ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের সাতকাহন

ফিফা র‌্যাঙ্কিং প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে। এরপর থেকে প্রায় প্রতি মাসেই ফিফা এই র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করে আসছে। ‘প্রায় প্রতি মাসে’ লেখার কারণ, কোনো মাসে আন্তর্জাতিক ম্যাচ না থাকলে র‌্যাঙ্কিংয়ে কোনো পরিবর্তন হয় না বলে সেটি আর হালনাগাদ করে না ফিফা। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত, গত ২০ বছর ১ মাসে ২০–১২+১=২৪১টি র‌্যাঙ্কিং আপডেট প্রকাশিত হওয়ার কথা থাকলেও ফিফা ওয়েবসাইটে আপডেট পাওয়া গেছে ২২৮টি। শুরুটা ধরলে মোট ২২৯টি মাসিক র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হয়েছে।
এই ২২৯টি মাসিক র‌্যাঙ্কিংয়ে ‘নাম্বার ওয়ান’ হওয়ার গৌরব মাত্র ৭টি দেশের। গড় র‌্যাঙ্কিংকে যদি একটা দেশের ধারাবাহিকতার প্রতিচ্ছবি ধরে নেওয়া যায়, তাহলে এই ৭টি দেশের মধ্যে সাফল্যের বিচারে দলগুলোর ক্রম হবে এরকম: ব্রাজিল, স্পেন, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ইতালি, হল্যান্ড ও ফ্রান্স। আরেকটা দিক দিয়েও ব্রাজিল অনন্য। অন্য ৬টি দেশ মিলে এই ২০ বছরে ট্রফি জিতেছে ১১টি, আর ব্রাজিল একাই জিতেছে ১০টি।
এই ৭টি দেশ কতবার র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ছিল, সেরা দশের বাইরে ছিল কতবার, গড় র‌্যাঙ্কিং কত (গড় র‌্যাঙ্কিং বলতে এই ২০ বছরে একটা দেশ সব মিলে গড়ে কততম স্থানে) এসব নিয়ে ফুটবলামোদীদের কৌতূহল থাকাটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে সবচেয়ে খারাপ র‌্যাঙ্কিং, নিজেদের সেরা ও সবচেয়ে খারাপ সময় এবং র‌্যাঙ্কিং চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত জেতা ট্রফির হিসাবটা থাকলে তো আরও ভালো। ফিফা ওয়েবসাইট থেকে উপাত্ত নিয়ে সেই চেষ্টাই করা হয়েছে এখানে—
১. ব্রাজিল
র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে: ১৩৯ বার (৬০.৭%)
সেরা দশের বাইরে: ১২ বার
সবচেয়ে খারাপ: ২২
গড় র‌্যাঙ্কিং: ২.৭০
সেরা সময়: র‌্যাঙ্কিংয়ের শুরু থেকে জুন ২০০৮, জুলাই ২০০৯ থেকে মে ২০১০
সবচেয়ে বাজে সময়: জুন ২০১১ থেকে জুন ২০১৩ (২০১৪ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব শুরু থেকে)
র‌্যাঙ্কিং চলাকালীন অর্জন: ২টি বিশ্বকাপ, ৪টি কনফেডারেনস কাপ, ৪টি কোপা আমেরিকা
২. স্পেন
র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে: ৫৫ বার (২৪.০২%)
সেরা দশের বাইরে: ১৫ বার
সবচেয়ে খারাপ: ২৫
গড় র‌্যাঙ্কিং: ৪.৮৭
সেরা সময়: ১৯৯৫, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৮ থেকে বর্তমান
বাজে সময়: ১৯৯৮
র‌্যাঙ্কিং চলাকালীন অর্জন: ১টি বিশ্বকাপ, ২টি ইউরো
৩. জার্মানি
র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে: ৫ বার (২.১৮%)
সেরা দশের বাইরে: ৩৯ বার
সবচেয়ে খারাপ: ২২
গড় র‌্যাঙ্কিং: ৫.৮৫
