মেয়েরাই আগে বিশ্বকাপে খেলবে

সাবিনা খাতুন। ছবি: প্রথম আলো
সাবিনা খাতুন। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলে অনেক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাবিনা খাতুনের নাম। তিনি জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক । প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে বিদেশে পেশাদার লিগে খেলেছেন। ২০১০ সাল থেকে একটানা খেলে যাচ্ছেন জাতীয় দলে। এসএ গেমস, সাফ গেমস, এএফসি টুর্নামেন্ট ও প্রীতি ফুটবল মিলিয়ে খেলেছেন ৫০টির বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ঘরোয়া ফুটবলে এখনো অপ্রতিরোধ্য তিনি। প্রচুর গোল করেন বলে খেতাব হয়েছে ‘গোলমেশিন’। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বদিউজ্জামান

প্রথম আলো: ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরা সাফল্য পেয়েই চলেছে। রহস্য কী?

সাবিনা খাতুন: এটা আমাদের মেয়েদের গত কয়েক বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফল। আবাসিক ক্যাম্পের জন্যই আমরা এমন দারুণ ফল পাচ্ছি।

প্রথম আলো: আপনি প্রায়ই বলেন, বাংলাদেশের ছেলেদের আগে মেয়েরা বিশ্বকাপে খেলবে। এত আত্মবিশ্বাস কোথায় পান?

সাবিনা খাতুন: আমাদের মেয়েরা খুব অল্প সময়ে অনেক ভালো করেছে। এটা ধরে রাখতে পারলে এবং আবাসিক ক্যাম্প চলতে থাকলে আমি নিশ্চিত, ছেলেদের আগে মেয়েরাই বিশ্বকাপে খেলবে।

প্রথম আলো : আপনার ফুটবলে আসার গল্পটা বলবেন?

সাবিনা খাতুন: ছোটবেলায় একটু ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম। ছেলেদের সঙ্গে ঘুরতাম, খেলাধুলা করতাম। সাতক্ষীরার নবারুণ হাইস্কুলে পড়ি তখন। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিতাম। ওই সময় জেলা ফুটবল দলের কোচ আকবর আলী স্যার আমার রানিং স্টাইল দেখে ভীষণ পছন্দ করলেন। আমি যেন ফুটবল খেলতে পারি, সেই অনুমতি পেতে প্রথমে আমার স্কুলে গেলেন। কিন্তু আমার স্কুলের শিক্ষকেরা সেদিন অনুমতি দিলেন না। শুধু একজন শিক্ষিকা চেয়েছিলেন, আমি যেন ফুটবল খেলি। শেষ পর্যন্ত আকবর স্যার আমার বাসায় গিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরাও খুব একটা রাজি ছিলেন না। কিন্তু আমার বড় বোন সম্মতি দিলেন। তারপর একটু একটু করে চেষ্টা করে আজকের এই অবস্থায় এসেছি।

প্রথম আলো: সমস্যা হয়নি? বাধা–বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়নি?

সাবিনা খাতুন: ফুটবল খেলতে এসে কম সমস্যার মুখোমুখি হইনি। অনেক মেয়ের কাছে এখনো শুনি, ওদের পরিবার থেকে সমস্যা করছে। তারা বলে, ‘মেয়ে হয়ে জন্মেছ, ফুটবল খেলার দরকার কী?’ এমনকি আমাদের ক্যাম্পে যেসব মেয়ে আছে, তাদের মধ্যেও কিছু মেয়ের পরিবার এখনো বলছে, ‘তোমাদের খেলাধুলা করার দরকার নেই। বাড়ি ফিরে এসো।’ একটা মেয়ে যদি তার জায়গাটা নিজে নিজে শক্ত করতে পারে, তাহলে এর চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না।

প্রথম আলো: আপনি তো ইতিমধ্যে মালদ্বীপ ও ভারতের ঘরোয়া লিগে খেলেছেন। এবার কোথায় খেলতে চান?

সাবিনা খাতুন: আমার এবার ইউরোপের লিগে খেলার ইচ্ছা। ফেডারেশন থেকে সহযোগিতা করবে বলে শুনেছি। বাফুফের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক্যাল ডিরেক্টর ইউরোপে খেলানোর ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রথম আলো: বাংলাদেশের মেয়েরা আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে, কিন্তু ঘরোয়া ফুটবল স্থবির হয়ে আছে। খারাপ লাগে নিশ্চয়ই?

সাবিনা খাতুন: আমাদের ঘরোয়া লিগ চালু হওয়া খুব জরুরি। ঘরোয়া লিগ চালু হলে মেয়েরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবে। তা ছাড়া পাইপলাইনটা সমৃদ্ধ হবে, ভালো মানের অনেক ফুটবলার বের হয়ে আসবে। আমি বিজেএমসির ফুটবলার। বিজেএমসির কর্মকর্তারা প্রায়ই বলেন, খেলা না থাকলে চাকরিও থাকবে না। আমি নিজের জন্য ভাবি না। কিন্তু অন্য ফুটবলারদের জন্য চিন্তা করি। কারণ ওরা এসেছে খুবই অসচ্ছল পরিবার থেকে। ওরা বলে, ‘আপু বেতনটা ঠিকমতো পাই না।’

প্রথম আলো: বলা হয়, মেয়েদের ফুটবলে সাবিনা একজন ‘আইকন’। আপনার কেমন লাগে?

সাবিনা খাতুন: আমি জানি, অনেকে বলে, ‘সাবিনার মতো হতে চাই।’ ঢাকার বাইরে কোথাও গেলে আমার সঙ্গে ছবি তুলতে ভিড় জমে যায়। আমি ভীষণ উপভোগ করি। সবচেয়ে বেশি উপভোগ করি বাংলাদেশের জার্সি পরে জাতীয় সংগীতে গলা মেলানো। বিদেশে কিংবা দেশের মাটিতে খেলা শুরুর আগে যখন জাতীয় সংগীত বাজে, তখনকার অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। এটা ব্যাখ্যা করার ভাষা আমার নেই। শুধু এটুকু বুঝি, দেশকে কিছু দিতে হবে। শতভাগ উজাড় করে খেলতে চাই।

বদিউজ্জামান প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক