নির্মাণ উপকরণে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ

সিমেন্ট খাতের প্রতিষ্ঠান আছে ৩৮টি। তবে বর্তমানে উৎপাদনে আছে ৩৪টি। ছবি: সংগৃহীত
সিমেন্ট খাতের প্রতিষ্ঠান আছে ৩৮টি। তবে বর্তমানে উৎপাদনে আছে ৩৪টি। ছবি: সংগৃহীত

দেশের আবাসন খাত ও সরকারের অবকাঠামো নির্মাণের ওপর ভিত্তি করে রড, সিমেন্ট, সিরামিক, রং, ইট, বালুসহ ২৬৯টি উপখাত গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে রড, সিমেন্ট, সিরামিক ও রঙে গড়ে উঠেছে বৃহৎ শিল্প। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে রড, সিমেন্ট ও সিরামিক। যদিও রপ্তানির পরিমাণ এখনো অনেক কম।

সিরামিক টাইলস ও রঙে অল্পবিস্তর আমদানি হলেও রড ও সিমেন্টে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। সম্ভাবনা থাকায় খাত দুটিতে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। নতুন বিনিয়োগও হচ্ছে। ইস্পাত খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসতে শুরু করেছে। রঙে বিদেশি প্রতিষ্ঠান আছে আটটি। তারাই রঙের বাজারে ছড়ি ঘোরাচ্ছে।

ইস্পাতের চাহিদা কম, উৎপাদনক্ষমতা বেশি

সরকারি প্রকল্প ও আবাসন খাতে ভর করে প্রতিবছর বাড়ছে ইস্পাতের চা০হিদা। সেই চাহিদা মেটাতে দেশে গড়ে উঠেছে ৩০০টি বেশি রি–রোলিং মিল। বছরে ন্যূনতম ১০ হাজার মেট্টিক টন রড উৎপাদন করে, এমন কারখানার সংখ্যা ৫২। এসব কারখানাই ৯৮ শতাংশ রড উৎপাদন করে। এর বাইরে ফ্ল্যাট স্টিল বা ঢেউটিনসহ পাত উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানা রয়েছে। ইস্পাত খাতে ছোট ও সনাতনী কারখানার সংখ্যাও অনেক।

উদ্যোক্তারা জানান, ২০১৮ সালে রড, ঢেউটিন, পাইপসহ ইস্পাতপণ্য ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ৬৯ লাখ টন। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর হিসাব করে প্রতি টন ইস্পাতপণ্যের গড় দাম পড়ে ৬০ হাজার টাকা। এ হিসাবে রডসহ ইস্পাতপণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকার।

প্রায় ৬৭ বছর আগে ১৯৫২ সালে চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে মোহাম্মদী আয়রন অ্যান্ড স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের কারখানার যাত্রা শুরু হয়। এটিই ছিল দেশভাগের পর এই অঞ্চলের প্রথম রড তৈরির কারখানা। একই বছর কারখানাটির পাশে গড়ে তোলা হয় ইস্ট বেঙ্গল স্টিল রি–রোলিং মিলস। আকবর আলী আফ্রিকাওয়ালার তিন ভাই কারখানাটি গড়ে তোলেন। এটিই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নাম বদলে হয় বাংলাদেশ স্টিল রি–রোলিং মিলস বা বিএসআরএম। তাদের দেখানো পথ ধরেই গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রায় ১০টি ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে।

শুরুর দিকে কারখানা দুটির মধ্যে মোহাম্মদী আয়রন অ্যান্ড স্টিল ওয়ার্কস এখন আর নেই। সেই কারখানাটিসহ ষাটের দশকে চালু হওয়া পাঁচটি কারখানা কিনে নেয় ইস্ট বেঙ্গল বা বিএসআরএম গ্রুপ। এই গ্রুপ বর্তমানে ইস্পাত খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেশে প্রথম ১৯৮৭ সালে ৬০ গ্রেড রড উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৮ সালে বহুতল ভবন নির্মাণে উচ্চশক্তির রড এক্সট্রিম ৫০০ ডব্লিউ বাজারজাত শুরু করে প্রতিষ্ঠান।

