বৈষম্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ চাই

পাঁচ তরুণের সঙ্গে আড্ডায় এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী
পাঁচ তরুণের সঙ্গে আড্ডায় এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী

প্রশ্ন:প্রথম আলোর তারুণ্য জরিপে দেখা গেছে, চাকরির পরীক্ষায় প্রতি পদের বিপরীতে গড়ে আবেদন করছেন ২০৬ জন চাকরিপ্রার্থী। তার মানে, কাজের সংকট আছে। অন্যদিকে অধিকাংশ চাকরিদাতা বলছেন, যোগ্য কর্মীর অভাবে চাকরি দিতে পারছেন না। তরুণেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যা পড়ে আসছেন, তা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজে লাগছে না। এ অবস্থায় পড়াশোনার পদ্ধতিতে কি কোনো পরিবর্তন আনা প্রয়োজন? এ জন্য তরুণদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী? 

ফারহানা জামান 

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক

জামিলুর রেজা চৌধুরী: এ জন্য তরুণদের দায় অবশ্যই আছে। তবে আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে বেশি দায়িত্ব যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বিভিন্ন পর্যায়ে কী বিষয় পড়ানো হবে, কী সিলেবাস হবে তা পরিচালনা করেন, তাঁদের। একটা অভিযোগ অনেক দিন থেকে শুনে আসছি, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে স্নাতক শেষে যারা কর্মসংস্থানে যোগ দিচ্ছে, তাদের চাকরিদাতারা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না। তাঁদের চাহিদামতো দক্ষ কর্মী পাচ্ছেন না। এটা নিয়ে বহু বছর ধরে বহু সেমিনার হয়েছে। চাকরিদাতাদের একটা প্রত্যাশা থাকে যে শিক্ষার্থীরা যেদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগ দেবে, তার পরের দিনই তারা এই প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে। অন্য দেশে ব্যাপারটা এ রকম না। একজন চাকরিদাতা যে বিষয়ে কর্মী চান, তিনি দেখেন চাকরিপ্রার্থীর সে বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান (বেসিক নলেজ) ঠিক আছে কি না। এরপর তাঁরা তাকে এক–দুই বছর একটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ উৎপাদনমুখী করে তোলেন। তথ্যপ্রযুক্তির খাতে যেসব বড় কোম্পানি আছে, বিশেষ করে ভারতে যেসব কোম্পানি গত ২০ বছরে সফটওয়্যার রপ্তানিতে বেশ নাম করেছে, তাদের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনায় যেটা বুঝেছি সেটা হলো, তাঁরা যে কাজের জন্য কর্মী চান, সে বিষয়ে নতুন চাকরিপ্রার্থীর মৌলিক জ্ঞান আছে কি না তা দেখেন। যেমন কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজে ল্যাঙ্গুয়েজের কাজ থাকে, সেখানে চাকরিপ্রার্থীর ল্যাঙ্গুয়েজের মৌলিক জ্ঞান আছে কি না দেখেন। তাঁরা বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কাজে লাগানোর জন্য প্রশিক্ষণ আমরাই দেব।’ এ জন্য তাঁদের নিজস্ব একাডেমি আছে। এটাকে অনেকে ‘ফিনিশিং স্কুল’ বলে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার শেষ পর্যায়ে চাকরিদাতারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা পূর্ণ করার দায়িত্ব নেন। বাংলাদেশের সমস্যা হলো, এখানে এ রকম বড় কোম্পানি এখনো তৈরি হয়নি, যারা এ রকম উদ্যোগ নেবে। 

আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে যে বড় খাত তৈরি পোশাক, সেখানকার ওপরের দিকের কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ আশপাশের দেশ থেকে আসছে। এত বছরেও কেন আমরা এই দক্ষতা অর্জন করতে পারলাম না? এটা একটা বড় প্রশ্ন। ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো না পারলেও বিজিএমইএ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ দিলে এ দিকটা উতরানো সম্ভব বলে আমি মনে করি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল দুর্বলতা হলো, এটি শৈশব থেকে মুখস্থনির্ভর। শিক্ষাব্যবস্থা এ অবস্থা থেকে বেরোতে পারছে না। 

পাস করার পর প্রথম এক–দুই বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন চাকরিপ্রার্থীরা প্রথম দিন থেকেই দক্ষ থাকবে না। তার জন্য সময় লাগবে। তাকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। 

প্রশ্ন: ঢাকা শহর বসবাসের মাপকাঠিতে পৃথিবীর সব শহরের শেষের দিকে থাকে। আবার বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ইত্যাদিতে ঢাকা পৃথিবীর শীর্ষে উঠে আসছে। এটার সমাধান কী? 

