ইচ্ছে করে আবার স্যারের কাছে যাই
আমার প্রিয় শিক্ষক আমার প্রিয় মুখ। যেদিন মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে চলে আসলাম সেদিন মনে হলো প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। বাস্তবে দূরে থাকলেও প্রিয় মানুষটির কথা সবসময় চলার পথের পাথেয় হয়ে রয়ে যায়।
আমার প্রিয় শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ আনোয়ার। শুধু শিক্ষকই নয় একজন ভালো বন্ধুও বটে। সাহসী, ত্যাগী, মেধাবী, কৌশলী, ভদ্র আমার প্রিয় শিক্ষক। ছাত্র হিসেবে ওনার সঙ্গে যত স্মৃতি আছে তা ভোলার মতো নয়। তিনি আমাকে সঠিক মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে একজন আদর্শ মানুষ হওয়া যায়। একজন মানুষ একটা সমাজ তথা একটা দেশ কীভাবে উন্নতি সাধন করতে পারে তার শিক্ষাও আমি স্যারের কাছে পেয়েছি। স্যারের মুখের নীতি কথা গুলো ভোলা অসম্ভব। তার শাসন, আদেশ, নিষেধ, উপদেশ সব আজ মনে পড়ে। ইচ্ছে আবার স্যারের কাছে চলে যায়।
স্কুলের বেঞ্চে বসে স্যারের লেকচার গুলো নতুনভাবে শুনি। আজ বয়স বাড়াটাও একটা পাপ মনে হয়। যদি বয়স না বাড়তো তাহলে প্রিয় মুখগুলোকে ছেড়ে আসতে হতো না। স্যারের সঙ্গে কত স্মৃতি আছে। একদিন স্যারের ইংরেজি ক্লাসে পড়া পারিনি বলে দাঁড় করে রেখেছিলেন। আমার মতো অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিল সেদিন। স্যার আমাকে বেত আনতে পাঠালেন। আমি মনে মনে ভাবছিলাম আমি বেত নিয়ে আসব সেই উছিলায় হয়তো স্যার আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু না স্যার আমাকেও বাদ দেয়নি। সবার সঙ্গে আমাকেও পড়া না পারার শাস্তি দিয়েছিলেন। স্যারের অনুপ্রেরণা আমাকে বিমোহিত করতো। স্যার সবসময় আমার নাম করত। আমাকে উৎসাহী করে তুলতেন। আমরা যখন শ্রেণি পরীক্ষায় প্রথম বা দ্বিতীয় হতাম স্যার তখন আমাদের কলম পুরস্কার দিয়ে প্রাণবন্ত করতেন। পুরস্কারটা ছোট্ট কলম হলেও আমার কাছে অনেক মূল্যবান ছিল। কয়েকবার স্যারের হাত থেকে কলম পুরস্কার পেয়েছি। তারপর থেকে মাথায় কলম পুরস্কারের নেশা ঢুকে গিয়েছিল।

কলম পুরস্কারের লোভে তখন তিন ঘণ্টার জায়গায় ছয় ঘণ্টা পড়াশোনা করতাম। এখনও রেখে দিয়েছি স্যারের সেই ভালোবাসার প্রতীক। যদিও সেই কলমের কালি অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। সে সময় স্যারের উৎসাহ না পেলে পরীক্ষায় ভালো করা কখন সম্ভব ছিল না। স্যারের তুলনা শুধু স্যার-ই। বইয়ে পড়েছি শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার কারিগর। সেটার বাস্তবরূপ আমি আনোয়ার স্যারের কাছে দেখেছি। স্যারের কাজকর্ম, কথাবার্তা, মন মানসিকতা, চিন্তা ভাবনা, আদর সোহাগ সবই আমাকে দারুণভাবে আনন্দিত করত। আমি ছাত্র হিসেবে মোটেও ভালো নই তবুও আমি মাধ্যমিকে যে ফলাফল হয়েছিল তার পেছনে স্যারের অবদান অনস্বীকার্য। স্যারের শিক্ষা কেবল পাঠ্য বইয়ে সীমাবদ্ধ ছিল না। স্যার শিক্ষিত হতে বলতেন না! সুশিক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানাতেন। একজন ছাত্র কীভাবে পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারেন সেটার শিক্ষা আমি স্যারের কাছে পেয়েছি। এটাই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া। স্যারকে কখনও বলা হয়নি ‘স্যার আপনাকে অনেক ভালোবাসি’। স্যারের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। অনেক ভালো থাকবেন আপনি। আপনিও আপনার হতে গড়া কারিগরগুলোর জন্য দোয়া রাখবেন যেন আপনার স্বপ্ন পূরণ করে প্রিয় বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে পরিচিত করতে পারি।
লেখক: এস.এম. শামীম