প্রয়োজন প্রযুক্তিনির্ভর যুবসমাজ

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুবসমাজকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। যুবকদের জন্য বিশেষ কিছু করতে হবে।

মোস্তাফা জব্বার, দুলাল কৃষ্ণ সাহা, ফাহমিদা খাতুন, লাফিফা জামাল

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে যত দ্রুত সম্ভব যুবসমাজকে প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে। যুবকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ এখন যে জনসংখ্যার বোনাসকাল (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) ভোগ করছে, এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হলে প্রযুক্তির সুবিধা ছড়িয়ে দিতে হবে গ্রাম পর্যন্ত।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলো ও অক্সফাম আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা: যুবদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার ও জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ’ শিরোনামের সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বৈঠকে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) দুলাল কৃষ্ণ সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। গোলটেবিলে সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অক্সফাম বাংলাদেশের এমপাওয়ার ইয়ুথ ফর ওয়ার্কের প্রকল্প সমন্বয়কারী তোসিবা কাশেম এবং সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছি এখন থেকে ১২ বছর আগে। আমাদের পরে এই স্লোগান দিয়েছে ব্রিটেন, ভারত, মালদ্বীপ ও পাকিস্তান। গত ১২ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে। ২০২১ সালে এসে মানুষ এখন বুঝতে পারছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ কাকে বলে।’ তিনি বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক মানুষকে মানবসম্পদে রূপ দেওয়া আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের।’

এনএসডিএর নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, বাংলাদেশ এখন জনসংখ্যার বোনাসকাল ভোগ করছে। দেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সী সংখ্যা অনেক বেশি। এদের প্রযুক্তির ওপর জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ফ্রিল্যান্স তৈরি হয়েছে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছে, সেটি বাস্তবায়নে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।

অধ্যাপক লাফিফা জামাল বলেন, দেশে কারিগরি শিক্ষা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষা নিয়ে স্বপ্ন দেখে না। তাদের স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। যখন সেখানে পড়ার সুযোগ পায় না, তখন কারিগরি শিক্ষায় পড়তে আসে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক থাকা জরুরি। যাতে করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাহিদার আলোকে শিক্ষার্থীকে সেভাবে গড়ে তুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরের ধাপে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ওই শিক্ষার্থীকে তাদের মতো করে গড়ে তুলবে। কিন্তু এই সম্পর্কের ঘাটতি আছে।’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘করোনার কারণে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে আরও গতি এসেছে। ব্যক্তিগত ও অফিসের কাজে প্রযুক্তিনির্ভরতা বেড়েছে কয়েক গুণ। আমাদের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু সেই অনুপাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তরুণ কতজন, বেকার কতজন, কোথায় কত শতাংশ বেকার, তার একটা ডেটাবেইস থাকা জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পোশাকশিল্প খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, শিল্প খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। প্রযুক্তি বিষয়ে নারীদের তেমন প্রশিক্ষণ নেই। তাই তারা ঝরে পড়ছে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রশিদুল হাসান বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলা করতে হলে যুবকদের দক্ষ করে তুলতে হবে। আমরা যদি এখনই প্রস্তুতি না নিই, তাহলে জাতিকে কড়া মূল্য দিতে হবে।’

উইমেন ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসিয়া খালেদা বলেন, ‘গ্রাম পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, সেখানে এখনো মোবাইল ডেটার ওপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য নয়। বিশেষ করে নারীদের কাছে এখনো প্রযুক্তি খুবই কঠিন বিষয়। তাই গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট সুবিধা বাড়াতে হবে।’

যুব উদ্যোক্তা স্বর্ণা খাতুন বলেন, ‘ব্যবসা করতে ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করলে পাওয়া যায় না। অবিবাহিত হওয়ার কারণ দেখায় আমাদের। তা ছাড়া মূলধনের সমস্যা আছে। বাজারে দোকান দিতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়। তাই আমাদের অনলাইনে ব্যবসার ওপর জোর দিতে হবে।’

অক্সফামের ইকোনমিক ইনক্লুশন অ্যান্ড জাস্টিস বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ শোয়েব ইফতেখার বলেন, ‘সরকার সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে। যদি ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা যায়, তাহলে যুবকদের জন্য কেন আলাদা কিছু করা যাবে না। যুবকদের জন্য কেন আলাদা অঞ্চল করতে পারছি না।’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রোগ্রাম অফিসার তানজিলুত তাসনুবা বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে খাপ খেতে হলে কারিকুলামে বড় ধরনের সংস্কার আনতে হবে। পদ্ধতিগত সংস্কার আনতে হবে। যুবকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চাকরিরও ব্যবস্থা করতে হবে।