আমাদের অর্জন আমাদের উদ্বেগ

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গত কয়েক দশকের অর্জন নিয়ে আমরা বাংলাদেশিরা খুবই গর্বিত, উল্লসিত। হওয়ারই কথা। স্বাধীনতার সময়টিতে বা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান ছিল অনেক নাজুক। এক–চতুর্থাংশ শিশুই তাদের পঞ্চম জন্মদিনে পৌঁছাতে পারত না। মাতৃমৃত্যুর হার ছিল আরও খারাপ—প্রতি ১ লাখ জীবিত জন্মে ৬০০ থেকে ৮০০ মা-ই প্রসবসংক্রান্ত কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেন। শুধু ডায়রিয়াতেই মারা যেত প্রায় আড়াই লাখ শিশু। জন্মহারের আধিক্য ছিল এতটাই সংকটপূর্ণ যে একে স্বাধীনতা–পরবর্তী সরকার ১ নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে। গড় আয়ুর অবস্থাও ছিল তথৈবচ। গড়ে একজন বাংলাদেশির ৪৫ বছরের আগেই জীবনপ্রদীপ নিভে যেত।

২০১৩ সালে ল্যানসেট সাময়িকী বাংলাদেশের ওপর একটি বিশেষ সংখ্যা বের করে, যেখানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নতির একটি ফিরিস্তি দেওয়া হয়। এটা এমন সময় প্রকাশিত হয়, যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধ তুঙ্গে, রাস্তায় রাস্তায় চলছিল মারামারি–কাটাকাটি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকের মতো আমরা যাঁরা এই ল্যানসেট প্রকাশনার পেছনে কাজ করছিলাম, তাঁরা ছিলাম উদ্বিগ্ন। বহির্বিশ্বে আমাদের সম্পর্কে অনেক বিরূপ ধারণা জন্মাচ্ছিল, যা জাতি হিসেবে আমাদের খাটো করার জন্য ছিল যথেষ্ট। এমন সময় এই ল্যানসেট প্রকাশনা। সহকর্মী আব্বাস ভূঁইয়া এবং আমি তখন বিশ্বের বিভিন্ন রাজধানীতে যাই এবং ল্যানসেট–এ প্রকাশিত দেশের উজ্জ্বলতর দিকটি তুলে ধরি। এই সফরে আমরা গিয়েছিলাম লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, অসলো, স্টকহোম, ব্রাসেলস, দিল্লি ও ইসলামাবাদ। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন অসলো ও স্টকহোমে। প্রতিটি স্থানেই আমরা দেখেছিলাম বাংলাদেশের প্রতি অন্য সব দেশের মানুষের আগ্রহ এবং অকৃত্রিম ভালোবাসা, যেটা আমাদের মধ্যে ব্যাপক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা একই দেশের অন্তর্গত ছিল। কলকাতা ইংরেজদের সর্বভারতীয় রাজধানী হওয়ার কারণে উন্নয়নের সব দৃষ্টি ছিল বঙ্গদেশের পশ্চিমাংশের দিকে। পূর্বাংশ, যা পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তান এবং আরও পরে বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, সে সময় শুধু কাঁচামাল সরবরাহকারী হিসেবেই ব্যবহৃত হতো। টেকসই উন্নয়নের তেমন কোনো চেষ্টাই হয়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী উন্নয়ন—সবকিছুতেই ছিল স্থবিরতা। পাকিস্তান সময়ে একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটে, উন্নয়নের সব কর্মকাণ্ডই তখন পশ্চিম পাকিস্তানকে ঘিরে। বাকিটা তো এখন ইতিহাস।

সরকারি ও বেসরকারি খাতের একাধারে বিনিয়োগের ফল হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্য খাত। ছবি: প্রথম আলো
সরকারি ও বেসরকারি খাতের একাধারে বিনিয়োগের ফল হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্য খাত। ছবি: প্রথম আলো

