদনার ব্যবস্থা করছে। তাদের উপার্জনের ব্যবস্থা করা গেলে আরও বেশি ভালো হবে।

আমাদের বেশির ভাগ পুষ্টিসেবা কর্মসূচিতে গর্ভবতী নারী ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু নিয়ে কাজ করি। কিন্তু এখানে ষাটোর্ধ্ব বা বয়স্কদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ রাখা প্রয়োজন। যেসব জায়গায় পৌঁছানো কঠিন, সেখানে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

নাজনীন রহমান

নাজনীন রহমান

করোনাকালে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমেছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তার ওপর। লকডাউন চলাকালে বিভিন্ন জরিপে এসেছে যে প্রায় ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠী বলেছে তাদের দৈনন্দিন আয়ে বিঘ্ন ঘটেছে। ফলে তাদের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ক্রয়ে তারা অসমর্থ হচ্ছেন। একটি জরিপে এসেছে, শহরে ৭৮ ভাগ গর্ভবতী নারী খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে এক বেলা খেয়েছেন।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) রেফারেন্স অনুযায়ী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু পুষ্টি পরিস্থিতির ক্ষেত্রে আমরা যে অবস্থায় আছি, তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে যাব। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে মা ও শিশুকে লক্ষ্য করে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাড়ানো দরকার। সরকার ক্ষুদ্র চাষিদের অনেক সহায়তা করছেন। সে জায়গায় আরেকটু মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কমিউনিটিতে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রথম সারির স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছে মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে সরকারের নীতি, নির্দেশনা ও পরামর্শ পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করছি।

ফিলিপাইন শহরে তরুণদের যুক্ত করে অনলাইনে শিখেয়েছে কীভাবে টবে, ছাদে ও বাড়ির সামনের আঙিনা ব্যবহার করে সবজির চাহিদা মেটাতে হয়। এ উদাহরণগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারি।

শেখ শাহেদ রহমান

শেখ শাহেদ রহমান

আমাদের সকল উন্নয়ন কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কিছুটা স্থবির। সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, পরামর্শ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারে এগিয়ে যাচ্ছি। আগামী দুই বছর অতিদরিদ্র মানুষের ওপর কোভিড মহামারির প্রভাব চলমান থাকবে। সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী অর্থবছরে যেন সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বেশি রাখেন। বহুখাত কর্মসূচির (মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম) জন্য জাতীয় পুষ্টিসেবা ও জাতীয় পুষ্টি পরিষদ যৌথভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখানে বরাদ্দ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে যে পরিমাণ বরাদ্দ এবং বিভাগ, জেলা ও উপজেলার পরিস্থিতি বিবেচনা সাপেক্ষে কোথায় কী পরিমাণ সহায়তা দিতে হবে, সে বিষয়টি যেন আগামী অর্থবছরে নীতিনির্ধারকেরা মাথায় রাখেন।

বহুখাত কর্মসূচির সব পর্যায়ে একটা সমন্বিত সংযোগ দরকার। উন্নয়ন সহযোগীরা সবদিক থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করবে। কোভিডকালে নগদ সহায়তার সময় অনেক রকম অনিয়মের মধ্যেও বাংলাদেশের মানুষ চেষ্টা করেছে যেন সঠিক লোকের কাছে পৌঁছানো যায়। সেখানে সিভিল সোসাইটি অ্যালায়েন্সের একটা বড় ভূমিকা আছে। পাঁচটি বিভাগে ২০০ এনজিও সরাসরি সিভিল সোসাইটি অ্যালায়েন্সের সঙ্গে কাজ করে। সুযোগ দিলে আমরা আপনাদের সঙ্গে যৌথভাবে আরও কাজ করতে চাই। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় উদ্বেগের বিষয় হলো করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বাড়ছে। যদি অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে কম। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ প্রচারণায় সিভিল সোসাইটি অ্যালায়েন্সের নেটওয়ার্ককে আরও সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা যায়।

খলিলুর রহমান

খলিলুর রহমান

করোনা বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় স্থায়িত্ব লাভ করলে পুষ্টির ওপর এর প্রভাব কী হবে, তা গত মে মাসেই আমরা ভেবেছি। এ জন্য জাতীয় পুষ্টি পরিষদ একটা ইমপ্যাক্ট অ্যানালাইসিস ও নীতিমালা নির্দেশিকা তৈরি করে। যেখানে এসেছে দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের আয় কমে গেছে। এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর তুলনায় শহরের জনগোষ্ঠী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সময় বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি পায় প্রায় ৭ থেকে ৪৬ শতাংশ। ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্যের পেছনে তাদের ব্যয় কমিয়ে দেয়। শহরের বস্তিবাসীর ৪৬ শতাংশ পরিবার ও গ্রামের ১৫ শতাংশ পরিবার তাদের তিন বেলার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনে। কোভিডের কারণে গর্ভবতী নারীর ৪০ থেকে ৮৪ শতাংশ হাসপাতালের সেবা নিতে অক্ষম হন। পুষ্টিসেবার ওপর এর একটা বড় প্রভাব পড়ে।

