এখনো তিনি বই বিলান

একুশে পদক নিয়েই পলান সরকার এসে​ছিলেন প্রথম আলোয়
একুশে পদক নিয়েই পলান সরকার এসে​ছিলেন প্রথম আলোয়

সরকার থেকে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে পাঠাগার। সরকারিভাবে তাতে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থাও হয়েছে। আলো-ঝলমল সেই পাঠাগারে বই নিতে আসেন পাঠকেরা। বয়স হয়েছে বলে একটা ভ্যান বানানো হয়েছিল। তারপরেও পলান সরকারের নেশা হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে মানুষের বাড়িতে বই নিয়ে যাওয়া। তিনি তা-ই করছেন। পাশাপাশি পাঁচটি বিকল্প বই বিতরণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন।
নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বই পড়ার একটি আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য পলান সরকার ২০১১ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। ২০০৭ সালে সরকারিভাবে তঁার বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে বিশ্বের ভিন্ন ভাষার প্রধান প্রধান দৈনিকে একযোগে পলান সরকারের বই পড়ার এই আন্দোলনের গল্প ছাপা হয়। সারা দেশে তাঁকে অসংখ্য সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে নিয়ে সায়াহ্নে সূর্যোদয় নামে একটি নাটক তৈরি হয়েছে।
গত আগস্টে তাঁর বয়স হয়েছে ৯৬ বছর। কেমন আছেন তিনি? জানতে ৫ নভেম্বর রাজশাহী জেলার বাউসা গ্রামে পলান সরকারের পাঠাগারে গিয়ে দেখা হলো তাঁর সঙ্গে।
মনে পড়ল, ২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’তে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপা হয় ‘বিনি পয়সায় বই বিলাই’ শিরোনামে। এটিই তাঁকে নিয়ে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদন। সে সময় ছুটির দিনের মলাটে তাঁর যে ছবিটি ছাপা হয়েছিল, এখনো একইভাবে হেঁটে চলেছেন তিনি। গত নয় বছরে যেন কোনো পরিবর্তনই হয়নি। তবে কথা বলার সময় একটা পরিবর্তন বোঝা গেল, তিনি কানে কম শুনছেন। প্রশ্ন করলে ঠিকমতো উত্তর দিতে পারছেন না। ছোট ছেলে স্কুলশিক্ষক হায়দার আলীর সহযোগিতা নিতে হচ্ছে।
কথায় কথায় জানা গেল, পলান সরকার বই পড়ার আন্দোলনটাকে শুধু তঁার পাঠাগারকেন্দ্রিক না রেখে একটু অন্যভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এখন তিনি বই বিতরণের জন্য এলাকাভিত্তিক পাঁচটি বিকল্প বই বিতরণ কেন্দ্র তৈরি করেছেন। এ জন্য কয়েকটি বাজারের বইপ্রেমী কোনো দোকানিকে বেছে নিয়েছেন তিনি। দোকানের মালিক দোকানে মালামালের পাশাপাশি এখন পলান সরকারের বইও রাখছেন। সেখান থেকে স্থানীয় লোকজন বই নিয়ে যান। পড়া বই তাঁরা নিজেরাই আবার ফেরত দিয়ে নেন নতুন বই। মাসে এক-দুবার করে পলান সরকার দূরবর্তী এই কেন্দ্রগুলোতে ছেলের সঙ্গে মোটরসাইকেলে চেপে গিয়ে নতুন বই দিয়ে পুরোনো বই নিয়ে আসেন। এ ছাড়া পাঠাগারে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পুরস্কার হিসেবে তাদের হাতেও পলান সরকার বই তুলে দেন।
তিনি বলেন, ‘বয়স হয়েছে। অসুস্থ হয়ে যদি আর হাঁটতে না পারি, সেই জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এই বিকল্প বই বিতরণ কেন্দ্রগুলো তৈরি করেছি। নিজে না পারলেও অন্যকে দিয়ে কেন্দ্রে বই পাঠানো যাবে।’ এখন এ কাজে ছেলে হায়দার আলী তাঁকে সহযোগিতা করছেন।

(পলান সরকারকে নিয়ে প্রথম আলোর বানানো প্রামাণ্যচিত্র দেখুন goo.gl/nz7VCk ঠিকানায়৷)