মুক্তিযুদ্ধ ছিল উন্নত বাংলাদেশ গড়ার মাইলফলক, এক সোপান। যেসব অশুভ শক্তি ও দৃষ্টিকোণ ছিল বাংলাদেশিদের এগিয়ে যাওয়ার পথের কাঁটা, সেসব শক্তি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চরমভাবে পর্যুদস্ত হয়। উদাহরণ হিসেবে পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টিতে দৃষ্টি দেওয়া যাক। পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে ছোট পরিবার গঠনের আন্দোলন শুরু হয় পঞ্চাশের দশকে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পরিবার পরিকল্পনা সমিতি গঠনের মাধ্যমে। কিন্তু কিছু ধর্মান্ধ লোক এবং সংগঠনের বিরোধী অবস্থানের কারণে আন্দোলন অনেকটা মুখ থুবড়ে ছিল। কিছু কিছু স্থানে সরকারি ও বেসরকারি পরিবার পরিকল্পনাকর্মীরা হিংসাত্মক বিরোধিতার শিকার হন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই অবস্থার মূলোৎপাটন ঘটে। পরিবার পরিকল্পনা বা উন্নয়ন, তথা নারী উন্নয়নবিরোধীরা রণে ভঙ্গ দেন আর তার স্থলে উন্নয়নবান্ধব প্রগতিশীল এক নতুন প্রজন্মের উদ্ভব ও প্রসার ঘটে, যার ফল আমরা পরবর্তী পর্যায়ে দেখতে পাই। এখন পরিবার পরিকল্পনা আর অস্পৃশ্য নয়। এটি আমাদের সংস্কৃতির, তথা সমাজের একটি অবিসংবাদিত অঙ্গ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

প্রথমেই বলেছি, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্জনে আমরা সবাই উল্লসিত। গড় আয়ুর কথাই যদি ধরি, বর্তমানে এটি প্রায় ৭৩ বছর। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নারী-পুরুষের বৈষম্যের ব্যাপারটিও। শারীরবৃত্তীয় কারণে পৃথিবীর প্রায় সব নারীর গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে বেশি, কিন্তু বাংলাদেশে ছিল তার ব্যত্যয়। ১৯৮০–এর দশক পর্যন্ত গড় আয়ুর ক্ষেত্রে নারীরা ছিল পিছিয়ে। গত কয়েক দশকে এটার আমূল পরিবর্তন হয়েছে—বাংলাদেশের নারী এখন পুরুষের চেয়ে দুই বছর বেশি জীবনী শক্তি পায়। এটা তো এক নীরব বিপ্লব!

উন্নয়ন একটি গতিময় বা ডায়নামিক বিষয়। বলা হয়, কোনো কিছুই আকাশচুম্বী নয়। মাতৃমৃত্যুর হারের দিক থেকে আমরা হয়তো ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছি, কিন্তু আরেক প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা আমাদের চেয়ে আরও অনেক এগিয়ে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ১৯৬। শ্রীলঙ্কায় এই হার ৩০ বা তারও কম। আমাদের কি তাহলে আত্মতুষ্টির সুযোগ আছে? আজকাল টেকসই উন্নয়ন বা এসডিজি নিয়ে পৃথিবীজুড়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশও জাতিসংঘের এই লক্ষ্যমাত্রার এক স্বাক্ষরদাতা, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার বেশির ভাগই প্রাতিষ্ঠানিক। এখন দেখা যাক, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের বর্তমান অবস্থান কোথায়? ভবিষ্যতেই–বা কী হতে যাচ্ছে?

