মুজিববর্ষে স্বাধীনতা দিবস

১৯৭১ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে রাইফেল প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীদের কুচকাওয়াজ। ছবি: সংগৃহীত
১৯৭১ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে রাইফেল প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীদের কুচকাওয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

এবারে আমাদের স্বাধীনতা দিবস পড়েছে মুজিব-জন্মশতবর্ষে। মনে হয়, তার কিছু তাৎপর্য আছে।

বঙ্গবন্ধুর জীবনকে ইতিহাস একটা বিশেষ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চাইছিল। ১৯৭০-এর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও সাধারণ নির্বাচন। ১৯৭১-এর জানুয়ারি আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ-সদস্যদের সংবিধান রচনাসংক্রান্ত শপথবাক্য পাঠ, মার্চে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জাতীয় সংসদের অধিবেশন মুলতবি। পূর্ব বাংলায় বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক—এমন অসহযোগ কেউ কোথাও দেখেনি; ক্ষমতাবলয়ের বাইরের এক নেতার অঙ্গুলিহেলনে সেনানিবাস ছাড়া সর্বত্র আজ্ঞাপালন। ৭ই মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ—মানুষের প্রার্থিত স্বাধীনতার একতরফে ঘোষণার বদলে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই চূড়ান্ত সংগ্রামে অংশ নেওয়ার সংকল্প নিয়ে মানুষ ঘরে ফিরেছে। তারপর ২৫শে মার্চ কালরাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, বন্দী অবস্থায় পাকিস্তানে আটক, নিরস্ত্র বাঙালির প্রতি পাকিস্তানের গণহত্যার সূচনা।

২৬শে মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু দৃশ্যপটে নেই, তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর মতোই তিনি আর ‘হুকুম’ দিতে পারেননি। তবে ন মাসের মুক্তিযুদ্ধ চলেছে তাঁরই নামে—প্রতিদিন মানুষ তাঁর মুক্তিকামনা করে দিন শুরু করেছে আর শেষ করেছে। ফাঁসির আদেশ অগ্রাহ্য করে বিজয়ীর বেশে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছেন তাঁর মানুষের কাছে। সারা পৃথিবী অবাক হয়ে দেখেছে তাঁর প্রতি দেশের মানুষের ভালোবাসা আর তাঁর অটুট মনোবল। বঙ্গবন্ধুর এই রূপান্তরের মধ্যে ধরা পড়েছে বাংলাদেশের মানুষের ইতিহাস রচনার প্রয়াস। কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ নিজের হাতে নিয়েছে নিজের ভাগ্যরচনার চাবিকাঠি।

আনিসুজ্জামান
আনিসুজ্জামান

আজ মুজিববর্ষে যখন আমরা স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন করছি, তখন প্রথমেই ইতিহাসের সেই মহানায়কের কাছে আমরা ঋণ স্বীকার করছি। লক্ষ লক্ষ বালবৃদ্ধবনিতা যাদের রক্তে এই ভূমি সিক্ত হয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের অপূরণীয় শ্রদ্ধা নিবেদন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যেমন নেতার অনুপস্থিতিতে তাঁকে আমরা স্মরণ করেছি, আজও তাই করি। সোনার বাংলা গঠনের বীজমন্ত্র তিনি দিয়ে গেছেন—আজ তার বাস্তব রূপ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের।

নিজেদের দায়িত্বপালনে অনেক সময়ে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, ভুলপথে চলেছি অনেক সময়ে। তবে তারপর তা সংশোধন করতেও সমর্থ হয়েছি। তাই উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে আমাদের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। অর্ধশতাব্দীর মধ্যে বাংলাদেশের যা অর্জন, তা শ্লাঘার যোগ্য। এই পথ আমরা হারাব না। অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আশ্রয়ের অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না—এটাই হবে প্রথম কথা।

আগামী বছর এই সময়ে আমরা স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপন করব। তখন আমরা কেউ মাথা নিচু করে থাকব না। তখন সমস্বরে সকলে মিলে বাংলাদেশের জয়ধ্বনি গাইব। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যাঁরা জাতিকে অকুতোভয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধা নিবেদন করব।

আনিসুজ্জামান
জাতীয় অধ্যাপক