প্রথম সেশনে চোখ রাঙাচ্ছিল ইনিংস পরাজয়। শেষ সেশনে এসে হুট করেই দেখা দিল এ টেস্টের বেশিরভাগ সময় ধরে যেটিকে মনে হচ্ছিল প্রায় অবাস্তব এক কল্পনা—বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা! সেটি অবশ্য টেকেনি বেশিক্ষণ। সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসানের লড়াকু জুটি, এরপর খালেদ আহমেদের দ্রুত ৩ উইকেটের চাপ সামলে নিয়ে জয়ের সুবাস নিয়েই তৃতীয় দিন শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করা স্বাগতিকদের ৭ উইকেট বাকি রেখে প্রয়োজন মাত্র ৩৫ রান।
১১২ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শুরু করা বাংলাদেশ সকালের সেশনে হারায় ৪ উইকেট—নাজমুল হোসেন, মুমিনুল হক, লিটন দাসের পর ফেরেন মাহমুদুল হাসানও। কাইল মেয়ার্স ও কেমার রোচ ভাগ করে নেন ওই ৪টি উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৪৭ রানে পিছিয়ে থেকে মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
তবে দ্বিতীয় সেশন কাটে উইকেটশূন্য। ওই সেশনে ওভারে ৩.৫০-এর বেশি হারে ওঠে ৯৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রিভিউ না নেওয়ার সৌজন্যে জীবন পাওয়া সাকিব শেষ পর্যন্ত পান ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ও টানা তৃতীয় অর্ধশতক। ভাগ্যের ছোঁয়া পাওয়া নুরুলও পরের সেশনে পান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক।
সাকিব-নুরুলের জুটি প্রথমে পেরোয় ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটিকে। এরপর ম্যাচে দুই দলের মধ্যেই সর্বোচ্চ জুটি হয় তাদের। অবশ্য চা-বিরতির পর দ্বিতীয় নতুন বল পেয়েই জ্বলে ওঠেন কেমার রোচ। দ্বিতীয় নতুন বলে রোচের দ্বিতীয় ওভারে তুলে মারতে গিয়ে কাভারে ক্রেগ ব্রাফেটের হাতে ধরা পড়েন ৯৯ বলে ৬৩ রান করা সাকিব। তাঁর উইকেটের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের উল্লাসটাই বলে দিচ্ছিল, কত বড় বাধা হয়ে ছিলেন তিনি তাদের জন্য।
সাকিবের উইকেটে ভাঙে নুরুলের সঙ্গে তাঁর ২২১ বলে ১২৩ রানের জুটি। সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি এটি বাংলাদেশের। এরপর বাংলাদেশ খুব বেশি দূরে এগোতে পারেনি। রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ১৪৭ বলে ৬৪ রান করে ফেরেন নুরুল, ক্যারিয়ারে এটি যৌথ সর্বোচ্চ ইনিংস তাঁর। আলজারি জোসেফকে বড় শটের চেষ্টায় বোল্ড হন একটি ছয় মারা মোস্তাফিজ।
ইবাদত হোসেনকে বোল্ড করে ইনিংসে পঞ্চম উইকেটটি নেন রোচ, ক্যারিয়ারে এ পেসার এ নিয়ে দশম বার ইনিংসে ৫ বা এর বেশি উইকেট নিলেন। এ উইকেট দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় মাইকেল হোল্ডিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ছয়েও উঠে এলেন রোচ।
চতুর্থ ইনিংসে এ মাঠে এখন পর্যন্ত রান তাড়া করতে নেমে হারের ঘটনা আছে একটিই। ২০১৯ সালে ভারতের দেওয়া ৪১৯ রান তাড়া করতে নেমে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গিয়েছিল ১০০ রানেই। এ ছাড়া বাকি ৭ ম্যাচের দুইটিতে জিতেছে রান তাড়া করা দল, ড্র হয়েছে বাকি ৫টি। সেখানে এ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য ৮৪ রান, দিনে বাকি ছিল কমপক্ষে ১৭ ওভার। ফল সম্ভব মনে হলে বাড়তি সময় খেলার সুযোগও আছে। তবে সমীকরণটা বদলে দিয়েছিলেন খালেদ। নিজের প্রথম ১১ বলের মধ্যে ৩ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বেশ চাপে ফেলেন বাংলাদেশ পেসার।
খালেদ প্রথম আঘাত করেন নিজের প্রথম বলেই, ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে। তাঁর ডাউন দ্য লেগের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটকিপার নুরুলের হাতে ধরা পড়েন প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বোচ্চ স্কোরার অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেট। সে ওভারেই আসে দ্বিতীয় উইকেটও। বাড়তি বাউন্সের বলটা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন রেমন রিফার, তবে শেষ মুহুর্তে তাঁর গ্লাভসে চুমু খেয়ে বল আবার যায় নুরুলের গ্লাভসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরিণত হয় ৩ রানে ২ উইকেটে।
পরের ওভারে এসে আবার চ্যালেঞ্জ জানান খালেদ। এনক্রুমা বোনারের বিপক্ষে কট-বিহাইন্ডের রিভিউ নেয় বাংলাদেশ, তবে সেটি সফল হয়নি। খালেদ অবশ্য সময় নেননি বেশি। এক বল পরই দুর্দান্ত সিমিং ডেলিভারিতে পরাস্ত করেন বোনারকে, করেন বোল্ড।
তবে খালেদের সে চাপ অন্য প্রান্তে ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ৭ রান দিয়েছেন, তবে নতুন বলে তাঁর কাটার সে ভাবে হুমকি তৈরি করতে পারেনি। ইবাদত হোসেনের আগেই মেহেদী হাসান মিরাজকে আনেন সাকিব, তবে প্রথম ওভারেই প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা বোলার দেন ১০ রান। পরের ওভার অবশ্য মেডেন করেন এ অফ স্পিনার।
ইবাদত প্রথম বারের মতো আসেন ১২তম ওভারে। তাঁর প্রথম ডেলিভারিই ছিল আলগা, তাতে চার মারেন জন ক্যাম্পবেল। ওই ওভারের শেষ বলে জেরমাইন ব্ল্যাকউড এজড হলেও স্লিপের ওপর দিয়ে হয় আরেকটি চার। এরপর সাকিব নিজেই বোলিংয়ে আসেন, তবে আর সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ক্যাম্পবেল ও ব্ল্যাকউড অবিচ্ছিন্ন ৪০ রান করে।