মাতৃমৃত্যুর ব্যাপারটাই ধরা যাক। ওপরে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের এক জরিপে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল প্রতি ১ লাখ জীবিত জন্মে ১৯৬। জরিপটি ছিল মাতৃস্বাস্থ্যের ওপর তৃতীয় জরিপ, যা যুক্তরাষ্ট্রের এক নামকরা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের নিপোর্ট নামের এক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর আগের জরিপটি হয়েছিল ২০১০ সালে। দুই জরিপেই একই গবেষণাপদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছিল। মাতৃমৃত্যুসংক্রান্ত পরিসংখ্যান তুলনা করলে দেখা যায় যে ২০১০ থেকে ২০১৬—এই ছয় বছরে মৃত্যুহারের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ২০১০ সালে ছিল ১৯৪, ২০১৬ সালে ১৯৬। এসডিজি অনুসারে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যুর হার হওয়ার কথা ৭০। এ অবস্থায় আমাদের সন্ত্রস্ত হওয়ারই কথা। আসলেই কি আমরা এসডিজি অর্জন করতে পারব? এসডিজির স্বাস্থ্যসংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রায় আরও অনেক সূচক আছে, যেমন শিশুমৃত্যুর হার ইত্যাদি। ২০১৭ সালে পরিচালিত বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের রিপোর্ট এখনো সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি। বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত হিসাবমতে দেখা যাচ্ছে যে শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রেও তেমন কোনো উন্নতি বা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। মাতৃমৃত্যু বা শিশুমৃত্যুর এই নিশ্চল অবস্থায় বাংলাদেশের জনগণ উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। আমরা যাঁরা দেশের উন্নয়ন এবং উন্নয়ন গবেষণার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা স্বভাবতই অস্বস্তিতে ভুগছি। এমডিজির ব্যাপারে আমরা যেভাবে উল্লসিত ছিলাম, সেই একই মাত্রায় এসডিজির ব্যাপারে আমরা আন্দোলিত ও শঙ্কিত। প্রশ্ন হলো, কীভাবে আমরা এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে এগিয়ে যেতে পারি, যার ফলে এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ল্যানসেট সাময়িকী বাংলাদেশে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সংরক্ষণ বা ইউএইচসি অর্জনের সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন বের করে। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক গত কয়েক বছরে প্রকাশিত বিভিন্ন জরিপের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিলেন। বিভিন্ন ইউএইচসি সূচকের প্রবণতা পরীক্ষা করে গবেষকেরা বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেন, যা এই আলোচনায় বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। তাঁরা মত দেন যে দেশে স্বাস্থ্যরক্ষা ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে অনেক ইউএইচসি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। এর মধ্যে আছে শিশুদের টিকা, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি ও মুখে খাওয়ার স্যালাইন। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি সূচক যেমন গর্ভধারণ পরিচর্যা, পুষ্টি, একচেটিয়া মাতৃদুগ্ধ সেবন ও পয়োনিষ্কাশনে ২০৩০ সালের কভারেজ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। অন্যদিকে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নাগরিকের ব্যক্তিগত খরচ বেড়ে যাবে, ফলে সাধারণ জনগণের দরিদ্র হওয়ার প্রবণতাও দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

কিন্তু উল্লিখিত ঋণাত্মক অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। আমার মতে, একটি একক সমস্যা হলো সুশাসন। স্বাধীনতার পর সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর একাধারে বিনিয়োগের ফসল আমাদের এযাবৎকালের অর্জন। এটা প্রায় নিশ্চিত যে যেসব ক্ষেত্রে আমরা উন্নতি সাধন করেছি, তার বেশির ভাগই সহজসাধ্য। টিকাদান ও খাওয়ার স্যালাইন এগুলোর মধ্যে অন্যতম। অন্যান্য বিষয়, যা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অর্জনে প্রভূত সাহায্য করেছে, তা হলো স্বাস্থ্যবহির্ভূত বিভিন্ন কার্যক্রম, যেমন নারীশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন; ভৌতিক অবকাঠামো, যেমন সড়ক-মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ; বেসরকারি খাতের প্রসার, যেমন রপ্তানিমুখী পোশাক ও ওষুধশিল্প ইত্যাদি। এসডিজি অর্জনে আমাদের আরও নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হবে; যেগুলোর বেশির ভাগই হয়তো কষ্টসাধ্য। এই শেষোক্ত চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আছে পুষ্টি সমস্যা, নগরায়ণ, নতুন বা নতুন করে আসা সংক্রমণ, যেমন ডেঙ্গু, অসংক্রামক রোগ; যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার ও বহুমূত্র, দুর্ঘটনাসংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা, আর্সেনিক, জলবায়ু পরিবর্তন, বাল্যবিবাহ, বেসরকারি খাত এবং তার দায়, বয়স্কদের স্বাস্থ্য ও ইউএইচসির আর্থিক সংকুলান। এগুলোর প্রায় প্রতিটি নিয়ে এই সংখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

