জার্মানির 'কাইজার' আর ব্রাজিলের 'ও লেই'

ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার কাইজার, পেলে  ও লেই, ফেরেঙ্ক পুসকাস  দ্য গ্যালোপিং মেজর, ডেনিস বার্গক্যাম্প  নন ফ্লাইং ডাচম্যান
ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার কাইজার, পেলে ও লেই, ফেরেঙ্ক পুসকাস দ্য গ্যালোপিং মেজর, ডেনিস বার্গক্যাম্প নন ফ্লাইং ডাচম্যান

ভাষা আলাদা হতে পারে, কিন্তু নিগূঢ় অর্থটা এক। জার্মানিতে যে নাম ‘কাইজার’, ব্রাজিলে সেটা হয়ে যায় ‘ও লেই’, ফ্রান্সে ‘লে রয়’। সম্রাট, রাজা, শাহেনশাহ্ যা-ই বলুন, অর্থ একই । ‘কাইজার’ বললে যেমন ভেসে ওঠে ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের নাম, ‘ও লেই’ বললেই চট করে মনে পড়ে পেলের নাম। আর ‘লে রয়’ মানেই তো মিশেল প্লাতিনি। ফুটবল ইতিহাসে এই তিনজনের জায়গা কোথায়, সেটা বিদগ্ধ পাঠকমাত্রই জানেন। উপাধিটা তাই তিনজনের জন্য যথার্থই৷
ফুটবলারদের মধ্যে ডাকনামের চলটা অনেক পুরোনো। বিখ্যাতদের মধ্যে তো বটেই। ইতিহাসে ঠাঁই পেয়ে যাওয়া এমন একজন ফুটবলারও দেখাতে পারবেন না যাঁর ডাকনাম নেই৷ পেলে, বেকেনবাওয়ার, প্লাতিনির কথা তো আগেই বলা হয়েছে। ম্যারাডোনা, পুসকাস, ডি স্টেফানো, গারিঞ্চা, ক্রুইফ...তালিকাটা লম্বা৷
একেক দেশে আবার ডাকনামের একেক ধরনের তরিকা। দক্ষিণ আমেরিকান দেশগুলোতে জীবজন্তুর নামে ডাকনাম বাছাই করার চলটা অনেক দিনের । লিওনেল মেসির ক্ষেত্রে আবার আলাদা একটা মজা আছে। বাংলায় মাছির সঙ্গে মেসির কিন্তু একটা ধ্বনিগত সাদৃশ্য আছে। মজার ব্যাপার, স্প্যানিশ ভাষায় মেসির যে ডাকনাম, ‘লা পুলগা’, সেটার অর্থও মাছি। সাবেক আর্জেন্টাইন প্লে-মেকার আরিয়েল ওর্তেগার ডাকনাম ছিল ‘বুরিগো’ বা ‘ছোট গাধা’। গঞ্জালো হিগুয়েইনের ‘এল পিপিতা’ নামের ইতিহাস তো আরও মজার। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের বাবার নাকটা ছিল বড়। তাই তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিল ‘পিপা’। অদ্ভুতই বটে, ছেলেদের নামের সঙ্গেও জুটে গেল ওই তকমা। হিগুয়েইনদের দুই ভাইয়ের ডাকনামই তাই ‘এল পিপিতা’। ওদিকে ব্রাজিলে গারিঞ্চার নাম ‘লিটল বার্ড’ বা ‘ছোট পাখি’।
বুয়েনস এইরেসের ফুয়েরতে অ্যাপাচে এলাকায় বেড়ে উঠেছিলেন কার্লোস তেভেজ। সেখান থেকে তাঁর নাম হয়ে যায় ‘এল অ্যাপাচে’।
হিগুয়েইনের ডাকনামের পেছনে নিজের কোনো হাত ছিল না । যে হাতটা ছিল মার্টিন পালের্মোর। খ্যাপাটে স্ট্রাইকারের ডাকনামটা তাঁর সঙ্গে আসলে পুরোপুরিই যায়, ‘এল লোকো’ বা পাগল! আবার সার্জিও আগুয়েরোর ‘কুন’ নামটা তিনি নিজেই দিয়েছেন, জাপানি এক অ্যানিমেশনের চরিত্রকে নিজের নামের অংশ করে নিয়েছেন ছোটবেলার কার্টুনভক্ত আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার৷
তবে অনেক ফুটবলারের ডাকনাম জুটেছে খেলার ধরনের কারণেই। রোনালদোর ‘ফেনোমেনন’ নামটা আতঙ্কের একটা হলকা বইয়ে দেয় প্রতিপক্ষ রক্ষণে। এখনকার রোনালদো মানে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম সিআর-সেভেন হয়েছে তাঁর দুই নামের আদ্যক্ষর ও জার্সি নম্বর মিলিয়ে৷ দুর্দান্ত রিফ্লেক্সের কারণে রুশ কিংবদন্তি গোলরক্ষক লেভ ইয়াসিনের নাম ছিল ‘দ্য ব্ল্যাক স্পাইডার’।
অনেকের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে খেলার ধরনে বিখ্যাত পূর্বসূরির ছাপ থাকায়। শ্বেতবর্ণের কারণে জিকো যেমন হয়ে গেছেন ‘সাদা পেলে’। রোমানিয়ার গিওর্গে হাজিকে বলা হতো ‘বলকানের ম্যারাডোনা’, সৌদি আরবের সাঈদ আল ওবাইরান যেমন ‘মরুভূমির ম্যারাডোনা’।
শারীরিক গড়নের জন্যও অনেকের নাম হয়। একহারা গড়নের আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী কোচ লুইস সিজার মেনোত্তির নাম ছিল ‘এল ফ্লাকো’, ছোটখাটো গড়নের লাম তাঁর দুর্দান্ত খেলার জন্য যেমন ‘ম্যাজিক ডুয়ার্ফ’। আর ‘ডিভাইন পনিটেল’খ্যাত ঝুঁটিবাঁধা চুলের রবার্তো বাজ্জোকে কে না চেনে?
নামের ফিরিস্তি বলে আসলে শেষ করা যাবে না। এর মাঝে আলাদা করে দুটি নাম বলতে হয়। ডেনিস বার্গক্যাম্পের ভীষণ রকম বিমানভীতি ছিল। পারতপক্ষে উড়োজাহাজে চড়তেন না সাবেক ডাচ স্ট্রাইকার। ডাকনামটাও তার সঙ্গে মিল রেখে ‘নন-ফ্লাইং ডাচম্যান’। হাঙ্গেরি কিংবদন্তি ফেরেঙ্ক পুসকাসকে বাধ্যতামূলকভাবে যোগ দিতে হয়েছিল সামরিক বাহিনীতে। ফুটবলের পাশাপাশি সমরবিদ্যায়ও দক্ষতা ছিল, মেজর পর্যন্ত হয়েছিলেন। তাঁর ‘গ্যালোপিং মেজর’ নামের মাহাত্ম্য বুঝতে পেরেছেন তো?