রবীন্দ্রনাথ মিশে আছেন আমাদের অস্তিত্বে

অদিতি মহসিন ও ফাহমিদা খাতুন। ছবি: আবদুস সালাম
অদিতি মহসিন ও ফাহমিদা খাতুন। ছবি: আবদুস সালাম

জাহীদ রেজা নূর: দুই প্রজন্মের রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী আপনারা। আপনাদের সঙ্গেকথা শুরু করি পুরোনো সময়কে ধরে। গত শতাব্দীর ষাটের দশক নানা কারণেই আমাদের দেশে তাৎপর্যপূর্ণ। তার একটি হলো, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এই সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা। ফাহমিদা আপা, আপনিসহ তৎকালের শিল্পীরা এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত রেখেছেন সে সময়। শুরুতে কি আমরা সেই সময়টা নিয়ে একটু কথা বলব?

ফাহমিদা খাতুন: আসলে যেটা হয়েছিল, বসন্ত উৎসব বা পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘর ছেড়ে বেরিয়ে বড় করে বাইরে করা, পঞ্চকবির গান করা—এসব প্রচলিত ছিল না তখন। সে সময় মূলত ঘরোয়া আসর হতো। ষাটের দশকে করতে করতে একটা জিনিস দাঁড়িয়ে গেল। আমরা বুঝতে পারলাম, এগুলো আমাদের জিনিস। এই যে নিজের সংস্কৃতি চিনে নেওয়া, তার প্রতি আনুগত্য—এগুলো মেনে নেওয়ায় স্বাধিকার আন্দোলন এগিয়েছে। এক ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে আমাদের গান করতে হতো।

২০১৫ সালে ছায়ানটে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে শিল্পীদের সমবেত সংগীত পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
২০১৫ সালে ছায়ানটে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে শিল্পীদের সমবেত সংগীত পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো

জাহীদ: অদিতি, আপনি কীভাবে পথ পাড়ি দিয়েছেন? আপনি যখন গান শুরু করেছেন, তখন বাংলাদেশ স্বাধীন। স্বাধীন দেশের প্রতিবন্ধকতাগুলো পরাধীন দেশের মতো হওয়ার কথা নয়।

অদিতি মহসিন: আমরা শুরু করেছি স্বাধীনতার পরে। আমি যখন শান্তিনিকেতনে গান শিখতে গিয়েছি, তত দিনে কিন্তু ক্ষেত্রটা তৈরি হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গান সমাজে গীত হচ্ছে, রীতিমতো অনেকেই গাইছেন। লোকজন ভালোবেসে শুনছেন। সে রকম সময় আমরা গান শিখতে গিয়েছি এবং গাইতে শুরু করেছি।

আমি বরং ইদানীং কিছুটা হতাশ হই। যখন গান শিখতে গিয়েছিলাম, তখন আমার ভেতরে গান গাইবার যে অনুপ্রেরণা ছিল, আজকে আমি বলব, ধীরে ধীরে আমরা বোধ হয় পিছিয়ে যাচ্ছি। আজ আমরা রবীন্দ্রনাথের গান কি নজরুলের গান গাই—অর্থাৎ সৃজনশীল বাংলা গান—সেই জায়গাটার কোথাও একটা ভাটা পড়েছে। রুচির অবক্ষয়, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, কোথায় যেন একটা...মানে রবীন্দ্রনাথের গান যেন গানই নয়, ‘প্রেস্টিজ আইটেম’। ঠিক আছে, রেখে দেওয়া হয়েছে, কোনো অনুষ্ঠানে গাইলে গাওয়া যেতে পারে—এ রকম একটা ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথ যে আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছেন, নজরুল যে মিশে আছেন, সেই জায়গাটা আমরা খোয়াতে বসেছি।

জাহীদ: এটা কি সময় বদলেছে বলে? বিশ্বরাজনীতিই তো এখন চরম ডানপন্থী হয়ে গেছে, তারই প্রভাব না তো এটা?

অদিতি: দেখুন, বৈশ্বিক পরিবর্তন, সেটা আমরা চাই বা না চাই, মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমি বাংলাদেশের কথা বলি, যে দেশ আমার ক্ষেত্র। আমি বলব, এটা বৈশ্বিক নয়। এখানে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আছে। মিডিয়ার একটা বড় আগ্রাসন আছে। আমরা ভারতের সমস্ত হিন্দি চ্যানেল, বাংলা চ্যানেল দেখছি। বাংলাদেশের যে চ্যানেলগুলো আছে, তাতে কোনো ভালো গানের অনুষ্ঠান কিন্তু দেখছি না।

ফাহমিদা: আমাদের দেশের টেলিভিশন মানে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কারোরই কিন্তু রবীন্দ্রসংগীতের জন্য আলাদা কোনো স্লট নেই, একমাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়া। মানুষের রুচি গঠনের কাজকে কি তারা কাজ বলে মনে করে না? কেন একটা টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লালনগীতির আলাদা স্লট থাকবে না?

