জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য ও প্রতিবন্ধী নারীর অবস্থান: কোভিড–১৯ প্রেক্ষাপট

লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড, উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডব্লিউডিডিএফ), সিবিএম ইন্টারন্যাশনাল, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য ও প্রতিবন্ধী নারীর অবস্থান: কোভিড–১৯ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২০। এ আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল ইনক্লুসিভ ফিউচার, ইউকে এইড। আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

মুরালি পদ্মানাভান, ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুশন অ্যাডভাইজার, লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড

মুরালি পদ্মানাভান

কোভিডকালে প্রতিবন্ধিতার কারণে নারী-পুরুষ উভয়েই কীভাবে আক্রান্ত হয়েছেন, তা জানা প্রয়োজন। এ জন্য লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড কাজ করেছে। এখানে জেন্ডার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষের আক্রান্তের অবস্থা জেন্ডারের কারণে অবশ্যই ভিন্ন। এ সময়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এমনিতেই ঝুঁকিতে রয়েছেন। আর তার সঙ্গে জেন্ডারবৈশিষ্ট্য ঝুঁকির মাত্রা আরও অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করেছি এ সময়ে জেন্ডার বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিশেষত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সহায়তাপ্রাপ্তি, নিরাপত্তা, যোগাযোগ, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর জীবন কী ধরনের ও কতটুকু ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এ ছাড়া নারীদের মধ্যে আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকা প্রতিবন্ধী নারীরা কীভাবে আইনি সহায়তা পেয়েছেন, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই কীভাবে কাজ করেছেন, সহায়তা পেতে ও দিতে গিয়ে উভয়েই কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। পাশাপাশি এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারসহ প্রতিবন্ধিতা–বিষয়ক ও মূলধারার সংস্থাগুলোতে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, তারা কীভাবে কাজ করছে ও এ বিষয়ে তাদের পরামর্শ জানার চেষ্টা করেছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা সবার সঙ্গে সহভাগিতার ফলে প্রতিবন্ধী মানুষদের জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য রোধে সহায়ক হবে বলে মনে করছি।

তাজিন হোসেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, সিবিএম ইন্টারন্যাশনাল

তাজিন হোসেন

সবচেয়ে ঝুঁকিপর্ণ অবস্থায় আছেন প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েশিশুরা। দেখা গেছে, প্রতিবন্ধী নারীরা প্রায়ই তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন। প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা পাওয়ার প্রবেশগম্য উপযোগী পরিবেশ নেই। প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েশিশুদের মধ্যে সহিংসতার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা দুই থেকে চার গুণ। বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে ডব্লিউডিডিএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭ জন প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ১৬৭ জন প্রতিবন্ধী নারী তাঁদের পরিবারের সদস‌্যদের দ্বারা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

আশরাফুন্নাহার মিষ্টি, নির্বাহী পরিচালক, উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন

আশরাফুন্নাহার মিষ্টি

ব্রিটিশ সরকারের ইউকেএইডের আর্থিক সহায়তায় লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড, ডব্লিউডিডিএফ এবং ডব্লিউডিডিএফ ছয় মাসব্যাপী একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড এবং ডব্লিউডিডিএফ, সিডিডির সার্বিক সহযোগিতা এবং স্থানীয় ডিপিও কর্মীদের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা, পাবনা ও বরিশাল জেলায় প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করে। এ সভাগুলোতে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, আইন সহায়তা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, এনজিও, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ডিপিও সদস্যসহ মোট ১৬১ জন অংশগ্রহণ করেন। সচেতনতামূলক এসব সভা থেকে যেসব প্রত্যাশা ও সুপারিশ উঠে আসে, তার উল্লেখযোগ্য কিছু হলো, প্রথমত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ সনদ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষাবিষয়ক আইন ২০১৩-এর সঠিক বাস্তবায়ন করা দরকার। বয়স, লিঙ্গ, প্রতিবন্ধিতার মাত্রা ও ধরন অনুযায়ী হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, যেকোনো দুর্যোগকালীন ও জরুরি অবস্থায় নারী ও প্রতিবন্ধী নারীদের সহায়তায় আলাদা স্কিমের ব্যবস্থা করা দরকার। যেমন রেশন কার্ড, হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করা ও দুর্যোগ–পরবর্তী সময়ে তাঁদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত, জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য ও নারীর প্রতি সহিংসতা সম্পর্কে ব্যাপকভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার। যেমন ডিপিও, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা এবং এ কার্যক্রমগুলোতে প্রতিবন্ধী নারীদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া জরুরি সহায়তার হটলাইন নম্বর ও নির্যাতিত নারীদের সহায়তা পুনর্বাসনকেন্দ্রগুলো সম্পর্কে জানানো। চতুর্থত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার এবং লিঙ্গসমতা বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে রেফারেল সিস্টেম আরও জোরদার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব করা দরকার। পঞ্চমত, আদালত ও আইনি সহায়তা গ্রহণ এবং সব সেবায় প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা। সরকারের খরচে এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলা ইশারা ভাষার ব্যবস্থা রাখা। ষষ্ঠত, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি সহিংসতার তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা এবং সহিংসতা নিরসনে দরকার হলে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। সপ্তমত, প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত হলেও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বৈষম্য প্রতিরোধে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প ও অধিদপ্তরকে সক্রিয় করতে হবে। কেন্দ্রীয় থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিবন্ধী নারীর সহায়ক সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে প্রতিবন্ধী অধিকারবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আলোকে।

