টি-টোয়েন্টিতে মাঠ মাতানো সব শট
শুরুর ‘ফান’ ক্রিকেটে এখন ভীষণই ‘সিরিয়াস’। তবু টি–টোয়েন্টি আলাদা হয়ে আছে বিচিত্র ও উদ্ভাবনী সব শটের কারণে। ক্রিকেট-ব্যাকরণকে বুড়ো আঙুল দেখানো শটগুলো নিয়ে লিখেছেন ফেরদৌস রহমান

দিল স্কুপ
ডগলাস ম্যারিলিয়ার রাগ করতেই পারেন। এই শটটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই, অথচ সেটার নাম হয়ে গেল তিলকরত্নে দিলশানের নামে! ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলার সময় ম্যারিলিয়ারই দেখিয়েছিলেন কীভাবে ব্যাটকে চামচের মতো ব্যবহার করে ইয়র্কার লেংথের বলগুলোকে উইকেটের পেছন দিকে মাঠ ছাড়া করতে হয়। এটি কাজে লাগিয়ে ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন আশরাফুল। এ দুজন এই শটগুলোর অধিকাংশই খেলতেন ফাইন লেগ দিয়ে। দিলশানই প্রথম এই শট খেলতে শুরু করলেন উইকেটের দুই পাশে। শটটিতে এমনই নিজস্বতা যোগ করলেন, ‘প্যাডল স্কুপ’ নামটা পরিবর্তিত হয়ে শটের নামই হয়ে গেল ‘দিল স্কুপ’।
কীভাবে খেলবেন: বোলারকে ইয়র্কার কিংবা ফুল লেংথের বল করতে দেখলেই সামনে ঝুঁকে যেতে হবে। তারপর ব্যাটটা কোনাকুনি করে চামচের মতো পেতে দিলেই হলো। ব্যস, গতিই বলকে পাঠিয়ে দেবে সীমানার বাইরে।
সতর্কতা: দেখনদারি এই শটে টাইমিংয়ের একটু ভুল হলেই আউট হওয়ার ষোলো আনা সম্ভাবনা। প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই শট খেলতে গিয়েই বিশ্বকাপটা হাতছাড়া করলেন মিসবাহ-উল-হক। তবে এতে ব্যাটের কানায় লেগে বল চোখে লাগার, কিংবা শট মিস করে হাস্যাস্পদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই।
হেলিকপ্টার শট
এই শটের মালিকানা পুরোপুরি ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির। অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথের বল পেলেই বন বন করে হাত ঘুরিয়ে যখন শট নেন ধোনি, তখন হেলিকপ্টারের পাখার কথাই মনে পড়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই খেলার সাহস ধোনির পর আর একজনই দেখিয়েছিলেন, আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শাহজাদ। ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষেই এই শট খেলেছিলেন তিনি। পার্থক্য হলো, ধোনির শটে বল সব লং অন কিংবা অফ দিয়ে সীমানাছাড়া হয়। শাহজাদের শটে চার এসেছিল স্কয়ার লেগ দিয়ে। শাহজাদকে এই শট খেলতে দেখে উইকেটের পেছনে থাকা ধোনির হাসিটা ছিল দেখার মত।
কীভাবে খেলবেন: অফস্টাম্পের খানিকটা বাইরে করা বলের জন্য অপেক্ষা করুন। বল এলেই হাতকে চরকির মতো ঘুড়িয়ে শট খেলুন।
সতর্কতা: কবজিতে প্রচুর জোর না থাকলে এ শট খেলার আশা ছাড়ুন। না হলে শুধু শুধু হাতকে চোট দেওয়াই হবে। আর হাত থেকে ছুটে ব্যাটের উড়াল দেওয়ার ইচ্ছের ঝুঁকি তো আছেই।
পেরিস্কোপ