অদিতি: ওই যে আপা, ‘খাবে না’। আমার মনে হয়, চ্যানেলগুলোতে যদি প্রতিদিন রবীন্দ্র-নজরুল-লালন-লোকগীতি—আমাদের যা নিজস্ব, সেটার জন্য এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা বরাদ্দ রাখা হয়, তাহলে রুচিশীল একটা কিছু হবে।

ফাহমিদা: আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের তো শ্রোতাদের কানটাও তৈরি করতে হবে। তা না করে ‘দর্শক-শ্রোতা খায় না বা নেয় না’—সেটা বলা কতটা সংগত?

জাহীদ: রবীন্দ্রসংগীতের ফিউশন হচ্ছে আজকাল। কেমন লাগছে তা?

ফাহমিদা: কলকাতার রেডিও-টিভি খুললে এই ফিউশন দেখা যায়। এ জিনিসগুলো আমাকে খুব কষ্ট দেয়। যাঁদের নিজের আলাদা কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে, তাঁরা তো সেটাই করতে পারেন। কেন রবীন্দ্রনাথের ওপর এই অত্যাচার? অন্যজনের গান ভেঙে এত কিছু করতে হবে কেন?

অদিতি: শুধু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তো নয় আপা, লালনের গান নিয়েও হচ্ছে।

জাহীদ: কিন্তু যিনি শুনছেন, তাঁর কাছে যদি তা ভালো লেগে থাকে?

অদিতি: রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় যেভাবে তাঁর গান গাওয়া হয়েছে, আজকের দিনে তো আমরা সেভাবে গাইছি না। আমরা কি-বোর্ড ব্যবহার করছি, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করছি। যুগের সঙ্গে পরিবর্তনটা এসেছে, কিন্তু সেটা রবীন্দ্রনাথের গান বলে চিনতে হবে।তখনই শ্রোতার ভালো লাগার ব্যাপারটা তৈরি হবে। আপনাকেই প্রশ্ন করি, একটা গানেরও কি উদাহরণ দিতে পারবেন, যা একেবারে ভিন্ন রকমভাবে গাওয়া (ভিন্ন যন্ত্রানুষঙ্গ বা ভিন্ন সুরে গাওয়া) এবং যেটা শ্রোতারা পছন্দ করেছে? আমি দেখেছি, রবীন্দ্রনাথের গান একেবারে নিজের মতো নিরীক্ষা করে যাঁরা গেয়েছেন, লোকজন কিন্তু তা গ্রহণ করেনি।

ফাহমিদা: আরেকটা ব্যাপার, সৃষ্টি করার জন্যও একটা ক্ষমতা বা যোগ্যতা লাগে। যে কেউ যদি ভাবে, আমি গানটাকে বদলে আরেক রকম করে ফেলব, এত সোজা তো নয়। যে কেউ কি রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে কাজ করবে? রবীন্দ্রনাথের গান ভেঙে কিছু করতে হলে তো আরেকটা রবীন্দ্রনাথ দরকার হবে। স্বাধীনতার পরপর লোকগান গাইল ব্যান্ডদল। কিন্তু কত দিন টিকল সেটা? মানুষকে তো মূল গানের কাছেই ফিরে আসতে হলো।

জাহীদ: ফাহমিদা আপা, আপনারা শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন তাঁদেরই, যাঁরা ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তাঁরা সেভাবেই শিখিয়েছেন। সন্‌জীদা খাতুনের লেখায় পড়ছিলাম, একটা শব্দ উচ্চারণের ক্ষেত্রেও তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন। এখন যাঁরা শেখাচ্ছেন, তাঁরা কি ততটা আন্তরিক? যাঁরা শিখছেন, তাঁরাও কি ঠিকভাবে শিখছেন? নাকি শেখার চেয়ে তারকা হয়ে ওঠার আগ্রহ প্রবল?

