প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা: বিদ্যমান অবস্থা ও করণীয়

১ অক্টোবর ২০২০ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় এবং প্রথম আলো, এনজিডিও, এনসিডিডব্লিউ ও এডিডি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে ‘প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা: বিদ্যমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়। গোলটেবিল বৈঠকের নির্বাচিত অংশ এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

গোলটেবিলে অংশগ্রহণকারী

রাশেদ খান মেনন

সংসদ সদস্য; চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

শামসুল আলম

সদস্য (সিনিয়র সচিব), সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন

মো. শফিকুল ইসলাম

কান্ট্রি ডিরেক্টর, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

এ এইচ এম নোমান খান

নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি)

লায়লা জেসমিন বানু

প্রোগ্রাম ম্যানেজার, গভর্ন্যান্স অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ

নাফিসুর রহমান

প্রতিবন্ধিতা ও উন্নয়নবিষয়ক পরামর্শক

মো. সাইদুল হক

সভাপতি, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম, নির্বাহী পরিচালক, লাইন এডুকেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (বারডো)

আশরাফুন্নাহার মিষ্টি

নির্বাহী পরিচালক, উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডব্লিউডিডিএফ)

নাসিমা আক্তার

প্রেসিডেন্ট, প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ (এনসিডিডব্লিউ)।

সালমা মাহবুব

সাধারণ সম্পাদক, প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদ (পিএনএসপি)।

অম্রিতা রোজারিও

কান্ট্রি ডিরেক্টর, সাইটসেভার্স ইন্টারন্যাশনাল।

মো. রেজাউল করিম সিদ্দিকী

ডিপিও এনগেজমেন্ট অফিসার, ইনক্লুশন ওয়ার্কস প্রকল্প, ইন্টারন্যাশনাল ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যালায়েন্স (আইডিএ)।

মোল্লা অ্যালবার্ট

নির্বাহী পরিচালক, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।

আরাফাত সুলতানা লতা

ইন্টারপ্রেটার, ইশারা ভাষা

সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম

সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

সঞ্চালনা

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

প্রতিবন্ধিতার জন্য কেউ দায়ী নয়। জন্মের সময় কোনো জিনগত সমস্যার কারণে একজন প্রতিবন্ধী হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন। তাঁরা এই সমাজেরই মানুষ। তাঁরা আমাদের খুবই প্রিয়। তাঁদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনার মধ্যে তা বিস্তারিত আছে। কোন প্রতিষ্ঠান তাঁদের অধিকারে কাজ করবে, কী করবে, কবে করবে—সবই পরিকল্পনার মধ্যে আছে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে কী করতে হবে, সবই আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে চাই। এগুলো যে খুব বেশি কঠিন, তা–ও নয়। একজন হয়তো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, শ্রবণপ্রতিবন্ধী; তিনিও বিশেষায়িত মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে মতবিনিময় করতে পারেন। প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আজ আলোচনা হবে।

মো. শফিকুল ইসলাম

মো. শফিকুল ইসলাম

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক আইন এবং তা বাস্তবায়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে আজকের আলোচনা। ২০১৮ সালে এই কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে কতকগুলো লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ২০১৮ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় এনজিডিও এবং এনসিডিডব্লিউকে সঙ্গে নিয়ে প্রমোটিং রিপ্রেজেন্টেশন অ্যান্ড পার্টিসিপেশন অব পারসন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ইন লোকাল গভর্ন্যান্স প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনগুলো কীভাবে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে, তা বাস্তবায়নে প্রকল্পটি কাজ করছে। এই প্রকল্পের আওতায় আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইনে যেসব জেলা, উপজেলা ও শহর কমিটি করা হয়েছে, সেগুলোকে কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়। এসব কমিটির মাধ্যমে জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কেন্দ্র থেকে শুরু করে কীভাবে তৃণমূল পর্যায়ে পর্যন্ত সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন করতে পারি, সেসব বিষয় নিয়েই মূলত এই প্রকল্পের একটি বড় অংশ কাজ করেছে। সেটাই আজকের আলোচনার লক্ষ্য।

নাফিসুর রহমান

নাফিসুর রহমান

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনাটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এবং আইনের বিধি, ২০১৫-এর আলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে। আইনের সব ধারা ও তফসিলে বর্ণিত বিষয়গুলো কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ, প্রতিবন্ধিতাসংক্রান্ত আঞ্চলিক নীতিমালা, টেকসই উন্নয় লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশের সংবিধান এবং দেশের বিদ্যমান অন্যান্য আইন ও নীতিমালার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে।

