সুখস্বপ্নে বিভোর রুবেল

হ্যাটট্রিক করলেন অথচ কেউই জানল না! আর বাকি সবার কথা বাদ দিন, রুবেল হোসেন যে নিজেও জানতেন না তিনি হ্যাটট্রিক করে ফেলেছেন! এমন ঘটনাই কিছুদিন আগে ঘটেছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে।
সেদিন ম্যাচটা বিকেএসপিতে ছিল। খুব একটা সাংবাদিক সেই ম্যাচ কাভার করেননি। মাঠে ছিল না তেমন দর্শকও। আর রুবেলও দুই ওভার মিলিয়ে হ্যাটট্রিকটা করেছিলেন। আগের ওভারের শেষ দুই বলে উইকেট নেওয়ার পর আবার বোলিংয়ে এসে ওভারের প্রথম বলেই উইকেট। রুবেল যে হ্যাটট্রিক করেছেন সেই তথ্য সাংবাদিকেরা বুঝলেন একদিন পর। আর সাংবাদিকের সূত্র ধরে রুবেলও।
এ নিয়ে রুবেলের মনে যদি কোনো আফসোস থেকেও থাকে, সেটা পুরোপুরি মুছে ফেললেন আজ। মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের ভরা গ্যালারি আর ভরা প্রেসবক্স সাক্ষী রেখে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে করলেন হ্যাটট্রিক। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের মুঠো গলে বেরিয়ে যেতে থাকা ম্যাচটি দুর্দান্তভাবে জিতিয়ে দিলেন এই রুবেলই।
২০০৯ সালে এই মিরপুরের মাঠেই নিজের অভিষেক সিরিজে জেতা ম্যাচটি হারিয়ে দিয়েছিলেন রুবেল। তাঁর পর পর দু ওভারে বেধড়ক মেরে ম্যাচটি বের করে নিয়েছিলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। আজ যেন তারই প্রায়শ্চিত্ত করলেন রুবেল।
সংবাদ সম্মেলনে রুবেল অবশ্য স্বীকার করলেন, হ্যাটট্রিক হয়ে যাবে, এতটা ভাবতে পারেননি, ‘হ্যাটট্রিক করার চিন্তা সব বোলারই থাকে। সব বোলারেরই লক্ষ্য থাকে ভালো বল করতে হবে। সব বোলারেরই হ্যাটট্রিক করার ইচ্ছা থাকে। আজকে ভালো বল করছি। কপালে হ্যাটট্রিট ছিল। হয়ে গেছে আরকি।’
প্রিমিয়ার লিগের সেই হ্যাটট্রিক যে কেউ জানতে পারেনি সঙ্গে সঙ্গে, এ নিয়েও কোনো আফসোস নেই তাঁর। এক বাক্যে বললেন, ‘আসলে আমি নিজেও তখন জানতাম না হ্যাটট্রিক করেছি।’
আজ দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা সব সময়ই তাঁকে উত্সাহ জুগিয়েছে। পাশে বসা অধিনায়ককে দেখিয়ে বললেন, ‘মুশফিক ভাই বলছিল বল ভালো জায়গায় ফেল। রান চেক দে। ভালো জায়গায় বল করলে উইকেট এমনিতেই পাবি।’ তাঁর হ্যাটট্রিক বলতিকে ডানে ঝাঁপিয়ে মুশফিক দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন। এই হ্যাটট্রিকের কৃতিত্বও অধিনায়ককে ভাগ করে দিলেন, ‘হ্যাটট্রিকের যে বলটা ছিল আমি চেষ্টা করছি স্টাম্প টু স্টাম্প করার। লেগ সাইড দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। ব্যাটসম্যান ভুল করছে। মুশফিক ভাইও ভালো ক্যাচ নিয়েছে। তাই হ্যাটট্রিক হয়ে গেছে।’
ইনজুরি থেকে ফিরেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই হ্যাটট্রিক। রুবেল জানালেন, ‘আসলে শোল্ডার ইনজুরিতে অনেক ভুগেছি। অনেক দিন ইনজুরিতে ছিলাম। অনেক পারিশ্রম করেছি ফিরে আসার জন্য। খুব বেশি ওয়ানডে ম্যাচে খেলতেও পারিনি ইনজুরির কারণে। মাঝখানেও ইনজুরিতে পড়ছিলাম। প্রিমিয়ার লিগেও ভালো বল করছি। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকব।’
বৃষ্টিটা এক দিক দিয়ে তাঁর উপকার করেছে বলেও মানলেন, ‘উইকেটেও হালকা হালকা বৃষ্টি পড়ছিল। স্লোয়ার মারলে আনইভেন বাউন্স পাচ্ছিলাম। পেস বোলারদের জন্য ভালো ছিল। সোজা বল করলে বেশ ভালো ফল পাচ্ছিলাম। ভালো বোলিংও করছি। স্টার্টটা ভালো হইছে। পরের ম্যাচটা আরও ভালো করার চেষ্টা করব।’
ঢাকায় নিউজিল্যান্ডকে ধবল ধোলাই করার সর্বশেষ ম্যাচটিতেও ৪ উইকেট নিলেন। এবার তো নিলেন ২৬ রানে ৬ উইকেট। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বল করতে কি বিশেষ উত্সাহ পান। রুবেলের সরল সোজা উত্তর প্রেসবক্সে হাসির ফোয়ারা তুলল, ‘ওদের বিপক্ষে বল করতে চাঙা লাগে এই রকম কিছু না। আসল কথাটা হলো টিম স্পিরিট। সবাই এক সঙ্গে পারফর্ম করা। আর আসলে নিউজিল্যান্ডের সাথে বল করতে মজাই লাগে।’
বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এখন তাঁরও। ২৬ রানে ৬ উইকেট এর আগে নিয়েছিলেন মাশরাফি। মাঠে মাশরাফিও তাঁকে খুব উত্সাহ দিয়ে গেছেন বলেই জানালেন, ‘এটা আমার জন্য অনেক আনন্দদায়ক। মাশরাফি ভাইও নিয়েছেন ৬ উইকেট। আমিও নিলাম। একটা বড় টিমের বিপক্ষে নিতে পেরেছি। তাই এটা আমার জন্য অনেক পাওয়া। মাঠে মাশরাফি ভাই বলেছেন, তুই যেভাবে বল করছিস এভাবেই কর। স্লোয়ার দে। কার্টার দে। উইকেট পাবি।’