ফাহমিদা: কিছুটা সমস্যা রয়েই গেছে। আমি যাঁদের কাছে গান শিখেছি—মোহরদি (কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়) তো ছিলেনই, তারপর নীলিমা সেন। সুচিত্রা মিত্রেরও কিছু গান আছে ভালো। তারপর কলিম ভাইয়ের (কলিম শরাফী) কাছেও গান শিখেছি। সেই জিনিসগুলো আমি ছেলেমেয়েদের দিতে চেষ্টা করি। তবে আজকাল যাদের গান শেখাচ্ছি, অনেকেই ইংরেজি মাধ্যমে পড়া ছাত্রছাত্রী। তাদের অনেকেই ঠিক সেভাবে গানটাকে গ্রহণ করে না। তাদের বাবা-মা হয়তো জোর করে ঢুকিয়ে দিয়েছেন গান শেখার জন্য। অবশ্য এমন কিছু ছেলেমেয়ে আছে, যারা অন্য রকম।

অদিতি: সংগীত গুরুমুখী বিদ্যা। ফাহমিদা আপা কলিম শরাফীর কাছে শিখেছেন। সন্‌জীদা আপার কাছে শিখেছেন। রেকর্ড শুনে শুনে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান তুলতেন। আর আমি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে শান্তিনিকেতনে গিয়েছি, আমি খুব সৌভাগ্যবান যে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনের পাশে বসে গান শেখার সুযোগ পেয়েছি। রবীন্দ্রনাথের গান তাঁদের কাছে শুধু গান ছিল না, জীবনবোধের একটা অংশ ছিল। নিঃসন্দেহে আমরা সেভাবে গাইতে পারছি না। তাঁদের সমস্তটা আমরা নিতে পারিনি। আন্তিরকতার িবষয়ে আপনি ঠিকই ইঙ্গিত করেছেন, আমরা কি সেটা দিতে পারছি? আমার মনে হয় না ছেলেমেয়েদের আমরা সেটা দিতে পারছি।

জাহীদ: কারণ কী? এটা কি একাগ্রতার অভাব, নাকি যেভাবে সবকিছু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে, টেলিভিশন, রাতারাতি তারকা হওয়ার বাসনা?

অদিতি: সেটা একটা কারণ বটে। আরেকটা হলো পারিপার্শ্বিক অস্থিরতা। ফাহমিদা আপা যেটা বললেন, একটা ছেলে বা মেয়ে, ইংরেজি মাধ্যমে হয়তো পড়ে, বাবা-মা চাইছেন, তারা কোনো না কোনোভাবে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে থাকুক, গান করুক। কিন্তু চারপাশের যে অস্থিরতা, সেটা কাটিয়ে আমি রবীন্দ্রনাথের গানটা যে শিখব, গাইব—এই প্রবণতা বুঝি আজকাল হারিয়েও যাচ্ছে।

জাহীদ: ফাহমিদা আপাদের সময় একটা বন্ধন ছিল। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছ থেকে শিখতেন। এ সময়েও কি সেটা টিকে আছে? আপনার কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, আপনি কি কোনো সহশিল্পীর কাছ থেকে তা বুঝে নিতে চাইবেন? অদিতি কী বলেন?

অদিতি: দূরত্ব একটা আছে। সে দূরত্ব কেটে যাবে বলেই আশা করতে চাই। গানবাজনা যাঁরা করেন, তাঁদের মধ্যে যিনি বয়োজ্যেষ্ঠ, তাঁর কাছে তো আমি অবলীলায় জিজ্ঞেস করতে পারি, আচ্ছা, এই জায়গাটা কি আমার ঠিক হলো? আমার কি এভাবে গাওয়া উচিত? মনে পড়ছে, মাঝখানে আমি মাছরাঙা টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠান করতাম। সেখানে ফাহমিদা আপা একদিন অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। তিনি চাইলেন যেন আমি ‘চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমায়’ গেয়ে শোনাই। এ গানটা আমার অত বেশি গাওয়া হতো না। আপাকে আমি বললাম, আপা, আমি গাই, আপনি একটু শুনুন। যদি ঠিক থাকে, তবেই ক্যামেরার সামনে গাইব। এই ব্যাপারগুলো বোধ হয় একটু দরকার আছে।

ফাহমিদা: আমাদের ওই বন্ধনের একটা কারণ হয়তো আমরা যখন গান শিখেছি বা গান গাইছি সবাই একসঙ্গে, তখন প্রত্যেককে আমাদের সহযোদ্ধা বলে মনে হতো। যতই বাধা আসুক, আমরা সবাই এক। এইভাবে আমরা গান করেছি, এগিয়েছি। অনেকেই একে পেশা হিসেবে নিয়েছেন, এটা খারাপ কিছু না। কিন্তু পেশা হিসেবে নেওয়ায় অনেকের মধ্যেই রয়ে গেছে পেশাগত ঈর্ষা, যা আমার খুব খারাপ লাগে। একেকজন তো একেক দৃষ্টিকোণ থেকে গানটা উপস্থাপন করেন, কিন্তু আমি খুব দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করি, যাঁরা এখন গাইছেন, তাঁদের অনেকেই একে-অন্যের সম্পর্কে সমালোচনা করেন। খুব নির্দয়ভাবে বলেন। খুব খারাপ লাগে।

জাহীদ: অদিতি, তাহলে কি বন্ধনের জায়গাটা নড়ে গেল?

অদিতি: কিছুটা তো নড়ে গেলই।

জাহীদ: নাকি সামাজিক সম্পর্কগুলো বদলে যাচ্ছে, সেটাও একটা কারণ?

ফাহমিদা: হ্যাঁ হ্যাঁ, সামাজিক সম্পর্ক একটা বড় ব্যাপার।

অদিতি: হ্যাঁ, এটা বিচ্ছিন্নভাবেই হয়েছে। ফাহমিদা আপা যেমন বললেন, তাঁরা যখন গেয়েছেন, তখন একটা সংগঠনের ব্যানারে হয়তো অনুষ্ঠান হয়েছে। ‘ছায়ানট’ অনুষ্ঠান করেছে বা ‘সম্মিলন পরিষদ’। সেখানে কাউকে কেউ খারাপ কথা বলার জায়গায় নেই। এখন স্বতন্ত্রভাবে গানগুলো গাইছেন অনেকে, তাঁরা প্রত্যেকে নিজস্বতা নিয়ে গান গাইছেন। ভালো-মন্দ তো সব যুগেই ছিল, থাকবেও। তবে যে চর্চার কথা ফাহমিদা আপা উল্লেখ করলেন, সেটা তো নিশ্চয়ই ঠিক নয়।

জাহীদ: গুরুমুখী বিদ্যা তো বটেই সংগীত। কিন্তু এর পৃষ্ঠপোষণা তো জরুরি।

ফাহমিদা: হ্যাঁ, ভীষণ জরুরি।

অদিতি: গান শুধু গুরুমুখী নয়। এর পৃষ্ঠপোষণা খুব দরকার।

জাহীদ: হ্যাঁ, সে তো মোগল আমলের দিকে তাকালেই দেখতে পারি

অদিতি: ঠিক তাই। মোগলদের পৃষ্ঠপোষণা না পেলে, তানসেনকে সভাগায়ক না বানালে তানসেনের জন্ম হতো না। যেকোনো দেশে, সেটা পশ্চিমা বিশ্বেও, যেকোনো গুণীর, তিনি চিত্রশিল্পী হন কি সংগীতশিল্পী হন—গুণের কদর যদি জাতি, সমাজ, সরকার না করে—তবে সে দেশে গুণীর জন্ম হয় না। আমরা যদি এমন আশা করি: একসময় আমাদের সন্‌জীদা খাতুন ছিলেন, ফাহমিদা খাতুন ছিলেন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা হয়েছেন বা যদি আমার পর্যন্তও আসি—এঁরা গাইছেন, তবে এর পরবর্তী প্রজন্ম কেন গাইতে আসবে না? কথা হলো, ফাহমিদা খাতুন এ দেশে শিল্পী হিসেবে কী পেলেন? রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কী পেলেন? এগুলো ভেবে দেখার বিষয়। আমি শুধু অর্থনৈতিক দিকের কথা বলছি না। একজন গুণীকে সম্মান করা, স্বীকৃতি দেওয়ার যে চর্চা, সেটাই যদি না থাকে, তাহলে গুণী জন্মাবে না। এ যুগে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে ছায়ানটে গান শিখছে। ওদের মধ্যে কি প্রতিভা নেই? কিন্তু ওরা হারিয়ে যাচ্ছে কেন?

ফাহমিদা: এখন তো আর এই জিনিসগুলো থাকছে না। আমার শিক্ষকদের প্রতি যে শ্রদ্ধা ছিল, সেটা বুঝি কমে গেছে।

জাহীদ: আপনাদের গানগুলো কি ঠিকভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে?

ফাহমিদা: না। আমার খুব খারাপ লাগে ভাবলে। আসলে আমারও উচিত ছিল রেকর্ড করা। কিন্তু আমার তো সুযোগ ছিল না কলকাতায় গিয়ে রেকর্ড করার। আমার গাওয়া বহু গানই রেকর্ড করা হয়নি। এখন ভাবি, যেভাবে করতে চাই, সেটা বুঝি আর হবে না।

অদিতি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশন অবশ্য আমাদের অনেক গান নিয়ে সিডি বের করেছে। টেলিভিশনে আমাদের করা গানগুলো তাদের আর্কাইভে আছে কি না, আমার তা জানা নেই। অবশ্য আমি এ নিয়ে ভাবিও না। যুগের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি পরিবর্তিত হয়েছে। আগে ক্যাসেট ছিল, তারপর এল সিডি। এখন তো গান ইউটিউবে দেখছে মানুষ। অনলাইনে শুনছে। তাই মনে হয়, কোনো না কোনোভাবে হয়তো গানগুলো টিকে যাবে।