২০১৮ সালে মন্ত্রিপরিষদের সভায় এটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে। কাজগুলো স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে যথাক্রমে ২০১৮-২০ ও ২৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে ভাগ করা হয়েছে। কখন কোনটি গ্রহণ করতে হবে বা কোন কাজের কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, তা যেন বুঝতে অসুবিধা না হয়।

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কতকগুলো ক্ষেত্র যেমন উদ্দেশ্য, সূত্র, বিদ্যমান অবস্থা, কার্যক্রম, নির্দেশক, সময়সীমা, সম্পদ, কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি দিক বিবেচনা করতে হবে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় অনেক বিষয় আছে। এগুলো হলো কমিটি গঠন, কমিটির সভা, দায়িত্ব ও কার্যাবলি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক অংশগ্রহণ ও পরিবার গঠন, প্রবেশগম্যতা, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, চলন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝুঁকিপূর্ণ ও জরুরি মানবিক অবস্থা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, বিনোদন ও পর্যটন–সচেতনতা সৃষ্টি, ভাষা ও যোগাযোগ, সংগঠন ও স্বসহায়ক সংগঠন, শনাক্তকরণ, গবেষণা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

২০১৮ সালে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হলেও এর বাস্তবায়নে অগ্রগতি অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। দুটি জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো প্রতিফলন নেই। অষ্টম জাতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রস্তুতি চলছে। এ সুযোগ গুরুত্বের সঙ্গে কাজে লাগানো প্রয়োজন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে আরও তৎপর হতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে সভা আরও নিয়মিত হতে হবে। আইন অনুযায়ী জেলা, উপজেলা ও শহর কমিটির নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। সেগুলোর প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য অন্তত যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি সচিবালয় গঠন করতে হবে। তবে সচিবালয়কে শক্তিশালী করতে হবে। জনবল ও বাজেট দিতে হবে। প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে সত্যিকার অর্থে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি আসবে।

আশরাফুন্নাহার মিষ্টি

আশরাফুন্নাহার মিষ্টি

আইনে বলা আছে, জেলা উপজেলা ও শহর পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কমিটি থাকবে। ২০১৮-১৯ সালে আমরা দেখেছি, কমিটিগুলো ঠিকভাবে গঠিত হয়নি। কর্মপরিকল্পনায় বলা আছে, স্থানীয় সরকারের প্রশাসন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিবন্ধী নারীরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন। কোভিডের সময় দেখেছি, সরকারি–বেসরকারি এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে তঁারা সহায়তা পাননি।

সাধারণত যেসব কেন্দ্র থেকে সহায়তা দেওয়া হয়, সেখানে গিয়ে সহায়তা আনার মতো সামর্থ্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নেই। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে যেন তদারক করা হয়, কমিটিগুলো কাজ করছে কি না। স্থানীয় পর্যায়ে যেসব কমিটি কার্যকর নেই, সেগুলোকে কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী কার্ড দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। এখানে সমন্বয়হীনতা কাজ করে। ২০২০ সালে এসে বলতে হচ্ছে, আমার জন্য একটি প্রবেশগম্য বাস নেই, সিআরপি ছাড়া কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই।

এ এইচ এম নোমান খান

এ এইচ এম নোমান খান

জনাব রাশেদ খান মেনন মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। এখন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন। তিনি আগেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে কাজ করেছেন, এখনো করবেন। সিনিয়র সচিব শামসুল আলম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয় নিয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অনেক কাজ করেছেন। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। আমরা তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। এখন কীভাবে এসব বাস্তবায়ন করা যাবে, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবন্ধী ্ব্যক্তিদের অধিকারের জন্য যে আইনি কাঠামো, সেটা আমাদের হাতে আছে। আইনটি সংশোধিত হয়ে অধিকার আইনে পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমাদের দাবি ছিল, আইন আছে কিন্তু আইনের সঙ্গে কর্মপরিকল্পনা নেই। ২০১৮ সালে কর্মপরিকল্পনা তৈরি হলো। ২০০১ সালে প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন তৈরি হয়েছে। তখন জাতীয় নির্বাহী ও সমন্বয় কমিটি ছিল। জেলা কমিটি ছিল। ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইনে এসব অনেক বিস্তৃত করা হয়েছে।

