ক্রেতাকে বুঝেশুনে মালামাল কিনতে হবে

এম শামিম জেড বসুনিয়া, বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক, প্রকৌশলী
এম শামিম জেড বসুনিয়া, বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক, প্রকৌশলী

একটি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রড ও সিমেন্টের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ভালো মানের রডের কোনো বিকল্প নেই। দেশে উৎপাদিত রড ও সিমেন্টের গুণগত মান অনেক ভালো। তারপরও ক্রেতাকে ভবন নির্মাণের মালামাল বুঝেশুনে কিনতে হবে। প্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক শামিম বসুনিয়া প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মানুষ কীভাবে ভালো-মন্দ বুঝবে, তার সহজ উপায় আছে। যেমন যে রড চাপ পড়লে ভাঙে না, বরং পরিমাণমতো লম্বা হয়, এমন রড ভালো। বহুতল ভবনে এমন রডের ব্যবহার দরকার। অন্যথায় ভূমিকম্পের সামান্য ঝাঁকিতেই ভবন ধসে পড়তে পারে।

শামিম বলেন, মজবুত ভবন নির্মাণে রড, সিমেন্ট, কংক্রিট ও বালু—এসব উপাদান ভালো করে মেশাতে হয়। মেশানো যত ভালো হবে, ভবনও তত মজবুত হবে। ঢালাইয়ের সময় এটা খেয়াল রাখা দরকার। এ ছাড়া ঢালাইয়ের পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভবনের ছাদ ও দেয়ালে পানি দিতে হয়। তা করা না হলে ভূমিকম্পে ভবনধসের আশঙ্কা থাকে। তাই সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে আইন মেনে চলতে হবে। পরে যে কাজের জন্য ভবন তৈরি করা হয়েছে, সেই কাজের জন্য নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিত করার সনদ (অকুপেন্সি সার্টিফিকেট) নিতে হবে।

এই প্রকৌশলী বলেন, স্থাপনা বা বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে যথাযথভাবে ‘বিল্ডিং কোড’ মানার বিধান আছে। এই কোডে সব ধরনের ভবনে আলো-বাতাস চলাচল ও নিরাপত্তাব্যবস্থা, ভারবহনের ক্ষমতা, নির্মাণপ্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত নীতিমালা উল্লেখ করা আছে। কিন্তু সরকারের সঠিক নজরদারির অভাবে মানুষ তা মানছে না। শহর-গ্রামে যে যার মতো করে ভবন নির্মাণ করছে। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে এই প্রবণতা বেশি। এতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ভবনধসের আশঙ্কা থাকে। তাই এই বিষয়টিতে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করতে হবে।

শামিম বসুনিয়া বলেন, ‘বছরখানেক আগে দেশে কয়েকটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। তখন “বিল্ডিং কোড” নিয়ে হইচই শুরু হয়। ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয় নিয়েও নানা পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয় সরকার। কিন্তু ভূমিকম্পে যাতে আমাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়, এই দিকে কারও খেয়াল নেই। পুরান ঢাকার নবাবপুরে ভূমিকম্পে একসঙ্গে চার থেকে পাঁচটি বহুতল ভবন ধসে পড়লে পরবর্তী সময়ে উদ্ধারসক্ষমতা আমাদের নেই। কারণ, এই এলাকা অনেক ঘনবসতি। একটি ভবনের সঙ্গে আরেকটি লাগোয়া। সড়কগুলোও অনেক সরু। তাই উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা অনেক কঠিন হবে।’

শামিম বসুনিয়ার মতে, একটি বহুতল ভবন নির্মাণের আগে একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে হবে। তাঁকে দিয়ে ভবনের নকশা তৈরি ও যথাযথ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে হবে। স্তম্ভের সঙ্গে ভবনের বিমগুলো মজবুত করে বাঁধতে বা সংযোগ দিতে হবে। কারণ, ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে বিম ও স্তম্ভের সংযোগে ত্রুটির কারণেই অধিকাংশ ভবন ধসে পড়ে। এর সঙ্গে কংক্রিট ও বালু ভালোও হওয়া দরকার। তাই একজন ভবনমালিকের দায়িত্ব বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা।