বিদায় নেলসন ম্যান্ডেলা!

নেলসন ম্যান্ডেলা
নেলসন ম্যান্ডেলা

২০১৩ সালে পৃথিবী তার সর্বকালের সেরা সন্তানদের একজনকে হারায়। গত ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শান্তি, সমঝোতা ও মিলনের প্রতীক, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাষায়, নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন ‘সবচেয়ে প্রভাবসম্পন্ন, সাহসী ও অতিশয় ভালো মানুষদের অন্যতম’, যিনি ‘ইতিহাসকে নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং আমাদের নৈতিক বিশ্বকে ন্যায়বিচারমুখী করেছেন’। নোবেলজয়ী মানবতাবাদী নেতা আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু বলেন, ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে তিনি আমাদের মাঝে নেলসন ম্যান্ডেলাকে পাঠিয়েছিলেন, যিনি নিজগুণে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছিলেন।’
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের কুনু গ্রামে ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন নেলসন ম্যান্ডেলা, যাঁর ৯৫ বছরের জীবনের দীর্ঘ ২৭টি বছরই কেটেছে নিপীড়ক শাসকের কারা প্রকোষ্ঠে। ১৯৪৪ সালে তিনি যোগ দেন কৃষ্ণাঙ্গ মুক্তি সংগঠন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে (এএনসি)। শ্বেতাঙ্গ শাসকদের বর্ণবাদী নীতির বিরুদ্ধে এএনসির সংগ্রামের মূল আদর্শ ছিল ‘সাদা-কালো ভেদাভেদ নেই, সব মানুষের সমান অধিকার’। সুদীর্ঘ সেই সংগ্রামের পদে পদে ম্যান্ডেলা নিগৃহীত ও নিপীড়িত হয়েছেন। প্রথমে তাঁদের আন্দোলন ছিল অহিংস। কিন্তু ১৯৬০ সালে শার্পভিলে নিরীহ কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর সরকারি বাহিনীর গণহত্যা ও এএনসিকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার পর তাঁরা অহিংস নীতি পরিত্যাগ করেন। ১৯৬২ সালে ম্যান্ডেলা ও তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধাকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৬৪ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে পাঠানো হয় রবেন দ্বীপের কারাগারে। দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি পান।
কিন্তু ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে এএনসি প্রতিশোধের পথে না গিয়ে শান্তি ও সমঝোতার পথে অগ্রসর হয়। ডব্লিউ ডি ক্লার্কের সরকারের সঙ্গে মিলে বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সর্বজনীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৯৩ সালে তাঁরা যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। ১৯৯৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম সর্বজনীন সাধারণ নির্বাচনে এএনসি ও নেলসন ম্যান্ডেলা বিজয়ী হয়ে দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি গঠন করেন ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’, যা বর্ণবাদী সময়ের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তদন্ত ও অনুসন্ধান করে। ১৯৯৬ সালে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান রচনার তত্ত্বাবধান করেন। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বারে মতো অংশ না নিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
ক্ষমা ও পুনর্মিলনের আদর্শের বাস্তব প্রয়োগের মধ্য দিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা বিশ্বসভ্যতার জন্য বিরাট অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁকে অনেকে মহত্তম গান্ধীবাদী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর সম্মানে সারা পৃথিবী শোক পালন করেছে। বাংলাদেশেও তিন দিন জাতীয় শোক পালন করা হয়েছে।
 শরিফুল ইসলাম ভুঁইয়া