ভুল নাটকে, দর্শক
মোহাম্মদ রফিক
(মিতা হক, প্রিয় হে স্বজন)
ক্ষণিকের ভার, অকস্মাৎ
সমূহ বিপুল, বয়ে নেওয়া
মুখ থুবড়ে, হিমাচল খাদে
অতলের তলে, ডুবে যেতে যেতে
লবণ জলের, নিঃসরণ ,
তাও–বা সম্ভব, সহনীয়
পুরোটা আকাশ, ভেঙে পড়া
চৈত্রদাহ, পিঠের ওপর,
পথ পাড়ি, বালুসমুদ্দুর
মেনে নেওয়া, এত কী কঠিন;
তোমার প্রস্থান, নাটকের
শেষ অঙ্কে পর্দা না নামতেই
তবুও যদি না এতটাই
বা অশেষ বৈতরণী স্রোত,
পালা, সেঁকবিষে মধুরেণ
জড়ানো লতায়, স্মৃতিভ্রম
সংলাপের অদৃশ্য সংবেদ,
পাপড়ি খসে ঝরে যাওয়া ফুলে
ফেরা আর হবে না কখনো,
নাট্যমঞ্চে উলুর উৎপাত,
আলোর মহড়া, নিষ্প্রদীপ
চলুক না, সুপ্ত ভাঙনের
পথে, লুপ্ত অভিসার;
কে বাজায়, বাঁশিতে তোমারে
রূপসী পাণ্ডুলিপি
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
অনেক দূরে চিলের ধূসর ডানা
ঘষা আলোয় জীবন হয়ে ওড়ে
বাবু, একটু কলম সরান
আকাশখানি ফর্সা করে লিখি
মেঘের সাথে ছায়ার মিলন ভূমি
ধানসিড়িতে জীবন-জোয়ার দেখে
বাবু, একটু কলম থামান
নদীখানি ছায়ার ভেতর আঁকি
বন ছিল যে গোলপাতা-মৌ মিল
ক্যাম্পে পোড়ে জীবনবোধের গান
বাবু, একটু কলম নামান
সবুজ হাওয়ার মান-অভিমান শুনি
মন খোলা আর নগর-গাঁয়ের সন্ধি
পুব-পশ্চিমে দ্বন্দ্বে জীবনবাঁধা
বাবু, একটু কলম গোছান
বরিশাল কি কলকাতাকে বুঝি
আপনার ওই চিল পাহাড় থেকে আসে
আপনার ওই মেঘ মালয়-বাতাসে
আপনার ওই বন ঘাইহরিণীর পাশে
আপনার ওই মন অসম্ভবে ভাসে
বাংলাদেশের শ্বাসে...
মেট্টোপলিটন
জাহিদ হায়দার
নকশিকাঁথা
ওরা নিজেদের ঘরানার কালচার্ড,
পান্তা খায় কাঁটাচামচে।
প্রয়োজন বুঝে প্রেম বদলায়,
শূন্যতা ঢাকে মোড়কে।
তর্কে, নীতিবাগীশে
ফেরে পাশ উষ্ণ, ঠাণ্ডা বালিশে
স্বার্থমতো যতনে।
শর্ষে ইলিশের রেসিপি
তিনজন দ্যাখে গুগলে,
‘ওনিয়নটা লাগবে।’ ‘সল্ট কিন্তু অল্প।’
‘হোয়াইট মাস্টার্ড হাফ কাপ।’
‘গ্রিন চিলি দেবে পাঁচটা।’
সুগন্ধি ঘাম মোছে গ্রীবার ঢালুতে।
জানে, মুখোশের নেই মৃত্যু।
রবীন্দ্র-পদ্যে শাড়ির আঁচলে ওড়ে বৈশাখ।
‘টেগোর ওয়াজ আ জিনিয়াস’,
‘অ্যান্ড কালচার জাতির মিরর অলওয়েজ’,
যেন নতুন তথ্য বলল (!!)।
পড়া পানি খায় গোপনে,
বাংলা শব্দ বলে চিবিয়ে।
বন্যা যখন ঢোকে সিঁড়িতে
ব্যাংককে চলে যায় পরিবার,
চিল্ড বিয়ারে দূর করে হাঁসফাঁস।
পরিযায়ী পাখিদের গল্প
নববর্ষে বলে আমাদের।
নতুন রৌদ্রে কষ্টে মেকআপ গলে যায়।
শুভ্র শূন্যতায়
শাহ্নাজ মুন্নী
সেই সংরক্ত প্রণয় অচরিতার্থই থাকবে
আর কলঙ্কের ভয়ে তুমি পালিয়ে যাবে মথুরায় বা ইউরেনাসে
আমার অন্তহীন ক্রন্দনের স্রোত মিশে গেছে যমুনায় বা টেমসে
তবু জেনে রাখো সবগুলো চুম্বনের স্মৃতি ঠোঁটে জমিয়ে রেখেছি,
নীল দরজার ওপারে বাস করে এক মায়াবী দানব
তার ফেলে যাওয়া জুতায় রক্তের দাগ, বমির গন্ধ
তোমার প্রবল সংক্রমণ শক্তি
বইয়ে দিচ্ছে কঙ্কর ঝড়, ধসে যাচ্ছে জমিন, টের পাচ্ছ না
শ্বাসকষ্টের তীব্র টান পার হয়ে যে জীবনে এলাম
তা ধূলিময়, তা ঘূর্ণমান অন্ধকার, মানতে পারছ না...
ওগো কাদামাখা করুণ পথ তুমি কি আমায় বাড়ি নিয়ে যাবে
একটা প্রদীপ হবার জন্য জ্বলছি, একটা ঊর্ধ্বগামী সিঁড়ি ডাকছে
দুইটা ঘুঘু বিলাপের সুরে কেঁদে যায়
কালচে সন্ধ্যায়
শুকনা খড়ের মতো রাস্তায় পড়ে আছি
বাতাস জানে উড়ছি এক শুভ্র শূন্যতায়
বুদ্ধুরাম
মজনু শাহ
তুমি কোন কাননের বুদ্ধুরাম, গোলাপব্যাখ্যার কেরানি!
আকাশপথে যেতে যেতে ব্রাহ্মণী কাইট তোমাকে ভ্রুকুটি করে,
এখানে সবাই সবাইকে মিথ্যে বলছে ড্যাম স্মার্ট ভঙ্গিতে;
তুমিও বলো দু-একটা সত্যবিভ্রম যখন ঘূর্ণি ওঠে আর
উইন্ডমিলের ডানা খুলে পড়ে বিহ্বল কাশবনে।
দেখো হে বুদ্ধুরাম, উল্টোপিঠে চাঁদ লুকিয়ে ফেলে একরত্তি মেঘ
কী ভীষণ ধারালো, খড়ের বিছানায় শুয়ে আলস্যময় কাটিয়েছ সারাদিন
এখন একবার চুপি চুপি দেখে এসো নটীর পুজো—
ভয়-মেশানো সিঁড়ি, পাষাণ আর মায়াচুর পথ তোমাকে ডাকে।