নির্মাণ ব্যবসায় এগোচ্ছেন নারী

‘নির্মাণ ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনায় নারী’ শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সেভেন রিংস্ সিমেন্ট ও প্রথম আলো।

আত্মবিশ্বাস থাকলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে সমাধান লুকিয়ে থাকে। গতকাল বুধবার সেভেন রিংস্ সিমেন্ট ও প্রথম আলো আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন নির্মাণ ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনায় যুক্ত নারীরা।

৮ মার্চ নারী দিবস সামনে রেখে ‘নির্মাণ ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনায় নারী’ শিরোনামে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে নারীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, পরিবার থেকে নারীকে কর্মপরিবেশে লড়াই করার জন্য সমর্থন দিতে হবে প্রথমে। এতে পদে পদে যেসব সংকট দেখা দেবে, সেখান থেকে সমাধান খুঁজে বের করার শক্তি পাবেন নারী। প্রতিটি বাধাই নারীকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে।

বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বার্জারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সেভেন রিংস্ সিমেন্টের পরিচালক তাহ্‌মিনা আহমেদ। এ ছাড়া আলোচক হিসেবে ছিলেন বিএসআরএমের পরিচালক হাওড়া তেহেসীন জোহের, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী নাজনীন আরা কেয়া, আর্কিটেকচারাল ডিজাইন কনসালট্যান্টের প্রধান স্থপতি নাসিমা ইসলাম, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান শায়কা শান্তা অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শায়কা ইমাম শান্তা এবং নির্মাণসামগ্রী বিপণন প্রতিষ্ঠান জয়দেবপুরের দোলা এন্টারপ্রাইজের সালমা বেগম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বার্জারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী বলেন, এখন অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা বুঝতে পারছেন, স্বামীর একার উপার্জন যথেষ্ট নয়। তাঁকেও উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। এখনকার মেয়েদের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, একটু সুযোগ পেলে তাঁরা এগিয়ে আসতে পারবেন। নারীদের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, নারীরা ব্যবসা বা ব্যবস্থাপনায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যের মতামত নেন, আলোচনা করেন। তাই কোনো পরিস্থিতিতে হাল ছাড়া যাবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেভেন রিংস্ সিমেন্টের পরিচালক তাহ্্মিনা আহমেদ বলেন, সৃজনশীলতা, ব্যক্তিত্ব আর ঘর থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়ে একজন নারী নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারবেন। সংকটে না পড়লে আস্থা তৈরি হয় না। তাই হতাশ না হয়ে যতবার চ্যালেঞ্জ আসবে, ততবার শক্ত হতে হবে। নির্মাণ ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনায় টিকে থাকতে হলে কাজের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে।

বিএসআরএমের পরিচালক হাওড়া তেহেসীন জোহের বলেন, আত্মবিশ্বাস থাকলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে সমাধান লুকিয়ে থাকে। করোনাকালে নির্মাণ খাতে নারীদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল গ্রহণযোগ্যতা। নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা তুলে অনেক নারীকে ঘর থেকে বের হতে দিতে পরিবারগুলো বাধা দিয়েছিল। এ ধরনের বাধার মুখে পুরুষকে পড়তে হয়নি। তিনি বলেন, নারীরা বহু ধরনের কাজে পারদর্শী। করোনাকালে গৃহজীবন ও কর্মজীবনে অভূতপূর্ব ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছেন এ খাতের নারীরা।

নির্মাণ খাতে ঠিকাদারি কাজে নারীদের অংশগ্রহণ কম বলে জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী নাজনীন আরা কেয়া। তিনি বলেন, নির্মাণশিল্পে মাত্র ১৩ শতাংশ নারী। ২০০১ সালের আগে রেলওয়েতে নারী প্রকৌশলী ছিলেন না। বলা হয়ে থাকে, ঠিকাদারি ও সরবরাহ কাজে নারীরা শারীরিকভাবে তত সক্ষম নন। আসলে এটা ঠিক নয়। শারীরিকভাবে কষ্টসাধ্য সব কাজেই নারীরা অংশ নিচ্ছেন। এ খাতে নারীদের ১০-১৫ শতাংশ বেতনবৈষম্য রয়েছে।

সূচনা বক্তব্যে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোতেও নারীর প্রতি নানা বৈষম্য রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে একটা পর্যায়ে গিয়ে নারীর আর উন্নতি হয় না। মাথার ওপরে অদৃশ্য এক ছাদে তাঁরা আটকে যান।

আর্কিটেকচারাল ডিজাইন কনসালট্যান্টের প্রধান স্থপতি নাসিমা ইসলাম বলেন, এ ধরনের কারিগরি বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর পেশায় এসে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় নারীকে। একদিকে বিয়ে, মা হওয়া, অন্যদিকে অফিসে প্রতিযোগিতা। অফিস ভাবে, মেয়েদের দৌড়াদৌড়ির কাজে দেওয়া যাবে না। নিজেকে প্রমাণ করাই নারীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত যতজন পেশায় প্রবেশ করেন, ততজন আর টিকে থাকেন না।

নির্মাণ প্রতিষ্ঠান শায়কা শান্তা অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শায়কা ইমাম শান্তা বলেন, নির্মাণ খাতে ব্যবসার ক্ষেত্রে নারীদের সাহস, পেশার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কাজের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে।

নির্মাণসামগ্রী বিপণন প্রতিষ্ঠান জয়দেবপুরের দোলা এন্টারপ্রাইজের সালমা বেগম জানান, সকাল আটটা থেকে তিনি দোকানে বসেন, দুপুরে তিন ঘণ্টার বিরতি নিয়ে কাজ করেন রাত নয়টা পর্যন্ত। তাঁর মতে, ব্যবসা পরিচালনা করার মতো সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হলে অনেক নারীই পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন।

অনুষ্ঠানে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সেভেন রিংস্ সিমেন্টের উপমহাব্যবস্থাপক (ব্র্যান্ড ও কমিউনিকেশন) আতিক আকবর ৫০০ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ে নারী রয়েছে। তবে সেই সব প্রতিষ্ঠানে সাইটে গিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৩ শতাংশ। এই বিশ্ব বাস্তবতা থেকে নির্মাণ ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনায় দেশের নারীদের অবস্থান সহজেই অনুমান করা যায়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।