ডি এম জুনায়েদ কামাল

গণিত বিভাগ, মাস্টার্স শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জামিলুর রেজা চৌধুরী: বসবাসের যোগ্যতা নির্ণয় করার জন্য যে মাপকাঠিগুলো ব্যবহার করা হয়, তার অনেকগুলো আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয় বলে আমি মনে করি। যেমন একজন বিদেশির জন্য একটি স্কুল কী রকম হবে, এটা আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয় না। একজন বিদেশি কীভাবে এটাকে ব্যবহার করবেন, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে তালিকা করা হয়। অনেক বিদেশি কোম্পানির বিদেশি কর্মচারীরা ঢাকায় থাকার কারণে তারা বেতন একটু বেশি পায়। কারণ, ঢাকা বসবাসের অযোগ্য শহর।

আমাদের দেশের দৃষ্টিকোণ থেকেও ঢাকা শহরের অনেক দুর্বলতা রয়েছে। এটা সৃষ্টি হয়েছে গত ৩০–৪০ বছরের অবহেলা থেকে। আমরা অনেক সমস্যা চিহ্নিত করেছি কিন্তু কোনো কারণে সরকার এগুলোর সমাধান করেনি। ঢাকাকে একটি পরিকল্পিত মহানগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ১৮–১৯ বছর আগে একটি মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়, যা ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান নামে পরিচিত। ঢাকা শহরে কোথায় খোলা জায়গা থাকবে, কোথায় কোনো প্লট কীভাবে ব্যবহার করা হবে, এতে তার বিস্তারিত বিবরণ ছিল। ২০১০ সালে এর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সরকার এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে একটি গেজেটও বের করেছিল। 

পরিবেশের সমস্যা সবার জন্যই সমান। যেমন সবাই বায়ুদূষণের শিকার হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের পক্ষ থেকে সরকারকে অনেক সুপারিশ করেছিলাম। সেখান থেকে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। 

পানিদূষণ কমানোর জন্য হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সাভারে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে গিয়েও পাশের নদীতে এই ময়লাগুলো ফেলা হচ্ছে। ‘এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ স্থাপন করার কথা থাকলেও সেটা দেরি হচ্ছে। সমস্যা চিহ্নিত করে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। খোলা পায়খানা, বাড়িঘরের ড্রেন, কল-কারখানার বর্জ্য ইত্যাদির কারণে বুড়িগঙ্গার পানি দূষিত হচ্ছে। এসব আমরা সবাই জানি। 

ঢাকায় জলাবদ্ধতা, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ বেড়েই চলছে। তবে, সরকার যদি কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এগুলো থেকে অনেকাংশে বেরিয়ে আসা সম্ভব। এ জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ হতে হবে। 

যানজট নিয়ে আমি আগে কাজ করেছি। অনেক বছর পরে এ রকম একটি মহানগরের জন্য যে রকম গণযোগাযোগব্যবস্থা (পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম) প্রয়োজন, সেটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ব্যক্তিমালিকানার যোগাযোগব্যবস্থার মাধ্যমে এই ধরনের শহরের যানজটের সমস্যা সমাধান করা যাবে না। ঢাকার পরিবহনব্যবস্থা অবশ্যই গণযোগাযোগব্যবস্থা হতে হবে এবং ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। গণযোগাযোগব্যবস্থার মধ্যে আছে বাস ও এমআরটি। এ জন্য বেশ কয়েকটি লাইনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। একটি লাইনের কাজ শুরু হয়েছে, যেটার জন্য এই অঞ্চলে সাময়িক যানজটের অসুবিধা হচ্ছে। এই কাজ শেষে আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এটা চালু হলে যোগাযোগব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে। সব লাইনের কাজ শেষ হলে বেশ উন্নতি হবে। এ জন্য আমাদের আরও ১০ থেকে ১২ বছর অপেক্ষা করতে হবে। 

প্রশ্ন: উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে সমানে সমান পড়াশোনা করছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে ছেলেরা মেয়েদের থেকে অনেক এগিয়ে আছেন। এখানে মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক কম। কর্মক্ষেত্রেরও একই চিত্র। এখনো এমনটা হচ্ছে কেন? এই অবস্থার উন্নয়ন কীভাবে করা যায়? 

