গলা ও বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধ ও প্রতিকার: দরকার সচেতনতা

মাহমুদ হাসান,এ কে আজাদ খান, ফারুক আহমেদ ও আনিসুল হক।

বিশ্ব জার্ড সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে ‘গলা ও বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধ ও প্রতিকার: দরকার সচেতনতা’ শীর্ষক এক গোলটেবিলের আয়োজন করে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে সহযোগী ছিল এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস ও প্রথম আলো। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিতক হলো

ডা. শারমিন তাহমিনা খান

রেজিস্ট্রার, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

আমাদের শারীরিক সমস্যার মধ্যে বুক ও গলা জ্বালাপোড়া একটি অন্যতম বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। এ সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে জিইআরডি (GERD) বা জার্ডকে দায়ী করা হয়। বুক জ্বালাপোড়ার কারণে বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। জার্ড সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতিবছর ১৭ থেকে ২৩ নভেম্বর গলা ও বুক জ্বালাপোড়া (জার্ড) সচেতনতা সপ্তাহ পালন করা হয়ে থাকে।

ডা. ফারুক আহমেদ

অধ্যাপক ও পরিচালক, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রধান লক্ষ্য ছিল পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের সেবা প্রদান ও পাশাপাশি এ সেবার জনবল উন্নয়ন। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল প্রতিরোধযোগ্য এ রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। গলা ও বুক জ্বালাপোড়া একটি সাধারণ সমস্যা। আমরা সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময় এ রোগে ভুগেছি। আমাদের খাবার গ্রহণের পদ্ধতিটি একমুখী। খাবার খাদ্যনালি হয়ে অন্ত্রে যায়। কোনো কারণে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে তখন খাবার নিচের দিকে না গিয়ে ওপরে উঠে আসে। তখন নানা উপসর্গ দেখা দেয়। এর অন্যতম লক্ষণ হলো গলা ও বুক জ্বালাপোড়া করা। এর সঙ্গে বুকব্যথা এবং খাদ্য গ্রহণ ও চলাচলে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। খাদ্যনালির ক্যানসারও হতে পারে। বাংলাদেশে এর চিকিৎসা সহজলভ্য। খাবার মেনুতে গলা ও বুক জ্বালাপোড়া করে—এমন খাবার পরিহার ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার হচ্ছে জার্ড প্রতিরোধের উপায়।

ডা. মাসুদুর রহমান

সহযোগী অধ্যাপক, মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ, যা জার্ড নামে বেশি পরিচিত। বৈজ্ঞানিক তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি ১০০ জনের ১৫ জন এ রোগে ভুগে থাকেন। ইউরোপ ও আমেরিকায় এ রোগের প্রকোপ বেশি। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই রোগের ব্যাপকতা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ভারতের বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, অঞ্চলভেদে এই রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতি ১০০ জনে ৮ থেকে ২৯ জন। আমাদের দেশেও বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্ড অথবা বুক জ্বালাপোড়ার প্রকোপ প্রতি ১০০ জনে ৬ থেকে ২৫ জনে পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা ও মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার তিনটি গ্রামে সাড়ে তিন হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফল আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রতি ১০০ জনে প্রায় ২৫ জন বুক জ্বালাপোড়ায় ভুগে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার বুক জ্বালাপোড়া হয়, এমন লোকের সংখ্যা প্রতি ১০০ জনে ১৪ জন। জার্ড (জিইআরডি) ঝুঁকির বিভিন্ন কারণ আছে। এর মধ্যে ওজন বেড়ে যাওয়া, নিয়মিত ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, কিছু খাবার যেমন চা-কফি, তৈলাক্ত খাবার, কোমলপানীয়, মসলাযুক্ত খাবার এ রোগের ঝুঁকির অন্যতম কারণ। গত চার দশকে বাংলাদেশের বাড়তি ওজন ও মেদবহুল লোকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, ১৯৭৫ সালে বেশি ওজন অথবা মোটা লোকের সংখ্যার হার ছিল প্রতি ১০০ জনে ৫ জন। এখন এ সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে আমাদের দেশে জার্ড অথবা বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্ব জার্ড সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারী

ডা. তৌহিদুল করিম মজুমদার

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

গ্যাস্ট্রো বলতে আমরা পাকস্থলীকে বুঝে থাকি। ইসোফেগাস হচ্ছে খাদ্যনালি। আমাদের শরীরের নিজস্ব কিছু ডিফেন্স মেকানিজম প্রক্রিয়া আছে, যার মাধ্যমে সাধারণত পাকস্থলীর তীব্র দাহ্য পদার্থ ওপরে উঠতে পারে না। এটাকে অ্যান্টি–রিফ্লাক্স মেকানিজম বলা হয়। যদি কখনো কোনো কারণে এ অ্যান্টি–রিফ্লাক্স মেকানিজম কাজ করতে অপারগ হয়, তখন সে তার মূল কাজ পাকস্থলীর অ্যাসিডকে ওপরে যেতে বাধা দিতে পারে না।