এই শটের স্বত্বাধিকারী সৌম্য সরকার। শরীর তাক করা বাউন্সার ছেড়ে না দিয়ে উল্টো কীভাবে চার-ছক্কা পেতে হয় তার সেরা উদাহরণ এই শট। ব্যাটিং কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটে খেলার জন্য এর কাছাকাছি একটি শট খেলতেন, কিন্তু সেটি অনেকটা ‘আপার কাটের’ পরিবর্তিত রূপ ছিল। কিন্তু সৌম্য এই শটটি একেবারেই নিজস্ব ঢঙে খেলে নিজের করে নিয়েছেন।
কীভাবে খেলবেন: বোলার শর্ট বল করলে কিংবা বাউন্সার ছাড়লে না বসে শরীরের উর্ধ্বাংশ পেছনের দিকে হেলিয়ে দিন। বলটি আপনাকে অতিক্রম করে ক্রিজ পার করার আগ মুহূর্তে আলতো করে ব্যাটের ছোঁয়া দিলেই কাজ হয়ে গেল।
সতর্কতা: ভারসাম্য হারিয়ে উইকেটে ডিগবাজি খেতে পারেন। আর মিস টাইমিংয়ে উইকেটকিপার কিংবা স্লিপে ক্যাচ তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা তো আছেই।

সুইচ হিট
এই শট খেলা মানেই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের পুরো স্টান্স পরিবর্তন করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বনে যাওয়া কিংবা বাঁহাতি থেকে ডান হাতি বনে যাওয়া। রিভার্স সুইপে শুধু কবজি ঘুরিয়েই কাজ সেরে নেওয়া হয় কিন্তু সুইচ হিটে পুরো শরীরকেই ব্যবহার করতে হয়। কেভিন পিটারসেনই প্রথম সফলভাবে এর প্রয়োগ দেখিয়েছিলেন। মুত্তিয়া মুরালিধরনকে মারা তার সুইচ হিটের ছক্কাগুলো সবারই মনে থাকার কথা। পিটারসেনের পর সুইচ হিটে সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
কীভাবে খেলবেন: স্পিনারদের বিপক্ষে খেলতে হবে এটি। বোলার বল করা ঠিক সঙ্গে সঙ্গে পুরো শরীর ঘুরিয়ে নিতে হবে, ব্যাটের গ্রিপটাও পরিবর্তন করে নিতে এইটুকু সময়ের মধ্যেই। বল নাগালের সঙ্গে সঙ্গে সজোরে ব্যাট চালান আর আশা করতে থাকুন ফিল্ডারের হাতে বল না যাওয়ার।
সতর্কতা: এই শট খেলে মিস করার সম্ভাবনা প্রায় ৮০ শতাংশ। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন উচ্চাভিলাষী শট খেলে আউট হওয়ার ঝুঁকি না নেওয়াটাই ভালো।
এত গেল সবচেয়ে উদ্ভাবনী শটগুলোর কথা। এ ছাড়াও স্লগ সুইপ, রিভার্স সুইপ, চায়নিজ কাট আরও নানারকম শটই খেলা হয় টি-টোয়েন্টিতে। এ বিশ্বকাপেও এসব শট দেখার অপেক্ষায় সবাই। কারণ, এখন আর উইগ পরে মাঠে না নামলেও দর্শক বিনোদনই যে এই ক্রিকেটের মূল উপজীব্য। শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি মানেই তো ‘চার-ছক্কা হই হই, বল গড়াইয়া গেল কই!’
সংখ্যায় সংখ্যায়
১
শিরোপাজয়ী দল থেকে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের কেভিন পিটারসেনকে বাদ দিলে বাকি চারবারই টুর্নামেন্ট–সেরা হয়েছেন অন্য কোনো দল থেকে।
১৬১
বিশ্বকাপে সর্বমোট ফিফটি।
৪১৪.২৮
এক ইনিংসে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট, ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন স্মিথ ৭ বলে করেছিলেন ২৯ রান।