রাইয়ান কবির

কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

জামিলুর রেজা চৌধুরী: এই প্রশ্নের সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত নই। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কোনো বিভাগ আছে, যেখানে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। বুয়েটে একসময় আর্কিটেকচারে মেয়েরা বেশি ভর্তি হতো। আমাদের এখানে (এশিয়া প্যাসিফিক) ছেলেমেয়ের সংখ্যা ৫০-৫০। আমি যখন ব্র্যাকে ছিলাম তখন সেখানে এই হার ছিল ৬৫-৩৫। অভিভাবকেরা একটা বয়সের পর মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চান। সে জন্য উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ কম। আমেরিকার সঙ্গে প্রকৌশলে (ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে) তুলনা করে দেখা যায়, ছেলেমেয়েদের তুলনামূলক হারে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। তবে আমাদের এখানে আরও মেয়ে উচ্চশিক্ষায় আসতে সময় লাগবে। এটা আমাদের দেশের সামাজিক গঠনের (সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) কারণে হচ্ছে। আমাদের সমাজ এ বিষয়ে সচেতন নয়। তবে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে মেয়েদের শিক্ষা সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনার জন্য তারা উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত আগের তুলনায় বেশি আসছে। উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের আরও বেশি পরিমাণে আসা প্রয়োজন। 

প্রশ্ন: আমরা স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার করে ফেলেছি। অথচ দেশের বড় প্রকল্পগুলোতে এখনো বিদেশি প্রকৌশলী, পরামর্শকেরা কাজ করছেন। চাকরির বড় একটা বাজার বিদেশিদের দখলে। অন্যদিকে আমরা পাস করার পর কাজ পাচ্ছি না। তাহলে আমাদের ঘাটতি কোথায়? অন্যদিকে, আমাদের মেধাবীদের বড় একটা অংশ বিদেশে চলে যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে তাঁরা খুবই ভালো করছেন। এঁদের মধ্যে খুব কমই ফেরত আসছেন। বাকিদের ফিরিয়ে আনার উপায় কী? 

নাবিলা নওশিন 

রিসার্চ অ্যাসিস্টেন্ট, ক্লাইমেট চেঞ্জ ল্যাবরেটরি,

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি

জামিলুর রেজা চৌধুরী: একটা সময় আমরা বিদেশি সাহায্যনির্ভর ছিলাম। আমাদের উন্নয়ন বাজেটের একটা বড় অংশ বিদেশি সাহায্য থেকে আসত। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে এসেছি কিন্তু আমাদের মানসিকতা আগের মতোই রয়ে গেছে। এ জন্য কারণ দুটি। প্রথমটি হচ্ছে বিদেশের প্রতি আকর্ষণ ও দেশীয় পেশাজীবীদের প্রতি আস্থাহীনতা। আমি সব সময়ই চেষ্টা করেছি সরকারকে বোঝাতে যে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা খুবই মেধাবী। অন্যান্য দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরা প্রকৌশল পেশায় আসে না। কিন্তু বাংলাদেশে সবচেয়ে মেধাবী ছেলেমেয়েরাই এই পেশায় আসছে। দেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। তাঁরা তাই চান যে এখানে বিদেশিরাই ভালো হবে। তা ছাড়া বিদেশি সাহায্য পাওয়ার ব্যাপার আছে। অনেক সাহায্যকারী দেশ তাদের দেশের প্রকৌশলী নিতে বলে। এমনকি এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, যেখানে আমাদের দেশীয় প্রকৌশলীদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। সম্প্রতি পদ্মা সেতুর কাজে দেশি প্রকৌশলী নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। এটা শেষ হলে আশা করি আমরা বলতে পারব যে বড় কোনো কাজ আমরা করতে পারব। আমাদের দেশের কোম্পানি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সুযোগ পেলে বাংলাদেশের লোকেরাও কাজ করতে পারবে। এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশীয় প্রকৌশলীদের কাজের সুযোগ দিতে হবে।

আর যারা বাইরে চলে যাচ্ছে, তার বেশির ভাগই হতাশা থেকে। তারা মনে করছে দেশে থাকলে তাদের ভবিষ্যৎ নেই। তারা তাদের মেধার পূর্ণ কাজে লাগাতে পারবে না। তাই তারা বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে তাদের আসার সুযোগ আছে। ভারতের কিন্তু একই অবস্থা ছিল। কিন্তু এখন আবার তাদের সবাই ফেরা শুরু করেছে। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিতে হবে। এখানকার কাজের পরিবেশ উন্নত করতে হবে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষকের ঘাটতি আছে। আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি করতে পারলে বাইরের অনেকেই চলে আসবে এখানে। 

প্রশ্ন: আপনি কেন বিদেশ থেকে ফিরে এসেছিলেন? 