সম্ভাবনা থাকায় ইস্পাত খাতে বিদেশি বিনিয়োগও আসছে। বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ইস্পাতপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জাপানের নিপ্পন স্টিল অ্যান্ড সুমিতমো মেটাল বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিপ্পনের পরিচালক নমুরা ইউচি ঢাকায় এসে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে ১০০ একর জমি ইজারা নেওয়ার চুক্তি করেছেন। যৌথ বিনিয়োগে নিপ্পনের ইস্পাত কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে।

এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। জানতে চাইলে বিএসআরএম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, নির্মাণকাজের ইস্পাতপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে প্রতিবছর চাহিদা বাড়ায় বিদ্যমান কারখানাগুলো উৎপাদন সম্প্রসারণ করছে। এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগের দরকার নেই। কারণ, দেশে আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো নির্মাণে দেশীয় উৎপাদিত পণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

ইস্পাত ব্যবসায় এক যুগের বেশি সময় ধরে আছে জিপিএইচ ইস্পাত। প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল বলেন, বাংলাদেশেই এখন বিশ্বমানের ইস্পাতপণ্য তৈরি হচ্ছে। গুণগত মানের ব্যাপারেও গ্রাহকেরা এখন অনেক সচেতন। এ জন্য উচ্চশক্তির ইস্পাতপণ্য তৈরিতে জিপিএইচ ইস্পাত বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। আগামী মাসে উৎপাদন শুরু হলে ইস্পাত খাতে বাংলাদেশে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে রপ্তানিও হচ্ছে। গত ২০১৮–১৯ অর্থবছরে ৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার লৌহ ও ইস্পাতপণ্য রপ্তানি হয়েছে। তার আগের অর্থবছর রপ্তানি হয়েছিল ৪ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। সেই হিসেবে গত অর্থবছর রপ্তানি বেড়েছে ৩০ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন বলেন, ইস্পাত খাতের ব্যবসা প্রতিবছর গড়ে ১৫ শতাংশ করে বৃদ্ধি পায়। গত বছর সেটি হয়েছিল ১৭ শতাংশ। চলতি বছরের বাজেটে কাঁচামালের ওপর শুল্ক ও কর বাড়ানোর কারণে ইস্পাতের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। তবে বাজার একসময় ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ, দেশে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়নকাজ হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে ইস্পাত খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। তবে আগামীতে যারা নতুন প্রযুক্তি আনতে পারবে, তারাই টিকে থাকবে।’

সিমেন্ট খাতে ৩৪ কোম্পানি

দেশে গত বছর সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ৩ কোটি ১৩ লাখ টন। গত বছর গড়ে প্রতি টন সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার টাকায়। এ হিসাবে ২০১৮ সালে সিমেন্টের বাজারের আকার ছিল প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সালে দেশের সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ টন। সেই হিসাবে সিমেন্ট খাতে গত বছর প্রায় ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সিমেন্ট খাতের প্রতিষ্ঠান আছে ৩৮টি। তবে বর্তমানে উৎপাদনে আছে ৩৪টি।

দেশীয় সিমেন্ট ব্যবসায়ীরা জানান, উৎপাদনে থাকা ৩৪ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৭ কোটি ৩০ লাখ টন। তবে কার্যকর উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ টন। তার বিপরীতে চাহিদা প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ টন। দেড় দশক আগে সিমেন্ট রপ্তানির দ্বার খুললেও সেটি খুব বেশি এগোতে পারেনি। গত ২০১৮–১৯ অর্থবছরে মাত্র ১ কোটি ডলারের সিমেন্ট রপ্তানি হয়েছে।

সিমেন্ট খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তারা কিং ও বসুন্ধরা এই দুই ব্র্যান্ড নামে সিমেন্ট বাজারজাত করে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ ও খুলনার মোংলায় তাদের দুই কারখানার বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা যথাক্রমে ২৪ লাখ ও ২৬ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিন টন।

জানতে চাইলে বসুন্ধরা গ্রুপের সিমেন্ট খাতের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) খন্দকার কিংশুক হোসেইন বলেন, আগামী বছর কিং ব্র্যান্ড সিমেন্টের উৎপাদনক্ষমতা ১২ লাখ মেট্রিক টন এবং বসুন্ধরা সিমেন্টের উৎপাদনক্ষমতা ১০ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধি পাবে। সব মিলিয়ে ২০২০ সালে বসুন্ধরা গ্রুপের সিমেন্ট উৎপাদনক্ষমতা হবে ৭৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন।

