গরিব দেশের মুখে হাসি ফোটালেন সোনার মেয়ে

দেশকে প্রথম সোনার পদক এনে দিয়েছেন পুইগ। ছবি: এএফপি
দেশকে প্রথম সোনার পদক এনে দিয়েছেন পুইগ। ছবি: এএফপি

‘ওহ মাই গড!’
অ্যাঞ্জেলিক কারবারের শটটা বাইরে চলে যেতেই হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়লেন। চোখ দিয়ে ততক্ষণে ঝরঝর বইতে শুরু করেছে আনন্দাশ্রু। আবেগে থরথর মনিকা পুইগের মুখ দিয়ে শুধু এই একটি বাক্যই বেরোল। যেন নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না, কী অনন্য কীর্তি গড়ে ফেলেছেন। মাত্রই যে দেশের ইতিহাসে প্রথম অলিম্পিকের সোনা এনে দিয়েছেন পুইগ!
মেয়েদের টেনিসের এককে অ্যাঞ্জেলিক কারবারকে ৬-৪, ৪-৬, ৬-১ সেটে হারিয়ে জিতে পুয়ের্তো রিকোকে এনে দিয়েছেন প্রথম অলিম্পিক সোনা। কিন্তু শুধু সোনালি রংটাই পদকের মাহাত্ম্য নয়। গুরুত্ব পাচ্ছে না পুইগের র‍্যাঙ্কিংয়ে ৩২ ধাপ এগিয়ে থাকা কারবারকে হারানোও। এ পদকের মাহাত্ম্য যে অন্য। এ যে রোগে-শোকে-দারিদ্র্যে ভোগা দেশের মানুষকে আনন্দের উপলক্ষে ভাসানো। তাদের প্রতিদিনের না–পাওয়ার আক্ষেপের জীবনে দিয়ে যাওয়া একটুখানি গর্বের ছোঁয়া।
এক দিন আগে ফাইনালে ওঠার পরই টুইট করেছিলেন, ‘যে স্বপ্নের মতো সময় কাটছে, সেটি থেকে যেন কখনো জাগতে না হয়।’ চাইবেনই–বা কেন! এর আগে অলিম্পিকে আটটি পদক জিতেছিল পুয়ের্তো রিকো। কিন্তু এর কোনোটিই সোনা নয়। দেশের খেলাধুলার ইতিহাস নতুন করে লেখার ডাক যেন শুনতে পাচ্ছিলেন ২২ বছর বয়সী পুইগ, যেটিতে মিশে ছিল প্রায় ৩৬ লাখ পুয়ের্তো রিকানের প্রতিদিনের দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবনে একটুখানি গর্বের অনুভূতি এনে দেওয়ার আর্তিও। প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের ভারে জর্জরিত দেশটি। আছে জিকা ভাইরাসের প্রকোপও। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, প্রতিদিন নাকি গড়ে ৫০ জন করে সন্তানসম্ভবা মা নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন এই ভাইরাসে।
সমাধান তো আর এক সোনার পদকে হয় না। তবে কষ্ট ভুলে পুয়ের্তো রিকানদের হাসির উপলক্ষ এনে দিতে চেয়েছিলেন পুইগ। যদিও দেশ ছেড়ে অনেক আগে থেকেই থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতে। তবে মনে তাঁর অনেক ভালোবাসা দেশের মানুষের জন্য। আগের দিন ঘোষণার সুরেই বলেছিলেন, ‘সোনা জেতা অবিশ্বাস্য কীর্তি হবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্মানও। কারণ, এটা আমি করছি আমার দেশের জন্য। অলিম্পিক শুধু আমার ব্যাপারই নয়, এটা পুয়ের্তো রিকানেরও। এবং আমি জানি কত বেশি করে ওরা (দেশের মানুষ) এটা চায়।’
কথা রেখেছেন পুইগ। প্রত্যাশা পূরণ করেছেন দেশের মানুষের। র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁর অবস্থান ৩৪, ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাঞ্জেলিক কারবার ২ নম্বরে। পাত্তাই তো পাওয়ার কথা ছিল না পুইগের। কিন্তু এখানে যে দক্ষতার চেয়েও বড় হয়ে উঠেছিল চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা। তাতেই এল প্রতাপের জয়।
প্রথম সেটটা পুইগ জিতেছেন ৬-৪ গেমে। দ্বিতীয় সেটে ‘প্রতিশোধ’ নিলেন কারবার, এবার জার্মান তারকার পক্ষে ব্যবধান ৬-৪। পদকনির্ধারণী শেষ সেটে কি মনে মনে দেশের মানুষের প্রার্থনাটা টের পাচ্ছিলেন পুইগ? না হলে ওভাবে জ্বলে উঠবেন কেন! কারবারকে রীতিমতো উড়িয়ে দিলেন ৬-১ গেমে।
জেতার পর দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে পুরো কোর্টে দৌড়ে বেড়িয়েছেন। গর্ব, আনন্দ, সন্তুষ্টির মিশ্রণে চোখ দিয়ে নোনা জলও বেয়ে পড়ছিল, যে কান্না গর্বের!