সারা দেশে ১ হাজার ২০০ কমিটি আছে। এদের দেখাশোনার জন্য দুটি কমিটির ওপর দায়িত্ব বর্তায়। একটা হলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় সমন্বয় কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কাউন্সিল। আমি জাতীয় নির্বাহী কাউন্সিলের সঙ্গে জড়িত। তাদের কাজের সম্পর্কেও ধারণা আছে। আরও তিনটি আইন আছে। ২০১৮ সালে কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। শুধু সরকারি নয়, অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থাকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো, এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে।কিন্তু সমস্যা হলো, এটা নিয়ে যেখানেই কথা বলা হোক না কেন, তঁারা এ কর্মপরিকল্পনা জানেন না। প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব জাতীয় সমন্বয় পরিষদের। তাদের আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।

মো. সাইদুল হক

মো. সাইদুল হক

আমরা প্রতিবন্ধী মানুষ। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। শুধু কোভিড নয়, প্রতিবন্ধী মানুষেরা সব সময়ই পিছিয়ে আছে। এই পিছিয়ে থাকার জন্য আমরা আইন চেয়েছিলাম। আইন পেয়েছি। বিধিমালা, কর্মপরিকল্পনা—সবই পেয়েছি। তারপরও দেখতে পাচ্ছি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। জাতীয় সমন্বয় পরিষদের বছরে ন্যূনতম দুটি সভা হওয়ার কথা। কিন্তু ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৪টি সভা হওয়া দরকার ছিল। সম্ভবত দুটি সভা হয়েছে। যদি কমিটি কার্যকর হয়, তাহলে প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন বাস্তবায়িত হবে। আইন বাস্তবায়িত না হওয়ার একটা প্রধান কারণ হলো, এখানে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃক্ততা নেই।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কাজ করার অনেক সংগঠন তৈরি হয়েছে। এসব সংগঠন যেন সরকারের সহযোগিতা পায়। সরকারের তদারক ও গবেষণা বাড়াতে হবে। কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কী কাজ করতে পারেন, এর কোনো গবেষণা আমাদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নেই। সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেননের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন একটি গবেষণা সেল হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য যেন আলাদা অধিদপ্তর করা হয়। তাহলে কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়িত হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম আছে ৫৪টি, এগুলোর মধ্যে প্রতিবন্ধিতা হলো একটি। আমি মনে করি, প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক কাজ করতে হলে আলাদা মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিভাগ প্রয়োজন।

শামসুল আলম

শামসুল আলম

আলোচনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যথাসময়ে হচ্ছে। এখন আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। আগামী অক্টোবরে এটি শেষ হবে বলে আশা করছি। তাই আলোচনাটা আমার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ১ জুন ২০১৫ সালে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল গ্রহণ করেছে। তখন থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি মূল আলোচনায় এসেছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলে আমরা বলেছিলাম, দেশে যে ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হোন না কেন, তাঁরা বিশেষ সুবিধার দাবিদার। মানবিক ও বৈষয়িক কারণে তাঁদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয়। তাঁদের চিকিৎসা, সুরক্ষা এবং অনেকের একজন সহযোগীর প্রয়োজন হয়। যথাযথ মূল্যায়ন করে সরকার এসব বিষয় গ্রহণ করেছে।

সরকার এখন মোট ১৮ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সহায়তা দিচ্ছে। তাঁদের মধ্যে ১ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শিক্ষা ভাতা পাচ্ছেন। সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা ৫০০ থেকে বেড়ে ৭৫০ টাকা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চার ধরনের শিক্ষা উপবৃত্তি আছে। প্রাথমিক পর্যায় একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা পান। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৮৫০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৯০০ টাকা এবং উচ্চতর শিক্ষায় প্রতি মাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা দেওয়া হয়।

মানবিক বিবেচনায় সরকার সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি প্রতিপালন করেছে। ক্রমান্বয়ে এর বিস্তৃতি বাড়ানো হচ্ছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

পেনশন কার্যক্রম বাদ দিলে সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় হলো দেশজ আয়ের ১ দশমিক ২ শতাংশ। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছি।

সামগ্রিক সামাজিক সুরক্ষা বাবদ গত বাজেটে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা, এর আগের বছর ছিল ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এই কোভিডকালেও সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