এর ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড ওপরে উঠে আসে। এই অ্যাসিড ওপরে ওঠার জন্য খাদ্যনালিতে অ্যাসিডের দহন এসে লাগে। তার ফলে উপসর্গ দেখা দেয়। এটা হচ্ছে মূল কারণ। ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। এই রোগের ডায়াগনোসিস করার জন্য বিশেষ কোনো যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না। আমরা উপসর্গ ধরে এ রোগ শনাক্ত করতে পারব।

এই রোগের চিকিৎসা না নিলে দীর্ঘ মেয়াদে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। মূল জটিলতা হলো খাদ্যনালিতে ঘা বা ক্ষত হতে পারে, যেটাকে আমরা আলসার বলি। দীর্ঘ মেয়াদে এটা খাদ্যনালির নিচের অংশে একধরনের ক্ষতের সৃষ্টি করে, যা থেকে ক্যানসারও হতে পারে।

ডা. মো. গোলাম কিবরিয়া

যুগ্ম পরিচালক, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

যেকোনো জনগোষ্ঠীর প্রায় এক–পঞ্চমাংশ বুকজ্বালা রোগে ভুগে থাকে। সংগত কারণেই সবার মধ্যে এর পরিত্রাণের জন্য নিজ থেকে ওষুধ খেয়ে কোনোভাবে ম্যানেজ করার একটা প্রবণতা কাজ করে। কোনো দেশের একটা জনগোষ্ঠী নিজে থেকেই এর ওষুধ খেয়ে থাকে। সে জন্য কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, এটা জানা জরুরি। খাদ্যনালি বুকের ভেতর কিছু সংবেদনশীল অঙ্গের কাছাকাছি অবস্থান করে। এর মধ্যে ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড রয়েছে। এ জায়গার স্নায়বিক সংযুক্তি একই রকম হওয়ার কারণে কিছু উপদ্রব বিভিন্ন অঙ্গের উপদ্রবের সঙ্গে ওভারল্যাপ করে। তাই ভালোভাবে জানা দরকার যে জার্ড নাকি অন্য কিছু। এর কিছু আদর্শ উপসর্গ আছে। যেমন বুকে জ্বালা করা। এ জ্বালা অনেক সময় পাকস্থলী থেকে শুরু হয়ে বুকের ওপরের দিকে উঠে আসে। এ ছাড়া কিছু অপ্রচলিত উপসর্গ আছে। যেমন কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, বুকে চাপ চাপ মনে হওয়া। তবে সেটা জার্ড না হয়ে আবার হার্টের রোগও হতে পারে। এ জন্য এর যথাযথ রোগ নির্ণয় প্রয়োজন।

এ জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখবেন জার্ড না অন্য রোগ। বয়স্কদের ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক বা হার্টের কিছু টেস্ট করে নেওয়া প্রয়োজন হয়। আর যঁাদের দীর্ঘদিন ওষুধ গ্রহণ করে কাজ হচ্ছে না, তঁাদের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। পরীক্ষার মধ্যে কমন হচ্ছে এন্ডোসকপি। এর মাধ্যমে খাদ্যনালি ও পাকস্থলী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়।

ডা. মীর জাকিব হোসেন

সহযোগী অধ্যাপক, মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

এ রোগ যদি হয়েই যায়, তার চিকিৎসা কীভাবে করতে পারি? প্রতিরোধ করতে পারলেই সময়, খরচ ও জটিলতা বেঁচে যায়। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে পশ্চিমা বিশ্বে এর প্রভাব বেশি। শহরাঞ্চলেও এর প্রভাব বেশি। এতেই বোঝা যাচ্ছে যে আমাদের জীবনযাত্রা, আচরণগত ব্যাপার বা খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে এটার একটা যোগাযোগ আছে। চর্বিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ধূমপান, মদ্যপান চা-কফি ইত্যাদি খাবার বুক ও গলা জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাহলে আমরা কি এসব খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেব? বিষয়টা আসলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হলো, যার যেটাতে সমস্যা হচ্ছে, সেটা বন্ধ করতে হবে। তবে কিছু বিষয় প্রমাণিত। সেগুলো হলো ধূমপান, মদ্যপান এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এগুলো একদমই বন্ধ করতে হবে। অন্য বিষয়গুলো নির্দিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে।

জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মধ্যে স্থূলতা একটা বড় বিষয়। এটা কমাতে পারলে জার্ড অনেকাংশে প্রতিরোধ করতে পারি। একসঙ্গে পাকস্থলীর ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি খেয়ে ফেললে খাবার ওপরের দিকে উঠে আসে। এ অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। একবারে বেশি খাব না। খাবার পর অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে শোব না। এরপরও এ সমস্যায় ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. মুজাহিদুল ইসলাম

