আসল সৌন্দর্যই হারাচ্ছে মারাকানা!

দুই লাখ দর্শক অনেক দিনই যেন রূপকথার গল্প। স্টেডিয়াম আধুনিক করতে গিয়ে বর্তমান ধারণক্ষমতা মাত্র ৭৩ হাজার ৫৩১। বিশ্বকাপে তবু টইটম্বুর থাকবে গ্যালারি, কিন্তু ঘরোয়া ম্যাচে এই গ্যালারি হয়ে উঠছে গৌরবময় অতীতের কঙ্কাল। এক-তৃতীয়াংশও ভরে না বেশির ভাগ সময়, কোনো কোনো ম্যাচে আধুনিকতাকে বিদ্রূপ করে খাঁ খাঁ গ্যালারি!
যেকোনো ফুটবলপ্রেমীর কাছেই তীর্থ, ব্রাজিলিয়ানদের কাছে তো আরও বেশি কিছু। মারাকানা স্টেডিয়াম কখনো কখনো ব্রাজিল ফুটবলেরই সমার্থক। ফুটবল এক্সপ্লেইনস ব্রাজিল বইয়ে মার্কোস গাটারম্যান যেমন লিখেছেন, ‘ফুটবলের কথা ভাবলেই ভাবতে হয় মারাকানার কথা। এটি হলো মক্কা—সবাই জীবনে অন্তত একবার আসতে চায়।’
কিন্তু সেই মারাকানা স্টেডিয়ামই এখন অত্যাধুনিক এক স্থাপনা ও আধুনিকতার নিদর্শন। সাধারণ দর্শকদের পদচারণে যা আর মুখরিত হচ্ছে না নিত্য, বরং এখন যেন তা অভিজাতদের গন্তব্য। প্রবেশাধিকার পেতে যে বড় অঙ্কের অর্থ লাগে!
এমনিতে এটি ব্রাজিলের গর্ব, একই সঙ্গে ব্রাজিলের দুঃখ। ফুটবল ইতিহাসে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি দর্শকের রেকর্ড হয়েছে এই স্টেডিয়ামে (১,৯৯,৮৫৪)। সেই রেকর্ডের দিনটিই আবার কাঁদিয়েছে কোটি কোটি ব্রাজিলিয়ানকে। এই মাঠেই রচিত হয়েছে একটি জাতির স্বপ্নের কবর। ১৯৫০ বিশ্বকাপের অলিখিত ‘ফাইনালে’ উরুগুয়ের কাছে সেই পরাজয়ের দুঃস্মৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিলিয়ানরা।
১৯৫০ বিশ্বকাপ সামনে রেখেই নির্মিত হয়েছিল মারাকানা স্টেডিয়াম। দর্শক ধারণক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম বানিয়ে চমকে দেওয়াটাও ছিল পরিকল্পনার মধ্যে। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই স্টেডিয়ামে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিতে লাগল। প্রয়োজন পড়ল সংস্কারের। ২০০০ সালের ফিফা ক্লাব বিশ্ব কাপের আগে প্রথম দফা সংস্কারের পর ধারণক্ষমতা নেমে আসে এক লাখে। ম্যাচের মধ্যবিরতির পর বিনা টিকিটে আসনবিহীন দর্শকের প্রবেশসুবিধা ছিল যুগ যুগ ধরে। ২০০৭ সালে প্যান আমেরিকান গেমসের আগে সেই সুবিধাটিও বাতিল করে দেওয়া হয়। এবার বিশ্বকাপের জন্য সংস্কারের পর ধারণক্ষমতা নেমে এসেছে ৭৩ হাজারে। তার পরও এখনো এটি দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বেশি দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়াম।
তবে শঙ্কা এখন অন্য জায়গায়। ৭৩ হাজার ধারণক্ষমতায় নেমে আসার পরও সেখানে নিয়মিতই ফাঁকা থাকছে গ্যালারি। ব্রাজিলের ঘরোয়া ম্যাচগুলোতে দর্শকই হচ্ছে না। আধুনিকতার মূল্য যে দিতে হচ্ছে টিকিট কিনতে গিয়ে! ‘রিও-ডার্বি’ ফ্লামেঙ্গো-ফ্লুমিনেন্স ম্যাচে যেখানে টইটম্বুর থাকত গ্যালারি, সেটিও ফাঁকা থেকেছে এবার। সবচেয়ে সস্তা টিকিটের মূল্যও যে ছিল ৪৫ ডলার! যা সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ম্যাচের পর ম্যাচ সারি সারি আসন ফাঁকা থাকার পর ফ্লুমিনেন্স বাধ্য হয়ে টিকিটের দাম সাড়ে চার ডলারে নামিয়ে আনার পর ঠিকই প্রাণ পেয়েছে গ্যালারি।
ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় এমনিতেই মারাকানা-রোমাঞ্চে একটু ভাটা পড়েছে। গ্যালারিও ফাঁকা পড়ে থাকলে মারাকানা আর মারাকানা কেন! সংস্কারের পর সৌন্দর্য বেড়েছে, কিন্তু মারাকানার আসল সৌন্দর্যই তো গ্যালারিভরা দর্শক! এএফপি।