তখন ফেসবুক থাকলে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ হতো না

সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, তামিম ইকবাল: বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডবছবি: প্রথম আলো

ক্যারিয়ারের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থাকলে তাঁরা এত দূর আসতে পারতেন না—এমনটাই ধারণা বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার। নিজের সঙ্গে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ ও তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের কথা বলেছেন মাশরাফি। তরুণ ক্রিকেটারদের আরও সমর্থন প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারকে অনেকেই পঞ্চপাণ্ডব নামে পরিচয় করিয়ে দেন। মাশরাফি জাতীয় দলের বাইরে বেশ কিছুদিন ধরেই, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে ২০১৭ সালে অবসর নিয়েছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ সম্প্রতি বিদায় বলেছেন টেস্টকে। চলতি নিউজিল্যান্ড সফরে চোটের পুনর্বাসনের কারণে নেই তামিম, ছুটি নিয়েছেন সাকিব। তাঁদের বেলাশেষের গান যে শুরু হয়ে গেছে, সেটা বলাই যায়।

তবে তাঁদের জায়গাটা নিতে পারছেন না কেন কেউ, এমন প্রশ্নের জবাবে আজ আইজিপি কাপ কাবাডির ফাইনাল উপলক্ষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মাশরাফি বলেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবের কথা। বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়কের ভাষ্য, ‘যে পাঁচজনের (পঞ্চপাণ্ডব) কথা বলছেন, আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে আমাদের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম) ছিল না। আপনি যদি আমাদের শুরুর দিকের ক্যারিয়ার দেখেন, তখন যদি সোশ্যাল মিডিয়া থাকত, আমরা এত দূর খেলতে পারতাম না। এটা একটা সমস্যা।’

যে পাঁচজনের (পঞ্চপাণ্ডব) কথা বলছেন, আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে আমাদের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম) ছিল না। আপনি যদি আমাদের শুরুর দিকের ক্যারিয়ার দেখেন, তখন যদি সোশ্যাল মিডিয়া থাকত, আমরা এত দূর খেলতে পারতাম না।
মাশরাফি বিন মুর্তজা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হওয়া সমালোচনার প্রভাবের কথা উল্লেখ করে মাশরাফি বলেছেন, ‘যখন তরুণ খেলোয়াড়েরা আসছে, তাদের ওপর যে প্রভাবটা পড়ছে—(পারফরম্যান্স) ধরে রাখা সহজ নয়। একজন খেলোয়াড় যখন পারফর্ম করতে পারছে না, চারদিক থেকে যদি তখন আক্রমণ করা হয়, তাহলে কিন্তু সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এখানে আমাদের সমর্থনটা খুব প্রয়োজন।’

মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে অর্ধশতক করেছেন মাহমুদুল হাসান
ছবি: এএফপি

তরুণদের নিয়ে আরও ধৈর্য ধরার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি, ‘তামিমকে দেখেন, আমাকে দেখেন, সাকিব হয়তো আলাদা, মুশফিককে দেখেন—সবাই কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতে বাদ পড়েছি। হয়তো তামিম পড়েনি, তবে সে কিন্তু আজকের তামিম ছিল না তখন। সাকিব ছাড়া মোটামুটি সবাইকে কষ্ট করে একটা পর্যায়ে আসতে হয়েছে। এখন যেটা হয়, এলেই সবাই পারফরম্যান্স চায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এত সহজ না যে আপনি এসেই পারফরম্যান্স পাবেন। এটার সবকিছুই ধৈর্যের ব্যাপার। আর এর আগে আপনাকে দেখতে হবে সে কতটা তৈরি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। এই দুইয়ের সমন্বয় করাটা খুবই জরুরি।’

মাশরাফি যেদিন এসব বলেছেন, সেদিনই মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে আলো ছড়িয়েছেন বাংলাদেশের দুই তরুণ ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন ও মাহমুদুল হাসান। দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষেই অভিষিক্ত মাহমুদুল অপরাজিত আছেন ৭০ রানে। মাশরাফি বলছেন, কাউকে সুযোগ দিলে দীর্ঘমেয়াদেই দেওয়া উচিত, ‘নতুন কাউকে নিয়ে দুই বা তিন টেস্ট রান করছে না দেখেই তাকে ছেঁটে ফেলা (উচিত নয়)। যেমন জয় (মাহমুদুল) এখন রান করল, পরের পাঁচ ম্যাচে রান না-ও করতে পারে। কিন্তু যখন আপনি কাউকে নেবেন, নিশ্চিত করতে হবে সে আমার ভবিষ্যৎ। তাকে লম্বা সময় দেখতে হবে। নেওয়ার আগে চিন্তা করাটা বেশি জরুরি।’

মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ খেলবেন ঢাকা দলে
ফাইল ছবি

সামনের বিপিএলে তামিম ও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ঢাকায় একই দলে খেলবেন মাশরাফি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলেননি এই পেসার। দিনশেষে মাঠে কেমন পারফরম্যান্স হচ্ছে, সেটাই ব্যাপার—মাশরাফি মনে করিয়েছেন সেটা, ‘মাশরাফিকে নিয়ে যারা বলছে...আমি তো ২০১৭ থেকেই (আন্তর্জাতিক) টি-টোয়েন্টিতে নেই। এটা নামের ব্যাপার নয়, মাঠে কীভাবে খেলছেন, সেটার ব্যাপার। তামিম তো বিশ্বকাপে খেলেনি, কিন্তু তামিম অনেক বড় একটা নাম দেশের ক্রিকেটে। তবে কতটুকু প্রভাব থাকবে, সেটা মাঠেই বোঝা যাবে। মাহমুদউল্লাহর ব্যাপার আলাদা, সে এখন অধিনায়ক, টি-টোয়েন্টিতে আমাদের অন্যতম সেরা পারফর্মার। হ্যাঁ, বাংলাদেশ ক্রিকেটে তামিম, আমি খেলেছি—সেই নাম যদি বলতে চান, সেটা ভিন্ন কথা। তবে মাঠে এসবে কিছু যায়–আসে না।’