আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন মা

মা দিবস উপলক্ষে মাকে নিয়ে লিখছি। সব মাকে জানাই বিশ্ব মা দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমি বলি এই পৃথিবীর আমার জন্য মূল্যহীন হতো, যদি মা আমার পাশে না থাকত। আমি এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হিসেবে ঢোকাটা একসময় নিছক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই ছিল না। যেখানে আমার পড়াশোনা পঞ্চম শ্রেণিতেই শেষ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
আমার জীবনে এখনো যেমন ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন মা, তখনো তা-ই দিতেন। মা অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। আমাকে পড়ালেখা করার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। যেখানে আমাদের অভাবী সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাত, সেখানে আমার জন্য কীভাবে পড়াশোনার খরচ জোগাতেন, সেটা মনে হয় আমি আর মা ছাড়া কেউ জানত না। না খেয়ে থেকেছেন, কিন্তু ছেলের পড়াশোনায় উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন। যখনই অতি উৎসাহী মন হতাশাগ্রস্তের আবছায়ায় ঢেকে যেত, তখনই আমার মায়ের সাহস আর উদ্দীপনা আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উদ্যমী করে তুলত।
আমাদের অভাবের সংসার দেখে যখন লোকে বলত, এত অভাবের সংসারে ছেলেকে পড়ালেখা করানোর কী দরকার। ছেলেকে কাজে লাগিয়ে দাও, নিজেরাও অনেক সুখে থাকবা। আমার মা তাদের কথায় কান দিতেন না। আমার খুবই মনে আছে, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করার শেষ দিন, নির্ধারিত ন্যূনতম ফির ৩০০০ টাকা জোগাড় হয়নি। কার্তিক মাস অনেক অভাব, গ্রামের লোকজনের কাছে কোনো টাকাপয়সাও নেই। আমার বাবা তখন কাজের উদ্দেশ্যে অন্য অঞ্চলে ছিলেন। মা আমার নানির দেওয়া সোনার নাকফুল বিক্রি করে ফরম পূরণের টাকা জোগাড় করে দিলেন।
যখনই আমার জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে, আমার কাছে মনে হয়েছে যে আমি অন্ধকারের অতল গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছি, তখনই মায়ের মুখ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের কথা মনে পড়েছে। আমাকে এ পর্যন্ত এগিয়ে আসায় অনেক সাহায্য-সহযোগিতা জুগিয়েছে, প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিলের বৃত্তি আমাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসা, অনেক কঠিন পরিস্থিতি থেকে শক্ত হাতে সংগ্রাম করে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
আমি আমার মায়ের কাছে সব সময়ের জন্য কৃতজ্ঞ। আমার গন্তব্যে পৌঁছাতে এখনো অনেকটা পথ বাকি। আমার জীবন চলার পথে অনেক বন্ধুর ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু মা পরম বন্ধু, যার ভালোবাসার তুলনা কারও সঙ্গে হয় না।
লেখক: প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তিপ্রাপ্ত অদম্য শিক্ষার্থী