সিমেন্ট খাতের আরেক শীর্ষ প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। তাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনিক সিমেন্টের (ফ্রেশ ও মেঘনাসেম ডিলাক্স ব্র্যান্ড) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘সরকারি মেগাপ্রকল্প ও উন্নয়নমূলক কাজে সিমেন্টের চাহিদা যে হারে বেড়েছে, ব্যক্তি খাতে সেভাবে বাড়েনি। আমরা আশা করছি, সরকারি বড় বড় উন্নয়নকাজ শেষ হলে ব্যক্তি খাতের চাহিদা আবার বাড়বে। কারণ, সরকারি উন্নয়নকাজের পরই ব্যক্তি খাত এগিয়ে আসে।’

উদ্যোক্তারা বলছেন, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) সিমেন্টের বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ। বছর শেষে তা ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে থাকবে। প্রথম ৯ মাসে আড়াই কোটি টন সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে। বছরে শেষে বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ টনে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির (বিসিএমএ) সভাপতি এবং এম আই সিমেন্টের (ক্রাউন সিমেন্ট) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির বলেন, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষমতাই সিমেন্ট খাতের প্রধান সমস্যা। সে জন্য বড় উৎপাদনকারীরা মূল্যযুদ্ধের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তা ছাড়া সিমেন্ট খাত কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজটের কারণে কাঁচামাল পেতে অতিরিক্ত সময় ও খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে চলতি বাজেটে শুল্ক ও কর কাঠামো পরিবর্তন করার কারণে সিমেন্টকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল খাতে পরিণত করেছে।

আলমগীর কবির বলেন, সিমেন্টশিল্প সম্পূর্ণভাবে কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভর হওয়ায় রপ্তানির সুযোগ কিছুটা কম। উত্তর–পূর্ব ভারত ছাড়া আর কোথাও রপ্তানির তেমন সুযোগ নেই। তবে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত এবং নেপালের সঙ্গে ভারতীয় করিডরের ব্যবহার সহজ হলে দেশ দুটিতে সিমেন্ট রপ্তানির ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

সিরামিকে নতুন বিনিয়োগ

তৈজসপত্র, স্যানিটারি ও টাইলস—এই তিন ধরনের সিরামিক পণ্যের দেশীয় চাহিদার বড় অংশই বর্তমানে পূরণ করতে পারছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান। নতুন বিনিয়োগও আসছে। উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরামিক পণ্যের আমদানি কমছে। অন্যদিকে রপ্তানিও হচ্ছে। সব মিলিয়ে সিরামিক খাতে শক্ত ভিত তৈরি করে নিচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান।

দেশে সিরামিক খাতের গোড়াপত্তন হয় ষাটের দশকে। ১৯৫৮ সালে বগুড়ায় প্রথম তাজমা সিরামিক কারখানা হয়। তবে আধুনিক সিরামিকশিল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬২ সালে। তখন প্রতিষ্ঠা হয় পাকিস্তান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ। স্বাধীনতার পর সেটি পিপলস সিরামিক নামে পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের আওতায় মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি (বিআইএসএফ) হয়।

বেসরকারি খাতে প্রথম কারখানা মুন্নু সিরামিক হয় ১৯৮৫ সালে। পরে আরও অনেক উদ্যোক্তা সিরামিক খাতে বিনিয়োগ করেন। উন্নত মানের সিরামিক পণ্য উৎপাদনে মুন্নু, শাইনপুকুর, পিপলস, ফার, প্রতীক, আরএকে, সিবিসি, স্ট্যান্ডার্ড, আবুল খায়ের, ইউরো বাংলা, চারু, মধুমতি, স্টার, প্যারাগনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত কয়েক বছরে সিরামিক খাতে নতুন করে ব্যবসায় এসেছে ডিবিএল ও এনভয় গ্রুপ।