১০০টি অনগ্রসর উপজেলার সব বয়স্ক ও বিধবাকে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা দেওয়া হবে। কোভিডকালে যাঁরা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মচ্যুত হয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে ২ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। এটাও সামাজিক সুরক্ষার অন্যতম কর্মসূচি।

সর্বশেষ বলতে চাই, যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখেন। তাঁদের জন্য ক্রমান্বয়ে ভাতা বাড়ানো হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সামাজিক সুরক্ষার কৌশলপত্রটি ২০১৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতে স্বেচ্ছামূলক পেনশনের কথা বলেছি।

সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমার কথা বলেছি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণভাবে এসেছে। সেটা আপনারা দেখে মতামত জানাতে পারেন। আজকের আলোচনার পরামর্শ পেলে সেগুলোও আমরা বিবেচনায় নেব।

রাশেদ খান মেনন

রাশেদ খান মেনন

আজকের মূল আলোচনা প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন। আমরা পরিকল্পনা করি। বাস্তবায়ন করি না। গ্রামে একটা কথা বলে যে পরি উড়ে যায়, কল্পনা থেকে যায়। আমাদের অবস্থাও হয়েছে তাই। ২০১৩ সালে বর্তমান সরকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইন তৈরি করেছে। একটা হলো প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন, আরেকটা হলো এনডিডি ট্রাস্ট আইন। পাশের দেশগুলোতে এ ধরনের আইন নেই। আমাদের রাজনৈতিক যে চিন্তা, সেটা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পর্কে খুব পরিষ্কার। আইনে বলা আছে, এটা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় কমিটিসহ জেলা-উপজেলায় কমিটি হবে।

২০১৩ সালে আইন হওয়ার পর এর বিধি তৈরি হলো। আমার মন্ত্রিত্বের শেষ দিকে এসে জাতীয় কমিটির মিটিং করি। যাঁরা জাতীয় কমিটির সদস্য, তঁারা প্রায় সবাই এ মিটিংয়ে এসেছিলেন।

নাফিসুর রহমান জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক অসংগতির কথা বলেছেন। জেলায় ডিসি (ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার) উপজেলায় ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু তাঁদের এত কাজ যে আমার মনে হয়নি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কাজ করার সময় আছে। সুতরাং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা কত, সেটাও কিন্তু পরিষ্কার নয়। আমি একটা জরিপ করার চেষ্টা করেছিলাম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, পরিসংখ্যান ব্যুরো ও সমাজসেবা অধিদপ্তর—এই তিনটা সংস্থার জরিপের হিসাব আছে। এই জরিপের মধ্যে কোনো মিল নেই। পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছে, প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ৯ শতাংশের বেশি। কিন্তু সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, তাঁদের সংখ্যা খুবই কম। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংজ্ঞা নিয়েও বিতর্ক আছে। আমি চশমা পরি, এটাও প্রতিবন্ধিতা কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু আমাদের এখানে যাঁরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তাঁদের কিন্তু চোখে দেখতে পাই। কিন্তু তাঁদের জন্য তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কমিটিগুলো হয়তো নামে আছে, কিন্তু তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না। কাজ করার জন্য যে তহবিল দরকার, সেটাও নেই।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিমের কথা বলেছিলেন, সেটা এখনো চালু হয়নি। আমি মনে করি, সেটা চালু করা দরকার। তাহলে দেশের সব বয়স্ক ও দরিদ্র সমান সেবার আওতায় আসবে।

করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। তাঁরা সমাজের কোথায় আছেন। আমি বলব, তাঁরা প্রায় কোথাও নেই। আমি মাননীয় সচিবদের চিঠি দিয়ে বলেছি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি যেন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।

আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হলো প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তর করা। জাতীয় কমিটি কার্যকর করা। জেলা-উপজেলা কমিটিকে কার্যকর করার জন্য তহবিল দেওয়া। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক আমলাতান্ত্রিক ভাবনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি যেন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।

মোল্লা অ্যালবার্ট

মোল্লা অ্যালবার্ট

প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইনের সাত বছর হলো। এর বাস্তবায়ন কবে হবে? আমার প্রশ্ন হলো, প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা যারা বাস্তবায়ন করবে, তারা কি জানে যে এমন একটি পরিকল্পনা আছে? জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে, তা না হলে কখনো এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না। এ জন্য পরিপত্র ও নির্দেশনা জারি করতে হবে। কর্মপরিকল্পনা কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটা নির্ণয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

