জার্ড মুলার: দ্য বোম্বার

জার্ড মুলার
জার্ড মুলার

জার্ড মুলারকে আদর করে ডাকা হতো ‘ডার বোম্বার’ বা বোমারু নামে। একের পর এক ‘গোলা’ বর্ষণে প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করাতেই তাঁর এই নামকরণ। তবে এই গোলা যুদ্ধের গোলা নয়, এই গোলা ফুটবলের, এই গোলা গোলের। প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল করতে পারার এক অসাধারণ ক্ষমতা ছিল এই মুলারের। জার্মানি খেলছে আর মুলার গোল পাননি—এমন ঘটনা ওই সময় ছিল সত্যিই বিরল।

গোল করার অনন্য ক্ষমতার কারণে ফুটবল ইতিহাসেই তাঁর আছে ভিন্ন জায়গা। তিনি ৪০ বছর এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটিকে নিজের করে রেখেছিলেন। তাঁর বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি অক্ষত ছিল ৩২ বছর। ২০১১-১২ মৌসুমে লিওনেল মেসি টপকে যান এক মৌসুমে তাঁর করা ৬৭ গোলের রেকর্ডটি। বিশ্বকাপের রেকর্ডটি ভাঙেন রোনালদো, ২০০৬ সালে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বকালের সেরা গোলদাতার তালিকায়ও একাদশ স্থানে আছেন এই জার্মান কিংবদন্তি। ম্যাচপ্রতি গোলে মুলারের চেয়ে ভালো ‘স্ট্রাইক রেট’ আছে মাত্র দুজন খেলোয়াড়ের।

মুলারের অসাধারণত্ব আরও একটি জায়গায় বিস্তৃত। পৃথিবীর বড় বড় খেলোয়াড় যেখানে ক্লাব ও জাতীয় দলের মধ্যে পারফরম্যান্সের ভারসাম্য রাখতে হিমশিম খান, সেখানে তিনি ক্লাব এবং জাতীয় দলের মধ্যে গোল করায় কোনো বৈষম্য করেননি। দেশের হয়েই যেন তাঁর গোল করার আকাঙ্ক্ষাটা ছিল তীব্র। বুন্দেসলিগায় ৪২৭ ম্যাচে ৩৬৫ গোল করা মুলার জাতীয় দলের হয়ে করেছেন মাত্র ৬২ ম্যাচে ৬৮ গোল।

বোমারু উপাধিটা তিনি পান ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে। মাত্র ৬ ম্যাচেই করে ফেলেন ১০ গোল, যার মধ্যে বুলগেরিয়া এবং পেরুর বিপক্ষে ছিল পর পর দুটি হ্যাটট্রিক। পুরো আসরেই দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে খেলা মুলারের পশ্চিম জার্মানি সেবার সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছিল ইতালির বিপক্ষে। অতিরিক্ত সময়ে ৪-৩-এ হারা সেই ম্যাচেও মুলারের পা থেকে এসেছিল দুটি গোল। বিশ্বকাপ হাতছাড়া করলেও আসরে সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচে ১০ গোল করা মুলার দেশে ফেরেন সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন বুট পুরস্কার নিয়ে।

বিশ্বকাপ মুলারকে দেখেছিল মাত্র দুটি আসরেই। সত্তরের পর চুয়াত্তরে তিনি পেয়েছিলেন বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ। সেবার অবশ্য তাঁকে গোলমেশিন ভেবে অন্য দলগুলোর তাঁর প্রতি ছিল তীক্ষ দৃষ্টি। সত্তরে ১০ গোল করা মুলার চুয়াত্তরে করেছিলেন মাত্র চার গোল।

তবে মুলার সেই আসরে পেয়েছিলেন তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা গোলটি। হল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে তাঁর গোলেই জয় পেয়েছিল পশ্চিম জার্মানি। পুরো ব্যাপারটিই যেন ছিল একজন মহানায়কের প্রতি প্রকৃতির এক অনন্য অর্ঘ্য। মুলারের গোলে জয় পেয়ে পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ও পেয়েছিল অন্য মাত্রা, অসাধারণ ঐতিহাসিক মূল্য।