সেরা সময়: আগস্ট ১৯৯৩ থেকে জুন ১৯৯৪, সেপ্টেম্বর ২০১০ থেকে বর্তমান
বাজে সময়: ডিসেম্বর ২০০৩ থেকে মে ২০০৬ (২০০৬ বিশ্বকাপের স্বাগতিক)
র‌্যাঙ্কিং চলাকালীন অর্জন: ১টি ইউরো
৪. আর্জেন্টিনা
র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে: ১০ বার (৪.৩৬%)
সেরা দশের বাইরে: ১৯ বার
সবচেয়ে খারাপ: ২৪
গড় র‌্যাঙ্কিং: ৬.২০
সেরা সময়: ২০০৭ থেকে ২০০৮-এর মাঝামাঝি, অক্টোবর ২০১২ থেকে বর্তমান
সবচেয়ে বাজে সময়: জুলাই ১৯৯৬ থেকে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮
র‌্যাঙ্কিং চলাকালীন অর্জন: ২টি অলিম্পিক সোনা
৫. ইতালি
র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে: ৬ বার (২.৬২%)
সেরা দশের বাইরে: ৫৭ বার
সবচেয়ে খারাপ: ১৬
গড় র‌্যাঙ্কিং: ৭.১৮
সেরা সময়: জুলাই ২০০৬ থেকে এপ্রিল ২০১০
বাজে সময়: মে ২০০২ থেকে ২০০৬ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত
র‌্যাঙ্কিং চলাকালীন অর্জন: ১টি বিশ্বকাপ
৬. হল্যান্ড
র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে: ১ বার
সেরা দশের বাইরে: ২৮ বার
সবচেয়ে খারাপ: ২৫
গড় র‌্যাঙ্কিং: ৭.১৮
সেরা সময়: ২০০৮ থেকে ২০১২
বাজে সময়: ১৯৯৯ থেকে ২০০২
র‌্যাঙ্কিং চলাকালীন অর্জন: কোনো ট্রফি নেই
৭. ফ্রান্স
র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে: ১৩ বার (৫.৬৭%)
সেরা দশের বাইরে: ৭৬ বার
সবচেয়ে খারাপ: ২৭
গড় র‌্যাঙ্কিং: ৮.৪০
সেরা সময়: মে ১৯৯৮ থেকে এপ্রিল ২০০৫, আগস্ট ২০০৬ থেকে মে ২০০৭
বাজে সময়: জুন ১৯৯৭ থেকে মার্চ ১৯৯৮ (১৯৯৮ বিশ্বকাপের স্বাগতিক), মে ২০১০ থেকে বর্তমান
র‌্যাঙ্কিং চলাকালীন অর্জন: ১টি বিশ্বকাপ, ২টি কনফেডারেশনস কাপ, ১টি ইউরোপ।
কাকতালীয় একটা মিল খেয়াল করেছেন কি না, ফ্রান্স ও জার্মানি যেমন বিশ্বকাপ আয়োজক হওয়ার আগের বছরগুলোতেই র‌্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে বাজে সময় কাটিয়েছিল, এবার ব্রাজিলের ঘটনাও তা-ই।
এ ক ন জ রে
ব্রাজিল স্পেন জার্মানি আর্জেন্টিনা ইতালি হল্যান্ড ফ্রান্স
র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে (বার) ১৩৯ ৫৫ ৫ ১০ ৬ ১ ১৩
সেরা দশের বাইরে (বার) ১২ ১৫ ৩৯ ১৯ ৫৭ ২৮ ৭৬
সবচেয়ে খারাপ ২২ ২৫ ২২ ২৪ ১৬ ২৫ ২৭
গড় র‌্যাঙ্কিং ২.৭ ৪.৯ ৫.৮ ৬.২ ৭.২ ৭.২ ৮.৪
র‌্যাঙ্কিং চলাকালীন ট্রফি ১০ ৩ ১ ২ ১ ০ ৪

বিশ্বসেরাদের কথা হলো, এদের সঙ্গে বাংলাদেশকে টানাটা হয়তো বেমানানই দেখাবে। তারপরও ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসটা যোগ করে দেওয়ার লোভ সামলানো গেল না।
বাংলাদেশ
সেরা র‌্যাঙ্কিং: ১১০
সবচেয়ে বাজে: ১৮৩
গড় র‌্যাঙ্কিং: ১৫০.৭
সেরা সময়: ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে
বাজে সময়: এপ্রিল ২০০৭ থেকে এপ্রিল ২০১০
র‌্যাঙ্কিং চলাকালীন অর্জন: সাফ চ্যাম্পিয়ন ২০০৩, এসএ গেমসে সোনা ১৯৯৯ ও ২০১০, মিয়ানমারে চার জাতি আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট ১৯৯৫।