সরকার বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বাস্তবায়নে কী কী করেছে, এর জন্য একটি প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জমা দিতে হয়। যেহেতু সরকার ইউএনসিআরপিডিতে স্বাক্ষর করেছে। সঠিক সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিবেদন যাচ্ছে না। ইউএনসিআরপিডিতে উল্লেখ আছে, প্রতিবেদন প্রণয়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। ইউএনসিআরপিডিতে বলা আছে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং মেকানিজম তৈরি করতে হবে। সেটি কি আছে? আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যদি আমরা সুনাম ধরে রাখতে চাই, তাহলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সরকারকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে।

নাসিমা আক্তার

নাসিমা আক্তার

জেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কমিটি সম্পর্কে জানতে হবে। কমিটিতে তাঁদের অংশগ্রহণ ও মতামত নিশ্চিত করতে হবে। কমিটি থেকে অংশগ্রহণের তারিখ তাদের জানাতে হবে। মিটিংগুলো সাধারণত ভবনের দোতলা-তিনতলায় হয়ে থাকে, সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওঠার মতো কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। জেলা পর্যায়ে মিটিং করার জন্য বাজেট বরাদ্দ দরকার। আবার মিটিং হচ্ছে কি না, এর কোনো তদারকি নেই। সরকারের লক্ষ্য, প্রত্যেক মানুষকে উন্নয়নের মূল স্রোতোধারায় নিয়ে আসা। সে জন্য যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বাদ পড়ে যান, তাহলে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জন সম্ভব হবে না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩–এর ব্যাপক প্রচারণা দরকার। এটা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সালমা মাহবুব

সালমা মাহবুব

সিআরপিডির চেতনা হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সব কার্যক্রমে যুক্ত করা। এ চেতনা ধারণ করেই বাংলাদেশ সরকার সিআরপিডিতে অনুস্বাক্ষর করে। আমাদের লক্ষ্য প্রতিবন্ধিতা নয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। কর্মপরিকল্পনাও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য। আইনে নারীদের বিষয়টি কম এসেছে। প্রথম কথা হচ্ছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদার চোখে দেখতে হবে। বাজেটের বেশির ভাগ অর্থ ব্যয় হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। আবার সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত হওয়ার কথা। সেটা কিন্তু হয়নি। প্রতিবছর অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ৫০ টাকা করে বাড়ে। এবার ভাতা বাড়ানো হয়নি। তবে ভাতার আওতা বাড়ানো হয়েছে।

অসচ্ছল সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ভাতা দিতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপবৃত্তির ভাতা বাড়াতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদা বাড়াতে এবং ক্ষমতায়ন করতে চাই কি না।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাঁর অভিযোগ–অনুযোগ করার জায়গা পাচ্ছেন না। আমাদের, শিক্ষা, চাকরি, ক্ষমতায়ন, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রণালয় মনোযোগ দিতে পারছে না। এ জন্য আলাদা অধিদপ্তরের কথা বলছি। এর মাধ্যমে আমাদের প্রয়োজনের কথা মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করতে পারব।

অম্রিতা রোজারিও

অম্রিতা রোজারিও

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৃণমূল পর্যন্ত সবাইকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। এ কাজে যেন প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের ব্যবহার করা হয়। প্রতি ১০ বছরে একবার আদমশুমারি হয়। ২০২১ সালে আদমশুমারি হবে। তাই এবার যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা জানতে না পারি, তাহলে আমরা ১০ বছর পিছিয়ে যাব।

তৃণমূল পর্যায়ে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিবন্ধিত হননি। ফলে তাঁরা সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা চাই, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তথ্যভান্ডার তৈরি ও হালনাগাদ করা হোক। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক দরকার। তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে সঠিকভাবে শিখছে কি না, তার তদারক থাকা দরকার। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সমাজকল্যাণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে জাতীয় পরিকল্পনায় বর্ণিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে। জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন তদারকির ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