মোঃ নূরুজ্জামান নাদিম

জামিলুর রেজা চৌধুরী: আমি ১৯৬৮ সালে ফিরে আসি। আমি ভেবেছি যে দেশে যেই সংকটগুলো আছে, সেখানে আমি আমার অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাতে পারব। তা ছাড়া তখন শিক্ষকদের যে বেতন দেওয়া হতো, তা দিয়ে বাংলাদেশে সুন্দরভাবে চলা যেত। তা ছাড়া পরিবার একটি বড় কারণ ছিল। আমি বড় হয়েছি যৌথ পরিবারে। বিদেশ থেকে ফিরে এসে অনেক দিন যৌথ পরিবারের সঙ্গে ছিলাম। 

প্রশ্ন: ফিরে এসে আপনি অনুশোচনা করেছেন, নাকি এখানে ভালো আছেন? 

ফারহানা জামান 

জামিলুর রেজা চৌধুরী: ফিরে এসে আমার খুব একটা খারাপ লাগে না। অনেকেই ফিরে আসতে চান। এমনকি এফ আর খান (বিশ্বের অন্যতম উঁচু ভবন শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ারের স্থপতি) ১৯৭৪ সালে একবার আমাকে বলেছিলেন, তিনি দেশে ফিরে আসবেন। দেশের জন্য কাজ করবেন। 

প্রশ্ন: ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। আপনার কাছে সেই উন্নত বাংলাদেশ কেমন হবে? 

মোঃ নূরুজ্জামান নাদিম

মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, চতুর্থ বর্ষ

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ

জামিলুর রেজা চৌধুরী: উন্নত দেশ হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হলো সেই দেশে আইনশৃঙ্খলা থাকবে। আমাদের এখানে রাস্তাঘাটে বের হলে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারব কি না তার নিশ্চয়তা নেই। উন্নত বাংলাদেশে এমন অরাজকতা থাকবে না বলে আশা করি। উন্নত দেশ হওয়ার জন্য শুধু জিডিপি কিংবা মাথাপিছু আয়ের হিসাব করলেই হবে না, অন্য অনেক কিছু হিসাবে নিতে হবে। সম্প্রতি কয়েকটি জরিপে দেখা যায়, কিছু জায়গায় দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এই উন্নতি দিয়ে কিছু হবে না। আমরা বৈষম্যমুক্ত উন্নয়ন চাই। উন্নয়নের সুবিধা সবাই পেলেই তবে সত্যিকার উন্নয়ন হয়েছে বলা যাবে। গুটিকয়েক মানুষ কিংবা একটা গোষ্ঠীর উন্নয়ন দিয়ে সারা দেশের উন্নয়ন হিসাব করলে হবে না। আমি আশা করব, ২০৪১ সালের মধ্যে বৈষম্য কমে আসবে। সবার গড় আয় বাড়বে। কয়েকজন অতি ধনী হবে আর অন্যদের উন্নতি হবে না, সেটা চাই না। তারপর ঢাকা শহরের গাড়ির গতি হাঁটার গতির কাছাকাছি নেমে এসেছে। শহরের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে হলে দুই ঘণ্টা/তিন ঘণ্টা লাগে। তা ছাড়া ভালোভাবে ঢাকার রাস্তায় হাঁটাও যায় না। উন্নত বাংলাদেশ এসব সমস্যামুক্ত বসবাসযোগ্য একটা দেশ হবে, যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করা যাবে, গণযোগাযোগব্যবস্থা থাকবে। পর্যাপ্ত রেল, বাসের ব্যবস্থা থাকবে। অপরাধের হার কমে আসবে। পঞ্চাশের দশকে দেশে একটা খুন হলে কয়েক দিন পত্রিকার পাতায় হেডলাইন হতো। কিন্তু এখন যেন মৃত্যুর সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট ঘরে না পৌঁছালে আমাদের নজরেই আসে না। উন্নত বাংলাদেশে জীবন নিরাপদ হবে। যেখানে আধুনিক জীবন যাপনের জন্য সব ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকবে। পরিবেশের উন্নয়ন হবে। মানুষের জীবনে শান্তি থাকবে। নরডিক দেশগুলোতে (নরওয়ে, সুইডেন ইত্যাদি দেশগুলো) উন্নয়ন অনেক বেশি হয়েছে কিন্তু সেখানে আত্মহত্যার হারও বেশি। তার মানে মানুষের মধ্যে হতাশা অনেক বেশি। বাংলাদেশের উন্নয়ন ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া উচিত। এখানে কুসংস্কার থাকবে না।