পশুপাখিদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলব

>
সৌরভ শামিম ও মুহাম্মাদ জাহিদ হোসেন
সৌরভ শামিম ও মুহাম্মাদ জাহিদ হোসেন
কুকুর–বিড়ালের মতো অসহায় প্রাণীদের নিয়ে কাজ করেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরে গড়ে তুলেছেন কেয়ার ফর পজ নামের একটি সংগঠন। এখানে রাস্তাঘাটে থাকা প্রাণীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়, প্রাণীদের ব্যাপারে সচেতন করা হয় মানুষদেরও।

রাস্তাঘাটে দু–একটি প্রাণীর আর্তনাদ ও কষ্ট দেখে কিছু একটা করার কথা ভাবি আমরা। পরবর্তী সময়ে সামগ্রিকভাবে এই প্রাণীদের জন্য কিছু করার ইচ্ছার মাধ্যমেই স্বপ্নের বিস্তার লাভ করে। প্রথমত ইচ্ছা ছিল একটি পশু হাসপাতাল দেওয়া, আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা, জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া এবং জলাতঙ্কমুক্ত দেশ গড়া। এ ছাড়া আমাদের দেশে পশুপাখির জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করারও ইচ্ছা ছিল। এগুলোই আমাদের স্বপ্ন।
ইচ্ছাশক্তিতেই এতদূর এসেছি আমরা। প্রচেষ্টা আর পরিশ্রমে কেয়ার ফর পজ নামের একটা পশু হাসপাতাল গড়ে তুলতে পেরেছি, যা সপ্তাহের প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে প্রস্তুত। এখানে আহত কুকুর-বিড়ালের চিকিৎসা, পরিচর্যা ও জলাতঙ্কসহ অন্যান্য রোগের টিকা দেওয়া হয়। আমাদের বিশ্বাস, একদিন প্রাণীদের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাবও লোপ পাবে সবাইকে সচেতন করতে পারলে। মূলত এই বিষয়টিই আমাদের সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য।

সৌরভ শামিম
সৌরভ শামিম

আমাদের দেশে এ ধরনের কাজ খুব বেশি হয় না। তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেক বাধা এসেছে। তবে মূল বাধা ছিল শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে তৈরি হওয়া অনুভূতির পার্থক্য। সবার অনুভূতি বা বোঝার ক্ষমতা এক রকম হয় না। যার ফলে বিশ্বাস করানো কঠিন হয়ে পড়ে যে কুকুর–বিড়ালেরও অনুভূতি আছে। ওরাও আমাদের মতো ব্যথা-বেদনা, কষ্ট, এমনকি মনোজাগতিক সমস্যায় ভোগে। আর সবচেয়ে বেশি যে কথা শুনি তা হলো, ‘এ দেশে মানুষ খেতে পায় না, আর আপনি আসছেন কুকুর–বিড়ালদের খাওয়াতে, চিকিৎসা করতে!’ এর উত্তরে মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হই যে যারা রাস্তার অবলা প্রাণীদের কষ্ট অনুভব করে, তারা মানুষের জন্য আরও বেশি কিছু করে। তা ছাড়া জীবে দয়া করা একটি মহৎ কাজ, পুণ্যময় কাজ। এই কাজ তো সবারই করা উচিত। তা ছাড়া একটা অসুস্থ বা আহত প্রাণীর চোখের নীরব আকুতি কি দেখেছেন কখনো? সেখানে মানুষের মতোই সেই একই অনুভূতি বিরাজ করে, নীরবে তারা সাহায্য খুঁজে ফেরে। তাহলে কেন তাদের ওই নির্বাক আকুতি উপেক্ষা করবেন? মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। অসহায়–অবলা প্রাণীদের সাহায্যে আমরাই এগিয়ে আসব, এটাই তো স্বাভাবিক।
আবার বাধার কথায় আসি। হাসপাতালের জন্য জায়গা, লোকবল পাওয়া এবং সব চেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল হাসপাতাল চালানোর জন্য অর্থ যোগাড় করা। এ ছাড়া অন্যান্য অনেক ছোটখাটো সমস্যা তো ছিলই। তবে সবকিছু মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত হাসপাতালটা চালু করতে পেরেছি, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতে সব সমস্যার সমাধান করে আরও ভালোভাবে এই কাজ চালিয়ে যেতে পারব নিশ্চয়ই।

রাস্তার অসহায় প্রাণীদের এভাবেই চিকিৎ​সা দিয়ে সুস্থ করে তোলার কাজ করেন সৌরভ শামিম ও মুহাম্মাদ জাহিদ হোসেন। ছবি: সাবিনা ইয়াসমীন
রাস্তার অসহায় প্রাণীদের এভাবেই চিকিৎ​সা দিয়ে সুস্থ করে তোলার কাজ করেন সৌরভ শামিম ও মুহাম্মাদ জাহিদ হোসেন। ছবি: সাবিনা ইয়াসমীন

টার্নিং পয়েন্ট বলতে প্রথম আলোর ‘ছুটির দিন’ পাতায় আমাদের কেয়ার ফর পজ নিয়ে দারুণ একটা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল; যা সাধারণ মানুষের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের কাজ ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে দারুণভাবে। এরপর অনেকেই আমাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারেন, আগ্রহ করে সাহায্য করতে ও আমাদের সঙ্গে কাজ করতে এগিয়ে আসেন। তা ছাড়া এই একটি প্রতিবেদনই আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি সামনে এগিয়ে নেওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
ভবিষ্যতে আরও বড় এবং আরও আধুনিক একটা পশু হাসপাতাল করার স্বপ্ন দেখি। চিকিৎসার অভাবে যেন আর কোনো অসহায় প্রাণী মারা না যায়, তার একটা সুনিশ্চিত ব্যবস্থা করতে চাই। এমন একটি হাসপাতাল, যেখানে মানুষের হাসপাতালের মতোই সর্বাধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে, পশুপাখির সব রোগের চিকিৎসা হবে।
দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। আশা করি, একদিন বাংলাদেশ জলাতঙ্কমুক্ত হবে, আমাদের দেশের মানুষ নিরাপদ থাকবে। নিরাপদ থাকবে আমার দেশের অসহায় প্রাণীরা।