অনলাইনে ছড়িয়ে দেন সহজ স্বাস্থ্যবার্তা

তাসনিম জারা
ছবি: সংগৃহীত

থানকুনিপাতা খেলে কি করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? পাশের বাড়িতে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে কী করব? বাড়িতেই কি সাবান বা স্যানিটাইজার বানানো সম্ভব? করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল মানুষের মনে। নির্ভরযোগ্য উত্তর তখন সহজলভ্য ছিল না। উল্টো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছিল গুজবের ছড়াছড়ি। এমন সময় তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক ভিডিও নিয়ে হাজির হয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) চিকিৎসক তাসনিম জারা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করে তাসনিম যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ‘এভিডেন্স বেজড মেডিসিন’ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সম্মুখসারির একজন চিকিৎসক হিসেবে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তিনি।

সহজ আর প্রাঞ্জল বাংলা ভাষায় তাসনিমের ভিডিও তখন ছড়িয়ে পড়ে লাখো মানুষের কাছে। শুরুতে শুধু করোনাকেন্দ্রিক ভিডিও বানালেও বর্তমানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে মানুষের করণীয় নিয়ে ভিডিও বানাচ্ছেন তিনি। পাঁচ লাখের বেশি মানুষ এখন তাসনিমের ফেসবুক পেজ অনুসরণ করেন। অন্যদিকে ইউটিউবে তাঁর স্বাস্থ্যবার্তার ভিডিও প্রায় দেড় কোটিবার দেখা হয়েছে।

তাসনিমের ভিডিওগুলোর বিশেষত্ব হলো, ঝরঝরে সহজ বাংলায় প্রতিটি বিষয়ের খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা দেন তিনি। ভিডিওর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া থাকে একাধিক তথ্যসূত্র। সম্প্রতি তাসনিমের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হলো। বললেন তাঁর ভিডিও নির্মাণের পেছনের গল্প। প্রতিটি ভিডিও তৈরির আগে তথ্য-উপাত্ত যাচাই, বাছাই ও পর্যালোচনার বেশ কটি ধাপ পার করেন তিনি। তাসনিম বলেন, ‘আমি ভিডিও নির্মাণের আগে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সূত্র এবং একাধিক গবেষণা থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করি।’

ভিডিও নির্মাণ ছাড়াও তাঁর বর্তমান ব্যস্ততা ‘সহায়’ নামের একটি ওয়েবসাইট ঘিরে। তাসনিম তাঁর কিছু সহকর্মী আর বন্ধুদের নিয়ে মাস ছয়েক আগে এই ওয়েবসাইট চালু করেছেন। স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও বিভিন্ন রোগের লক্ষণ, উপশম ও করণীয় নিয়ে পরামর্শ দিয়ে সাজানো হচ্ছে ওয়েবসাইটটি।

তাসনিম বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো পরিচিত দীর্ঘমেয়াদি অসুখগুলোর লক্ষণ কী, এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে আমাদের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত, কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি—এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য লেখা ও ভিডিও আকারে থাকবে এই ওয়েবসাইটে।’

যেকোনো অসুখ হলেই অযথা ওষুধ না খেয়ে অথবা শুধু ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সামগ্রিকভাবে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেও বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়—এই ধারণা সবার কাছে জনপ্রিয় করে তোলাও সহায়-এর অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানালেন তাসনিম।

ক্যামেরার সামনে বেশ চটপটে আর সাবলীল তাসনিম। তাঁর এই বিশেষ পারদর্শিতার পেছনের রহস্য জানতে চেয়েছিলাম। উত্তরে বললেন বিতর্ক আর তরুণদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার অভ্যাসের কথা। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় তিনটি আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। এ ছাড়া সে সময় জাতিসংঘ যুব উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতিও ছিলেন তিনি।

শুরুর দিকে তাসনিমের ছোট একটি দল ছিল। বিষয় নির্বাচন ও গবেষণার ক্ষেত্রে সাহায্য করতেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের দুই অনুজ ইমা ইসলাম ও সায়মুল রেজা। আর ভিডিও সম্পাদনা ও গ্রাফিক ডিজাইনে সাহায্য করতেন তাসনিমের স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহ। তবে ভিডিওর পাশাপাশি ওয়েবসাইট চালু করায় এখন তাসনিমের দল বড় হয়েছে। দলের শুরুর দিকের চার সদস্য ও বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের কয়েকজন চিকিৎসক মিলিয়ে এখন তাঁরা ১২ জনের দল।

এই দলকে সঙ্গে নিয়েই সহজ বাংলায় দেশের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যবার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে যেতে চান তাসনিম। সহায়-এর একটি পূর্ণাঙ্গ মোবাইল অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনাও আছে তাঁর।