নুসরাত আইরীন,ন্যাশনাল ডিজ্যাবিলিটি ইনক্লুশন অফিসার, লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড

নুসরাত আইরীন

অনেক প্রতিবন্ধী নারীরই জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য বা নারীর প্রতি সহিংসতা সম্পর্কে ধারণা নেই। মানসিকভাবে হেয় করা বা মৌলিক চাহিদা ক্ষুন্ন করাটা যে এক ধরনের বৈষম্য সেটাও অনেকেই বোঝেন না। কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার হলে কোথা থেকে আইনি সহায়তা নিতে হবে তাঁরা সেটাও বুঝে উঠতে পারেন না।

খুশী কবির,সমন্বয়কারী, নিজেরা করি

খুশী কবির

প্রতিবন্ধিতা শারীরিক হতে পারে, আবার চিন্তার ক্ষেত্রেও হতে পারে। বিষয়টি আমলে আনতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার সবার জন্য অভিন্ন। এ অধিকারগুলো প্রত্যেকে যেন পায়, সেটা নিশ্চিত করা দরকার। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো তাদের অধিকারের জন্য যথেষ্ট কাজ করছে। শুধু সংশ্লিষ্ট সংস্থা এটা নিয়ে কাজ করবে, আমরা করব না—এটা হতে পারে না। কোভিডকালে নারীরা অনেক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী নারীরা আরও বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সে জন্য আমাদের সবাইকে এক হতে হবে।

জাহান আরা হেনা, সাধারণ সম্পাদক, ডব্লিউডিডিএফ

জাহান আরা হেনা

আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হলো প্রতিবন্ধী নারী। সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সবার জন্য বিভিন্ন ত্রাণ বা অন্যান্য সহায়তা দেয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারীরা এসব সুযোগ-সুবিধা সহজে নিতে পারেন না। স্বাস্থ্যসেবা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভাতা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাধারণ মানুষের জন্য ভিজিএফ যে কার্ডের ব্যবস্থা আছে, তা প্রতিবন্ধী নারীরা পাচ্ছেন না। কতজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও কতজন প্রতিবন্ধী মেয়েশিশু আছে, সে তথ্য না থাকায় প্রতিবন্ধী নারীরা সেভাবে সহায়তা পান না। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিশেষ তালিকা তৈরি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার অত্যন্ত প্রয়োজন।

নাসিমা আক্তার,প্রেসিডেন্ট, প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ

নাসিমা আক্তার, প্রেসিডেন্ট, প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ

নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বাংলাদেশে আইনি সহায়তা খুব কম। যখন একজন প্রতিবন্ধী নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, আমাদের আইনজীবীরা প্রতিবন্ধী নারী সম্পর্কে তেমন সচেতন নন। নির্যাতিত প্রতিবন্ধী নারীদের বেশির ভাগই বাক্, শ্রবণ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। অনেক আইনজীবী ইশারা ভাষা জানেন না। প্রতিবন্ধী নারীর জন্য কর্মপরিবেশ খুব দরকার। বাংলাদেশ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে প্রতিবন্ধী নারীদের কথা বলা আছে। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় এ নীতি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিলে প্রতিবন্ধী নারীরা অনেক বেশি উপকৃত হতেন।