ডিরেক্টর, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস

আমাদের দেশে এ রোগের জন্য একটি ইনস্টিটিউট আছে। যেখানে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। অন্যদিকে এই চিকিৎসা দেওয়ার জন্য দেশে বিশ্বমানের ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরগুলোই মূলত গলা ও বুক জ্বালাপোড়ায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যেও ওমিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল উল্লেখযোগ্য। চিকিৎসাব্যবস্থায় ইসোমিপ্রাজল পিপিআই বহুলাংশে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কোনো একটা ট্যাবলেট দীর্ঘদিন ব্যবহার হলে তখন দেখা গেল এটার ইফেক্ট আছে। একটা সিঙ্গেল ট্যাবলেটের চারদিকে কোটিং থাকে। দীর্ঘদিন ব্যবহারে দেখা গেল এতে কিছু ড্রাগ লস হয়। ফলে যে উপকার পাওয়ার কথা, তা পাওয়া যায় না। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ওষুধ হচ্ছে মাল্টি ইউনিট প্যালেট সিস্টেম (মাপস)। অসংখ্য মাইক্রোপ্যালেটস দিয়ে তৈরি হয়। এখানে ৪০০ থেকে ৬০০ মাইক্রোপ্যালেটস ব্যবহার করায় সারফেস এরিয়া বেড়ে যায়। মাইক্রোপ্যালেটস হওয়ায় ড্রাগ লস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তেমনি দ্রুত অন্ত্রে পৌঁছায়। চিকিৎসকের পরামর্শে এটা ব্যবহার করা যায়।

আনিসুল হক

লেখক, সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে বুক জ্বালাপোড়ায় ভুগছি। বুয়েটে ভর্তি হয়েই অ্যান্টাসিড জাতীয় ট্যাবলেট চুষে খাওয়া শুরু করি। কিছুদিনের মধ্যেই সেখান থেকে সরে গিয়ে যে ক্যাপসুল কিনতে পাওয়া যায়, সেটা খাওয়া শুরু করেছি। আলোচনায় এসেছে ডাক্তাররা দুই মাসের মতো খেতে পরামর্শ দেন। দীর্ঘদিন ধরে খেলে কিডনির রোগ হয়। আমি যে এটা খাই, সেটা ভেবে নিজেকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লাম। খুব সহজ সমাধান আপনারা বললেন। নিজের ওজন কমিয়ে, খাওয়াদাওয়ার যত্ন করা, তেলজাতীয় জিনিস না খাওয়া বা খুব কম খাওয়া এবং অল্প করে বারবার খাওয়া। এসব করেই যদি এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়, তাহলে এত দিন ধরে কষ্ট করে এবং পয়সা দিয়ে ওষুধ খাচ্ছি কেন? তারপরও রোগ থাকবে। রোগের প্রতিরোধ যেমন করতে হবে, রোগ হলে নিরাময়ও লাগবে। আমরা সবাই নিজের চিকিৎসা নিজে করি। ডাক্তারের কাছে সরাসরি যাই না। কিন্তু ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে ইচ্ছেমতো খাই। এটা বাংলাদেশে একটা প্রধান সমস্যা। আমাদের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো এখন অকার্যকর হতে শুরু করেছে। সেই বিষয়েও একটা আন্দোলন শুরু করা দরকার, যেন স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রাথমিক সচেতনতাগুলো আমরা নিজেরা জানি এবং অন্যদের জানাতে পারি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করতে সরকারকে বা এনজিওকে উদ্যোগ নিতে হবে।

ড. এ কে আজাদ খান

সভাপতি, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি

বর্তমানে বুক জ্বালাপোড়া একটি সাধারণ সমস্যা। এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন সচেতনতা নেই। সে জন্য এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা আমাদের দায়িত্ব। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া ওষুধ হয় না। ওষুধ না খাওয়ার প্রতিক্রিয়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চেয়ে বেশি। এ রোগের ওষুধের তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটা ব্যবহারে উপশম হয় বেশি। এসব বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

ডা. মাহমুদ হাসান

সভাপতি, বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটি

ঊনবিংশ শতাব্দীতে চিকিৎসকেরা যেকোনো রোগের চিকিৎসা করতেন। প্রযুক্তি ও জ্ঞান বাড়ায় একজনের পক্ষে সব ধরনের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। আজকের দিনে ব্রেন সার্জারি বা হার্ট সার্জারি করতে একজন সাধারণ ডাক্তার হওয়ার পরও অন্তত ১০ বছর প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এন্ডোসকপি আবিষ্কারের ফলে পরিপাকতন্ত্রের ভেতর দেখা সম্ভব হওয়ায় এ শাখা অনেক প্রসারিত হলো। ফলে একজন সাধারণ ডাক্তারের পক্ষে এ শাখার সবকিছু করা সম্ভব হয় না। ১৯৯৮ সালে এ জন্য বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দেশে ২০০ জনের মতো গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি আছেন। ছয় কোটি মানুষের দেশ যুক্তরাজ্যে প্রায় তিন হাজার গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি আছেন। উন্নত পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে আমাদের প্রায় ৯ হাজার গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট দরকার। এখন দেশের প্রতিটি বিভাগে এ জন্য কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। আমরা চাই এটা আরও প্রসারিত হোক।

সঞ্চালক: ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

আজকের গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।