মো. রেজাউল করিম সিদ্দিকী

মো. রেজাউল করিম সিদ্দিকী

আমাদের মূল সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। তা না হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে পারব না। ২০০৮ সালে িসআরপিডি (ইউএন কমিটি অন দ্য রাইটস অব পারসন্স উইথ ডিজঅ্যাবিলিটি) হওয়ার পর বাংলাদেশের ওপর একটা অধিকারভিত্তিক আইনের চাপ ছিল। এ জন্য ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন হলো। আইনের ৩১ ও ৩৬ ধারা দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৩১ ধারার মাধ্যমে তাঁরা নিবন্ধিত হবেন। ৩৬ ধারার মাধ্যমে তাঁরা সব ধরনের বৈষম্য ও অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাবেন। আইনটা পাসের সময় বলা হলো, ৩১ ও ৩৬ ধারা ছাড়া পুরোটা কার্যকর হবে। ২০১৫ সালে এটা নিয়ে রিট হলো। রিটের পর হলো বিধিমালা। বিধিমালার পর হলো প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা। বাংলাদেশে কি আর কোনো আইন আছে যে আইন পাসের পর পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয় জাতীয় কর্মপরিকল্পনার জন্য? এখন বড় প্রশ্ন হলো, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই কি না।

লায়লা জেসমিন বানু

লায়লা জেসমিন বানু

২০১৮ সালে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অগ্রগতি ধীর। অনেকেই বলেছেন, বাজেট খুব জরুরি। যত পরিকল্পনাই হোক, বাজেট না থাকলে বাস্তবায়িত হবে না। একটা আশার খবর হলো, প্রতিবন্ধী ভাতার বিস্তৃতি বাড়ানো হয়েছে।

জাতীয় ও তৃণমূল পর্যায়ে সঠিক তথ্য দরকার। সঠিক তথ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে। প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষ জনবল দরকার। হয়তো সেটা আছে। প্রশিক্ষিত জনবল ও সচেতনতা দরকার। জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক প্রশিক্ষণ দরকার। ডিপিও (ডিজঅ্যাবল পিপলস অর্গানাইজেশন) এবং নাগরিক সমাজের আরও বেশি ক্ষমতায়ন হতে হবে। ডিপিওরা সব পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যা তুলে ধরবেন। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় এটা বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাশেদ খান মেনন

প্রত্যেকের আলোচনার মধ্যেই সামনে চলার যে লক্ষ্য, সেটা বেরিয়ে এসেছে। আমার মন্ত্রিত্বের সময় তাঁদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। এখানে যে প্রশ্নগুলো এসেছে, সেগুলো নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করব। কমিটিগুলোকে কীভাবে সচল করা যায়, সংসদীয় কমিটিতে সে বিষয়ে আলোচনার চেষ্টা করব। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাজ শুধু সমাজের কল্যাণ নয়, সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টিও তাদের দেখতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। টেলিভিশনের মাধ্যমে ইশারা ভাষার প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।

মো. শফিকুল ইসলাম

এতক্ষণের আলোচিত জাতীয় কর্মপরিকল্পনাটি অনেক ব্যাপক, এটি সামনে আনা দরকার। জাতীয় সমন্বয় ও জাতীয় নির্বাহী কমিটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ দিকনির্দেশনা দিতে পারে। অর্থ বরাদ্দ না থাকলে কোনো কমিটিই কাজ করতে পারবে না। আশার কথা হলো, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় একে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিও বলেছেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে সম্পদের প্রয়োজন। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় জরুরি।

২০২১ সালে আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের একটি সঠিক পরিসংখ্যান পাব আশা করি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা কমিটিগুলো কী করছে, এর একটা তদারক ও পরিবীক্ষণ থাকা দরকার। সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেননকে অনুরোধ করব, তিনি যেন এই জাতীয় পরিকল্পনার বিষয়টি সংসদে আলোচনার ব্যবস্থা করেন। আজকের আলোচনার পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে আশা করি।

ফিরোজ চৌধুরী

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, তাহলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।

আজকের ভার্চু্যয়াল গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

আলোচনায় সুপারিশ

  • প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনকে আলাদা অধিদপ্তর করা হোক

  • প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় সংসদে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন

  • জেলা, উপজেলা ও শহর কমিটির নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দেওয়া জরুরি

  • কমিটিগুলো কাজ করছে িক না, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তা তদারক করতে হবে

  • প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় সমন্বয় পরিষদের কার্যকর ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন

  • কোন ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষ কী কাজ করতে পারেন, এ জন্য কোনো গবেষণা সেল নেই। জরুরি ভিত্তিতে একটা গবেষণা সেল করতে হবে

  • সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধার আওতায় আনতে হবে

  • কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক পরিসংখ্যান জরুরি