এবারই 'শেষ' বিপ্লবের

বিপ্লব ভট্টাচার্য
বিপ্লব ভট্টাচার্য

অনেক হয়েছে। আর কত! জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলমুখের অতন্দ্র প্রহরী বিপ্লব ভট্টাচার্য এ বছরই বিদায় জানাবেন জাতীয় দলকে। সেই ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয় দলে। এককালের সতীর্থরা প্রায় সবাই বিদায় নিয়েছেন ফুটবল থেকে। কিন্তু চিরতরুণ বিপ্লব এখনো খেলে চলেছেন ফিটনেস ধরে রেখে। তরুণদের সঙ্গে কঠিন প্রশিক্ষণের ধাপ পেরিয়ে তিনি এখনো জাতীয় দলে। ব্যাপারটা আর যা-ই হোক, এ দেশের প্রেক্ষাপটে এক বড় ঘটনাই।
সেই বিপ্লবই জানিয়েছেন, এটাই তাঁর শেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৯৭ সালে এই কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জাতীয় দলে ছিলেন। এবার ২০১৩ সালে এসে যেন এক চক্র পূরণ করতে চলেছেন। প্রথম আলো ডটকমকে বিপ্লব বলেন, ‘এবারের সাফে দেশকে চ্যাম্পিয়ন দেখতে পারলে দারুণ তৃপ্তি নিয়েই বিদায় নিতে পারব। ২০১৩ সালই জাতীয় দলের হয়ে আমার শেষ বছর।’
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের একজন এই বিপ্লব। তাঁর তৃপ্তি, দীর্ঘদিন খেলে যেতে পারা; দীর্ঘদিন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর। কোনো অতৃপ্তি নেই, ক্ষোভ নেই; তরুণদের জায়গা ছেড়ে দিতেই তিনি সরে দাঁড়াতে চাইছেন। দেশের মাটিতে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় দলকে ‘বিদায়’ বলবেন তিনি। সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে পারার তৃপ্তিটা পুরোপুরিই উপভোগ করতে চান।

জাতীয় দলের সঙ্গে অধিনায়ক বিপ্লব।
জাতীয় দলের সঙ্গে অধিনায়ক বিপ্লব।

ফুটবলজীবনের প্রায় গোধূলিবেলায় এসে কারও প্রতি ক্ষোভ নেই তাঁর। দীর্ঘদিন জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করলেও বেশির ভাগ ম্যাচেই তাঁকে বসে থাকতে হয়েছে ডাগ আউটে। অথচ ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডুতেই দেশের ফুটবলের অন্যতম সাফল্যের কান্ডারি ছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সাফ গেমসে প্রথমবারের মতো ফুটবলে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। সেবার গোলবারের নিচে বিপ্লবের দুর্দান্ত নৈপুণ্য আজও হূদয়ে ধারণ করেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। অথচ সেই বিপ্লবকেই বারবার ডাগ আউটে বসে থাকতে হয়েছে অনিবার্য কিছু কারণে। ব্যাপারটা নিয়ে আফসোস থাকলেও এই পর্যায়ে এসে সেগুলো নিয়ে আর ভাবতে চান না তিনি।
বিপ্লবের ওই ‘অনিবার্য’ কারণ হয়ে ছিলেন আমিনুল হক। বিপ্লবের সমসাময়িক আমিনুল সব সময়ই ছিলেন জাতীয় দলের কোচদের প্রথম পছন্দ। ব্যাপারটি বিপ্লবের জন্য দুর্ভাগ্যজনক হলেও তিনি জানান, এসব নিয়ে তাঁর মনে কোনো ক্ষোভ নেই। বিপ্লব বলেন, ‘আমিনুল নিজের যোগ্যতাতেই দীর্ঘদিন দেশের এক নম্বর গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রেখেছিল।’
আমিনুল অবসরে গেলে জাতীয় দলের অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী এসেছিল বিপ্লবের কাছেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর পিছু ছাড়েনি। মেসিডোনিয়ান কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কির জামানায় অধিনায়ক হয়েও প্রথম একাদশে থাকতে পারেননি। ভাবা হচ্ছিল, বিপ্লব বুঝি জাতীয় দল থেকে বিদায়ই নিচ্ছেন সন্তর্পণে। কিন্তু না, বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দেননি। ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের ক্যাম্পে কঠোর প্রশিক্ষণে নিজেকে উতরিয়েই আবার জাতীয় দলে তিনি। প্রমাণ করেছেন, বিপ্লব ফুরিয়ে যাওয়ার নন।

আসছে ৩১ আগস্ট মাঠে গড়ানো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বিপ্লব ডি ক্রুইফের প্রথম পছন্দ হবেন কি না, সেটা বলা যাচ্ছেন না। বিপ্লব ওসব নিয়ে ভাবেনও না। তাঁর মন-প্রাণজুড়ে কেবলই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এবার বাংলাদেশকে যে জেতাতেই হবে সাফ। এবারের সাফে চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়া যে বাংলাদেশের সামনে বিকল্প ভাবনা কিছু নেই।

বিপ্লব খুশি তাঁর ফুটবল-ক্যারিয়ার নিয়ে। জাতীয় দলের হয়ে দীর্ঘদিন খেলতে পারার ব্যাপারটিই তাঁকে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি জোগায়, ‘এত দিন ধরে খেলছি। ফিটনেস ধরে রেখেছি—এসব আমাকে তৃপ্তি দেয়। ১৯৯৯ সালে গোলরক্ষক হিসেবে দেশের ফুটবলের বড় এক সাফল্যের অংশীদার ছিলাম। সব মিলিয়ে আমি খুব তৃপ্ত। এখন বাকি কেবল এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এবারের সাফটা জিততে পারলে আমার ক্যারিয়ার পূর্ণতা পাবে। দোয়া করবেন, আমরা যেন পারি। ফুটবলে একটা সাফল্য খুব জরুরি।’