২০২০ সালে ১১৮টি দেশের ওপর ল্যানসেট একটা গবেষণা করে। সেখানে বলা হয়েছে, কোভিডের কারণে শিশুদের খর্বকায়তা (স্ট্যান্টিং) ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। কোভিডের প্রভাবে ব্যাপক জনগোষ্ঠী খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সহায়তায় একটা ফুড বাস্কেট ও পুষ্টিবার্তা প্রণয়ন করে। ব্যাপকহারে এ পুষ্টিবার্তা প্রচারণা শুরু করি। যেন এ সংকট মোকাবিলা করতে পারি। কোভিডের প্রভাব থেকে উত্তরণ একক কোনো বিভাগের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য সরকার ও বেসরকারি সবার মধ্যে একটা সমন্বয় প্রয়োজন। এ আলোচনা জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।

এস এম মোস্তাফিজুর রহমান

এস এম মোস্তাফিজুর রহমান

এক দশক ধরে আমাদের ভালো অগ্রগতি হচ্ছিল। ২২টি মন্ত্রণালয়, নাগরিক সমাজ, সরকারি, বেসরকারি ও উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ে বাংলাদেশে অবস্থা এত ভালো যাচ্ছিল যে বিভিন্ন দেশে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। বাংলাদেশের জিডিপি এখনও কমেনি। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে আমরা করোনা নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার সময় আমাদের আতঙ্কটা কমে গেছে। শারীরিক দূরত্বের বিষয়গুলো আমরা শিখে গেছি। যদিও মানি একটু কম। ঢাকা শহর থেকে অনেক মানুষ গ্রামে স্থানান্তরিত হয়েছে। আমাদের ১২৩টি সামাজিক সুরক্ষা খাত আছে। খাবার বাসায় থাকলেও পুষ্টি সব সময় নিশ্চিত হয় না। অর্থাৎ খাদ্যনিরাপত্তা পুষ্টিনিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় না। শুধু পুষ্টিকর খাবার যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে হাত ধোয়াসহ অন্যান্য নিয়ম মানতে হবে। করোনাকালে হাত ধোয়ার বিষয়ে সবাই যথেষ্ট সচেতন হয়েছে। মধ্যবিত্তরা দুই মাস সঞ্চয় ভেঙে চলার পর আর কিছু থাকে না। তারা কারও কাছে চাইতে লজ্জা পায়। সে জন্য আমাদের দ্রুত কর্মক্ষম ও গতিশীল হতে হবে। বিদেশ থেকে অনেক কর্মী দেশে এসে বেকার হয়ে আছেন। কিছুদিন আগে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছি। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আগামী দু-তিন বছর যাবে না। তাই শুধু সমালোচনা না করে সবাইকে সহযোগিতার দৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে হবে। এর মাঝখানে বাংলাদেশে তিনটির বেশি বন্যা হয়েছে। সব মিলিয়ে এসব থেকে উত্তরণের জন্য ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা প্রয়োজন।

কাজী জেবুন্নেছা বেগম

কাজী জেবুন্নেছা বেগম

খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়টি মানবজীবনের শুরু থেকে আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। খাদ্য আমাদের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি। জীবনযাপনের জন্য খাদ্য অপরিহার্য। কিন্তু সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও কর্মক্ষম থাকার জন্য প্রয়োজন পুষ্টি। স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন। খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তায় গতিশীলতা আনতে তিনি স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করছিলেন। তিনিই প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া খুবই জরুরি।

স্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়টি কোনো একক বিষয় নয়। এটি একটি বহুমাত্রিক বিষয়। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে জনগণের জন্য পুষ্টির কথা বললেই হবে না, পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য এবং শারীরিক, মানসিক ও কর্মদক্ষতা উন্নয়নে পুষ্টির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায়ও পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ঘোষণা দিয়েছেন, প্রতিটি ইঞ্চিকে ফসলি জমি হিসেবে পরিণত করতে হবে। সামান্য জায়গাও যেন পতিত না পড়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য হলো কেউ যেন অনাহারে না থাকে। যেন তাদের পুষ্টির অভাব না হয়। আলোচনায় এসেছে ১৬ শতাংশ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে শহরমুখী মানুষের আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ অভাব তাড়নায় মানুষ খাদ্যের জোগান দিতেই ব্যস্ত। তারা পুষ্টির বিষয়টি গুরুত্ব দিতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে সরকারিভাবে আমরা চেষ্টা করেছি খাদ্যের যোগান যেন ঠিক থাকে। ইতিমধ্যে হতদরিদ্র মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় এনে প্রণোদনা প্রদানসহ অন্যান্য সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষি ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ও সবার জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

ফিরোজ চৌধুরী

আজ খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীসহ সবাই মিলে কাজ করলে খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিকল্প নেই। এ জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করায় প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

সুপারিশ

  • খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তার পাশাপাশি নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা দরকার

  • সিএসএ ফর সানের সঙ্গে যুক্ত থাকা সবগ সংগঠনকে খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তায় কাজে লাগানো যেতে পারে

  • খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি সব উদ্যোগের মধ্যে কার্যকরী সমন্বয় করা প্রয়োজন

  • খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির অবস্থা বোঝার জন্য এটাকে সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসা জরুরি

  • পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় প্রান্তিক মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবার প্যাকেজ রাখা দরকার

  • পুষ্টিকর ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক গণসচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করা প্রয়োজন

  • খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল স্বাভাবিক রাখতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন