বছরজুড়ে আলোচিত সাকিব

িবশ্বকাপ িক্রকেট ২০১৯–এ আফগানিস্তানের িবপক্ষে আক্রমণাত্মক সাকিব আল হাসান
িবশ্বকাপ িক্রকেট ২০১৯–এ আফগানিস্তানের িবপক্ষে আক্রমণাত্মক সাকিব আল হাসান

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে টিম হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ। প্রসঙ্গ সাকিব আল হাসান। অনুশীলনের প্রতি নিবেদন আর মাঠের সপ্রতিভ আচরণ দেখে নাকি তাঁর মনে হচ্ছিল, বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করার জন্যই গেছেন সাকিব। হতে পারে তিনিই হয়ে গেলেন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট!

মাহমুদ সাকিবের মধ্যে কি দেখেছিলেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে সাকিব ঠিকই বিশ্বকাপের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখেন ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা। শুধু কি বিশ্বকাপ! ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন মানেই তো সাকিবকে নিয়ে আলোচনা!

আলোচনা হয়েছে রোমান সানাকে নিয়েও। গত জুনে নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠে বাংলাদেশের তিরন্দাজ পেয়ে যান ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ। সেপ্টেম্বরে ফিলিপাইনে এশিয়ান কাপ র​্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টেও জিতেছেন সোনা। বছরের শেষ দিকে এসেও আলোচনায় সেই তিরন্দাজরাই। নেপাল এসএ গেমসে বাংলাদেশের রেকর্ড ১৯ সোনার মধ্যে ১০টিই তো আর্চারি থেকে!

নেতিবাচক আলোচনার কথা যদি বলেন, ২০১৯ সালকে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন মনে রাখতে পারে ক্যাসিনো–কাণ্ডের জন্যও। কিন্তু ইতিবাচক-নেতিবাচক সব আলোচনাতেই আর সবকিছুকে যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন সাকিব।

শুরুতে ভালোটাই বলা যাক। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে সাকিবের সঙ্গী হয়েছিল ডাবলিনের ত্রিদেশীয় সিরিজে করা দুটি অপরাজিত ফিফটি। সঙ্গে উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস। বড় আসরে বড় কিছু করার ক্ষুধা। বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে দুই ফিফটি, দুই সেঞ্চুরি। স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি দুটি করলেন আবার পরপর। সব মিলিয়ে ৬০৬ রান, সঙ্গে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাউদাম্পটনে পাওয়া ৫টিসহ ১২ উইকেট। এক আসরে ৫০০ রান আর ১০ উইকেট—কোনো অলরাউন্ডারের এমন পারফরম্যান্সই আগে দেখেনি বিশ্বকাপ ক্রিকেট।

মুদ্রার উল্টো পিঠটাও বোধ হয় সাকিবই দেখলেন প্রথম। অক্টোবরে হঠাৎই বাংলাদেশের ক্রিকেটে হইচই। বিসিবির সামনে ১১ দফা দাবি তুলে ধর্মঘটের ডাক দিলেন ক্রিকেটাররা। বড় সাহসী ছিল সেই আন্দোলনের পদক্ষেপ। বাংলাদেশের ক্রিকেটেই এর আগে এ রকম ঘটনা ছিল না। আরও অবাক করা ব্যাপার—এই দেশের ক্রিকেট থেকে যিনি যশ-খ্যাতি-অর্থ সবই পেয়েছেন, আন্দোলনের নেতা কিনা সেই সাকিব! নিজের চেয়ে অন্য ক্রিকেটারদের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েই হয়তো তাঁর ওই অবস্থান ছিল। সাকিব হয়তো ভেবেছিলেন তাঁর কণ্ঠস্বর ক্রিকেটারদেরও কণ্ঠস্বর হলে দাবিগুলো জোরালো শোনাবে। কিন্তু সেই আন্দোলনের ফলাফল দেখার আগেই দৃশ্যপটে পরপর নতুন দুটি বিতর্ক।

প্রথমে বিসিবির সঙ্গে চুক্তি অমান্য করে সাকিব একটি মুঠোফোন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে বসলেন। মাঠের খেলায় ধর্মঘট ডাকলেও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চে সাজানো কৃত্রিম উইকেটে ব্যাট করলেন দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। সেই দৃশ্য দৃষ্টি থেকে মুছে না যেতেই ঘটল আরও বড় কাণ্ড। সম্ভবত বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই সবচেয়ে বড় বিতর্ক সেটি।

বাংলাদেশের গর্ব সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। তিনি নাকি তিন–তিনবার স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও নিয়ম মেনে তা আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটকে জানাননি। আইসিসির দুর্নীতি দমন বিধি অনুযায়ী যা গুরুতর অপরাধ। সাকিবের সঙ্গে দীপক আগারওয়াল নামের এক ভারতীয় বাজিকরের খুদে বার্তা চালাচালির প্রমাণ হাজির করে তারা। সাকিবও সব অভিযোগ স্বীকার করে নেন। তথ্য গোপন করার অপরাধে সব ধরনের ক্রিকেট খেলা থেকে এক বছরের স্থগিতসহ মোট দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় তাঁকে। সাকিব এখন ক্রিকেট থেকেই নির্বাসিত।

কিন্তু উইজডেন তাদের দশকসেরা একাদশ নির্বাচনের সময় বিষয়টি আমলে নিল না। দশকজুড়ে সাকিবের পারফরম্যান্সই তাদের চোখে সব। এত কিছুর পরও সাকিব তাই বাংলাদেশের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে জায়গা পেয়েছেন মর্যাদাসম্পন্ন উইজডেনের দশকসেরা একাদশে।

এক বছরের মধ্যেই এত উত্থান-পতন। একজন তারকার পুরো ক্যারিয়ারটা যেন ১২ মাসেই দেখে ফেললেন সাকিব! বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ২০১৯ তাই সাকিবেরই বছর।