শিবব্রত বর্মন: ফেরদৌসী মজুমদারকে দিয়েই শুরু করি। আপনি যখন শুরু করেন, আজ থেকে ৪০-৪৫ বছর আগে, থিয়েটারের কথা বলছি, কেমন ছিল সেই সময়টা?
ফেরদৌসী মজুমদার: মঞ্চনাটকে দর্শক টানতে আগে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকিট বিক্রি করেছি। বলেছি, আমাদের নাটক দেখেন। লোকে মিলনায়তনে গিয়ে নাটক দেখতে অভ্যস্তই ছিল না। আশির দশক। তখন খুব রমরমা ছিল। খুব পাগলের মতো নাটক করতাম। অসম্ভব খাটতাম আমরা। এখন তো দেখি মহড়া শব্দটাই উঠে যায় যায়।
মোশাররফ: সুযোগই এখন কাল হয়েছে।
ফেরদৌসী: শতভাগ সত্য কথা।
মোশাররফ: আমার মনে হয়, টিভি চ্যানেলগুলো আসার পর সবকিছু বদলে গেল। আমাদের তো অন্য কোনো স্কুলিং নেই, এই যে এতগুলো চ্যানেল, এত নাটক হচ্ছে, এর ব্যবস্থাপনার ধরনটা যদি কোনোভাবে থিয়েটারের লোকজনের মধ্য দিয়ে হতো, মনে হয়, এতে টিভি নাটকের মান ভালো হতো। আমি এখন পেশাদার কাজটা অপেশাদারভাবে করছি। অথচ মঞ্চে আমি কিন্তু অপেশাদার কাজটাই ভীষণ পেশাদারির সঙ্গে করতাম।
ফেরদৌসী: আমিও কিন্তু নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। কারণ, এই যুগে তুমি যে নাম করেছ, আমার এত বছর লেগেছে একটুখানি আসতে।
শিবব্রত: এখন টেলিভিশনের বাক্স তো আরও ছড়িয়ে গেছে। বাড়ি বাড়ি ঢুকে পড়েছে। বদলে গেছে দর্শকও।
মোশাররফ: আমি বলব দর্শক বদলায় না, বদলায়নি। দর্শক আজীবন গুড়ের বাতাসা খেয়ে গেছে। সে তো আর কিছু চেনে না। ছানার সন্দেশ যে পৃথিবীতে আছে, সেটাই তো সে জানে না। ছানার সন্দেশ তাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব আমার। আগে টেলিভিশনে যাঁরা যেতেন, তাঁরা গিয়েছিলেন মঞ্চ থেকে। অভিনয়ে অভ্যস্ত ছিলেন তাঁরা। ফলে তাঁদের মধ্যে পেশাদারি মনোভাব ছিল। অভিনয় যদি ভালো হয়, গল্প যদি ভালো হয়, কারিগরি দিক যদি ঠিক থাকে, দর্শকের বদলে যাওয়া কোনো ব্যাপার না। আপনি যে পরিবর্তনের কথা জানতে চাইছেন, একটা ব্যাপার কিন্তু ভালো, এখন দুম করে একটা নাটক হয়ে যাচ্ছে এবং একজন অভিনেতা সেই চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছেন। নাটকের একটা অবকাঠামোগত দিক আছে। পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে নির্দেশনা, মেকআপ, শিল্পনির্দেশনা—সবই আছে। আমরা করলাম কি, শিল্পনির্দেশককে বিদায় করে দিলাম। কেন? কারণ, টাকা নেই।
ফেরদৌসী: আমি কিন্তু আশাবাদী। আমার কুষ্ঠিতে লেখা আছে, আমি আশাবাদী। মানুষ নাটক দেখে। এখনো দেখে। আমরা নাটক করে যেতে চাই। কেউ না কেউ দেখে তো, কেউ না কেউ দেখবে। আজ না হোক, কাল অথবা পরশু দেখবে।
মোশাররফ: নাটকের মান যদি ঠিক থাকে, দর্শক সেটা যেভাবেই দেখুন, টেলিভিশন সেটে দেখুক আর ইউটিউবেই দেখুক, দেখবে।
‘শিল্পের জগৎ বদলায় না’, প্রথম আলো, ১৪ এপ্রিল ২০১৭