তানিয়া হক,অধ্যাপক, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তানিয়া হক

আলোচনায় এসেছে, প্রতিবন্ধী নারীরা বিভিন্ন সেবা–সংকটের শিকার হচ্ছে। তাঁরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কোভিডকালে বিভিন্ন সংকট জুড়ে বসেছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রথম পরিবারকে তৈরি করতে হবে। পরিবারের ভূমিকাটা প্রথম। সমাজে আমরা নারী-পুরুষ সবাই মানুষ। আমাদের প্রয়োজন ও চাহিদা আলাদা। সে প্রয়োজন ও চাহিদাকে নির্দেশ করতে চাইলে গবেষণায় হাত দিতে হবে। প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা যাচাই-বাছাই না করে টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা খুব কঠিন।

মুহাম্মদ মুশফিকুল ওয়ারা,কান্ট্রি ডিরেক্টর, সিবিএম ইন্টারন্যাশনাল

মুহাম্মদ মুশফিকুল ওয়ারা

প্রতিবন্ধিতা নিয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষা, রাজনীতি, কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে সব খাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার ওপর জোর দেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে নেওয়া উচিত।

এ এইচ এম নোমান খান,নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি)

এ এইচ এম নোমান খান

অটিজম ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়ার কাজটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মায়েদেরই করতে দেখা যায়। সম্প্রতি সাভারে এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দেখাশোনা করেন, এমন ৫০০ ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেখা গেছে, সেখানে ৯৫ শতাংশই মা। আর বাকিরা ভাই, দাদা বা অন্য কেউ। ওই মায়েরা একদিকে নিজের সমস্ত জীবন দিয়ে প্রতিবন্ধী সন্তানের যত্ন নেন। অন্যদিকে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে অন্যের দোষারোপের মধ্য দিয়ে তাঁদের দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পাশাপাশি কেয়ারগিভারদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

আবুল হোসেন, প্রকল্প পরিচালক, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম।

আবুল হোসেন

পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওপর সারা দেশে একটি জরিপ করা হয়। সেখানে তারা একটা সিদ্ধান্তে আসেন যে আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী। সে হিসাবে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতি সবার একটা ইতিবাচক মনোভাব থাকা দরকার। সে জায়গায় আমাদের আরও বেশি সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য আমরা হাসপাতাল, ক্লিনিক, সেবাকেন্দ্র, ওষুধ, চিকিৎসকের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করি, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সে রকম ব্যয় করি না। এখন এ বিষয়ে আমাদের আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত।

আমরা গত নভেম্বর মাস থেকে বিনা মূল্যে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছি। এ কোর্সে ২০টি সেশন হয়। এ কোর্সে পারিবারিক পরিবেশে অন্যজনের সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন, ব্যক্তিপর্যায়ে কীভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন ইত্যাদি বিষয় শেখানো হয়। অনেক সময় প্রতিবন্ধী নারীরা বাইরে আসতে পারেন না। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরা হয়তো অনেক ক্ষেত্রে ঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারেন না। এ জন্য ঘরে বসে শেখার জন্য আমরা একটা ভার্চ্যুয়াল ট্রেনিং শুরু করেছি। কোভিড ও কোভিড–পরবর্তী পরিস্থিতিতে যদি বাসা থেকে তাঁর বের হওয়ার দরকার না হয়, বাসায় বসে যদি তিনি উপার্জন করতে পারেন, তাহলে দুটো উপকার হবে। প্রথমত, তিনি নিজে মূলধারায় চলে আসবেন ও আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, পরিবারে সহায়তা করতে পারলে পরিবার তাঁকে আর বোঝা মনে করবে না। তাঁর প্রতি পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গিও ইতিবাচক হবে। সরকারের পক্ষে এককভাবে সামাজিক সুরক্ষা খাত, প্রণোদনার মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন। সরকারের সঙ্গে সঙ্গে আমদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।

এই আয়োজনে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্টারপ্রেটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আরাফাত সুলতানা লতা। সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী