স্যারের জন্য ফিরে পেলাম শিক্ষাজীবন

সরকারি মোংলা কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মৃণাল কান্তি বিশ্বাস। ছবি: লেখক
সরকারি মোংলা কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মৃণাল কান্তি বিশ্বাস। ছবি: লেখক

২০১১ সাল। মোংলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মোংলা ডিগ্রি কলেজ’ (বর্তমান ‘সরকারি মোংলা কলেজ’) বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষার মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলে ও আমি ছিলাম কলেজ থেকে অনেক দূরে।

২ বছরে ক্লাসে উপস্থিত হতে পেরেছি মাত্র কয়েকদিন। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তখন আমি মোটরসাইকেলে ভাড়া টানতে ব্যস্ত। ভোর থেকে অনেক রাত অবধি রাস্তায় ভাড়া টানতাম তাই কলেজে যাওয়া সম্ভব ছিল না। পরীক্ষার আগে সবাই যখন ভুলে গেল যে মহাশিন নামের একটি ছেলে ছিল তখন আমাকে দেখা করার জন্য খবর পাঠালেন সরকারি মোংলা কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মৃণাল কান্তি বিশ্বাস। আমি দেখা করলাম, স্যার আমাকে বলল তোমাকে সেই প্রথম কয়েকদিন ক্লাসে দেখেছি আর দেখি না, কারণ কি? আমি সমস্যার কথা বললাম স্যার সব শুনলেন আর বললেন মহাশিন তুমি ক্লাস করতে না পারলেও পরীক্ষা দাও। বললাম স্যার ২ বছর ক্লাস করি নাই, কীভাবে পরীক্ষা দেব? স্যার আমাকে বোঝালেন। বললেন আমি বলছি তুমি পাস করে যাবে। আর যখন সময় পাও যত রাতে হোক আমার ক্লাসে এসে পড়ে যাবে। আমাকে সেদিন এতটা উৎসাহ দিয়েছিলেন যে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি, সারাদিন মোটরসাইকেলে ভাড়া টানি আর রাতে বই পড়া শুরু করি। এইচএসসি পরীক্ষা দিই। তারপর পদার্থ বিজ্ঞানে বিএসসি করি। কয়েকদিন পর আমার এমএসসি পরীক্ষা, পাশাপাশি এলএলবিতে পড়ছি। স্যার যদি সেদিন সেই ক্লাসের অনুপস্থিত মহাসিনের কথা মনে না রাখতেন, যদি খবর না দিয়ে পরীক্ষা দিতে না বলতেন, যদি আমার মনে সাহস না জোগাতেন তবে আজ আমি শিক্ষা জীবন থেকে হারিয়ে যেতাম। পরীক্ষা দেওয়ার সাহসই খুঁজে পেতাম না। স্যার অজানা এক পরশ পাথর ছুঁয়ে দিলেন আমার জীবনে। ফিরে পেলাম শিক্ষাজীবন, কিছু মানুষ থাকে যাদের সংস্পর্শে অন্যের জীবন পাল্টে যায়। আমার জীবনে স্যার এক দেবদূত। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। স্যার এখন অবসরে। নিজ বাড়ি সাতক্ষীরায় থাকেন। কিন্তু স্যার আছে এবং আজীবন থাকবেন আমার বুকের বা পাশে। স্যারের ছাত্র হতে পেরে আমি গর্বিত।

লেখক: মো. মহাসিনুল ইসলাম