যেভাবে ফাঁস হলো 'জজ মিয়া গল্প'

২০০৫ সালের ২৯ জুন প্রকাশিত হয় জজ িময়া নামের আষাঢ়ে গল্প
২০০৫ সালের ২৯ জুন প্রকাশিত হয় জজ িময়া নামের আষাঢ়ে গল্প

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল; ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে তাঁর সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। ভয়াবহ ওই ঘটনায় তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় প্রথম থেকেই। প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় শৈবাল সাহা পার্থ নামের এক তরুণকে। কদিন পর মগবাজার এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতা মোখলেছুর রহমানকে। তাঁদের ফাঁসাতে না পেরে পরের বছর ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে ধরে আনা হয় জজ মিয়া নামের এক যুবককে।

জজ মিয়াকে ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে একটি সাজানো জবানবন্দি আদায় করে সিআইডি। ২০০৫ সালের ২৬ জুন আদালতে দেওয়া ওই কথিত স্বীকারোক্তিতে জজ মিয়া বলেছিলেন, তিনি আগে কখনো গ্রেনেড দেখেননি; গ্রেনেড ও বোমার মধ্যে পার্থক্য তিনি জানেন না। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে তিনি অন্যদের সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন। ওই বড় ভাইয়েরা হচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ, মুকুল প্রমুখ।

এই জবানবন্দির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ২৯ জুন প্রথম আলোয় দুটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। একটির শিরোনাম ছিল ‘এই গল্পের গাঁথুনি দুর্বল/ স্বীকারোক্তিতে সাত অসংগতি’। অপরটির শিরোনাম ‘সেই জজ মিয়া তারকা সন্ত্রাসী’। সঙ্গে ছাপানো হয়েছিল শিশির ভট্টাচার্যে্যর সেই বিখ্যাত কার্টুন (আষাঢ় মাস...জমেছে আষাঢ়ে গল্পের আসর)। তবে সিআইডি সাজানো ছকেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। ২০০৬ সালের আগস্টে এই নাটকের পেছনের ঘটনা ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার ছোট বোন খোরশেদা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জজ মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর থেকে সিআইডি তাঁর পরিবারকে মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিয়ে আসছে। জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির প্রস্তাবের কথাও ফাঁস করে দেন তিনি। ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘জজ মিয়ার পরিবারকে টাকা দেয় সিআইডি’ শিরোনামে শীর্ষ প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর জোট সরকার আর ‘জজ মিয়া গল্প’ নিয়ে এগোতে পারেনি।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে এই মামলার তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অব্যাহতি দেওয়া হয় জোট সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হওয়া জজ মিয়া, পার্থসহ ২০ জনকে। সেই জজ মিয়া এখন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। সামান্য আয়ে স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে কোনো রকমে চলে তাঁর সংসার।