বাংলাদেশ সিরামিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিসিএমইএ) জানায়, সিরামিক খাতে বর্তমানে ৬৬টি প্রতিষ্ঠান আছে। তার মধ্যে টাইলসের কারখানা ২৮টি। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৪ হাজার ৯৭৫ কোটি ডলার। গত ২০১৭–১৮ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার সিরামিক টাইলস বিক্রি হয়েছে। রপ্তানি হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার টাইলস।

২০১৭ সালে গাজীপুরের মাওনায় দৈনিক ৪০ হাজার বর্গমিটার টাইলস উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে ডিবিএল সিরামিক কারখানা যাত্রা শুরু করে। এতে ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ডিবিএল গ্রুপ। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি নতুন ধরনের পণ্য বাজারে নিয়ে এসেছে।

তৈরি পোশাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ডিবিএল গ্রুপের সিরামিকের ব্যবসায় আসার গল্পটা অন্য রকম। গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেন, ‘ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক পোশাক কারখানা করেছি আমরা। তো কারখানা নির্মাণের সময় দেখা গেল, সময়মতো টাইলস দিতে পারছে না সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। নতুন সমস্যা। সমাধান কী? তখন ভাবতে ভাবতে আমরা নিজেরাই সিরামিক টাইলস কারখানা করার পরিকল্পনা করলাম।’

সিরামিক টাইলসে নতুন বিনিয়োগ করেছে শেলটেক গ্রুপ। গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের ভোলার কারখানার একটি ইউনিটে মেঝে (ফ্লোর) ও দেয়ালের (ওয়াল) টাইলস উৎপাদন শুরু হয়েছে। শিগগিরই বাকি দুটি ইউনিট চালু হবে। তখন টাইলসের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা দাঁড়াবে ৪ লাখ ৭৫ হাজার বর্গফুট। ‘শেলটেক টাইলস’ নামে সিরামিক টাইলস বাজারজাত করছে তারা।

জানতে চাইলে শেলটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আবাসন ব্যবসা করার কারণে টাইলসের একটি নিজস্ব চাহিদা আমাদের আছে। তা ছাড়া দেশীয় প্রতিষ্ঠান যেসব টাইলস উৎপাদন করে, তার বাইরেও চাহিদার ২০ শতাংশ আমদানি হয়। পাশাপাশি ঢাকার বাইরে অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাপকহারে হচ্ছে। সেখানে প্রচুর পরিমাণ টাইলস দরকার। সব মিলিয়ে টাইলসের ভালো সম্ভাবনা থাকায় আমরা বিনিয়োগ করেছি।

রঙের ব্যবসা বিদেশি কোম্পানির দখলে

বাড়ি নির্মাণে আরেক প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে রং। সেই রং উৎপাদনেও দেশ বর্তমানে মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। রঙের বাজার সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার। প্রতিবছর রঙের ব্যবসা ৬–৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, রং উৎপাদনে দেশে কোম্পানির সংখ্যা ৩৪। তার মধ্যে বিদেশি প্রতিষ্ঠান ৮টি। রঙের ব্যবসার ৮০ শতাংশই বিদেশি কোম্পানিগুলোর দখলে। তার মধ্যে বার্জার ৫০ শতাংশের বেশি ও এশিয়ান পেইন্টস ১৭ শতাংশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। পরের অবস্থানে আছে রক্সি, আরএকে, এলিট, নিপ্পনসহ কয়েকটি কোম্পানি।

১৭৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার ১৯৭০ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে প্রথম রঙের কারখানা করে। ১৯৯৯ সালে তারা সাভারে বড় পরিসরে কারখানা করে। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের রঙের বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে বার্জার।

জানতে চাইলে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম উল্লেখযোগ্য হারে না বাড়লেও জমির উচ্চ মূল্যের কারণের ফ্ল্যাটের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ফ্ল্যাট কেনার জন্য স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ মিলছে না। তাই আবাসন ব্যবসায় কয়েক বছর ধরে মন্দাভাব যাচ্ছে। সে কারণে রঙের ব্যবসা সেই হারে বাড়ছে না। তবে সরকার পর্যায়ে স্কুল–কলেজ ও হাসপাতাল এবং উপজেলা পর্যায়ে পাকা বাড়িঘর নির্মাণ হওয়ার কারণে রঙের ব্যবসায় ৬–৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে।

শুভংকর কর্মকার সাংবাদিক