শেষ করার আগে একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমার মতে, সব সমস্যার মূল সমস্যা হলো সুশাসন, যেটা উতরানোর একমাত্র উপায় হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। বিজ্ঞজনেরা সুশাসনের অনেক উপাদান খুঁজে বের করেছেন। আমি সেসবের সব কটিতে যাব না। আমার মতে, সুশাসনের একটা বিশেষ নিয়ামক হলো সুচারু বাস্তবায়ন। ১৯৮০–এর দশকে ব্র্যাক সারা দেশে মুখে খাওয়ার স্যালাইন পরিচিত করেছিল। ব্র্যাকের কর্মীরা দেশের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে হাতে–কলমে স্যালাইন বানানোর পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত এটি সুচারু বাস্তবায়নের একটি অনন্য নজির হিসেবে পরিগণিত। ফলে আমার বলতে দ্বিধা নেই যে বর্তমানে বাংলাদেশে খাওয়ার স্যালাইন ব্যবহারের হার পৃথিবীর সর্বোচ্চ।

আবারও একবার মাতৃমৃত্যু হারের বিষয়টিতে ফিরে যেতে চাই। মাতৃমৃত্যু কমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো জরুরি প্রসূতিসেবা। সন্তান জন্মদান একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। শতকরা ৯৮ ভাগ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মেই সন্তান জন্মগ্রহণ করে। শুধু দুই ভাগের বেলায় কোনো কোনো মায়ের জরুরি সেবার প্রয়োজন পড়ে এবং অতিদ্রুত এবং নিরাপদ ব্যবস্থা না নিলে মায়ের জীবন সংকটপূর্ণ হয়ে ওঠে। ২০১৬ সালের মাতৃস্বাস্থ্যসংক্রান্ত জরিপ রিপোর্টে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশে এমন সেবা অপ্রতুল। যেসব হাসপাতাল/ক্লিনিকে এই সেবা আছে, সেখানে ২৪ ঘণ্টাই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু ওই কথিত জরিপে পাওয়া তথ্য বলছে যে শতকরা মাত্র ৩৯ ভাগ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের উপস্থিতি ছিল, বাকি ৬১ ভাগ হাসপাতালে সেটা ছিল না। মাতৃমৃত্যু রোধে প্রথম পদক্ষেপই হবে এসব হাসপাতালে চিকিৎসকের উপস্থিতি ও আনুষঙ্গিক ওষুধপত্র ও যন্ত্রপাতির জোগান রাখা। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এটা একটা অতিপ্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত।

শোনা যায় যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপরিউক্ত জরিপের ফলাফল এবং মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হারের স্থবিরতার বিষয়টি এড়িয়ে চলেছেন। এই অস্বীকৃতি আমাদের এগিয়ে চলায় কাল হয়ে দেখা দিতে পারে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা যে অর্জন করেছি, সেই ধারাবাহিকতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আত্মতুষ্টি যেন কোনোভাবেই আমাদের এই পথ থেকে বিচ্যুত করতে না পারে।

ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী : (ব্র্যাকের ভাইস চেয়ারপারসন)