কোচ আসে কোচ যায়

>
সামির শাকির ও  জর্জ কোটান
সামির শাকির ও জর্জ কোটান

ওয়ার্নার বেকেলহপ্ট ১৯৭৮-১৯৮০

বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রথম বিদেশি কোচ এই জার্মান। তাঁর সময়েই ১৯৮০ সালে প্রথম ও এখন পর্যন্ত শেষবারের মতো এশিয়ান কাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে উঠেছিল বাংলাদেশ।

গার্ড স্মিট১৯৮২

বাংলাদেশে এসেছিলেন বাংলাদেশ-জার্মানি সাংস্কৃতিক চুক্তির অধীনে। মূলত ১৯৮২ এশিয়ান গেমস সামনে রেখেই। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সেই গেমসে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে জেতে বাংলাদেশ, আর চীনের কাছে হারে ন্যূনতম ব্যবধানে (১-০)।

নাসের হেজাজি ১৯৮৯

১৯৮৭ সালে মোহামেডান কোচ কাম গোলকিপার হিসেবে ইরান থেকে উড়িয়ে এনেছিল নাসের হেজাজিকে। ১৯৭৮ আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে খেলা হেজাজি এশিয়ার অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মোহামেডানের হয়ে তাঁর সাফল্যের পর ১৯৮৯ সালে ইসলামাবাদ সাফ গেমস সামনে রেখে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব। কিন্তু তিনি সাফ জেতাতে পারেননি।

ওল্ডরিখ সোয়াব ১৯৯৩

১৯৯৩ সালে দেশের মাটিতে সাফ গেমসে সাফল্যের জন্য মরিয়া বাংলাদেশ ভালো মানের একজন বিদেশি কোচ খুঁজছিল। সে বছর বাংলাদেশ সফরে আসা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি হুয়ান আন্তনিও সামারাঞ্চ বাংলাদেশকে উপহার দেন এই সুইস ফুটবল কোচকে। ছয় দলের মধ্যে ষষ্ঠ হয়ে সেই সাফ গেমস অবশ্য দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকে বাংলাদেশের জন্য।

ম্যান ইয়াং ক্যাং ১৯৯৫

১৯৯৫ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কায় সার্ক গোল্ডকাপ প্রতিযোগিতায় (এখনকার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ) দায়িত্ব নিয়েছিলেন এই দক্ষিণ কোরিয়ান। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। প্রতিযোগিতার পর বিদায় করে দেওয়া হয় ক্যাংকেও।

অটো ফিস্টার ১৯৯৫-৯৭

বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল কোচ। ঘানাকে বিশ্ব যুব কাপের শিরোপা জিতিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন এই জার্মান। শিরোপা জিতিয়েছিলেন বাংলাদেশকেও। ১৯৯৫ সালে নভেম্বরে মিয়ানমারে একটি চার জাতি প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও মিয়ানমারকে হারিয়ে ওই শিরোপা। ১৯৯৭ সালে তাঁর অধীনে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অংশ নেয় বাংলাদেশ। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে বাংলাদেশ ছিল গড়পড়তা। ১৯৯৭ সালে কাঠমান্ডু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আবার ভরাডুবি হয় বাংলাদেশের। বিদায়ঘণ্টা বাজে এই জার্মান কোচের। ২০০৬ বিশ্বকাপে ফিস্টার ছিলেন আফ্রিকান দল টোগো কোচ। 

সামির শাকির ১৯৯৮-৯৯

১৯৮৬ বিশ্বকাপে খেলেছেন ইরাকের হয়ে। ঢাকা মাঠে খেলে যাওয়া সেরা বিদেশি ফুটবলারদের একজন (১৯৮৭ সালে আবাহনীতে)। উজ্জ্বল খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের কারণেই জাতীয় দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল সামির শাকিরের হাতে। ১৯৯৯ কাঠমান্ডু সাফ গেমসে তিনি বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিলেন ফুটবলের অধরা সোনার পদক।

মার্ক হ্যারিসন ২০০০

টেরি ভেনাবলসের ভাবশিষ্য এই তরুণ ইংরেজ কোচ একটি টুর্নামেন্ট শেষেই একরকম ‘পালিয়ে’ বাঁচেন। মালদ্বীপে একটি চার জাতি প্রতিযোগিতায় দল নিয়ে গিয়েছিলেন। বাফুফে কর্তাদের ‘যেকোনো মূল্যে জিততে হবে’ মানসিকতার সঙ্গে প্রথম থেকেই দ্বন্দ্ব শুরু হয় তাঁর। মালদ্বীপ থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরার পর দেশে ফিরতেও আর বেশি সময় নেননি।

জর্জ কোটান ২০০১-০৩

বাংলাদেশের ফুটবলে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠা এই অস্ট্রিয়ান২০০৩ সালে জিতিয়েছিলেন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে দারুণ ফুটবল খেলেছিল বাংলাদেশ। অথচ এর পরপরই বিদায় করে দেওয়া হয় তাঁকে। পরে ঘরোয়া ফুটবলে কাজ করেছেন মুক্তিযোদ্ধার কোচ হিসেবে, দ্বিতীয় দফায় কাজ করছেন আবাহনীতে।

ডিয়েগো ক্রুসিয়ানি ২০০৫-০৬

অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে বাংলাদেশে আনা হয়েছিল এই আর্জেন্টাইন কোচকে। তাঁর অধীনে বেশ ট্যাকটিক্যাল ফুটবল উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রুসিয়ানি সাফল্য এনে দিতে পারেননি। ২০০৫ সালে করাচির সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে উঠলেও ভারতের সঙ্গে পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। 

সৈয়দ নঈমুদ্দিন ২০০৭-০৮

বাংলাদেশের ফুটবলকে দীর্ঘদিন কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতার কথা ভেবে এই ভারতীয়কোচের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় দলের দায়িত্ব। ২০০৭ সালে দিল্লিতে নেহরু কাপে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। সেই প্রতিযোগিতায় সিরিয়া ও ভারতের কাছে বাংলাদেশ হারে, কম্বোডিয়ার বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও ড্র করে।

এডসন সিলভা ডিডো ২০০৮-০৯

তিনি এসেছিলেন ব্রাজিল থেকে। বাংলাদেশের আগে ভিয়েতনাম ও চাইনিজ তাইপে জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করা ডিডো শৃঙ্খলার ব্যাপারে ছিলেন খুব কঠোর। সেটিই কাল হয় তাঁর। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে জাতীয় দল থেকে একসঙ্গে নয় খেলোয়াড়কে বের করে দিয়েছিলেন। বাফুফে উল্টো তাঁকেই বিদায় করে দেয়।

রবার্ট রুবচিচ ২০১০-২০১১

ক্রোয়েশিয়ারএই কোচ হঠাৎ এসে হঠাৎই অতীত হয়ে যান বাংলাদেশের ফুটবলে। ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রাক-বিশ্বকাপ বাছাইয়ের একটি ম্যাচ খেলতে লাহোর যাওয়া নিয়েই সমস্যা তৈরি হয় তাঁর সঙ্গে। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে তিনি পাকিস্তানে যাননি। কাউকে না জানিয়ে চুপিসারে বাংলাদেশ ছেড়ে চলেও যান।

নিকোলাই ইলিেয়ভস্কি ২০১১-১২

মেসিডোনিয়ান এই কোচের অধীনেই ২০১১ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে লেবাননকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সে বছরের ডিসেম্বরে দিল্লির সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের কাছে ৩-১ গোলে হেরে গেলে বিদায় করে দেওয়া হয় তাঁকে। 

লোডভিক ডি ক্রুইফ ২০১৩-১৬

বাংলাদেশের ফুটবলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত কোচ। এই ডাচ কোচের অধীনে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে খেলে বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচও। বাফুফের সঙ্গে তিক্ত বিচ্ছেদের পরও কিছুদিন আগে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল তাঁকে।

ফাবি ও লোপেজ ২০১৫

হঠাৎ করেই ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মাঝপথে দায়িত্ব পেয়েছিলেন এই ইতালীয় কোচ। তাঁর অধীনে কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১ গোল হজম করে বাংলাদেশ। গত বছর নভেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতিমূলক চীন সফরে ব্যর্থতার পর তাঁর বিদায়ঘণ্টা বেজে যায়।

গঞ্জালো মরেনো ২০১৬

প্রথমে বয়সভিত্তিক দলের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল এই স্প্যানিশ কোচের, পরে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় অলিম্পিক দলের দায়িত্ব। এ বছরের শুরুতে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় দলের ডাগ-আউটে দাঁড়ান গত মার্চে জর্ডানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের অ্যাওয়ে ম্যাচে। সে ম্যাচে ৮-০ গোলে হেরে যায় বাংলাদেশ।

টম সেন্টফিট ২০১৬-

এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশের জাতীয় দলের হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। আপাতত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে-অফের দুটি ম্যাচের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সফল হলে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হবে সেন্টফিটের সঙ্গে। এই বেলজিয়ান বাংলাদেশের ঘন ঘন কোচ বদলের সংস্কৃতি বদলাতে পারবেন কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে।